লিঙ্গভেদে জীবন বিকাশ এস. এম. লতিফ তালুকদার part 3
শরীর, শারীরিক অবস্থা, মন-মানসিকতা, বুদ্ধিমত্তার পরিপক্বতা,ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধন এবং ক্ষমতার পরিনমনের অপরিপূর্ণতায় মানব শিশুর, মানব-মানবীর জীবন-প্রবাহ, কার্যকরণ, আচরণ, অস্বভাবী হয়ে ওঠে।মনোদৈহিক সমস্যা ছাড়াও পারিবারিক ও সামাজিক বিভিন্ন অঙ্গনে বিভিন্ন জন বিভিন্নমুখী সমস্যার সমমুখীন হয়ে থাকে। সমস্যা প্রপীড়িত ব্যতিরেকেও স্বাভাবিক সুস্থ জীবনেও সমাজ জগতের সর্বস্তরে সর্বসাধারণকে মনোজগতের পরিমণ্ডলে বিচরণ করতে হয়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিবেশে ব্যাপক গবেষণালব্ধ ফলাফলে প্রতীয়মান হয় যে, সমাজজীবনে এবং ব্যক্তিবিশেষ পুরুষ ও মহিলার সামাজিক মূল্যবোধ, সৌন্দর্য, শৃঙ্খলাবোধ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে তাৎপর্যপূর্ণ বিভেদ বিদ্যমান। ধর্মপালনে পুত্র অপেক্ষাপুত্রবধূ অধিক সজাগ এবং সক্রিয়। সুচিত্রা সেন চিত্রপুরীতে যাওয়ার পূর্বে প্রতিদিন ভোরে স্নান সেরে উঠে এক ঘণ্টা ধরে ঠাকুর ঘরে পুজা দিতেন। কোনো কোনো দেশে কোনো বিজ্ঞ জন বলে থাকেন, Religion it is woman's affairs.. আবার বাকপটুতায় মেয়েরাই অগ্রবর্তী। Disraeli, the greatest of all English Philosophersand Statsman (1566-1626) বলেছেন-যত পার মেয়েদের সাথে বেশিকরে কথা বল।বক্তৃতা শেখার এটাই শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়। এখানেই অনর্গলতা অর্জন করতে হয়।
মস্তিষেকর উভয় গোলার্ধেরমধ্যকার সংযোগ সাধনকারী সেতুবন্ধন বিশেষ ফরপাস ফেলোসম পুরুষ মস্তিষেক অল্প পরিমাণে বিদ্যমান। কিন্তু মহিলা মস্তিষেক ফেলোসমের অঞ্চল বেশ বিসতৃত। যার ফলে কথা বলারসময় মেয়েদের মস্তিষেকর উভয় গোলার্ধই প্রায় কর্মতৎপর থাকে। ‘Why woman tald too much'’ শীর্ষক প্রতিবেদনে কানাডার Kathaleen parke বলেন, নিউইয়র্কে অবস্থিত প্রাকৃতিক ইতিহাসের আমেরিকান জাদুঘরের নৃবিজ্ঞানী Dr. Hellen R. Fisher এক গবেষণার মাধ্যমে দেখেছেন মেয়েদেরমস্তিষেকর গঠন প্রণালীতেফরপাস ফেলোসম বেশি পরিমাণে থাকে। যার জন্য মস্তিষেকর দুটি গোলার্ধ মেয়েদের ক্ষেত্রে দৃঢ়ভাবে সুসংঘবদ্ধ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই জৈবিক চেতনাতেই নারী জাতি বেশ বাকপটীয়সী।
মার্কিন ঔপন্যাসিক হেলেনকিলার অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও জনসভায় জনগণ মন আলোড়িত প্রাণবন্ত বক্তৃতা করতেন। অনর্গলবর্ষী, জ্বালাময়ী ভাষায় তার জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দান করতে দেশ-বিদেশ থেকে আমন্ত্রিত হয়েছেন। নিজ দেশ আমেরিকা ছাড়াও রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি বক্তৃতা করেছেন।
এদিকে সব দেশে সবকালে পুরুষশাসিত সমাজ বলে একটা কথা আছে। একজন পুরুষহলো স্বনিয়ন্ত্রিত সম্রাট। নারীরা স্বভাবসুলভ লজ্জাশীলা, পরনির্ভরশীল। মেয়ে কার? এহেন বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর হলো মেয়ে প্রথম জীবনে পিতার, মধ্য জীবনে স্বামীর, শেষ জীবনে পুত্রের। এক সময় মনে করা হতো মহিলাদের সমস্ত আত্মবিশ্বাসের কেন্দ্রস্থল যেন ওই গর্বের থলে ভ্যানিটি ব্যাগ। স্মর্তব্য, প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার হ্যান্ড ব্যাগটির নাম ছিল ‘Lady Dear’.
বিলাস, ব্যাসন, প্রভাব প্রতিপত্তির ঊর্ধ্বে বুদ্ধিমত্তা স্মৃতিশক্তি চিন্তনের ক্ষেত্রে মেয়েদের স্মৃতিশক্তি ছেলেদের চেয়ে তিনগুণ বেশি। মহিলাদের অনুমান পুরুষেরসিদ্ধান্তের অপেক্ষা অধিক শ্রেয় বলেছেন মনীষী Kepling. মস্তিষেকর cerebral cortex এর অঞ্চলটা ব্যক্তির নিজের সম্পর্কে ধারণা, সময় জ্ঞান, শ্রবণশক্তির ও স্মৃতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য জোগায়। বোধশক্তিসম্পন্ন একজন স্বাভাবিক পুরুষ মানুষেরচক্ষুর পশ্চাতে মস্তিষেকর এই ক্ষুদ্র অংশে মহিলাদের চেয়ে শতকরা ১০ গুণ কম নিউরন রয়েছে। মহিলাদের মস্তিষেক এটা অধিক হারে থাকে বিধায় মেয়েরা ভাষার ব্যবহার, বাক প্রণালী এবংস্বরধ্বনি সম্পর্কে বেশ সচেতন। অ্যান্টিরিওর কমিস্যুর নামে অসংখ্য স্নায়ুকোষ মস্তিষেকর উভয়গোলার্ধকে সংযুক্ত করে আছে।নভেম্বর, ১৯৯৪ সালে সোসাইটি ফর নিউরিসিজম কর্তৃক গ্রহীত এক গবেষণায় ওন্টারিওর McMaster বিশ্ববিদ্যালয়ের Sander witelson দেখেন যে, পুরুষের মস্তিষেকর তুলনায় ছোট হওয়া সত্ত্বেও মহিলাদের মস্তিষেক এই ধরনের স্নায়ুকোষগুলো অধিক পরিমাণে নিউরন ধারণ করতে পারে (tiny in quantitybut potent in nature). যার ফলে আবেগীয়প্রতিক্রিয়া, ধৈর্য ধারণ ক্ষমতা, সহনশীলতা মেয়েদের মধ্যে যথেষ্টই পরিলক্ষিত হয়।
ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যে ব্যক্তিত্ব হলো একজন মানুষের সামগ্রিক সত্তা। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ ও নারী কেহ কারো নাহি পারে। শিক্ষা সংস্কৃতি ব্যবসা-বাণিজ্যসর্বক্ষেত্রে মেয়েদের অগ্রগতি অভাবনীয়ভাবে লক্ষণীয়। শুধু তাই নয়, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, বিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং রাষ্ট্রপতির মতো সমাজের সর্বোচ্চ আসনে নারীরা আজ বিশ্বের দরবারে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। সুলতানা রাজিয়া, চাঁদ সুলতানা, সম্রাজ্ঞী নুরজাহান থেকে শুরু করে যুগ-যুগের ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট প্রেসিডেন্ট তো সব ফার্স্ট লেডিগণ। জনশ্রুতি এই যে, বিদেশ সফরকালে পেন্টাগনের চাবিটাও থাকে প্রেসিডেন্সিয়াল লিমোজিনে ফার্স্ট লেডির ‘লেডি ডিয়ারে’ লক আপ। আর যাই হোক, পরিচালনা এবং প্রশাসনিক কাজকর্মে লিঙ্গভিত্তিক (শারীরিক) বিভেদ সত্ত্বেও ব্যক্তিত্বের সংরক্ষণ ভিত্তিতে মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসকগণ ব্যক্তির চেহারা, বুদ্ধিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
মনোবিজ্ঞানী বার্ড (১৯৪০) ২৫টি মনোবৈজ্ঞানিক গবেষণা পর্যালোচনা করে নেতৃত্বের তথা ব্যক্তিত্বের ৭৩টি ব্যক্তিত্ব সংলক্ষণের উল্লেখ দেখতে পান। এগুলোর মধ্যে বুদ্ধিমত্তা, উদ্বেগ, রসবোধ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বলে পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের অপর একটি জরিপে মনোবিদ স্টাগডিল (১৯৪৮) ব্যক্তিগত উপাদানসম্পর্কিত শতাধিক অনুধ্যান বিশ্লেষণ করে দেখতে পান যে, বেশির ভাগ অনুধ্যানই ব্যক্তিবর্গের বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান, নির্ভরযোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, সামাজিক অংশগ্রহণ, আর্থ-সামাজিক পদমর্যাদা উচ্চতর বিবেচিত হয়েছে। এসবে লিঙ্গভেদের ভূমিকা নিতান্তই গৌণভাবে ধরা দিয়েছে। পরবর্তীকালে মনোবিজ্ঞানী এল. এম. ম্যান (১৯৫৯) ১২৫টি গবেষণামূলক রচনা পর্যালোচনা করে যে ফলাফল পান তাতেও ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যে ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা, উপযোজন ক্ষমতা, সংবেদনশীলতা, রক্ষণশীলতা এবং প্রাধান্যের বিষয়ই প্রাধান্য পেয়েছে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন