গর্ভাবস্থায় পুষ্টিরপ্রয়োজনীয়তা অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী part 2

কোন মন্তব্য নেই
ক্ষয়পূরণ এবং নবজাতকের শরীর বৃদ্ধিকারক খাবারঃ মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের সাদা অংশ এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল, মটরশুঁটি, শিমের বিচি ইত্যাদি।
রোগ প্রতিরোধক খাবারঃ সবুজ, হলুদ ও অন্যান্য রঙিন শাকসবজি এবং সব ধরনের মৌসুমি ফলমূল ইত্যাদি।
একজন মাকে প্রতিদিনই তিন ধরনের খাবারের তালিকা থেকে কিছু খেতেই হবে। প্রতি বেলায় স্বাভাবিকেরচেয়ে একটু বেশি খেতে হবে।পানি বেশি বেশি খেতে হবে।লবণ অবশ্যই আয়োডিনযুক্ত থাকতে হবে।
গর্ভকালীন মায়ের ওজন বৃদ্ধি
গর্ভকালীন মায়ের ওজন ১০-১২ কেজি বাড়া উচিত ? যেসব মহিলার ওজন কম তাদেরবেশি ওজন এবং স্থূলকায় ওজনের মহিলাদের কম ওজন বৃদ্ধি হওয়া উচিত (৬-৯ কেজি) ? বাংলাদেশে একজন গর্ভবতী মহিলার গড়ে ৪-৬ কেজি ওজন বৃদ্ধি হয়। যে কারণে কম ওজনের শিশু জন্মের হার অনেক বেশি (প্রায় ৩০ ভাগ)।
গর্ভবতীকে কতটা ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত
একজন সাধারণ মহিলার প্রতিদিন যতটা ক্যালরি (১৮০০-২১০০ কিলোক্যালরি)গ্রহণ করার কথা তার চেয়ে আরো ৩০০ কিলোক্যালরি এবং স্তন্যদায়ী মায়ের জন্য যদি ৫০০ কিলোক্যালরি বাড়ানো না যায় তাহলে মায়ের নিজের শরীর থেকে ক্ষয় হতে থাকবে এবং আস্তেআস্তে সে দুর্বল হয়ে যাবে। গর্ভকালীন শেষার্ধে ক্যালরি গ্রহণের চাহিদা বিশেষ করে বেড়ে যায়। গর্ভবতী মায়ের যদি সঠিকভাবে ওজন না বাড়ে তখন গর্ভস্থ শিশুটি কম ওজনের হতে পারেঅথবা তার জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বাড়তি ক্যালরি গ্রহণ ছাড়াও আমিষ, লৌহ, আয়োডিন এবং অন্যান্য ভিটামিন গ্রহণের চাহিদাও বেড়ে যায়। কোনো কোনো খাদ্যে ঘাটতি শিশুর জন্মগত ত্রুটিসহ মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
আমিষজাতীয় খাদ্য গ্রহণ
গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধিরজন্য আমিষজাতীয় খাদ্য গ্রহণ খুবই জরুরি। ? গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয়ার্থে ১ গ্রাম/ কেজি+২০ গ্রাম প্রতিদিন প্রায় ৩০ গ্রাম গ্রহণ করাউচিত। ? আমিষজাতীয় খাদ্য যেমন-মাছ, মাংস, ডিম, ডালজাতীয় খাদ্য, শিমের বিচি, দুধ ইত্যাদি।
ক্যালসিয়াম
ক্যালসিয়াম শিশুর অস্থি গঠনে সাহায্য করে, কাজেই গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রতিদিন প্রায় ১২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম একজন গর্ভবতীমায়ের খাওযা উচিত। ? শিশুটি মায়ের শরীর থেকে ক্যালসিয়াম গ্রহণ করে, কাজেই এটা পূরণ না হলে মায়ের অস্থি দুর্বল হয়ে পড়ে ? দুগ্ধ ও দুগ্ধজাতীয়খাদ্য, পানি, দধি, ছোট মাছ,সবুজ শাকসবজি ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে।
লৌহ
আমাদের দেশের শতকরা ৬০ ভাগ গর্ভবতী মহিলা রক্তস্বল্পতায় ভুগছে। গর্ভাবস্থায় লৌহজাতীয় খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি করা একান্তই প্রয়োজন। ? গর্ভাবস্থায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম লৌহ দরকার হয় মায়ের শরীরে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধির জন্য এবং ৩০০ মিলিগ্রাম লৌহ দরকার শিশুর শরীরে রক্ত গঠনের জন্য। ? কাজেই লৌহজাতীয় খাদ্য গ্রহণ অথবা লৌহের পরিপূরক ওষুধ সেবন প্রয়োজন। ? প্রায় ৩০মিলিগ্রাম এলিমেন্টাল লৌহ গর্ভাবস্থায় দ্বিতীয়ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রয়োজন। ? মাছ, মাংস, ডাল, শাকসবজি ও ফলে লৌহজাতীয় খাদ্যের উপাদানবিদ্যমান। চা এবং কফি পানঅথবা বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম লৌহ শোষণেরক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ফলিক এসিড
ফলিক এসিডের ঘাটতি হলে মেগালেব্লাস্টিক রক্তস্বল্পতা হয় ? ফলিক এসিড গর্ভাবস্থার আগে এবং গর্ভাবস্থায় ব্যবহারকরলে শিশুর জন্মগত ত্রুটি (নিউরাল টিউব ডিফেক্ট) কমে। ? প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলাকে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড গ্রহণ করা খুব দরকার। ডিম, শাকপাতা, কমলালেবু, ডাল বা শিম এবং গমের খোসায় প্রচুর ফলিক এসিড পাওয়া যায়।
জিংক
*. এ অনুখাদ্যটি শিশুর শরীর বৃদ্ধি এবং ক্ষয়পূরণে সাহায্য করে
*. প্রসবের সময় জরায়ুর সংকোচনে সাহায্য করে
*. গর্ভাবস্থায় জিংকের পরিমাণ একজন সাধারণ মহিলা থেকে ২০-৩০ ভাগ কমে যায়
*. প্রাণিজ খাদ্য কম গ্রহণকারীদের মধ্যে জিংক অনুখাদ্যের ঘাটতিবেশি হয়ে থাকে।
গর্ভাবস্থায় একবারে বেশিখেতে না পারলে বারবার অল্প অল্প করে খেতে হবে। বিভিন্ন খাবারের পরিমাণ প্রতিদিন অল্প অল্প করে বাড়াতে হবে, যাতে চাহিদা পূরণ হয়। আমাদের দেশে অনেক গর্ভবতী মায়ের খাদ্য সম্পর্কে কুসংস্কার আছে। গর্ভবতীতে এসব কুসংস্কারও ভুল ধারণা অবশ্যই পরিত্যাগ করে বেশি পরিমাণে সুষম খাবার খেতে হবে।
মূল বার্তা
*. গর্ভাবস্থায় মা প্রতিদিন যেটুকু খাবারখাচ্ছে তার সঙ্গে আরো ৩০০ কিলোক্যালরি বেশি খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
*. প্রতিদিনই তিন ধরনের খাদ্যের তালিকা থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
*. বাড়তি খাবার হিসেবে প্রতিদিন এক মুঠো চালের ভাত, দুই কাপ ঘন ডাল, দু মুঠো শাকসবজি তেল দিয়ে রান্না করা, দুই টুকরো মাছ বা মাংস, একটি করে মৌসুমি ফল, এক গ্লাস দুধ অথবা দুধজাতীয় খাদ্য, লেবু বা টক ফলজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত
*. প্রচুর পানি পান।
*. আয়োডিনযুক্ত লবণ দিয়ে রান্না খাবার গ্রহণ করা উচিত


♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3

কোন মন্তব্য নেই :