৯ মাসের বিপদ-আপদ ডা. রাতু রুমানা part 1
কোন মন্তব্য নেই
জরিনা বেগম, বয়স ২৫, গৃহিণী, স্বামী কৃষক। বাড়ি কুড়িগ্রাম। দুই কন্যা সন্তানের জননী, বর্তমানে আবার গর্ভবতী। স্বামী হুমকি দিয়েছে আবার কন্যা সন্তান প্রসব করলে তালাক দেবে। তাই গর্ভকালীন তার প্রতি গুরুত্ব ছিল একেবারেই কম,এমনকি প্রসব বেদনার সময়ও। গ্রামের ধাত্রীকে ডেকে আনা হলো। অবস্থা খুবই জটিল জেনেও স্বামী হাসপাতালে নিতে রাজি হলো না। ২৪ ঘণ্টা কষ্টের পর জরিনা এক মৃত পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েনিজেও মারা গেলেন। পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এলো। শোকটা জরিনার জন্য নয়, মৃত পুত্রসন্তানের জন্য।
রাহেলা খাতুন, বয়স ২২, এক পুত্রসন্তানের জন্মের চার বছর পর পরবর্তী সন্তানের জন্মের তারিখ খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। গভীর রাতে প্রসব বেদনা উঠল। কিন্তু প্রসূ'তি শেষকরে হাসপাতালে তাকে নিতে অনেক দেরি হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালে সে জন্ম দিল এক মৃত কন্যাসন্তান।
প্রথম ঘটনায় মৃত্যুর কারণ দৃষ্টিভঙ্গি, দ্বিতীয়টিতে যথাযথ প্রসূ'তির অভাব। মাতৃ মৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার আমাদের দেশে আগের তুলনায় অনেক কমেছে কিন্তু এখনো যে পর্যায়ে আছে তা যথেষ্ট উদ্বেগের। গর্ভকালীন মাকে বাড়তি যত্ন নিতে হবে তার পরিবারথেকে, তাকে ও অনাগত শিশুরপুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবার থেকে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ রাখা দরকার।
*. মাকে সব সময় মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখা
*. পুষ্টিকর খাবার দেয়া
*. জন্মদান বিষয়ে সাহস জোগানো
*. ভারী কোনো কাজ করতে না দেয়া
*. সব সময় স্বাস্থ্যগত দিকটি নজরে রাখা
*. ভবিষ্যতে যেকোনো বিপদের জন্য নিজেদের প্রস'ত রাখা
তবে নিচের কয়েকটি বিষয় গর্ভবতীর মধ্যে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেগুলো হলো-
হঠাৎ রক্তপাত শুরু হলে
প্রসবের সময় ছাড়া গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ বা প্রসবের সময় বা প্রসবের পর খুব বেশি রক্তক্ষরণ বা গর্ভফুল না পড়া বিপদের লক্ষণ। তাই এ রকম পরিসি'তির সৃষ্টি হলে কোনো রকম চিন্তা না করে পরিবারের সবারই উচিত মাকে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। অন্যথায় তা বাচ্চা এবং মা দুজনের জীবনেই হুমকি ডেকে আনতে পারে।
খিঁচুনি হলে
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর যেকোনোসময় যদি খিঁচুনি দেখা দেয়তবে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত হাসপাতালে মাকে ভর্তি করাতে হবে। খিঁচুনি একলামসিয়ার প্রধান লক্ষণ। তাই দ্রুত পদক্ষেপ ও চিকিৎসা বাচ্চা এবং মা দুজনের জীবনকেই রক্ষা করতে পারে। তা না হলে এ রোগে দুজনই মারা যেতে পারে।
চোখে ঝাপসা দেখলে বা তীব্র মাথাব্যথা হলে
গর্ভাবস্থায়, প্রসবের সময় বা প্রসবের পর শরীরে পানি আসা, খুব বেশি মাথাব্যথা বা চোখে ঝাপসা দেখা পাঁচটি প্রধান বিপদ চিহ্নের মধ্যে একটি। তাই এ ব্যাপারে মায়েদের বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। যদিও গর্ভাবস্থায় মায়ের পায়ে সামান্য পানি আসা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। একটু বেশি হাঁটলে এ পানি চলেও যায়। কিন' যদি পায়ে অতিরিক্ত পানি আসে এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করে ও পা ভারী হয়ে আসে তবে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগকরা উচিত।
ভীষণ জ্বর হলে
গর্ভাবস্থায় বা প্রসবের পর তিন দিনের বেশি জ্বর বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব প্রধান বিপদ চিহ্নের একটি। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় যদি কেঁপে কেঁপে ভীষণ জ্বর আসে এবং প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া হয়, তবে তা অনেক সময় মূত্রনালির সংক্রমণের ইঙ্গিত বহন করে। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা করলে অল্প সময়ে এজটিলতা দূর হয়ে যায়।
বিলম্বিত প্রসব হলে
প্রসবব্যথা যদি ১২ ঘণ্টার বেশি হয় অথবা প্রসবের সময় যদি বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোনো অঙ্গবের হয়ে আসে, বাসাবাড়িতে প্রসবের চেষ্টা না করে সবারই উচিত মাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
লক্ষ রাখতে হবে গর্ভবতীকেও
এ ছাড়া গর্ভবতী মায়েদেরও এসব বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হবে। তা ছাড়া নিচের কয়েকটি বিষয়ে নিজেকেও খেয়াল রাখতে হবে।
বাচ্চার নড়াচড়া
গর্ভাবস্থায় সাধারণত মা ১৬ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করেন। পেটের ভেতর বাচ্চা ঘুমায় ও খেলা করে,যার অনুভূতি মা বাইরে থেকে বুঝতে পারেন। বাচ্চার নড়াচড়ার একটা নির্দিষ্ট সীমা এবং সময় রয়েছে যা শুধু মা-ই অনুভবকরেন। এর কোনো ব্যতিক্রম হলে মা সেটা খুব দ্রুত বুঝতে পারেন। বাচ্চার অধিক নড়াচড়া বা কম নড়াচড়াদুটিই ক্ষতিকর এবং এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত এবং নির্দিষ্ট সময় পরপর ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

আরো
পড়তে থাকুন ৯ মাসের বিপদ-আপদ
ডা. রাতু রুমানা
part 2

কোন মন্তব্য নেই :