ভালো থেকো মেয়ে! অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম part 1

কোন মন্তব্য নেই
বাড়ির শিশু থেকে বুড়ো সবাইকে পরম যত্নে রাখেন মেয়েরাই। আর মেয়েরা সুস্থ না থাকলে তখন? মেয়েরা সাধারণত যে ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয় তার কারণ ও চিকিৎসা বিষয়ে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-
সাধারণত মেয়েদের ১০ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত মাসিকহয়। এ সময় হরমোন গ্রন্থিতে হরমোন তৈরির পরিমাণ কমবেশি হলে মাসিক না হওয়ার সমস্যা হতে পারে।
যেসব কারণে মাসিক না হতে পারে
*. মেনার্কের (প্রথম মাসিকের) আগে হতে পারে।
*. গর্ভধারণ ও স্তন্যদান করলে হতে পারে।
*. মেনোপজ বা মাসিক বন্ধ হলে গেলে।
*. মস্তিষেক আঘাত পেলে বা মস্তিষেক কোনো রোগ হলে।
*. ডায়াবেটিস হলে।
লক্ষণ
*. পেটে চাকা দেখা দিতে পারে বা পেটে ব্যথা থাকতে পারে
*. হাইমেন বা সতীচ্ছেদ অক্ষত থাকতে পারে।
চিকিৎসা
রোগীর ডায়াবেটিস হলে তার চিকিৎসা করাতে হবে। এ ছাড়া কারণ নির্ণয় করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
ব্রণ বা একনি
ব্রণ খুবই সাধারণ সমস্যা। প্রায় সব মেয়েই এতে আক্রান্ত হয়। হরমোনের তারতম্যের কারণেএকনি বা ব্রণ হয়। বয়ঃসন্ধিকালে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনের আধিক্যের কারণে ব্রণ হয়। নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর ব্রণ কমতে থাকে। তবে কারোকারো ক্ষেত্রে ব্রণ খুব বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
যা করতে পারেন
*. মুখ পরিষকার রাখতে হবে। তবে সাধারণ সাবান ব্যবহার করবেন না। ফেইসওয়াশ বা ব্রণের জন্য বিশেষ ধরনের সাবান পাওয়া যায়, তা ব্যবহার করা ভালো। তবে দিনে দুইবারের বেশি সাবান বা ফেইশওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়।
*. যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা দিনে পাঁচ-ছয়বার পানির ঝাপটা দিয়ে মুখ পরিষকার রাখবেন।
*. দিনে অন্তত দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
*. প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।
*. কৌষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তাদূর করার জন্য আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে।
*. ব্রণ নখ দিয়ে খোঁটা যাবে না।
স্তনে চাকা
স্তন ক্যান্সার টিউমার এগুলো এখন অনেক বেশি হচ্ছে। তাই স্তনে কোনো ধরনের চাকা চাকা বা ব্যথাঅনুভূত হলে তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তবে অনেক মেয়েরমাসিকের সময় স্তনে কিছুটা ব্যথার অনুভূতি হয় যা স্বাভাবিক।
স্তনে ক্যান্সার যত হয় তার চেয়ে অনেক বেশি হয় টিউমার। সাধারণত ৩০ বছর বয়সের আগে এটি হয়। এই চাকাগুলো হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করানো যায়। এগুলোর চিকিৎসার জন্য প্রায়ই কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে কখনো কখনো অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
টিউমার হোক বা অন্য কোনো কিছুই হোক, চিন্তিত না হয়ে ও সংকোচ না করে চিকিৎসকের কাছে যান। তিনি পরীক্ষা করে যদি প্রয়োজন মনে করেন তবে এফএনএসি ও আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখবেন। প্রয়োজনে ক্যান্সার কী না তা জানারজন্য ম্যামোগ্রাফি পরীক্ষা করবেন।
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেহবে। বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা নারী চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সাহায্য নিতে পারেন। নিচের কয়েকটি বিষয় মনে রাখতে পারেন-
*. সদ্য বিবাহিতদের জন্য বেসিক মেথড বা কনডম ব্যবহার ভালো। যাদের কনডমের ল্যাটেক্স এলার্জি আছে বা কনডম ব্যবহারে অন্য কোনো সমস্যা হয় তারা বড়ি খেতে পারেন।
*. অনেকে মনে করেন পিল খেলে মুটিয়ে যাবেন। পিল খাওয়ার প্রথম তিন মাস শরীরে সামান্য লবণ ও পানি জমতে পারে, তবে তা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে।
*. পিল খেতে তা নিয়মিত খেতে হবে। নিয়মিত পিল খেতে যারা ভুলে যান তারা কপার টি পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
*. যাদের মাসিক খুব নিয়মিত তারা জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। প্রাকৃতিক পদ্ধতি হলো-মাসিক পরবর্তী একটা নির্দিষ্ট সময়ে মিলিত হওয়া। এ বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন আপনার জন্য নিরাপদ সময় কখন।
ক্রিপটো মেনোরিয়া
এ ধরনের রোগীদের জরায়ুতে মাসিক ঠিকমতোই হয়, কিন্তুমাসিকের রাস্তায় কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকায় তা যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসতেপারে না, ফলে রোগীর ধারণাজন্মায় যে তার মাসিক হয় না।
কারণ
*. সারভিক্স ও ভেজাইনা (যোনিপথ) ছোট হয়ে গেলে।
*. যোনিপথ জন্মগতভাবে তৈরি না হলে।
*. জরায়ুতে যক্ষ্মা হলে।
*. হাইমেন বা সতীচ্ছদ অক্ষত থাকলে।
লক্ষণ
*. স্বাভাবিক মেয়েলি শারীরিক গড়ন গড়ে না উঠলে।
*. তলপেটে তীব্র ব্যথা হলে।
*. কখনো কখনো প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে।
চিকিৎসা
রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে।
ডিপ্রেশন
বয়ঃসন্ধিকালে ও টিনএজ এই সময়ে মেয়েদের মধ্যে ডিপ্রেশন বা অবসণ্নতা দেখা যায়। এর বড় কারণ শরীরে ও মনের বড় ধরনের পরিবর্তন। এই পরিবর্তনেরকারণে সে তার সব কথা খুলেবলতে পারে না। তার মনে একধরনের ভয় ও শঙ্কা কাজ করে। পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে সে আলাদা থাকতে পছন্দ করে।
সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিপ্রেশন কমতে থাকে। তবে বাংলাদেশে অনেক মেয়ের মধ্যে এই বয়সে সামান্য কারণে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। আবেগপ্রবণ এ বয়সটা তাই মেয়েদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যা করতে পারেন-
*. মাকে মেয়ের বন্ধু হতে হবে। তাকে সময় নিয়ে মেয়ের সমস্যা শুনতে হবে। শরীরে আসা পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
*. অভিভাবকদের লক্ষ রাখতেহবে মেয়েটি কাদের সঙ্গে মিশছে, কী ধরনের বই পড়ছে, টিভিতে কী ধরনের অনুষ্ঠান দেখছে।এগুলো থেকে মেয়ে সম্পর্কে সাধারণ ধারণানিয়ে তার সমস্যাগুলো বন্ধুর মতো শুনতে হবে। তাকে বকাঝকা না করে আপনার বয়ঃসন্ধিকালে কীধরনের অনুভূতি ছিল সেসব বিষয় আলোচনা করতে হবে, কীভাবে সমস্যা থেকে উত্তরণ হয়েছিল তাও তাকে বলতে হবে।
*. সমবয়সী মেয়েদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করাতে হবে।
মেনারজিয়া
যদি মাসিক নিয়মিত হয়, কিন্তু পরিমাণে খুব বেশি অথবা অনেক দিন ধরে হয় তাহলে তাকে মেনারজিয়া বলে।
কারণ
*. ওভারির টিউব বা ডিম্বাশয়ের নালিতে ইনফেকশন হলে।
*. জরায়ুতে টিউমার (যেমন ফাইব্রয়েড, পলিপ, ক্যান্সার) হলে।
*. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ওঅস্থিরতা থেকে হতে পারে।
লক্ষণ
এ ধরনের রোগীদের খুব বেশিএনিমিয়া হয়ে থাকে। চোখ-মুখ ফ্যাকাসে হয়।
চিকিৎসা
রোগীকে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করে ওষুধ সেবন করাতে হবে।more
part 2

কোন মন্তব্য নেই :