ভালো থেকো মেয়ে! অধ্যাপক ডা. ফিরোজা বেগম part 2
কোন মন্তব্য নেই
ডিসমেনোরিয়া
বেদনাদায়ক মাসিককে ডিসমেনোরিয়া বলে, হরমোনের গ্রন্থি সঠিক বা পূর্ণাঙ্গভাবে তৈরি না হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে।
কারণ
*. মানসিক দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি ও অপূর্ণ যৌন আকাঙ্ক্ষা থেকে হতে পারে।
*. জরায়ু ও যোনিপথের মধ্যবর্তী অংশ খুব সরু হলে।
*. বংশগত কারণেও হতে পারে।
*. সতীচ্ছেদ বা হাইমেন যদি অক্ষত থাকে তাহলে হতে পারে।
লক্ষণ
*. তলপেটে তীব্র ব্যথা থাকবে।
*. মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ ও অস্থিরতা থাকবে।
চিকিৎসা
রোগীকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে এবং দুশ্চিন্তা ও ভয় দূর করতে হবে। এ ছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
ডিইউবি
জরায়ু থেকে যদি অস্বাভাবিক কিংবা খুব বেশি রক্তপাত হয়, কিন্তু পেলভিসে কোনো কারণ খুঁজে না পাওয়া যায়, তবে তাকে ডিসফাংশন ইউটেরাইন বিলডিং বা ডিইউবি বলা হয়।
কারণ
*. মানসিক সমস্যা থেকে হতে পারে
*. পেলভিক ইনফেকশনের কারণথেকে হতে পারে।
*. হরমোনের অসমতার কারণে হতে পারে।
*. লিভার সিরোসিস হলে এ সমস্যা হতে পারে।
লক্ষণ
*. মাসিক খুব ঘন ঘন (২১ দিন বা তার কম সময়ের মধ্যে) হয়।
*. অনেক ক্ষেত্রে মাসিক স্বাভাবিক সময়ে হয়, কিন্তু বেশি সময় থাকে।
*. অল্প কিছু দিন মাসিক বন্ধ থাকে, এরপর অনেক দিন ধরে প্রচুর রক্তপাত হয়।
চিকিৎসা
যদি রক্তপাত অল্প হয়, তাহলে কোনো চিকিৎসার দরকার নেই। তার যদি রক্তপাত বেশি হয়, তাহলে রোগীকে পরিপূর্ণ বিশ্রামও ঘুমের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া আয়রন ও ভিটামিন খাওয়া যেতে পারে। রোগী যদি বেশি অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাদা স্রাব
যদি যোনিপথ দিয়ে মাসিকের রক্ত ব্যতীত অন্য কোনো তরল পদার্থ নিঃসৃত হয় তাকে সাদা স্রাব বলে।
কারণ
সাদা স্রাব আছে এমন মানুষের কাপড় পরলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া সুস্থ ব্যক্তিরও হতে পারে। অনেক দিন ধরে পিল খেলেও হতে পারে। অতিরিক্ত চিন্তা করলেও হয়ে থাকে।
লক্ষণ
*. সাদা বা হলুদাভ স্রাব হবে।
*. গন্ধ থাকবে না, কাপড়ে দাগ লেগে যেতে পারে।
*. কোমরে ব্যথা থাকবে।
*. তলপেটে অস্বস্তি হতে পারে।
চিকিৎসা
কারণ নির্ণয় করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে।
মাসিক বন্ধ হওয়ার পর স্বাস্থ্য সমস্যা
নারীদের জন্মদানসক্ষম বয়সে বেশ কিছু সমস্যা যেমন হয়, তেমনি মাসিক স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়ার পর ভিন্ন ধরনের কিছু সমস্যাও দেখা দেয়।
অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয়রোগ
মাসিক বন্ধ হওয়ার পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। এ কারণে হাড়ে ক্ষয় হতে থাকে। ফলে হাড়ে হাড়ে ব্যথা হয়, সামান্য আঘাতেই হাড় ভেঙে যায়। একবার ভেঙে গেলে সহজে জোড়া লাগে না।
যা করতে পারেন
*. ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন। দুধ ও ছানা খেলেও প্রচুর ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।
*. ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ খেতে হবে।
*. কখনো কখনো কৃত্রিম হরমোন প্রয়োগ করতে হয়। তবে তা দিতে হবে কি না তা ঠিক করবেন চিকিৎসক। তাই প্রয়োজনে তার পরামর্শ নিন।
স্তনের পরীক্ষা কারা করাবেন?
*. ১৮-২০ বছর বয়স থেকে শুরু করে সারাজীবন।
*. যাদের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যান্সারের উদাহরণ রয়েছে।
*. যারা দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খানবা খেয়েছেন।
*. যাদের আগে স্তনে কোনো ব্যথা বা টিউমার ছিল।
কখন করাবেন?
হাত দিয়ে উভয় স্তন ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখবেন, হাতে কোনো চাকা অনুভূত হয় কি না। স্তনবৃন্ত দিয়ে কোনোরূপ নিঃসরণ আসে কি না তাও দেখবেন। সন্দেহজনক কিছু মনে করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।
কেন করবেন?
মনে রাখবেন শতকরা ৯০ ভাগ ক্ষেত্রেই যখন ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়ে, ততক্ষণে তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়। তাই নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষার মাধ্যমে কেউ যদি রোগের প্রাথমিক পর্যায়েই সতর্কহয় তাহলে রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়।
প্যাপ স্মিয়ার
*. ২১ বছর বয়সোর্ধ্ব মহিলা।
*. যাদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে।
*. যারা অনেক বাচ্চা নিয়েছেন বা গর্ভপাত করিয়েছেন।
*. যাদের একাধিক ব্যক্তিরসঙ্গে যৌন সম্পর্ক রয়েছে।
*. যারা বা যাদের স্বামী এইচআইভি পজিটিভ।
কোথায় ও কখন করাবেন?
সব সরকারি হাসপাতালে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম খরচে এই পরীক্ষা করানো হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেএবং জরায়ুতে কোনোরূপ সমস্যা না থাকলে প্রতি তিন বছর পরপর পরীক্ষাটি করাবেন।
কেন করাবেন?
সঠিক সময়ে জরায়ুর সারভিক্সে ক্যান্সার ধরাপড়লে এবং অতি দ্রুত চিকিৎসা আরম্ভ করলে ১০০ ভাগ আরোগ্য লাভও সম্ভব।
ম্যামোগ্রাফি কারা করাবেন?
*. ৪৫ বছর বয়সোর্ধ্ব সব মহিলা।
*. যাদের বংশে স্তন ক্যান্সারের উদাহরণ আছে।
*. যাদের আগে স্তনে কোনো অপারেশন হয়েছে।
কখন করাবেন?
রিপোর্ট স্বাভাবিক থাকলেপ্রতি দুই বছর অন্তর করাবেন।
কেন করাবেন?
স্তনে টিউমার, সিস্ট, অ্যাবসেস, ক্যান্সার বা অন্য কোনো সমস্যা আছে কি না জানতে।

কোন মন্তব্য নেই :