বড় কষ্ট কোমর ব্যথা**ডা. মো. আব্দুল গণি মোল্লাহ part 1
কোমরে ব্যথা বা লো ব্যাক পেইন হতে পারে বহু কারণে।অন্য রোগের লক্ষণও প্রকাশ পেতে পারে কোমরে ব্যথা হিসেবে। এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে যেকোনো বয়সের যে কেউ। বলাহয় প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষইকোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়।আমেরিকান সোসাইটি অব পেইনের মতে, যেসব সমস্যা নিয়ে রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় তার মধ্যে কারণ হচ্ছে কোমর ব্যথা বালো ব্যাক পেইন বা লুমবাগ্যের অবস্থান পাঁচে।
কেন হয় কোমর ব্যথা?
মনে রাখতে হবে, কোমরে ব্যথা কোনো রোগ নয়, রোগেরলক্ষণমাত্র। তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোমর ব্যথার কোনো সুনির্দিষ্টকারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। রোগী সাধারণত কোনো ভারী জিনিস তোলার সময় হঠাৎ করেএ ব্যথাটা অনুভব করে। মেরুদণ্ডের পাশে মাংসপেশি ও লিগামেন্ট আঘাতপ্রাপ্ত হলে অর্থাৎ টান বা সেপ্রইন হলে এই ব্যথাটা অনুভূত হয়। এ ক্ষেত্রে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ব্যথা ভালো হয়ে যেতে পারে। আবার দীর্ঘ মেয়াদে ভোগাতেও পারে। সুস্থ হতে ব্যায়াম ও ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট। যেসব সুনির্দিষ্ট কারণে কোমর ব্যথা হয় তা হলো-
মেকানিক্যাল
*. অস্টিওআর্থ্রাইটিস
*. বয়সজনিত মেরুদণ্ডের ডিস্কের ক্ষয়
*. স্পাইনাল ডিস্ক হারনিয়েশন
*. মজ্জার নালি সরু হয়ে যাওয়া (লাম্বার স্টেনসিস)
*. জন্মগত কারণে মেরুদণ্ডের ত্রুটি বা কোমরের ত্রুটি
*. স্পনডিলাইটিস
*. মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়া
ইনফ্লামেশনের জন্য
*. এনকাইলোসিং স্পনডিলাইটিস
*. রিমাউটয়েড আর্থ্রাইটিস
*. হাড়ের ইনফেকশন বা অস্টিওমায়েলাইটিস
টিউমার
*. হাড়ের টিউমার (প্রাইমারি হতে পারে অথবা শরীরের অন্যত্র ক্যান্সার থেকে হাড়ে ছড়াতে পারে)
*. মজ্জা ও এর আবরণের টিউমার
মেটাবোলিক
*. হাড়ের ক্ষয়রোগজনিত হাড়ভাঙা
*. টিউমার ‘ডি’র অভাবজনিত হাড়ের সমস্যা
মানসিক সমস্যা থেকে
*. টেনশন মায়োসাইটিস সিনড্রম
শরীরের অন্যান্য সমস্যা
*. প্রস্টেট ক্যান্সার
*. তলপেটের সমস্যা
*. কোলন ক্যান্সার
কোমর ব্যথা যখন দুশ্চিন্তার কারণ
*. যদি কোনো দুর্ঘটনা বা আঘাত পাওয়ার পর ক্রমশ কোমরে ব্যথা হতে থাকে এবং ওষুধেও উপশম না হয়।
*. ৫০ বছর বয়সের পর সামান্য আঘাতের পর ব্যথাও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নারীদের এ ক্ষেত্রে হাড়ের ক্ষয়েরকারণে সামান্য আঘাতেও হাড় ভেঙে যায়।
*. কোনো রকম ডায়েটিং ছাড়াই যদি কোমর ব্যথার পাশাপাশি এক মাসের মধ্যে আগের ওজনের তুলনায় ৫ শতাংশ অথবা তিন মাসের মধ্যে আগের ওজনের তুলনায় শরীরের ওজন ১০ শতাংশ কমে যায়।*. যদি অনেক দিন জ্বর থাকেএবং জ্বরের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণপাওয়া না যায়।
*. যেসব রোগী ক্যান্সারে ভুগছে তাদের ক্ষেত্রে কোমর ব্যথা হলে অবশ্যই পরীক্ষা করে দেখতে হবে হাড়ের ক্যান্সার ছড়িয়েগেছে কি না।
*. যারা হাড়ের ক্ষয়রোগে ভুগছে।
*. কোনো কারণে দীর্ঘদিন যারা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ সেবন করছে।
*. যাদের কোমর ব্যথার পাশাপাশি পা শিরশির করা, পা অবশ বা ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব ও মলত্যাগে সমস্যা ইত্যাদি হচ্ছে।
*. যাদের কোমর ব্যথার পাশাপাশি যেকোনো এক পায়ে বা উভয় পায়ে হাঁটতে গেলে ব্যথা হচ্ছে এবং এই ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে।
*. যাদের ব্যথার ওষুধ সেবন ও ব্যায়াম করা সত্ত্বেও ব্যথা ছয় সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হয়েছে।
*. যাদের প্রচণ্ড পেট ব্যথার পাশাপাশি কোমর ব্যথা রয়েছে।
কখন কোমর ব্যথা ভয়ের কারণ নয়
*. দীর্ঘক্ষণ একনাগাড়ে বসে কাজ করলে বা দূরের যাত্রায় ভ্রমণ করে উঠে দাঁড়ালে যদি কোমর ব্যথা হয় সেটাকে স্বাভাবিক মনে করা হয়।
*. যাদের ওজন খুব বেশি তাদের কোমর ব্যথা হয়। এক্ষেত্রে ওজন কমালেই কোমর ব্যথা কমবে। তবে ওজন না কমলে পরে এই ব্যথা স্থায়ী হয়ে যাবে।
*. গর্ভাবস্থায় কোমরে ব্যথা হতে পারে। ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ নারীই প্রেগন্যান্সিতে কোমর ব্যথায় ভোগেন। প্রসবেরপর এই ব্যথা চলে যায়। তবে অনেক সময় সিজারিয়ান অপারেশনের পর কোমর ব্যথা হয়। এমনটি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
*. প্রস্রাবে ইনফেকশন হলেকোমর ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে পরীক্ষারমাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা নিলে কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যায়।
*. ঋতুস্রাব বা পিরিয়ডের সময় কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে।
*. ভাইরাল ফিভার হলে বা জ্বরের পরও কোমর ব্যথা হতে পারে।
*. দীর্ঘক্ষণ উঁচু হিলের স্যান্ডেল পরলে বা দীর্ঘদিন ধরে এমন স্যান্ডেল পরলে।
জানা থাকা ভালো
বিশ্রাম নিলে কোমর ব্যথা হয় না, এ ধারণা ঠিক নয়। যদিও অতিরিক্ত ব্যায়াম বা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষতিকর, কিন্তু স্বাভাবিক কাজকর্ম না করে বিশ্রাম নিলেই যে কোমর ব্যথা হয় না বা কোমরব্যথা ভালো হয়, এটি ঠিক নয়। বরং এক ঘণ্টা হাঁটা, সাঁতার, ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম ইত্যাদি করলে কোমর ব্যথা হয় না। যাদের কোমরে ব্যথা আছে তাদের জন্যও এ ধরনের ব্যায়াম উপকারী।
আরো দেখুন
বড় কষ্ট কোমর ব্যথা part 2
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন