বিবাহ ২

কোন মন্তব্য নেই
বাগদান প্রসঙ্গে বলা যায় যে, একটি ছেলে ও মেয়ের মধ্যে বিয়ের কথা পাকা হওয়ার আগে সম্ভবত কখনো তাদের সাক্ষাৎই ঘটত না। তাছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠানেরআগে বিয়ের সময় অথবা পরে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রেম, বিশ্বাস কোনোকিছুই গুরুত্ব পায় না, প্রত্যেকে চায় নবদম্পতির সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা ও সমৃদ্ধি। এমনকি স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যৌন আকর্ষণও অনেকটা দুর্লভ ব্যাপার ছিল। কারণ তখনকার সাধারণ অবস্থা ছিল পুরুষরা শুধু বৈধ সন্তানের জন্ম দেয়ার উদ্দেশ্যেই তাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবে, আর যৌন পরিতৃপ্তির জন্য বাড়ির বাইরে বারাঙ্গনাদের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখবে। আরো একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক সন্তানের জন্মের পর স্বামী যৌনসঙ্গমের জন্য আর স্ত্রীর কাছে যেত না। এ পরিস্থিতি সত্ত্বেও কিছু স্বামী-স্ত্রী পরসপরের প্রতি গভীর আবেগ অনুভব করত এবং আমৃত্যু একে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত থাকত। এ ধরনের একটি দৃষ্টান্তের উল্লেখপাওয়া যায় জেনোফনের সিম্পোজিয়ামে, যেখানে সক্রেটিস বলছেন, ‘নিকিরাটোস তার স্ত্রীকে আসলেই ভালোবাসে এবং স্ত্রীও তাকে ভালোবাসে বলে আমাকে বলা হয়েছে’।
এভাবেই বিয়ের আয়োজন করা হতো অভিভাবকদের দ্বারা, মুখ্যত পিতা কর্তৃক এবং পিতার অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে পরিবারের নিকটতম পুরুষ সদস্য এই দায়িত্ব পালন করত। স্বামীর পছন্দ নির্ধারিতহতো উপরে বর্ণিত লক্ষণ ও যোগ্যতাসমূহের আলোকে এবংআত্মীয়দের পছন্দকেও গুরুত্ব দেয়া হতো।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, একই মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী ছেলে ও মেয়ে অর্থাৎ ভাই বোন পরসপর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত কি না। এক্ষেত্রে পিতা একজন হলেও তাদের মা যদি ভিন্ন হতো তাহলে তাদের মধ্যে বিয়ে গ্রহণযোগ্য ছিল। একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, থেমিস্টোক্লেসের দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী কন্যা তারসৎ ভাইকে বিয়ে করেছিল, যার জন্ম হয়েছিল এই খ্যাতিমান রাজনীতিবিদের প্রথম স্ত্রীর গর্ভে। আরেকটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন ডেমোসথেনিস। তিনিলিখেছেন যে তার পিতামহ বিয়ে করেছিলেন তার সৎ মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী সৎ বোনকে।পেরিক্লেসও বিয়ে করেছিলেন তার এক আত্মীয়কে। কোনো মেয়ে তার চাচা অথবা মামাকেও বিয়ে করতে পারত। এ ধরনের বিয়েরক্ষেত্রে কাজ করত প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন পরিবারের সম্পত্তি রক্ষার প্রশ্ন জড়িত থাকত। মেয়ের যদি একই পিতার দ্বারা জন্মদানকারী কোনো ভাই না থাকে তাহলে তাকে তার পিতার নিকটতম কোনো পুরুষ আত্মীয়কে বিয়ে করতে হতো,যাতে সম্পত্তি পরিবারের কাছেই থাকে।
বিয়ের ব্যাপারে পিতা-মাতার পছন্দের বাইরে কিছু করা সন্তানের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এটা শুধু আনুগত্যের কারণে নয়,বিয়ে তাদের পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয় জেনেও সমমত হতো এবং তাদের ব্যক্তিগত সুখের প্রশ্ন এতে আদৌ জড়িত থাকত না। কবি মেনানডের বলছেন যে, ‘বিয়ে প্রয়োজনীয় এক অমঙ্গল।’
মেয়েরা বিবাহযোগ্যা হতো ১৬ বছর বয়সে এবং ছেলেরা বিবাহযোগ্য হতো ৩০ বছর বয়সে। হেসিয়ড উপদেশ দিয়েছেন, ‘বিয়ে করে স্ত্রীকে ঘরে আনার বয়স হয়েছে তোমার। কারণ এখন তোমার বয়স ৩০ বছর। বয়স তোমার কমও নয় এবং খুব বেশিও নয়। বিয়ের উপযুক্ত বয়স তোমার। আরো ৪ বছর তোমার স্ত্রীকে পুরোপুরিবিকশিত হতে দাও এবং ৫ম বছরে ঘরে তোল।’ যদিও এই বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনগত কোনো কাঠামো ছিল না, কিন্তু মনে হয় মেয়েরা বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ারআগে তাদের বিয়ে হতো না। পরবর্তীতে রোমেও এই রীতি অনুসৃত হয়েছে। তরুণরা তাদের সামরিক দায়িত্ব প্রতিপালন করার আগে বিয়ে করতে পারত না। রাষ্ট্রের জন্য বিয়ে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।অতএব, এথেন্সে ৪০ বছর বয়সেও যদি কেউ অবিবাহিত থাকত, তাহলে তাকে বিশেষ একটি কর দিতে হতো। অনুরূপএকটি আইন সপার্টাতেও ছিল। সপার্টায় এ আইনের প্রচলন করেছিলেন লাইকারগাস। ক্লাসিক্যাল যুগ ও হোমারের যুগের বিয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পার্থক্য ছিল তরুণী মেয়েদের সতীত্ব। সলোনের আইন অনুসারে তরুণীদের অবশ্যই তাদের বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত কুমারীত্বঅক্ষুণ্ন রাখতে হতো। কুমারীত্ব বজায় রাখার প্রয়োজনেই মেয়েদের তুলনামূলক কম বয়সে বিয়ের নিয়ম স্থির করা হয়েছিল।
বিয়ের এসব শর্ত ছিল অলিখিত, কিন্তু এক ধরনের বৈধ চুক্তি। বলা যায় যে, উপরোক্ত শর্তগুলো পরিপূরণ হলেই ধরে নেয়া যেত যে, বিয়ে কার্যকর হয়েছে। প্রথমে উপহার প্রদান, মেয়ে বা কনেকে সমর্পণ। চুক্তির পর্যায়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যখন হবু স্বামী এবং হবু শ্বশুর কনের বাড়িতে কিছু সংখ্যক সাক্ষীর উপস্থিতিতে করমর্দন এবং দু একটা বাক্য বিনিময় করত। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের শপথই ছিল মূল বিষয়। গ্রিকরা যে তাদের শপথ রক্ষার ব্যাপারে কতটা প্রবল ছিল তা সর্বজনবিদিত। কনে যদি অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকত তাহলে সে হতো শুধু নীরব অংশগ্রহণকারী। বরেরপিতার উপস্থিতি অনিবার্যছিল না। কিন্তু বিয়ের ব্যাপারে পুত্র যে পিতার সমমতি গ্রহণ করেছে তা নিশ্চিত।বিয়ের চুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ যৌতুক। দুই পক্ষের আনুষ্ঠানিক শপথের পর বৈবাহিক দান, যাকনের পিতা বরকে প্রদান করত তার কন্যার ভরণ-পোষণের জন্য, যেহেতু তাকে স্বামীর বাড়িতে কোনো কাজ করতে হবে না। উভয় পক্ষের সমমতিতে এ ধরনের যৌতুকের সামগ্রী এবং তা পরিশোধের সময় স্থির করা হতো।
এই রীতি পালনের দুটি কারণছিল (এখনো গ্রিসে এই রীতিপালন করা হয়, যদিও ১৯৮১ সালে এটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে) বিবাহযোগ্যা কন্যার বিয়ে দেয়ার জন্য পাত্রদের আকর্ষণ এবং প্রবৃত্ত করা। একদিকে এর ফলে ছেলেরা তাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির জন্য আকৃষ্ট হতো এবং অন্যদিকে এতে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা দূর হতো। কারণ বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে পিতা কর্তৃক কন্যার স্বামীকে প্রদত্তসম্পত্তি বা যৌতুক সামগ্রী ফেরত দিতে হতো। স্বামীর মৃত্যুর ক্ষেত্রেও যৌতুক ফিরিয়ে দিতে হতো এবং এরপর সেই সামগ্রী দেয়া হতো সংশ্লিষ্ট মহিলার দায়িত্বগ্রহণকারী তার সন্তান অথবা তার পিতার পরিবারের কোনো সদস্যকে। অথবা তাদের অনুপস্থিতিতেতার নিকটতম কোনো আত্মীয়কে।
প্রাচীন গ্রিসে যৌতুক হিসেবে দেয়া হতো অর্থ অথবা জমি কিংবা এক সাথে দুটোই। ক্লাসিক্যাল যুগেএথেন্সের একটি মেয়ের জন্য যৌতুক দিতে হতো এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার ড্রাচমা পর্যন্ত।

আরো
পড়তে থাকুন ৩

কোন মন্তব্য নেই :