আমাদের দেশের একটি মেয়েরযেদিন বিয়ে হয়, সেদিনই তিনি তার নামটি হারান। তার পরিচয় তখন তিনি বাড়িরবউ। প্রথম প্রথম পরিবারের সদস্যরা তার সুখ-সুবিধায় খোঁজ-খবর নিলেও যতই দিন গড়াতে থাকে, তার অবস্থাটা ততই পাল্টাতে থাকে। সংসারের সব দায়দায়িত্ব ও অন্যদের সুখ-সুবিধা দেখার দায়িত্বও তার কাঁধে এসে চাপে এবং তাকে হাসিমুখে তা পালন করতে হয়। সংসারেরদায়িত্ব আর কাজের চাপে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েন। কাজের চাপেই হোক বা অন্য যেকোনো কারণেই হোক মাঝেমধ্যে তার মন খারাপ হতেই পারে। কিন্তু যদি কোনো কারণে তার মন মেঘাচ্ছন্ন হয়, তিনি যদি মুখ কালো করে বসে থাকেন, তাহলে পরিবারের সদস্যরা কি সেটা মেনে নিতে চায়? কোণাপাড়ার গৃহবধূ সীমা বলেন, ‘শাশুড়ি, স্বামী বা অন্য যে কারো মন খারাপ থাকলে আমি তা বোঝার চেষ্টা করি, তাদের হাতের কাজগুলো করে দিই বা তারা যা চান করি। কিন্তু আমার শাশুড়ি আমাকে কখনোই পাত্তা দেন না, এমনকি জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করেন না। যদিও আমার স্বামী আমার ব্যাপারে অনেক সহানুভূতিশীল, তবুও আমাকে বুঝি বেশি পাত্তা দিয়ে ফেলেছে, এটা নিয়ে আমার, তার আর শাশুড়ির মধ্যে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই আমি মন খারাপ করতে বা কোনো সমস্যার কথাবলতে এখন ভয় পাই।’
যেহেতু নারী শিক্ষার হার বাড়ছে, তারা বিভিন্ন কাজেজড়িয়ে পড়েছেন তাই তাদের অবস্থাটা নাকি খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষ করে শাশুড়িদের মতে। আজিমপুর কলোনির একজন শাশুড়ি বলেন, ‘আমরা যখন বউছিলাম, তখন তো শাশুড়ির ভয়ে সব সময় কাঁটা হয়ে থাকতাম, কিন্তু এখন তো সেঅবস্থা নেই। আমার বউমা তোচাকরি করে। সংসারের কাজ করার খুব বেশি সময় পায় নাবলে আমাকেই বেশির ভাগ কাজকরতে হয়। এমনিতেই তো অফিসথেকে ক্লান্ত হয়ে আসে, তাই আমি কিছু বলি না। তারওপর যদি মুখ ভার করে থাকে, তাহলেও তো ভালো লাগে না।’
গৃহবধূরাও মনে করেন, চাকরিজীবী বধূরা অনেক বেশি সুবিধা পান। সংসারের দায়িত্ব তাদের খুব বেশি পালন করতে হয় না। কিন্তু সত্যিই কি তাই! চাকরিজীবী লায়লা স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন মালিবাগে। তার ভাষায়, ‘চাকরি আর সংসার সামলাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে মন খারাপ করব কখন? মন খারাপ বলে এখন হয়তো বসে থাকলাম, কিন্তু পরে তো সেই কাজ আমাকেই করতে হবে। অসুস্থ হলে তবু কথা ছিল, কিন্তু মন খারাপ, তাই বলে কোনো কাজ করতে পারব না-এ ধরনেরকথা আমাদের দেশে ভাবা যায়?
তবে শুধু হতাশার কথা নয়, আমরা অনেক সময় আশার বাণীওশুনতে পাই। মিরপুরের এক বধূ শামীমা বলেন, ‘কোনো কারণে আমার মন খারাপ হলে আমার স্বামী আমাকে অনেকটা সময় দেন। যদি স্বামীর আচরণে কষ্ট পাই, তাহলে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে নেন এবং আমাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করেন। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর-ননদরাও আমাকে সাহায্য করে।’
এটা অবশ্যই সুখের কথা। তবে সব গৃহবধূর অবস্থা এটা নয়, বরং বেশির ভাগই এখনো সেই তিমিরেই আছেন। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক আলোকপ্রাপ্ত পরিবারের শিক্ষিত সদস্যরাও তাদের ‘বউদের আলোকিত করতে চান না’!
এ সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানে শিক্ষক মালেকা পারভীন বলেন, ‘আমাদের দেশের গৃহিণীদের মন-মানসিকতা, মূল্যবোধ বা মতামতকে তেমন মূল্য দেয়া হয় না। পরিবারের সব সদস্যই ভাবেন, তারা শুধু সংসারেরকাজই করবেন। তাদের অন্য কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকতে নেই। অনেক সময় তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো বাপের বাড়িতেও যেতে দেয়া হয় না।তারা শুধু অন্যদের সুখী করবেন আর সংসারের শোভা বাড়াবেন। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যআমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
‘মন খারাপ’ ভাবটা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তখন অনেক সময় গৃহিণী মাথাব্যথা, ঘাড়-পিঠ ব্যথা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কথা বলেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় তেমন কিছুই ধরা পড়ে না। তখন তাদের অবস্থাআরো খারাপ হয়। পরিবারের সদস্যরা এটাকে কাজ না করার অজুহাত মনে করেন। ব্যাপারটা যে তা নয়, তা তারা বুঝতে পারেন না। রামপুরা নিবাসী গৃহবধূ নাজিয়া বলেন, ‘যেখানে শারীরিক অসুস্থতাই গ্রহণযোগ্য নয়, সেখানে মনখারাপ বলে কাজ করব না বা সেটা প্রকাশ করব, তার কোনো সুযোগ নেই। পরিবারের কোনো সদস্যই খোঁজ করে না বাড়ির বউটির মন খারাপ কেন বা কী সমস্যা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে মালেকা পারভীন আরো বলেন, ‘মেয়েরা এমনিতেই বিষণ্নতায় বেশি ভোগে। তার ওপর যদি তাদের মন খারাপ থাকে এবং দীর্ঘদিন তা চলতে থাকে তাহলে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সেখান থেকে শারীরিক সমস্যা তৈরি হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ যখন তাদের কেউ মূল্য দেয় না তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে, নিজেদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। পারিবারিক সম্পর্কগুলো তাদের কাছে আলগা হয়ে পড়ে বলে তাদের কোনো কিছু করারইচ্ছাটাও মরে যায়, বাইরেরজগতের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। নিজেদের প্রতি বড় বেশি উদাসীন হয়ে পড়ে। মোটকথা, তাদের জীবন সম্পর্কেধারণাটাই পাল্টে যায়।
মনোজগত
যেহেতু নারী শিক্ষার হার বাড়ছে, তারা বিভিন্ন কাজেজড়িয়ে পড়েছেন তাই তাদের অবস্থাটা নাকি খুব দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। বিশেষ করে শাশুড়িদের মতে। আজিমপুর কলোনির একজন শাশুড়ি বলেন, ‘আমরা যখন বউছিলাম, তখন তো শাশুড়ির ভয়ে সব সময় কাঁটা হয়ে থাকতাম, কিন্তু এখন তো সেঅবস্থা নেই। আমার বউমা তোচাকরি করে। সংসারের কাজ করার খুব বেশি সময় পায় নাবলে আমাকেই বেশির ভাগ কাজকরতে হয়। এমনিতেই তো অফিসথেকে ক্লান্ত হয়ে আসে, তাই আমি কিছু বলি না। তারওপর যদি মুখ ভার করে থাকে, তাহলেও তো ভালো লাগে না।’
গৃহবধূরাও মনে করেন, চাকরিজীবী বধূরা অনেক বেশি সুবিধা পান। সংসারের দায়িত্ব তাদের খুব বেশি পালন করতে হয় না। কিন্তু সত্যিই কি তাই! চাকরিজীবী লায়লা স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন মালিবাগে। তার ভাষায়, ‘চাকরি আর সংসার সামলাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয় সেখানে মন খারাপ করব কখন? মন খারাপ বলে এখন হয়তো বসে থাকলাম, কিন্তু পরে তো সেই কাজ আমাকেই করতে হবে। অসুস্থ হলে তবু কথা ছিল, কিন্তু মন খারাপ, তাই বলে কোনো কাজ করতে পারব না-এ ধরনেরকথা আমাদের দেশে ভাবা যায়?
তবে শুধু হতাশার কথা নয়, আমরা অনেক সময় আশার বাণীওশুনতে পাই। মিরপুরের এক বধূ শামীমা বলেন, ‘কোনো কারণে আমার মন খারাপ হলে আমার স্বামী আমাকে অনেকটা সময় দেন। যদি স্বামীর আচরণে কষ্ট পাই, তাহলে তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে নেন এবং আমাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করেন। আমার শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর-ননদরাও আমাকে সাহায্য করে।’
এটা অবশ্যই সুখের কথা। তবে সব গৃহবধূর অবস্থা এটা নয়, বরং বেশির ভাগই এখনো সেই তিমিরেই আছেন। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও অনেক আলোকপ্রাপ্ত পরিবারের শিক্ষিত সদস্যরাও তাদের ‘বউদের আলোকিত করতে চান না’!
এ সম্পর্কে মনোবিজ্ঞানে শিক্ষক মালেকা পারভীন বলেন, ‘আমাদের দেশের গৃহিণীদের মন-মানসিকতা, মূল্যবোধ বা মতামতকে তেমন মূল্য দেয়া হয় না। পরিবারের সব সদস্যই ভাবেন, তারা শুধু সংসারেরকাজই করবেন। তাদের অন্য কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকতে নেই। অনেক সময় তাদের নিজেদের ইচ্ছামতো বাপের বাড়িতেও যেতে দেয়া হয় না।তারা শুধু অন্যদের সুখী করবেন আর সংসারের শোভা বাড়াবেন। কিন্তু এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যআমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
‘মন খারাপ’ ভাবটা যদি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে তখন অনেক সময় গৃহিণী মাথাব্যথা, ঘাড়-পিঠ ব্যথা বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কথা বলেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষায় তেমন কিছুই ধরা পড়ে না। তখন তাদের অবস্থাআরো খারাপ হয়। পরিবারের সদস্যরা এটাকে কাজ না করার অজুহাত মনে করেন। ব্যাপারটা যে তা নয়, তা তারা বুঝতে পারেন না। রামপুরা নিবাসী গৃহবধূ নাজিয়া বলেন, ‘যেখানে শারীরিক অসুস্থতাই গ্রহণযোগ্য নয়, সেখানে মনখারাপ বলে কাজ করব না বা সেটা প্রকাশ করব, তার কোনো সুযোগ নেই। পরিবারের কোনো সদস্যই খোঁজ করে না বাড়ির বউটির মন খারাপ কেন বা কী সমস্যা হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে মালেকা পারভীন আরো বলেন, ‘মেয়েরা এমনিতেই বিষণ্নতায় বেশি ভোগে। তার ওপর যদি তাদের মন খারাপ থাকে এবং দীর্ঘদিন তা চলতে থাকে তাহলে তাদের মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সেখান থেকে শারীরিক সমস্যা তৈরি হওয়া অসম্ভব নয়। কারণ যখন তাদের কেউ মূল্য দেয় না তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে, নিজেদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। পারিবারিক সম্পর্কগুলো তাদের কাছে আলগা হয়ে পড়ে বলে তাদের কোনো কিছু করারইচ্ছাটাও মরে যায়, বাইরেরজগতের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। নিজেদের প্রতি বড় বেশি উদাসীন হয়ে পড়ে। মোটকথা, তাদের জীবন সম্পর্কেধারণাটাই পাল্টে যায়।
মনোজগত
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন