কার গুলিতে মৃত্যু গাদ্দাফির?
সির্তে, লিবিয়া, অক্টোবর ২২ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/রয়টার্স)- লিবিয়ার এক সময়কার লৌহশাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির নাটকীয় মৃত্যুর পর তার রক্তাক্ত ছবি টেনে নিয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষুব্ধ যোদ্ধারা। দ্রুতই তা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে।নিজ জন্মশহর সির্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন গাদ্দাফি। কিন্তু কার গুলিতে নিহত হলেন তিনি?
এ নিয়ে নানাজন নানা কথা বলছে। এনটিসি বাহিনীর এক যোদ্ধার কথায়, গাদ্দাফিরই এক রক্ষী তাকেবুকে গুলি করে।
অন্যদিকে, এনটিসি কর্মকর্তা অব্দুল মজিদ ম্লেগতা বলছেন, কয়েক ঘন্টা যুদ্ধ চলার পর সির্তে গাদ্দাফি কোনঠাসা হয়ে পড়েন এবং এনটিসি বাহিনীর গুলিতে আহত হয়ে পরে মারা যান।
লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, গাদ্দাফি আটক হওয়ার পরতার সমর্থক এবং সরকারি যোদ্ধাদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হওয়ায় ক্রসফায়ারে মাথায় গুলি লেগে তিনি নিহত হন। এনটিসি তাকে মারার কোনো নির্দেশ দেয়নি।
তার মৃত্যু নিয়ে একেকজনের একেককথায় আসলেই কি ঘটেছিলো তা এখনো পরিস্কার না। কিন্তু ঘটনাটি সম্পর্কে অনেকটাই ধারণা পাওয়া যায় গাদ্দাফির শেষ সময়ের একটি ভিডিও ফুটেজ থেকে।
সির্তের কাছাকাছি গাদ্দাফি যখনবন্দি হন তখনও তিনি জীবিত ছিলেন।
টেলিভিশনে স¤প্রচারিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হতবিহ্বল, আহত গাদ্দাফিকে একটি গাড়ির বনেট থেকে চুল ধরে টেনে হিঁচড়ে মাটিতে নামানো হচ্ছে।
এসময় কেউ একজন চিৎকার করে বলছিলো, "তাকে বাঁচিয়ে রাখো, তাকে বাঁচিয়ে রাখো।" এরপর ফুটেজে আর গাদ্দাফিকে দেখা যায়নি, শুধু গুলির শব্দ পাওয়া যায়।
এনটিসির এক ঊর্ধ্বতন সূত্র রয়টার্সকে জানায়, "তারা তাকে জীবিত ধরে। এরপর তারা তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় পেটায় এবং পরে হত্যা করে। তিনি সম্ভবত তাদেরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।"
গাদ্দাফি একসময় তার ৪২ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বিদ্রোহীদের 'ইদুর' সম্বোধন করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গাদ্দাফিকেই খুঁজে পাওয়া গেছে ইঁদুরের মতো গর্তে লুকিয়ে থাকাঅবস্থায়।
ময়লা, নোংরা ড্রেনের পাইপে তাকেখুঁজে পাওয়ার কথা এর আগে জানিয়েছে এনটিসি বাহিনীরই এক যোদ্ধা।সির্তে সেই পাইপের পাশে দাঁড়িয়ে ২৭ বছর বয়সী ওই যোদ্ধার ক্ষেদোক্তি, "তিনি আমাদেরকে ইঁদুর বলেছিলেন। কিন্তু দেখুন আমরা তাকে কোথায় খুঁজে পেলাম।"
মাঠ পর্যায়ের সরকারি যোদ্ধারা গাদ্দাফির জীবনের শেষ মুহূর্তের বর্ণনায় বলেছে, ওই সময়টিতে লড়াই চলছিলো।
গাদ্দাফি এবং তার কিছু অনুগত লোকজন পালিয়ে গিয়ে ড্রেনের পাইপে আশ্রয় নেয়। তাদের দিকে প্রথমে গুলি ছুড়লে তাতে কোনো কাজ হয়নি। এরপর তারা পায়ে হেঁটে ওই পাইপে ঢোকে।
ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে সালেম বাকির নামের এক যোদ্ধা বলেন, "গাদ্দাফির এক লোক বেরিয়েএসে চেঁচিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বলে। কিন্তু আমাকে দেখামাত্র সে গুলি করতে শুরু করে। তারপর আমার ধারণা, গাদ্দাফি তাকে থামতে বলেছিলেন। লোকটি বললো, আমার প্রভু এখানে, তিনি আহত।"
"আমরা তখন ভেতরে গিয়ে গাদ্দাফিকে বের করে নিয়ে আসি। তিনি বলছিলেন, কি হলো? কি হলো? হচ্ছেটা কি? আমরা তখন তাকে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুলি। ধরা পড়ার সময় তার পায়ে এবং পিঠে জখমছিলো।"
গাদ্দাফির মৃত্যু নিয়ে নানাজন নানা কথা বললেও গাদ্দাফিকে আটককরার অভিযানে অংশ নেওয়া যোদ্ধারা বাকিরেই বক্তব্যই নিশ্চিত করেছে।
এনটিসি'র আরেক কর্মকর্তাও গাদ্দাফিকে পিটানোর পর তাকে মেরে ফেলার নৃসংশ ঘটনা বর্নণা করেছেন। কিছু ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে গাদ্দাফির নিথর দেহ এম্বুলেন্সে তোলা হচ্ছে। গাদ্দাফিকে আটকের অভিযানে অশং নেওয়া আরেক যোদ্ধা তার (গাদ্দাফি) কাছ থেকে কেড়ে নেওয়াএকটি সোনালি পিস্তলও দেখিয়েছে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/বিসিএস/এলকিউ/২১০১ঘ.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন