গাদ্দাফি নিহত
কোন মন্তব্য নেই
মানবজমিন ডেস্ক: লিবিয়ার লৌহমানব কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। গতকাল নিজ জন্মশহর সির্ত-এ দেশটির ন্যাশনাল ট্রানজিশনাল কাউন্সিল(এনটিসি)’র যোদ্ধাদের হাতে তিনি প্রাণ হারান। লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এনটিসি’র প্রধানমন্ত্রী জিবরিল এ খবর নিশ্চিত করেছেন। গাদ্দাফির মৃতদেহ মিসরাতার একটি মসজিদে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা এপি’কে উদ্ধৃত করে বিবিসি এ খবর দিয়েছে। এ অভিযানে তার ছেলে মুতাসিমও নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে কোন কোন সূত্র জানিয়েছে, তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের একটি বিছানায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে এবং তিনি জীবিত আছেন। এর আগে মারাত্মক আহত অবস্থায় গাদ্দাফিকে আটক করা হয়। তিনি পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। কোন কোন খবরে বলা হয়, তিনি মারা গেছেন। মোবাইলে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করে কোন কোন ওয়েবসাইট। তাতে গাদ্দাফির মতো একজনকে দেখানো হয়। তার মাথা দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কিন্তু ওই ছবিটি গাদ্দাফির কিনাতা নিয়েও সৃষ্টি হয় ধূম্রজাল। পরে এনটিসি কর্মকর্তারা গাদ্দাফি নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। ত্রিপোলি থেকে বিবিসি’র সাংবাদিক ক্যারোলাইন হাউলি বলছেন, লিবিয়ার অনেক নেতাই এখন স্বীকার করছেন গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন। এনটিসি’রযোদ্ধা মোহাম্মদ আল বিবি বলেছেন, ধরা পড়ার সময় গাদ্দাফি তাকে গুলি না করতে অনুনয় করতে থাকেন। তিনি বলেন- ‘ডোন্ট শুট, ডোন্ট শুট’। এরপরেই গাদ্দাফি আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করলে তিনি কিভাবে পায়ে গুলিবিদ্ধ হলেন- এমন প্রশ্নের কোন জবাব নেই। লিবিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্যমন্ত্রী মাহমুদ শাম্মাম বলেছেন, তার যোদ্ধারা তাকে বলেছেন যে- তারা গাদ্দাফির মৃতদেহ দেখেছেন। তিনি বলেছেন, গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন কিনা তা এনটিসি নেতারা ঘোষণা করবেন। অন্য কর্মকর্তারা বলছেন, গাদ্দাফি নিহত হয়েছেন।। এনটিসি’রপ্রধান মুস্তাফা আবদুল জলিলের গত রাতেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার কথা। ওদিকে ইন্টারনেটে একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এনটিসি’রযোদ্ধারা গাদ্দাফির মৃতদেহ দেখানোর চেষ্টা করছে। বার্তা সংস্থা এএফপি’র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই ভিডিওতে এনটিসি’র বিপুল সংখ্যক সেনাকে দেখা গেছে।তারা খাকি পোশাক পরা একটি মৃতদেহ ঘিরে উল্লাস করছে। এনটিসি’র এক কর্মকর্তা আবদেল হাফেজ গোগা এএফপিকে বলেছেন, আমরা বিশ্ববাসীকে বলতে চাই, গাদ্দাফি বিপ্লবীদের হাতে নিহত হয়েছেন। এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এটার মধ্য দিয়ে স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে। গাদ্দাফি তার পরিণতি ভোগ করেছেন। গাদ্দাফিকে আটক করার পরমিসরাতা শহরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। এনটিসি যোদ্ধারা বলেছেন, তাকে যখন আটক করা হয় তখনতার সঙ্গে ছিল একটি সোনালি রঙের পিস্তল। তিনি ছিলেন খাকি রঙের একটি পোশাক পরা।
মধ্য আগস্টে ন্যাটো বাহিনী ও এনটিসি’র যোদ্ধারা রাজধানী ত্রিপোলিকে যেন জালে ঘিরে ফেলে।তারপর থেকেই দৌড়ের ওপর ছিলেন গাদ্দাফি ও তার পরিবার। এর মধ্যে অনেকবারই বলা হয়েছে, গাদ্দাফি দেশ ছেড়ে পাশের আলজেরিয়াতে চলে গেছেন। কিন্তু গাদ্দাফি বলেছিলেন, তিনি নিজের দেশ ও জনগণকে ছেড়ে যাবেন না। তিনি সেই কথাই রেখেছেন। নিজের মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। গতকাল গাদ্দাফি আটক হওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে বিশ্বের বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেল তাদের নিয়মিত অনুষ্ঠান স্থগিত করে দেয়। এর পরিবর্তে তারা ব্রেকিং রিপোর্ট হিসেবে ওই খবর প্রচার করতে থাকে। ইন্টারনেটে ওয়েবসাইটগুলোতে খবর সন্ধানীদেরজ্যাম লেগে যায়। ওদিকে গাদ্দাফিকে আটক ও মারা যাওয়ার খবরে লিবিয়া যেন আনন্দে ভাসছে।মানুষজন ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। রাতের লিবিয়া যেন কাল জেগে ছিল। সারারাত উল্লাস করেছে তারা। রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির চালকরা সমস্বরে হর্ন বাজিয়ে আনন্দ প্রকাশ করতে থাকে। কেউ কেউ আনন্দ-আবেগে কেঁদে ফেলেন। ওদিকেকোন কোন সংবাদে বলা হয়, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি ঘটনার সময় একটি ব্যাংকারে লুকিয়ে ছিলেন। তার পরনে ছিল খাকি সামরিক পোশাক। কোন কোন সংবাদে বলা হয়, গাড়ি বহর নিয়ে পালানোর সময় ন্যাটোর বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন গাদ্দাফি। ঘটনা এত দ্রুতপাল্টাচ্ছিল যে, কোন খবর সত্যি তা নির্ধারণ করাই কঠিন হয়ে পড়ে। ওই অভিযানে শুধু গাদ্দাফিই ধরা পড়েননি, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুসা ইব্রাহিমও ধরা পড়েছেন। নিহত হয়েছেন গাদ্দাফির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবু বকর ইউনিস জাবের। এ ঘোষণা দিয়েছেন এনটিসি কমান্ডার আবদুল হাকিম আলজলিল। গতকাল লিবিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থাপক হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে বলেন, এটাকোন সংবাদ নয়, আমরা যে খবর দিচ্ছি তা খুশির খবর। এনটিসি যোদ্ধারা গতকালই গাদ্দাফির জন্মশহর সির্ত দখল করে নেয়। আর এদিনই চূড়ান্ত পরাজয় হয় গাদ্দাফির। ৪২ বছর যিনি দেশ শাসন করে জনগণের মনের মাঝে স্থান করে নিয়েছিলেন, তিনি এখন পতিত হলেন আস্তাকুঁড়ে। লিবিয়ার মানুষের কাছে এখন তার একটিই পরিচয়- তিনি স্বৈরশাসক।
post by www.mzamin.com

কোন মন্তব্য নেই :