জান্নাতে সাক্ষাৎ হবে - শিক্ষণীয় বিষয়

কোন মন্তব্য নেই
জান্নাতে সাক্ষাৎ হবে
ইবনে মুযাহিমের সাথে এই বক্তব্যের
পর তাকে বিদায় জানিয়ে যুবক
বলেঃ আল্লাহপাক আপনাকে আমার
সাথে যেন জান্নাতে সাক্ষাত করান এই
মুনাজাত করি। সেখানে সাক্ষাতের পর
আর বিচ্ছেদ হবে না। সেখানে কোন
কষ্ট নেই, কোন চিন্তাও নেই। এই
বলে যুবকটি পুণরায় অদৃশ্য হয়ে যায়।
শিক্ষণীয় বিষয়
(ক) জুমার রাত্রির বরকত ঃ জুমআর
রাত্রি অত্যন্ত বরকতময় রাত্রি।
ইবাদত-রিয়াজত ও আল্লাহর
দরবারে মুনাজাত করার রাত্রি।
ইবনে মুযাহিম এই রাত্রিতে মুনাজাতের
আশায় মসজিদে পৌঁছেন এবং যুগশ্রেষ্ঠ
ওলী ঐ যুবকের সাক্ষাত লাভে ধন্য
হন। যুবকের মুনাজাত ও
ক্রন্দনে আকৃষ্ট হয়ে তিনি নিজেও
আল্লাহ পাকের দরবারে ক্রন্দন
করেন। বস্তুতঃ এজন্যই আল্লাহ
ওয়ালাদের সহচর্য লাভের প্রতি গুরুত্ব
আরোপ করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন ও
হাদীসে এর বিশেষ গুরুত্ব
বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু আজ
মুসলমানদের মধ্যে নামাযের গুরুত্বই
নেই, জুমার রাত্রির গুরুত্ব
আসবে কোথা থেকে? যারা দ্বীনদার
তাদের মধ্যেই বুযুর্গদের সহচর্য
অবলম্বনের মন-মানসিকতা নেই,
সুতরাং অন্যদের মধ্যে এবং যুবকদের
মধ্যে এর গুরুত্ব আসবে কোথা থেকে?
হে যুবক ভাইগণ! যাই করেছ,
জীবনকে ধ্বংস করো না। হাতে সময়
বেশী নেই। বৃদ্ধকালে দেহ দূর্বল
হয়ে যাবে, শক্তি থাকবে না।
সুতরাং যুবক বয়সে মসজিদমুখী হও
এবং ইবনে সুলাইমানের মত
মসজিদে হাজির হয়ে নতশীর হও। স্বীয়
কৃতকর্মের জন্য আল্লাহর
দরবারে ক্ষমাপ্রার্থী হও। আল্লাহর
মারিফাত কামনা করে মুনাজাত কর।
তিনি বড় দয়ালু, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।
প্রার্থনাকারীদেরকে বঞ্চিত করেন না,
তোমাদেরকেও বঞ্চিত করবেন না।
(খ) আল্লাহর উপর ভরসা ঃ এই
যুবকের আধ্যাত্মিক সফলতার
পিছনে যেমন ছিল তার সাধনা,
প্রার্থনা, উদ্যম ও প্রেরণা;
তেমনি ছিল আল্লাহর সত্ত্বার
প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস ও অগাধ ভরসা।
কুফার জামে মসজিদে জুমার
রাত্রে আল্লাহ পাকের
কাছে মুনাজাতে তার বক্তব্যই এর
বাস্তব প্রমাণ। তার
বক্তব্যে ফুটে উঠেছে যে,
যে ব্যক্তি আল্লাহর ভালোবাসা ও
মুহাব্বতে স্বীয় অন্তরকে নূরান্বিত
করেছে তার জন্য ভিন্ন কিছুর
প্রয়োজন হয় না। সৃষ্টির প্রতি তার
আকর্ষণ থাকে না। তার দৃষ্টি কেবল
আল্লাহর সত্ত্বার উপর আরোপিত
থাকে, তার প্রতিই সে ভরসাশীল হয়।
বস্তুতঃ আত্মিক এই ভরসাই যুবকের
জন্য সাফল্যের কারণ হয়েছে। কিন্তু
আজ যুব সমাজ বস্তুমুখী, প্রগতিবাদী।
সফলতা অর্জনে তারা যে সম্পূর্ণ
ব্যর্থ হতে চলেছে তা আর অস্পষ্ট
নয়। তাই আমি আহ্বান জানাচ্ছিÑ
হে যুবক ভাইগণ!
তোমরা ইবনে সুলাইমানের
জীবনকে পাথেয় বানাও, ধ্বংসের পথ
থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখ।
(গ) মুনাজাতের গুরুত্ব ঃ আল্লাহ
পাকের নিকট মুনাজাত ও
প্রার্থনা মুমিনদের বড় হাতিয়ার।
বিশেষ করে শেষ রাত্রের মুনাজাত। এ
সময় অসংখ্য আল্লাহর ওলীগণ
আল্লাহর দরবারে হাত
তুলে কান্নাকাটি করে, মুনাজাতরত হয়।
আল্লাহ পাক এই সময়ে জামাল
দয়ার্দ্রতার হালতে থাকেন, বান্দার
প্রতি ক্ষমা ও করুণা বর্ষণ
করে থাকেন। এ সময়ে ঘুমিয়ে থাকা,
গান-বাদ্য-তামাশা দেখা এবং আমোদ-
প্রমোদে লিপ্ত থাকা বঞ্চিত হওয়ার
কারণ হয়ে থাকে। এ সময়ে স্বামী-
স্ত্রী মিলন থেকে বিরত
থেকে উভয়ে মিলে আল্লাহর
দরবারে ইহকাল-পরকালের কল্যাণ
কামনা করা খুবকই প্রয়োজন। এই
যুবকের সাফল্যময় জীবনের অন্যতম
উপায় ছিল মুনাজাত। যুব সমাজকে তার
জীবনের এই বৈশিষ্ট্যটিকে পাথেয়
করা বাঞ্ছনীয়।
(ঘ) ভেদ প্রকাশ করতে নেই ঃ সুলুক
অর্থাৎ আধ্যাত্মিক সাধনার পথ
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এই পথ গভীর
সমুদ্রের পথ। এটা পানির সমুদ্র নয়,
যার তলা বা সীমা আছে। বরং এই পথ
হচ্ছে আল্লাহর মারিফাত ও ভেদের
আসীম সমুদ্র পথ। এ সমুদ্র
পাড়ি দেয়া অত্যন্ত কঠিন। এই
সমুদ্রে অনেকেই নৌকা ও ষ্টীমার
নিয়ে যাত্রা শুরু করে, কিন্তু
ওপারে যেতে সক্ষম হয় মাত্র
হাতে গোনা কিছু লোক। এই পথে চলার
সময় অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন
হতে হয়। বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়।
সার্বাধিক বাধা হচ্ছে মারিফাতের ভেদ।
আধ্যাত্মিক সাধনায় অর্জিত ভেদের
জ্ঞান লাভ
করে যারা আত্মহারা হয়ে পড়ে, নিজের
মধ্যে আমিত্ব ভাব অনুভব করে,
তারা মারিফাতের সমুদ্রে ডুবে মরে,
কিনারায় যেতে সক্ষম হয় না। আর
যারা ভেদের বিষয়বস্তুকে গোপন
করতে পারে কেবল তারাই
তীরে ভিড়তে পারে। এজন্য আল্লাহর
ওলীগণ মারিফাতের ভেদ
এরূপভাবে গোপন করে রাখেন যেমন
কুমারী মেয়েরা তাদের
ঋতুস্রাবকে গোপন করে রাখে।
বস্তুতঃ আল্লাহর ওলীগণ
নিজেদেরকে এমন গোপন করে রাখেন যে,
লোকেরা তাদেরকে পাগল-বেওকুফ
এবং বুরবক মনে করে থাকে। এই
যুবকের আধ্যাত্মিক সাফল্যের
পেছনেও এই সত্যটি কাজ করেছে। তাই
ইবনে মুযাহিমের বারবার আবেদনের
পরও ভেদ
প্রকাশে তিনি অসম্মতি প্রকাশ
করেন।
(ঙ) বুযুর্গদের সহচর্য ঃ আতরের
দোকানে বসলে আতরের
সুগন্ধি পাওয়া যায়। আর নাপাকীর
কাছে বসলে নাপাকীর গন্ধ পাওয়া যায়।
অনুরূপ আল্লাহর ওলীদের
সহচর্যে উঠা-বসা করলে আল্লাহর
মারিফাতের সুগন্ধি পাওয়া যায় আর
ভণ্ডদের সহচর্যে বসলে শয়তানের
গন্ধ পাওয়া যায়। এজন্য আল্লাহর
রাসূল সতর্ক করে দিয়ে ইরশাদ
করেছেন, “তোমরা একাকী থাকবে,
কিন্ত অসৎ লোকের সংশ্রবে যেও না।
আর যদি সৎ লোকের সন্ধান পাও, তার
সহচর্য অবলম্বন কর,
একা থেকো না।” এই স্বভাব
ইবনে মুযাহিমকে আধ্যাত্মিক সাধনায়
উর্ধ্বে উঠতে সহায়তা করেছিল।
সেজন্য বয়সে যুবক হলেও
ইবনে সুলাইমানের সান্নিধ্য লাভের
কামনায় তিনি আল্লাহর নিকট মুনাজাত
করেছিলেন। আল্লাহ পাক তার মুনাজাত
কবুল করেছিলেন। তাই বায়তুল্লাহর
সামনে যুবকের সাক্ষাত লাভ
করলে যুবক তাকে শেষ কথা বলে যায়
যে, “তোমার সাথে জান্নাতে মিলন হবে,
সেই মিলনের পর আর বিচ্ছেদ হবে না।’
আল্লাহ পাক আমাদেরকে বুযুর্গানের
দ্বীনের সহচর্য দান করুন।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।
এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।
প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next post নয়. নবী বংশের যুবক

কোন মন্তব্য নেই :