শাক-সবজি প্রতিদিন ইলা রহমান

কোন মন্তব্য নেই
আমাদের শরীরের সব ধরনের কাজে ভিটামিন একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। দেহেরবিপাকজনিত সব কাজে ভিটামিন সক্রিয় অংশগ্রহণকরে এবং সঠিকভাবে বিপাকক্রিয়া পরিচালনা করে। ফলে ভিটামিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা শরীরের জন্য দরকার। ভিটামিন ছাড়াও কিছু খনিজ উপাদানও শরীরের জন্য খুব কাজের।
এসব ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যে কেবল শরীরের কাজে লাগে তাই নয়, এসব উপাদানের অভাবে শরীরে নানা ধরনের সমস্যাও দেখা দেয়।
ভিটামিন এবং প্রয়োজনীয় এসব খনিজ উপাদান আমরা কিন্তু খুব সহজেই পেতে পারি। একটু সতর্ক হয়ে আমরা যদি আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতৈরি করি তাহলে ভিটামিন ওখনিজ লবণের অভাবজনিত সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ভিটামিনের সবচেয়ে ভালো উৎস শাকসবজি ও ফলমূল। খনিজ লবণের ক্ষেত্রে প্রাণিজ খাদ্য যেমন মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, দুধ ইত্যাদি খুবই ভালো উৎস। তবে শাকসবজি থেকেও আমরা তা পেতে পারি। অর্থাৎ এসবউপাদানের সস্তা ও সহজলভ্য উৎস হচ্ছে শাকসবজি। খাদ্যে বৈচিত্র্য আনা ছাড়াও শাকসবজি পুষ্টির দিক দিয়েও গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্য হিসেবে শাকসবজি ও ফলমূলের প্রধান কাজ হচ্ছে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রক্ষার জন্য ভিটামিন, খনিজ পদার্থ ও আঁশ সরবরাহ করা।
সাধারণত সবুজ শাকপাতা যেমন ডাঁটা শাক, কচুশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক, পালংশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন ও ভিটামিন ‘সি’ থাকে। ক্যারোটিন শরীরের ভেতর ভিটামিন ‘এ’-তে রূপান্তরিত হয় এবং দৃষ্টিশক্তিকে ভালো রাখে। হলুদ শাকসবজি যেমন মিষ্টিকুমড়া, গাজর ইত্যাদিতেও প্রচুর ক্যারোটিন আছে। এছাড়াও হলুদ ফল যেমন আম, পাকা পেঁপে, পাকা টমেটো, কাঁঠাল, কমলা প্রভৃতি ফলেপ্রচুর ক্যারোটিন আছে। এসব মৌসুমী ফল দামে যেমন সস্তা তেমনি সহজলভ্য।
প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন ‘সি’-এর অভাব পূরণের জন্য অবশ্যই লেবু খাওয়া উচিত। ভিটামিন ‘সি’ শরীরে আয়রন শোষণে সাহায্য করে। তাই মাছ, মাংস অর্থাৎ আমিষজাতীয় খাদ্য খাওয়ার সময় সঙ্গে লেবু খেলে আয়রন শোষণ বাড়বে। লেবু ছাড়াও আমলকী,পেয়ারা, টমেটো, কামরাঙ্গাএবং প্রায় সব ধরনের টাটকাফলে ভিটামিন ‘সি’ পাওয়া যায়। কাঁচামরিচ এবং বাঁধাকপিও ভিটামিন ‘সি’-এর ভালো উৎস।
পুষ্টির দিক দিয়ে সবজি থেকে শাকপাতা ভালো। যেমন লাউয়ের চেয়ে লাউশাক ভালো। সবুজ শাকপাতায় ফলিক এসিড থাকে। ভিটামিন ‘কে’, ‘ই’ ইত্যাদি উদ্ভিজ্জতেল, শস্য, সবুজ শাকপাতা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদিতে পাওয়া যায়। সব ধরনের সবজি, শাকপাতা, বীজজাতীয় সবজি ‘বি’ ভিটামিনের ভালো উৎস।
ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন ‘কে’ প্রভৃতি সবুজ শাকে প্রচুর পরিমাণে থাকে। গাঢ় রঙের বয়সী পাতায় এসব উপাদান হালকা থাকে। কিন্তু কচি সবুজ পাতায় বেশি পরিমাণে থাকে।
বহু ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। বাদাম, লিচু, কদবেল, খেজুর, ডুমুরইত্যাদি ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। বাদাম, লিচু, কলা, বেল, খেজুর, বেদানা ফসফরাসের ভালো উৎস। খেজুর, কিশমিশ, আমড়া, পেয়ারাতেও আয়রন আছে। পাকা কলাতে প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায়। শুধু কলাতেই নয়, প্রায় সবসবজিতেই ভালো পরিমাণে পটাসিয়াম আছে।
শাকসবজি ও ফল যেমন ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস, তেমনি এগুলো থেকে পাওয়া যায় শ্বেতসার, প্রোটিন। পাকা কলা, আলু, মিষ্টি আলু ইত্যাদি শ্বেতসারের ভালো উৎস। আবার শিম, শিমের বীজ, বরবটি, মটরগুঁটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালোউৎস। যেসব ফল ও সবজিতে পানির ভাগ বেশি সেগুলোতে প্রোটিন ও ক্যালোরি কম থাকে। এ জন্য লাউ, শসা, ঝিঙ্গা প্রভৃতি সবজির ক্যালরি ও প্রোটিন মান খুবই কম। তাই যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চান তারা এসব সবজি খাদ্য তালিকায় বেশি করে রাখলে উপকৃত হবেন।
শাকসবজিতে প্রচুর আঁশ থাকে যা কনস্টিপেশন বা কৌষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিসএবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। শাক, বাঁধাকপি, ফুলকপির আঁশ ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
তবে শাকসবজি রান্নার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এগুলো ধুয়ে কাটতে হবে, অন্যথায় পানি দিয়ে ধোয়ার সময় যেসব ভিটামিন পানিতে দ্রবীভূত হয় সেসব ভিটামিন নষ্ট হয়ে যাবে। বড় বড় টুকরো করে কাটতে হবে এবং অবশ্যই ঢেকে ও বেশি আঁচে দ্রুত রান্না করতে হবে। ফলমূল খাবারের ক্ষেত্রেও ধুয়ে কাটতে হবে।
প্রতিদিনের খাদ্যে ভিটামিন ও খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করতে হলে ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, মাখন, ঘি ইত্যাদির পাশাপাশি শাকসবজি ও ফলমূলকে খাদ্য তালিকায় প্রাধান্য দিতে হবে। শাকসবজি ও ফলমূল সহজলভ্য এবং দামে সস্তা বলে এগুলোসহজেই কিনতে পারা যায়। গৃহিণী তার বাজেটকে না বাড়িয়েই পরিবারের সবার ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের চাহিদা মেটাতে পারেন ভালোভাবে-যদি সাধারণ এই বিষয়গুলো মাথায় থাকে।
মনোজগত

কোন মন্তব্য নেই :