এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে কিছু কথা ডা. এস এম মোস্তফা আনোয়ার ১

কোন মন্তব্য নেই
এইডস শুধু রোগ নয়, এটি সামাজিক ও উন্নয়ন সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই কম বা বেশি মাত্রায় এইচআইভি/এইডস বিস্তার লাভ করেছে। আফ্রিকা মহাদেশের সাব সাহারান দেশগুলোতে এইচআইভি/এইডস মহামারী আকার ধারণ করেছে। ইদানীং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এইচআইভি সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধিপাচ্ছে। যেসব দেশে বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমন মাদক ব্যবহারকারী, ভাসমান জনগোষ্ঠী এবং কারাবন্দীদের মধ্যে ঘনীভূত আকারে এইচআইভি ছড়িয়ে পড়েছে সেসব দেশেও মহিলাদের মধ্যে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য। বেশির ভাগ সংক্রমণ ঘটেছে যৌন প্রক্রিয়ায়। তবে নেশা গ্রহণকারীদের মধ্যে ইনজেকশনের মাধ্যমেও এইচআইভি সংক্রমিত হচ্ছে।
এইডস কী
এইডস বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত এক স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন সমস্যা এবং রোগ, যার কোনো চিকিৎসা নেই। এইচআইভি নামের একটি ভাইরাসের সংক্রমণ এ রোগের কারণ। এ রোগের কোনোপ্রতিষেধক টিকা বা কার্যকর চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষকার হয়নি। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
এইচআইভি ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকার পর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে ধ্বংস করে এবং এক সময় পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়। ফলে যে কোনো সাধারণ রোগে আক্রান্ত হলেও তখন কোনো ওষুধে কাজ হয় না এবংনানাবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু হয়।
এইচআইভি কী
এইচআইভি হলো হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (HIV : Human Immuno-deficiency Virus ) যার সংক্রমণের কারণে মানবদেহে এইডস রোগ দেখা দেয়। এ বিশেষ ধরনের ভাইরাস রেট্রাভাইরাস গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত, যার শাব্দিক অর্থ-ধীর।
এইচআইভির শাব্দিক অর্থ হচ্ছেঃ Human= মানুষ বা মানুষসংক্রান্ত, Immuno deficiency= রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব, Virus = ভাইরাস, ক্ষুদ্র এক জীবাণু যা খালি চোখে দেখা যায় না।
এইচআইভি সংক্রমণ হয় ধীরগতিতে। তাই সংক্রমিত ব্যক্তির এইডস হওয়া পর্যন্ত গড়ে ৫-১০ বছর সময়লাগে। এ দীর্ঘ সময় এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি নিজেকে সুস্থ অনুভব করেন। এইচআইভি মানবদেহে রক্তের শ্বেতকণিকাগুলোকে আক্রমণ করে। এই শ্বেতকণিকা মানব শরীরের বিভিন্ন সংক্রমণ ও রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এইচআইভি রক্তের শ্বেতকণিকাগুলোকে আক্রমণ করে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়।
এইচআইভি/এইডস যেভাবেসংক্রমণ হয়
একজন এইচআইভি সংক্রমিত মানুষ থেকেই আরেকজন সংক্রমিত হয়। এক্ষেত্রে সংক্রমণ ঘটে পাঁচটি মূল পন্থায়।
*. যৌনমিলনের মাধ্যমেঃ এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে।
*. রক্তের মাধ্যমেঃ এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত কারো শরীরে পরিসঞ্চালন করলেঅথবা একজন সংক্রমিত মানুষের কিডনি, চোখ বা অন্য কোনো অঙ্গ আরেকজনের দেহে প্রতিস্থাপন করলে।
*. শিরায় মাদকদ্রব্য গ্রহণের মাধ্যমেঃ একই সিরিঞ্জ-নিডল ব্যবহার করে একসঙ্গে কয়েকজন মিলে শিরায় নেশা গ্রহণের সময় একজন সংক্রমিত থাকলে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারে।
*. ধারালো যন্ত্রপাতির মাধ্যমেঃ সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত সিরিঞ্জ-নিডল, রেজার, ক্ষুর ইত্যাদি ধারালো যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করলে।
*. মা থেকে সন্তানের মধ্যেঃ কোনো মহিলা আইচআইভি সংক্রমিত হলে এবং গর্ভধারণ করলে-গর্ভাবস্থায়, জন্মের সময় অথবা জন্মের পর মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে তার সন্তানের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে।
এইচআইভি/এইডস যেভাবেসংক্রমণ হয় না
এইচআইভি মানবদেহের বাইরেবেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। তাই উপরোক্ত পাঁচটি কারণ ছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক কোনো সম্পর্ক বা কার্যকলাপের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ হয় না। যেমন-
*. এইচআইভি সংক্রমিত বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির বিছানা, বালিশ, থালা-বাসন, মগ, বাটি, গামছা, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহার করলে।
*. এইচআইভি সংক্রমিত বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে করমর্দনবা কোলাকুলি করলে।
*. এইচআইভি সংক্রমিত বা এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক চলাফেরা বা মেলামেশা করলে।
*. এইচআইভি সংক্রমিতদের সঙ্গে খেলাধুলা করলে, একসাথে একই স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করলে, একই সাথে একই শ্রেণীতে এবং একই বেঞ্চে বসলে।
*. খাদ্য, পানি, বাতাস, হাঁচি-কাশি বা মলমূত্রের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমণ হয় না।
*. কীট-পতঙ্গ, পোকা-মাকড় বা মশার কামড়ে এইচআইভি সংক্রমণ হয় না।
*. এইচআইভি সংক্রমিত বক্তির সঙ্গে একই পরিবারে, একসাথে বসবাস করলে বা একই অফিসে কাজ করলে, একই টেলিফোন, কম্পিউটার ব্যবহার করলে এইচআইভি সংক্রমণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
*. একই বাথরুম, টয়লেট ব্যবহার, একই পুকুরে বাসুইমিংপুলে সাঁতার কাটলে এইচআইভি সংক্রমণহবে না।

কোন মন্তব্য নেই :