পড়ার খরচ যোগাতে দেহ বিক্রি

কোন মন্তব্য নেই

মানবজমিন ডেস্ক | ৩ নভেম্বর ২০১৪, সোমবার 
শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ও অনেকে অর্থাভাবে বেছে নেয় পতিতাবৃত্তি। পেশাদার পতিতাদের ব্যাপারে ভাল পরিসংখ্যান থাকলেও, যে সব শিক্ষার্থী এ পেশা বেছে নেন, তাদের বিশ্বাসযোগ্য পরিসংখ্যান রয়েছে খুব কম। সোফি (ছদ্মনাম) নামের এমন এক যৌনকর্মী কিভাবে অর্থাভাবে পড়াশোনার খরচ যোগাতে এ পথ বেছে নিয়েছেন তা প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি লন্ডনের প্রভাবশালী পত্রিকা ইন্ডিপেনডেন্ট-এ। সেখানে সোফি বলেন, আমি পতিতাবৃত্তি কথাটিকে ঘৃণা করি। যখন আপনি একজন পতিতার কথা চিন্তা করেন, তখন আপনার চোখে এক রাস্তার মহিলার কথা ভেসে ওঠে। ওই মহিলা রাস্তার পুরুষদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। আমি সে রকম নই। আমি পড়ালেখা করি। আমি একজন স্বেচ্ছাসেবী। আমি নেশা নিই না। আমি একজন স্বাভাবিক মানুষ। সোফি ২২ বছর বয়সী একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি পড়ালেখার খরচ চালান শরীর বিক্রি করে দেয়ার টাকা দিয়ে। তিনি নিজেকে রক্ষিতা হিসেবে পরিচয় দেন। পড়ালেখার জন্য যে ঋণ নিয়েছেন, তা দিয়ে নিজের খরচ ও পাঁচ বছরের পড়াশোনার খরচ পুষিয়ে নেয়া কঠিন তার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ও অন্য কাজের অনুমতিও দেয় না তাকে। তিনি বলেন, খবরের কাগজে যখন শিক্ষার্থীদের যৌনকর্মী হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়, সেখানে বলা হয় যে, তারা পড়ালেখার খরচ চালাতে এই পেশা বেছে নিয়েছে- তখন আমি তা পছন্দ করি না। তারা হয় বিষয়টিকে খুব সহজভাবে অথবা খুব নোংরাভাবে প্রকাশ করে। তবে উদ্বেগজনকভাবে, সোফির     পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
মতো শিক্ষার্থীর সংখ্যা একেবারেই কম নয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬ শতাংশ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা চলাকালে কোন না কোনভাবে যৌনবৃত্তিতে জড়িত। বিভিন্ন যৌনস্বাস্থ্য সমপর্কিত গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বলছে, এ সমস্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্বেগ দেখা দিয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এ বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। সোফি ১৯ বছর বয়সে প্রথম এ কাজে বাস্তবিক অর্থে জড়িত হন। সে সময় নিজের প্রথম খদ্দের পেয়েছিলেন তিনি। বলেন, আমার বয়স ছিল খুব কম। আমার কোন ধারণাই ছিল না এ বিষয়ে। আমি তখন বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত। এ নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করে একটি উপায় বেছে নিতে হলো। দেখলাম প্রাপ্তবয়স্কদের একটি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই বেছে নেয়া যায় খদ্দের। সেখানে খদ্দেরদের সমপর্কে পূর্বের কর্মীদের অভিজ্ঞতা ও রেটিং দেয়া থাকে। বিপজ্জনক খদ্দেরদের কাছ থেকে নিরাপত্তার জন্যই এ ব্যবস্থা। এর মধ্যে অনেক খদ্দের যায় যৌনকর্মীর বাড়িতে। অনেকের ক্ষেত্রে খদ্দেরের দেয়া ঠিকানায় যেতে হয় তাদের। বার্তা পাঠিয়ে বিভিন্ন প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ থাকে। তবে মাঝেমাঝেই সেসব অনুরোধ হয় অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন সোফি বলেন, মাঝেমাঝে আপনি অনেক অদ্ভুত অনুরোধ পাবেন। আগেভাগেই খদ্দেররা জানিয়ে দেয় তারা কি চায়। তখন বলতে হয়, তার প্রস্তাবে আমি রাজি নাকি। অনেক সময় প্রতিশ্রুতি পালন করে না খদ্দেররা। মাঝেমাঝে তা মেনে নেয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় একবার খদ্দেরের সঙ্গে শারীরিক মিলনের পর এ পেশাকে ভীষণ ঘৃণা হয়। মনে মনে বলি এ পথে আর নয়। কিন্তু এরপর নিজেকে আবিষ্কার করতে হয় নিদারুণ অর্থকষ্টে। মাঝেমাঝে ঝরে পড়তে হয় সেমিস্টার থেকে। তাই আবার ফিরতে হয় এ পেশায়। কিংসটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ লেকচারার রন রবার্টস স্বীকার করলেন, এ ইস্যুটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এড়িয়ে যায়। তিনি বলেন, কঠিন বাস্তবতা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, বিশেষ করে পড়ালেখার জন্য মানুষ যখন তীব্র অর্থকষ্টে ভোগে, এ বিষয়গুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ কোন আগ্রহই দেখায় না। যৌন পরামর্শদাতা একটি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র বললেন, শিক্ষার্থীদের যৌন পেশায় আসার ঘটনা অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্ট শিক্ষার্থী যৌনকর্মীদের নিয়ে একটি প্রজেক্টে কাজ করছে। তবুও এ বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ খুব কম। রবার্টস বলছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক বেশি বাণিজ্যিক হয়ে উঠছে। তারা শিক্ষা বিক্রি করার দিকেই ঝুঁকছে। কিংস্টন ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয় প্রকাশিত রবার্টসের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌনবৃত্তিতে জড়িত। যুক্তরাজ্য জুড়ে ২৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০০ শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে আসেন তিনি। তবে যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালগুলোর একজন মুখপাত্র রবার্টসের গবেষণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, রবার্টস খুব অল্প শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণা চালিয়েছেন।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ।


কোন মন্তব্য নেই :