দুই বছরের শিশু মুক্তিযোদ্ধা

কোন মন্তব্য নেই
১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ ঢাকার উত্তরার মাওছাইদ গ্রামের সবুর হোসেন খানের বয়স ছিল ২ বছর ৭ মাস ১০ দিন। অথচ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছেন সনদ। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে হয়েছেন নথিভুক্ত। আর এ জালিয়াতির সুযোগ 
নিয়ে মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে ১৯০ জনের সঙ্গে তিনিও ২০০৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তার কর্মস্থল জামালপুরের মাদারগঞ্জ। বরিশালের উজিরপুর থানার চকমান গ্রামের মো. নূরুল হকের বয়স ছিল ২ বছর ৯ মাস ১১ দিন। তিনিও মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে ১৩ই ডিসেম্বর ২০০৯ সালে সাবরেজিস্ট্রার  হিসেবে যোগ দেন। তার বর্তমান কর্মস্থল বরগুনার পাথরঘাটা। মুক্তিযোদ্ধা সনদে পিলিটিক্যাল মটিভেটর হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করার কথা বলা হয়েছে। মুজিবনগর কর্মচারীর সনদ নিয়ে এমন ভয়াবহ জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তদন্তে। শুধু তা-ই নয়, আরও আছে। তদন্ত কমিটির কাছে কিভাবে জালিয়াতি হয় তার বর্ণনা দিয়েছেন নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মোশারফ  হোসেন চৌধুরী। তিনিও ১৯০ জনের একজন। সে সময় তার বয়স ছিল ৮ বছর ৫ মাস ১২ দিন। তদন্ত কমিটিকে তিনি বলেছেন, আমি মুজিবনগর কর্মচারী নই। যুদ্ধকালে ভারতেও যাইনি। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের একটি চক্রের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কাগজ সংগ্রহ করেছি। আর কাগজ সংগ্রহ করতে আমার ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। অন্যরা কেউ ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করেছে। নিয়োগ পেতে আমার মোট খরচ হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন, মুজিবনগর কর্মচারী  নিয়ে বিরাট একটি চক্র সারা দেশে টাকার বিনিময়ে কাজ করছে। সবার কাগজই ভুয়া। মোশারফ হোসেন চৌধুরী ফেনীর ফুলগাজীতে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি কাজে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর। নবম সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২৬তম বৈঠকে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি করা হয় আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন-২) মো. মজনুল আহসানকে। সদস্য করা হয় একই বিভাগের যুগ্ম সচিব (মতামত) সহিদুল করিম ও উপ-সচিব (মতামত-৪) আবু আহমেদ জমাদারকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে তদন্ত কমিটি স্থায়ী কমিটির ২৯তম বৈঠকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুজিবনগর কর্মচারী  হিসেবে ১৯০ জনকে সাব রেজিস্ট্রার পদে আত্তীকরণের বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে যে ১৯০ জন মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়েছেন ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তাদের বয়স ছিল ২ থেকে ১৬ বছর। এর মধ্যে রয়েছেন বরিশালের আগৈলঝরার বারপাইকা গ্রামের কাজী নজরুল ইসলাম। সে সময় তার বয়স ছিল ৩ বছর ১১ মাস ২৪ দিন। তিনি নিয়োগ পেয়েছেন ২০০৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর। তার কর্মস্থল শরীয়তপুরের জাজিরায়। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছেন। কত তারিখে, কার অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? তদন্ত কমিটির এ প্রশ্নে তিনি বলেন, তারিখ মনে নেই। তালিকার ৪৩ নম্বরে রয়েছেন বরিশাল গৌরনদীর সাহাজিরা গ্রামের মো. আবদুল মতিন। তিনি ২০০৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর যোগ দেন সাব রেজিস্ট্রার হিসাবে। তার কর্মস্থল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে। তিনিও ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকার ৫১ নম্বরে রয়েছেন ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার চকজেস  গ্রামের স্বপন কুমার দে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৪ বছর ১১ মাস ৮দিন। তিনিও চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর। তালিকার ৬৬ নম্বরে রয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের বড় অভিরামপুর গ্রামের মো. ওবায়েদ উল্লাহ। সে সময় তার বয়স ছিল ৫ বছর ২ মাস ২৫ দিন। তিনি ২০০৯ সালের ৭ই ডিসেম্বর ফেনীর পরশুরামে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধের সময় ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। তালিকার ৭৬ নম্বরে রয়েছে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের কাছিহাটি গ্রামের মো. আবুল বাশার। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৪ বছর ২ মাস ২৬ দিন। তিনি ২০০৯ সালে ৯ই ডিসেম্বর হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। তিনিও ছিলেন ইনফরমার। মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের সমেতপুর গ্রামের বোরহান উদ্দিন সরকারও মুক্তিযুদ্ধে ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। তিনিও মুজিবনগর কর্মচারী ছিলেন। ’৭১-এর ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৫ বছর ২ মাস ২৬ দিন। তিনি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাসাইল গ্রামের আজহার আলী খানের বয়স ছিল ৭ বছর ১৫ দিন। তিনিও ছিলেন ইনফরমার। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে আত্তীকরণের মাধ্যমে তিনি রাজশাহীর দুর্গাপুরে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামের মো. শফি হাসান একই সুযোগ নিয়ে নওগাঁর বদলগাছীতে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর। সে সময় তার বয়স ছিল ৫ বছর ২ মাস ২৬ দিন। তিনিও ইনফরমার ছিলেন। ৪ বছর ৩ মাস ২৬ দিন বয়সে মুজিবনগর কর্মচারী ছিলেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার দীঘলকান্দি গ্রামের লিয়াকত হোসেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। তিনি ২০০৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর নওগাঁর দামইরহাটে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। বগুড়া সদরের বৃন্দা পাড়ার সহিদুল ইসলামও একই ভাবে মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে নথিভুক্ত হন। আর এ সুবিধা নিয়ে তিনি ১৬ই সেপ্টেম্বর নওগাঁর আত্রাইয়ে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। সে সময় তার বয়স ছিল ৬ বছর ৫ মাস ২৬ দিন। জামালপুরের সরিষাবাড়ীর হল পূর্ব পাড়া গ্রামের একেএম রফিকুল ইসলামও মুক্তিযুদ্ধের সময় ইনফরমার ছিলেন। তিনি মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে সিরাজগঞ্জের গান্দাইলে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৬ বছর ৫ মাস ৩ দিন। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর নিঝুর খামার গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমের বয়স ছিল ৬ বছর ৪ মাস ৩ দিন। তিনিও ছিলেন ইনফরমার। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে বগুড়ার দুপচাঁচিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর। জয়পুরহাট আক্কেলপুরের মালিগ্রাম গ্রামের মুক্তিওয়ারা খাতুনের বয়স ছিল ৫ বছর ৬ মাস ২৬ দিন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্যাম্পের সেবিকা ছিলেন বলে দাবি করেছেন। আর মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর বগুড়ার নন্দীগ্রামে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। ৭ বছর ২৫ দিন বয়সে ইনফরমারের কাজ করেন গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর বুজরুক বিষ্ণুপুর গ্রামের মো. মনিরুজ্জামান। তিনি মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। বগুড়ার শিবগঞ্জের মাঝপাড়া গ্রামের মো. শাহ আলমের বয়স ছিল ৮ বছর ৩ মাস ১৬ দিন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন ইনফরমার। আর মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। তার কর্মস্থল জয়পুরহাটের কালাইয়ে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর ধনিরামপুর গ্রামের আবু বকর সিদ্দিকের বয়স ছিল ৭ বছর ২ মাস ২৩ দিন। তিনিও ছিলেন ইনফরমার। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে আত্তীকরণের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। তার কর্মস্থল জয়পুরহাটের আক্কেলপুর। তালিকার ১১৩ নম্বরে রয়েছে রংপুর পীরগঞ্জের ঘোষপুর গ্রামের মো. খায়রুজ্জামান ম-ল। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চে তার বয়স ছিল ৪ বছর ১১ মাস ১৭ দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছেন। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ১৯০ জন ভাগ্যবানের তিনি একজন। ২০০৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে। ১১২ নম্বরে রয়েছেন কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর সন্তোষপুর গ্রামের মো. আফসার আলীর নাম। সে সময় তার বয়স ছিল ৪ বছর ৫ মাস ১৫ দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছেন। আর পরে নথিভুক্ত হয়েছেন মুজিবনগর কর্মচারী হিসাবে। এ সংক্রান্ত কাগজ জমা দিয়ে তিনি ২০০৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। তালিকার ১১৬ নম্বরে রয়েছে কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারী উপজেলার আবুল বাশার মো. ইউসুফের নাম। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৪ বছর ১১ মাস ১ দিন। তিনিও ইনফরমার ছিলেন। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে ২০০৯ সালের ১৪ই ডিসেম্বর পঞ্চগড়ের আটোয়ারিতে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ধোবাকল গ্রামের মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা কামালের বয়স ছিল ৫ বছর ৮ মাস ৯ দিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনিও ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। আর যুদ্ধের পর ১৯৮৬ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে কাগজ জমা দিয়ে মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে নথিভুক্ত হন। আর এ সুবাধে পঞ্চগড়ের দ্বেবীগঞ্জের সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। রংপুর খেসামত পুনকির গ্রামের সুধীর কুমার সরকারের বয়স ছিল ৭ বছর ৫ মাস ১২ দিন। তিনিও ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে তিনি ২০০৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর বলদীটারী গ্রামের মো. আবদুল মতিনের বয়স ছিল ৬ বছর ১০ মাস ১২ দিন। তিনিও ছিলেন ইনফরমার। মুজিবনগর কর্মচারী  হিসেবে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। তার কর্মস্থল ঠাকুগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে। রংপুর গঙ্গাচড়ার নিলকচ-ী গ্রামের মো. আবদুর রশীদ মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে রংপুরের পীরগঞ্জে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৭ বছর ৮ মাস ২৬ দিন। কুড়িগ্রাম নাগেশ্বরীর আনছারহাট গ্রামের সোহরাব হোসেন সরকারের বয়স ছিল ৫ বছর ৫ মাস ১ দিন। যুদ্ধের ময়দানে তিনি ছিলেন ইনফরমার। তিনি মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। তার কর্মস্থল গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে। ৫ বছর ৬ মাস ৬ দিন বয়সের শিশু কুড়িগ্রাম রাজারহাটের রাম জীবন কু-ু মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলেন ইনফরমার। আর মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ৫ বছর ৪ মাস ১দিন বয়সের মিজানুর রহমানের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকায়। তিনিও ছিলেন ইনফরমার। তিনি সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর। তার কর্মস্থল কুড়িগ্রামের রাজারহাট। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শফিকুল ইসলাম সরকারের বয়স ছিল ২ বছর ১০ মাস ১ দিন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদরের নারায়ণপুর গ্রামে। এ শিশুও ইনফরমার হিসেবে কাজ করেছে যুদ্ধের ময়দানে। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দিয়েছেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। তার কর্মস্থল নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে। তালিকার ১৩৫ নম্বরে রয়েছেন রংপুর পীরগঞ্জের খোহাটি গ্রামের খোন্দকার গোলাম কবিরের নাম। সে সময় তার বয়স ছিল ৫ বছর ১ মাস ১৬ দিন। তিনিও যুদ্ধের ময়দানে ছিলেন ইনফরমার। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে তিনি কুড়িগ্রামের রৌমারিতে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর। ৪ বছর ৮ মাস ২ দিন বয়সে ওসমান গণি ম-ল যুদ্ধের ময়দানে ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। ছিলেন মুজিবনগর কর্মচারী। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর মইদাম গ্রামে। সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দিয়েছেন ৭ই ডিসেম্বর। তার কর্মস্থল কুড়িগ্রামের চিলমারী। তালিকার ১৪৩ নম্বরে রয়েছে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার জীবনদাস কাঠি গ্রামের ফিরোজ আলমের নাম। সে সময় তার বয়স ছিল ৫ বছর ৭ মাস ২৬ দিন। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে তিনি বাগেরহাটের কচুয়ায় সাব রেজিস্ট্রার হিসাব যোগ দিয়েছেন একই বছর ৭ই ডিসেম্বর। তালিকার ১৫৮ নম্বরে রয়েছে বরিশাল উজিরপুর কারফা গ্রামের নীহার রঞ্জন বিশ্বাসের নাম। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৩ বছর ৬ মাস ২১ দিন । তিনিও ইনফরমার হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে কাজ করেন। ছিলেন মুজিবনগর কর্মচারী। ২০০৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর মাগুড়ার শ্রীপুরে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন। আর মাদারীপুর কালকিনির সাহেব পাড়া গ্রামের আবুল হোসেনের বয়স ছিল ৪ বছর ৪ মাস ৭ দিন। তিনিও কুচবিহারে গিয়ে ইনফরমারের কাজ করেন। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে তিনি শালিখার আড়পাড়ায় সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন ২০০৯ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর। ৫ বছর ১২ দিন বয়সের ঢাকার সূত্রাপুর ৩৫ অভিসার ভবনের মিনতি দাস কুচবিহারে সেবিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে তিনি সাব রেজিস্ট্‌্রার পদে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৯ই ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মাদারীপুর সদরের তরমুগরিয়া মাস্টার কলোনির লুৎফর রহমান মোল্লার বয়স ছিল ৫ বছর ২ মাস ২৬ দিন। তিনিও চব্বিশ পরগনায় ইনফরমার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুজিবনগরের কর্মচারী হিসেবে তিনি খুলনার তেরখাদায় সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন। বরিশাল উজিরপুরের বাহেরঘাট গ্রামের নুরুজ্জামান হাওলাদার মুক্তিযুদ্ধের সময় ইনফরমার হিসেবে কাজ করেন। সে সময় তার বয়স ছিল ৪ বছর ৮ মাস ১৫ দিন। তিনি ঝালকাঠির রাজাপুরে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন ২০০৯ সালের ৭ই ডিসেম্বর। বরিশাল উজিরপুরের করফা গ্রামের বাদল কুমার বিশ্বাসও ইনফরমার ছিলেন। ’৭১-এর ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ৪ বছর ৬ মাস ১দিন। মুজিবনগর কর্মচারী হিসেবে নথিভুক্ত হয়ে তিনি ভোলার রাধাবল্লভে সাব রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন ৯ই ডিসেম্বর। তালিকার ১৯০ নম্বরে রয়েছে ভোলা চরফ্যাশন থানার চর তোফাজ্জল গ্রামের মোহাম্মদ ফারুকের নাম। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ তার বয়স ছিল ২ বছর ১০ মাস ৪ দিন। তিনি যুদ্ধের সময় কাজ করেছেন পলিটিক্যাল মটিভেটর হিসেবে।  তিনি বরিশালের চাখারে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন একই বছর ৭ই ডিসেম্বর। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সাক্ষাৎকার গ্রহণকালে ১৮৯ জন সাব রেজিস্ট্রারের মধ্যে ১৩৬ জন ইনফরমার ছিলেন বলে দাবি করেছেন। ১৫ জন ছিলেন ক্যাম্প সহকারী। নার্স ও সহকারী নার্স ছিলেন ১৫ জন। পলিটিক্যাল মটিভেটর ছিলেন ১০ জন। এফ এফ কালেক্টর ছিলেন বলে দাবি করেছেন ৭ জন। স্পাই ছিলেন ২ জন। স্টোরকিপার ছিলেন ১ জন। কোন পদের নাম বলতে পারেননি এমন রয়েছেন ৩ জন। এ ছাড়া সাক্ষাৎকার গ্রহণের আগেই মারা গেছেন ১ জন। 
মানব জমিন এর কাছ থেকে নেওয়া। 


আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ।

 এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :