যুবকদের প্রতি উদাসীনতা - মৃত্যুর স্বপ্ন islam114

কোন মন্তব্য নেই
যুবকদের প্রতি উদাসীনতা
আজ যুবকদের দ্বীনি শিক্ষার
প্রতি উদাসীনতা প্রত্যক্ষ
করে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না।
বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষার
প্রতি আকর্ষণ আর ধর্মীয় শিক্ষার
প্রতি অবজ্ঞা ও অনীহার কারণে যুব
সমাজ আজ অধঃপতনের চরম
পর্যায়ে পৌঁছে যাচ্ছে, আর
প্রগতিবাদী বুদ্ধিজীবীরা কেবল
সভ্যতার নানা ধ্বনি উচ্চকিত করছে।
কিন্তু এতে তাদের মুক্তির কোন পথ
সুগম হচ্ছে না। যুবকদের
যারা অভিভাবক, তারা কেউ নীরব
দর্শকের ভূমিকায় আছে আর কেউ
পরিবেশের দোহাই দিয়ে দায়িত্ব শেষ
করছে। এক শ্রেণীর মাতা-পিতা স্বীয়
সন্তানদেরকে বস্তু শিক্ষায় শিক্ষিত
করে সন্তানের কাছে স্বীয় অধিকারের
দাবী জানাচ্ছে, আর এক শ্রেণীর
মুরুব্বী ইয়াহুদী-খৃষ্টান ও বিধর্মীদের
প্রতিষ্ঠানে সন্তানের শিক্ষার সুযোগ-
সুবিধা লাভের
গৌরবে আত্মহারা হয়ে পড়েছে। অথচ
আদরের সন্তান আল্লাহর
দেয়া নেয়ামত, তার আখেরাতের জীবন
যে ধ্বংসের পথে, বরং ধ্বংস
হয়ে যাচ্ছেÑ এতে অভিভাবকদের কোন
পরিতাপ নেই, মাথা ব্যাথা নেই।
আত্মভোলা মাতা-পিতা ও
অদূরদর্শী অভিভাবকদের এহেন
উদাসীনতার কারণে আজ মুসলিম যুব
সমাজ খোদাভীরুতার
পরিবর্তে খোদাদ্রোহীতার
হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। নাস্তিকতার
প্রসারে তারা আজ ষড়যন্ত্রের
শিকার। দেখা যাচ্ছে, তাদের
কাছে সকলেই প্রিয় ধর্ম-কর্ম
নির্বিশেষে সকলেই তাদের বন্ধু; শত্র“
হচ্ছে কেবল আল্লাহ, আল্লাহর-রাসূল
আর আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত ও রাসূল
প্রদর্শিত দ্বীন ও ইসলাম। মাতা-
পিতাগণ এর মাশুল আদায়
করা থেকে রেহাই পাবেন না।
যুবকদের করণীয়
অভিভাবকদেরকে এ ভুল সংশোধন
করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে,
সন্তান-সান্ততি আল্লাহ প্রদত্ত
নেয়ামত। পিতা-মাতার উপর তাদের
বস্তুগত অধিকার অবশ্যই
রয়েছে এবং তা আদায়ও করতে হবে।
কিন্তু এর চেয়েও অধিক
হচ্ছে দ্বীনি অধিকার,
যা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আদায়ের
দাবী রাখে। সেই সাথে যুবকদেরও
সচেতন হতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে,
এই যৌবনকাল তাদের কে দিয়েছেন?
কতকাল বিদ্যমান থাকবে এই যৌবন?
অবশেষে তাদেরকে কোথায়
পাড়ি জমাতে হবে?
তাদেরকে বুঝতে হবে যে, তারা একদিন
ছিল না, কোথা হতে তাদের আগমন
হয়েছে? তারা ছিল শিশু, আজ
তারা যুবক, কাল হবে বৃদ্ধ, দেহের
শক্তি হ্রাস পাবে। তাদের জীবন
হচ্ছে একটি পথ। তারা সেই পথের
পথিক। পথিককে সামনের পথে গমন
অব্যাহত রাখতে হবে। মৃত্যু, কবর,
হাশর ও পুলছিরাতের কঠিন
ঘাঁটি রয়েছে। সেসব ঘাঁটির পারাপারের
ব্যবস্থা এখান থেকেই করে নিতে হবে।
সেখানে কোন ব্যবস্থা নেই,
সাহায্যকারী নেই। তাদেরকে সেই
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্ব
যুব সমাজের সামনে আদর্শ স্থাপনের
দায়িত্বও পালন করতে হবে। এজন্য
অতীতের স্মরণীয় মুসলিম যুবকদের
আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হবে। এই
নও-মুসলিম যুবকের
জীবনকে করতে হবে পাথেয়।
আল্লাহর উপর ভরসা
ইবনে যায়েদ বলেন, “নও-মুসলিম
যুবকটিকে সাথে নিয়ে আমরা পুণরায়
সফর শুরু করি এবং আবাদান
শহরে পৌঁছে সাথীদেরকে বলি যে, নও-
মুসলিম যুবকটি অসহায় সুতরাং তার
জীবনোপকরণের জন্য আমাদের
যা কর্তব্য তা করা উচিত। অতঃপর
আমরা চাঁদা করে সামান্য পরিমাণ
দেরহাম তাকে পেশ
করি এবং তা প্রয়োজনে খরচ করার
জন্য বলি। কিন্তু নও-মুসলিম যুবক
তা গ্রহণে অসম্মতি প্রকাশ করে বলে,
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ!
আপনারা আমাকে এমন পথে পরিচালিত
করতে চান
যে পথে আপনারা চলতে সম্মত নন।
আমি যখন জাযীরাতে (দ্বীপে) ছিলাম
এবং আল্লাহর পরিবর্তে মূর্তি পূজায়
রত ছিলাম তখনও আল্লাহ পাক
আমাকে ধ্বংস করেন নি, আর এখন
আমি আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছি,
তারই ইবাদত-উপাসনা করে চলেছি।
এমতাবস্থায়
তিনি কি করে আমাকে ধ্বংস
করতে পারেন? আমি ফকীর নই, আমার
আল্লাহ ফকীর নন। তাই আপনাদের এই
দেরহামের প্রয়োজন আমার নেই।”
ভিক্ষুকের পরিচয়
এক সময় রাসূলে পাক সাহাবীদের
সমাবেশে প্রশ্ন করেন,
“তোমরা কি জান ভিক্ষুক কে?”
একজন উত্তর করলেন, যার অর্থ-
কড়ি নেই, সহায়-সম্বলহীন,
আমরা তাকেই ভিক্ষুক মনে করে থাকি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, না, সে প্রকৃত ভিক্ষুক নয়।
আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত ভিক্ষুক
সে, যে যথেষ্ট নেক আমল নিয়ে হাশরের
ময়দানে আল্লাহর আদালতে হাজির হবে,
আর হক্কুল ইবাদের দায়ে আবদ্ধ
হয়ে স্বীয় আমলসমূহ হারাবে।
অবশেষে হকদারদের গোনাহ
ঘাড়ে নিয়ে জাহান্নামে দাখেল হবে। এই
হচ্ছে প্রকৃত ভিক্ষুক। এই যুবক
কারো কাছে ঋণী ছিল না, তাই
সে ভিক্ষুক নয়। তার কাছে ছিল
ইবাদত-রিয়াজত ও মারিফাতের ধন-
সম্পদ। তাই সে ছিল মহা বিত্তবান।
যে সম্পদ মালিককে চিনে না, যার হাত
লাগে তার হয়ে যায়Ñ সেই সম্পদের
অধিপতিকে লোকেরা ধনী বলতে পারে,
কিন্তু প্রকৃত ধনী সে নয়। ঈমান,
আমল যার কাছে আছে,
সেটা সর্বদা তারই হয়ে থাকে। কবরে,
হাশরে,
পুলছিরাতে সর্বস্থানে তা উপকারে আসে
, কাজে লাগে। যুবকের এই পুঁজি ছিল
প্রচুর, তাই সে ভিক্ষুক ছিল না,
সে ছিল বড় ধনী। সে কেন
চাঁদা করা দেরহাম গ্রহণ করবে?
মৃত্যুর স্বপ্ন
ইবনে যায়েদ বলেন, এর তিনদিন
পরে আমি বুঝলাম যুবকটির মৃত্যুর
সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমি তার
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলামÑ
“তোমার কোন কিছুর প্রয়োজন
আছে কি?” যুবকটি উত্তর দিল,
“যে মহান আল্লাহ আপনাদেরকে আমার
হেদায়েতের জন্য দ্বীপে পাঠিয়েছিলেন
তিনি আমার সমস্ত প্রয়োজন
পূরণে করে দিয়েছেন। আর কোন কিছুর
প্রয়োজন নেই।” আমি যুবকের
কথা শুনে তার নিকটেই অবস্থান
করি এবং ঘুমিয়ে পড়ি। এমতাবস্থায়
স্বপ্নে দেখি, অতি মনোরম,
অতি সুন্দর, সুসজ্জিত একটি বিরাট
বাগিচা। বাগিচার এক মনোরম
স্থানে এক বিরাট রাজপ্রাসাদ।
সুসজ্জিত সেই প্রাসাদের
মধ্যভাগে অবস্থিত সুসজ্জিত
পালঙ্কে উপবিষ্ট আছে অপূর্ব
সুন্দরী এক মহিলা।
সে মহিলা আমাকে ডেকে বলছে যে,
“যুবকটিকে অনতিবিলম্বে পাঠিয়ে দিন,
আমি অধীর চিত্তে তার অপেক্ষায়
আছি।” পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
“নিশ্চয়ই যারা মুত্তাকী তাদের জন্য
রয়েছে, উদ্যান, আঙ্গুর,
সমবয়স্কা পূর্ণ যৌবনা তরুণী,
অব্যবহৃতা, আনতনয়না, প্রবাল ও
পদ্যরাগ সদৃশ রমণীগণ।’
আর এসব কিছু হবে সৎ কাজের
প্রতিদান স্বরূপ। সুতরাং আল্লাহর
আশেক ও তার মারিফাতে ধন্য নও-
মুসলিম যুবকের জন্য এরূপ প্রতিদানই
যথার্থ প্রতিদান।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next post যুবকের মৃত্যু - যুবকদের জন্য পাথেয়

কোন মন্তব্য নেই :