এতেকাফ তাৎপর্য, উদ্দেশ্য ও বিধান 2

কোন মন্তব্য নেই
আর এ ইবাদতের বিবিধ প্রতিফলন
ঘটে এতেকাফ অবস্থায়।
কেননা এতেকাফ অবস্থায় একজন
মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর
ইবাদতের সীমানায় বেঁধে নেয়
এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায়
ব্যকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা-আলাও
তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না,
বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ
হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন:
ﻗُﻞْ ﻳَﺎ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﺳْﺮَﻓُﻮﺍ
ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻘْﻨَﻄُﻮﺍ ﻣِﻦْ
ﺭَﺣْﻤَﺔِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻳَﻐْﻔِﺮُ
ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺇِﻧَّﻪُ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻐَﻔُﻮﺭُ
ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢُ ﴿ ৫৩﴾ﺍﻟﺰﻣﺮ
অর্থাৎ: বলুন, হে আমার বান্দাগণ!
যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ
তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ
হয়ও না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত
গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু। [সুরা ঝুমার : ৫৩]
(ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟَﻚَ ﻋِﺒَﺎﺩِﻱ ﻋَﻨِّﻲ ﻓَﺈِﻧِّﻲ
ﻗَﺮِﻳﺐٌ ﺃُﺟِﻴﺐُ ﺩَﻋْﻮَﺓَ ﺍﻟﺪَّﺍﻉِ ﺇِﺫَﺍ
ﺩَﻋَﺎﻥِ ﻓَﻠْﻴَﺴْﺘَﺠِﻴﺒُﻮﺍ ﻟِﻲ ﻭَﻟْﻴُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ
ﺑِﻲ ﻟَﻌَﻠَّﻬُﻢْ ﻳَﺮْﺷُﺪُﻭﻥَ ﴿১৮৬
ﺳﻮﺭﺓ ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ)
অর্থাৎ: আর আমার বান্দারা যখন
তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার
ব্যাপারে- বস্তুত
আমি রয়েছি সন্নিকটে।
প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল
করি যখন সে প্রার্থনা করে। কাজেই
তারা যেন আমার হুকুম মান্য
করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস
স্থাপন করে। সম্ভবত তারা পথ
প্রাপ্ত হবে। (আল-বাকারা : ১৮৬)
৪- যখন কেউ মসজিদে অবস্থান
করা পছন্দ করতে লাগে— যা সম্ভব
প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর
মাধ্যমে,
কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে
অভ্যস্ত করানো হবে সে বিষয়েই
সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে—
মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ
হতে শুরু করলে মসজিদকে সে
ভালোবাসবে, সেখানে নামাজ
আদায়কে ভালোবাসবে। আর এ
প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার
সম্পর্ক মজবুত হবে।
হৃদয়ে সৃষ্টি হবে নামাজের ভালোবাসা,
এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই
অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের
প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এভাবে বলেছিলেন:
(ﺃﺭﺣﻨﺎ ﺑﻬﺎ ﻳﺎ ﺑﻼﻝ، ﺃﺭﺣﻨﺎ ﺑﻬﺎ ﻳﺎ
ﺑﻼﻝ)
অর্থাৎ: নামাজের
মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত
করো হে বেলাল, নামাজের
মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত
করো হে বেলাল।
৫- মসজিদে এতেকাফের
মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার
উদ্দেশে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার
কারণে মুসলমানের অন্তরের
কঠোরতা দূরীভূত হয়,
কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার
প্রতি ভালোবাসা ও পার্থিবতায়
নিজেকে আরোপিত করে রাখার
কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ
করে রাখার কারণে দুনিয়ার
প্রতি ভালোবাসায় ছেদ
পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির
অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়।
মসজিদে এতেকাফ করার
কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে,
ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির
আত্মা নিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে
ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত
হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও
বরং ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়।
কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই
বিধায় প্রবৃত্তির
ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের
প্রবৃত্তি থাকা সত্ত্বেও সব কিছু
থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য
একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।
৬- এতেকাফের
মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।
৭- বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াতের
সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৮- ঐকান্তিকভাবে তওবা করার
সুযোগ লাভ হয়।
৯- তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।
১০-
সময়কে সুন্দরভাবে কাজে লাগানো যায়।
এতেকাফের আহকাম
ইসলামি শরিয়াতে এতেকাফের
অবস্থান
এতেকাফ করা সুন্নাত। এতেকাফের
সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ
দশক, এতেকাফ কুরআন, হাদিস ও
এজমা দ্বারা প্রমাণিত।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন: কোন
মুসলমান এতেকাফকে সুন্নাত
বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার
জানা নেই।
এতেকাফের উদ্দেশ্য
১- আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা
আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া ও
আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা
যখন অন্তর সংশোধিত ও
ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ,
কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং এ
পথেই, তাহলে এতেকাফ হল এমন
একটি ইবাদত যার
মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টি-জীব
থেকে আলাদা হয়ে যথাসম্ভব প্রভুর
সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ
হল তাঁকে স্মরণ করা,
তাঁকে ভালোবাসা ও তাঁর ইবাদত
করা। সর্বদা তার সন্তুষ্টি ও
নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই
মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার
সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত হয়।
২- পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক
কাজ থেকে দুরে থাকা
রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তা-
আলা তাঁর
বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন
অতিরিক্ত পানাহার ও যৌনাচারসহ
পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে,
অনুরূপভাবে তিনি এতেকাফের
বিধানের মাধ্যমে
তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক
কথা-বার্তা, মন্দ সংস্পর্শ, ও
অধিক ঘুম হতে ।
এতেকাফের মাধ্যমে একজন
ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর
জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামাজ,
কুরআন তিলাওয়াত, জিকির ও
দোয়া ইত্যাদির নির্বাধ চর্চার
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের
অফুরান সুযোগের
আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।
৩- শবে কদর তালাশ করা
এতেকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ
করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের মূল উদ্দেশ্য
ছিল, আবু সায়ীদ খুদরি রা. থেকে
বর্ণিত হাদিস সে কথারই প্রমাণ বহন
করে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন:
ﺇﻧﻲ ﺍﻋﺘﻜﻔﺖ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﻝ
ﺃﻟﺘﻤﺲ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻠﻴﻠﺔ ﺛﻢ ﺍﻋﺘﻜﻔﺖ
ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺳﻂ ﺛﻢ ﺃﺗﻴﺖ ﻓﻘﻴﻞ
ﻟﻲ ﺇﻧﻬﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻷﻭﺍﺧﺮ
ﻓﻤﻦ ﺃﺣﺐ ﻣﻨﻜﻢ ﺃﻥ ﻳﻌﺘﻜﻒ
ﻓﻠﻴﻌﺘﻜﻒ ﻓﺎﻋﺘﻜﻒ ﺍﻟﻨﺎﺱ
ﻣﻌﻪ. ﻣﺴﻠﻢ : ﺭﻗﻢ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ
১১৬৭
আমি প্রথম দশকে এতেকাফ
করেছি এই (কদর) রজনী খোঁজ
করার উদ্দেশে, অতঃপর এতেকাফ
করেছি মাঝের দশকে, অত:পর মাঝ-
দশক পেরিয়ে এলাম , তারপর
আমাকে বলা হল, (কদর) তো শেষ
দশকে। তোমাদের মধ্যে যদি কেউ
এতেকাফ করতে চায় সে যেন এতেকাফ
করে, অত:পর লোকেরা তাঁর
সাথে এতেকাফ করল। [মুসলিম:
হাদিস নং ১১৬৭]
৪-মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস
গড়ে তোলা
এতেকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর
মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের
সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস
গড়ে উঠে। হাদিস অনুযায়ী যে সাত
ব্যক্তিকে আল্লাহ তা-আলা তাঁর
নিজের ছায়ার নীচে ছায়া দান করবেন
তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই
ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল
বাঁধা :
(ﻭﺭﺟﻞ ﻗﻠﺒﻪ ﻣﻌﻠﻖ ﺑﺎﻟﻤﺴﺎﺟﺪ)
৫- দুনিয়া ত্যাগ ও
বিলাসিতা থেকে দুরে থাকা
এতেকাফকারী যেসব বিষয়ের
স্পৃক্ততায় জীবন যাপন করত সেসব
থেকে সরে এসে নিজেকে
মসজিদে আবদ্ধ করে ফেলে।
এতেকাফ অবস্থায় দুনিয়া ও দুনিয়ার
স্বাদ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে,
ঠিক ঐ আরোহীর ন্যায় যে কোন
গাছের ছায়ার নীচে বসল, অতঃপর
সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
৬- ইচ্ছাশক্তি প্রবল
করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস
ও কামনা-বাসনা থেকে বিরত রাখার
অভ্যাস গড়ে তোলা
কেননা এতেকাফ দ্বারা খারাপ
অভ্যাস থেকে বিরত থাকার ট্রেন্ড
গড়ে উঠে। এতেকাফ তার জন্য সুবর্ণ
সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়
নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত
করতে ও নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত
করতে। এতেকাফ থেকে একজন মানুষ
সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হয়ে বের
হয়ে আসার সুযোগ পায়।
যা পরকালে উপকারে আসবেনা তা থেকে বিরত
থাকার ফুরসত মেলে।
এতেকাফের বিধানাবলি
১- এতেকাফের সময়-সীমা
সবচেয়ে কম সময়ের এতেকাফ হল,
শুদ্ধ মত অনুযায়ী, একদিন একরাত।
কেননা সাহাবায়ে কেরাম ( রাদি-
আল্লাহু আনহুম) নামাজ
অথবা উপদেশ শ্রবণ করার
অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন
ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন,
তবে তারা এ সবের জন্য এতেকাফের
নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি।
সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য এতেকাফ
করা যায় এ ব্যাপারে ওলামাদের
মতামত হল, এ ব্যাপারে নির্ধারিত
কোন সীমা-রেখা নেই।
২- এতেকাফে প্রবেশ ও বাহির
হওয়ার সময়
এতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ
দশকে এতেকাফের নিয়ত
করে তা হলে একুশতম রাত্রির সূর্য
অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ
করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের
রাত তালাশ করা,
যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড়
রাত্রগুলোতে, যার মধ্যে একুশের
রাতও রয়েছে।
তবে এতেকাফ থেকে বের হওয়ার
ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ
রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন
সকালে সরাসরি ইদগাহে চলে যাওয়া।
তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর
মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন
সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।
৩- এতেকাফের শর্তাবলি
এতেকাফের অনেকগুলো শর্ত রয়েছে ।
শর্ত গুলো নিুরূপ:
এতেকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার
শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল
রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন
এক বছর শাওয়ালের প্রথম
দশকে এতেকাফ করেছিলেন, আর এ
দশকে ঈদের দিনও আছে। আর
ঈদের দিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ।বাকীটুকু পড়ুন

কোন মন্তব্য নেই :