পরকাল ভাবনা (পর্ব :১) →পাতা ১←

কোন মন্তব্য নেই

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
লেখক : মুহাম্মদ শামসুল হক সিদ্দিক
পরকাল ভাবনা
সংকট
আধুনিক বিশ্বে মানুষের সবচেয়ে বড় গুরুত্বের বিষয় কোনটি ? কোন বৈঠকে এ-প্রশ্ন করা হলে একেক জন একেক উত্তর দিবেন; কেউ বলবেন, ব্যাপকবিধ্বংসী অস্ত্রের উৎপাদন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও মজুদ কীভাবে ঠেকানো যায় এটাইআধুনিক বিশ্বের সমধিক গুরুত্বের বিষয়। কেউ বলবেন, জনসংখ্যার বিস্ফোরণ প্রতিহত করাই বর্তমান যুগের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আবার কেউ বলবেন, প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন নিশ্চিত করণই আজকের বড়সমস্যা। এর অর্থ, মানুষ এখনো অন্ধকারে রয়েছে তার পরিচয় বিষয়ে; আবিষ্কার করতে পারেনিনিজের অস্তিত্বের ধরন-ধারণ; পারলে ভিন্নরকম হত সবারই উত্তর। সবাই বলতো, সবচেয়ে বড়সমস্যা আধুনিক মানুষের পরিচয়বিস্মৃতি। মানুষ তার মূল পরিচয় ভুলে গেছে বেমালুম; নশ্বর ইহজগৎ ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে অবিনশ্বর পরজগতে, যেখানে তাকে দাঁড়াতে হবে প্রতিপালকের সামনে যাপিত জীবনের হিসেব দিতে, এ-বিষয়টি বিদায় নিয়েছে তার মস্তিষ্কের সচেতন অংশ থেকে; অন্যথায় এ-খন্ডকালিক অস্তিত্বের জগতকে নয়, অনন্ত পরকালকে, স্রষ্টার মুখোমুখী হওয়াকে, স্বর্গ-নরকের সম্মুখীনতাকে সবচেয়ে বড় বিষয় বলে মনে করতো সে। আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেন :
بل تؤثرون الحياة الدنيا والآخرة خير وأبقى. سورة الأعلى : 16-17
কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে থাকো। অথচ আখেরাতেরজীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আ’লা ১৬-১৭)
আল্লাহ ও পরকালে মানুষের বিশ্বাস সম্পূর্ণ উঠে গেছে, একথা বলছি না। এখনো পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাসীদের দলভুক্ত। কিন্তু এ-বিশ্বাসের শিহরণ ঝিমিয়ে পড়েছে বর্ণনাতীতভাবে মানুষের অন্তর ও বহির্জগতে। মানুষের সচেতন মেধার অংশ হিসেবে মোটেই মন্থিত নয় এ-অতি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসটি। এ-পৃথিবীর জীবনে, অর্থবিত্ত যশ-জৌলুসের পাহাড় গড়ে কীভাবে উন্নতির চরমে পৌঁছানো সম্ভব সে স্বপ্নেই বিভোর থাকেমানুষ দিবস-রজনী। ইরশাদ হচ্ছে:
ألهاكم التكاثرحتى زرتم المقابر- سورة التكاثر : 1-2
প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকেমোহচ্ছন্ন রাখে। যতক্ষণ না তোমরা সমাধিসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। (সূরা তাকাছুর:১-২)
বিশ্বের মধ্যাকর্ষণ শক্তি বিলুপ্তপ্রায় এবং ঘন্টায় ছ’হাজার মাইল বেগে আমাদের পৃথিবী ধেঁয়ে চলেছে সূর্যের দিকে, কোন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে এধরনের নিশ্চিত কোনো সংবাদ পরিবেশিত হলে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় হুমড়ি খেয়ে পড়বেএকে অপরের ওপর, শুরু হবে স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার অভাবিতপূর্ব প্রতিযোগিতা, প্রচন্ড দৌড়ঝাঁপ; কেননা এ ধরনের সংবাদের অর্থ-কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বিপর্যস্ত হবে পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, সমস্ত জনপদ জৈব ও জড় সব কিছুই। অবসান ঘটবে জীবন বৈচিত্রের, এ-নিসর্গলোকের।
এ ধরেনের কোনো সংবাদ আমাদের কানের পাতায় আঘাত হানছে না বলে নিজেদেরকে মনে করছি অনেক নিরাপদ, কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে কষ্ট হবে না, এর থেকে ভয়ংকরতম এক পরিণতির দিকে নিরন্তর ছুটে চলেছে আমাদের এ পৃথিবী। কিন্তু এ-ব্যাপারে উদ্বেগ উৎকন্ঠার স্পর্শ কাউকে পেয়েছে বলে মনেহয় না। প্রশ্ন হতে পারে- কী সেই সঙ্গিন পরিণতি যার ভয়াবহতায় কাতর হতে হবে আমাদের ? তা হলো মহা-প্রলয়দিবসের ভয়াবহতা যা সুনির্ধারিত হয়ে আছে মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন থেকেই। যার কঠিন থাবা থেকে রেহাই পাবে না কেউ; পাওয়ার আদৌ কোনোসুযোগও নেই। তিক্ত সত্য হলো, মানুষ এ-দুর্লঙ্ঘ পরিণতির দিকে এগোচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত। বিশ্বাসের জগতে অধিকাংশ মানুষএ-বিষয়টিকে মানে, কিন্তু বাস্তবে এমন লোকের উপস্থিতি খুব কমই যারা প্রদীপ্ত চেতনা নিয়ে এ-বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। যদি গোধূলিলগ্নে আপনি কোন জনাকীর্ণ বাজারের ধারে দাঁড়িয়ে যান, জানতে চেষ্টা করেন কী জন্য মানুষের এই ভিড়, তাহলে সহযেই বুঝতে পারবেন কিসের পেছনে মানুষের এই অনন্ত দৌড়ঝাঁপ, আনাগোনা। একটু ভেবে দেখুন কী জন্য বাজারে যানবাহনের চলাচল, দোকানদার কী উদ্দেশে বিচিত্র পণ্যে সাজিয়েছে তার দোকান। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখুন, ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ কোথায় যাচ্ছে? তাদের কথাবার্তার বিষয়বস্তু কী? কী জন্য একে অন্যের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করছে? কোন জিনিস মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করছে? মানুষের উত্তম-যোগ্যতাসমূহ কোথায় ব্যয় হচ্ছে? তাদের অর্থবিত্তকোথায় খরচ হচ্ছে? কোন জিনিসের অভাব তাদের নিদ্রা হারাম করে দিচ্ছে? মানুষ কী নিয়ে বেরুচ্ছে ? কি নিয়ে ফিরে আসছে? মানুষের এই অচ্ছেদব্যস্ততা, তাদের মুখ-নিঃসৃত কথামালা, তাদের প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া নিরীক্ষা করে যদি উল্লেখিত প্রশ্নের উত্তর ঘেঁটে বের করতে চান তাহলে সহযেই বুঝে যাবেন কিসের পেছনেমানুষের এই উন্মত্ততা, কোন বিষয়কে মানুষ তার জীবনের সর্বোচ্চ গুরুত্বের বিষয় হিসেবে করে রেখেছে সাব্যস্ত।

আরো পড়ুন......→পরকাল ভাবনা (পর্ব :১)→পাতা ২,৩,৪←

কোন মন্তব্য নেই :