অবুঝ শিশুর হাতেও ফেনসিডিল!

কোন মন্তব্য নেই

মাদকের ভয়াল থাবা রাজশাহীতে, জড়িত
প্রশাসনের কিছু লোক
মাদকের ভয়াবহ
ছোবলে রাজশাহী মহানগরসহ সমগ্র
জেলাই প্রায় আচ্ছন্ন। শিশু-
কিশোররা পর্যন্ত এই মরণ নেশায়
আসক্ত। স্কুল-কলেজের
কোমলমতী শিক্ষার্থীদের
মধ্যে মাদকাসক্তি বেড়ে চলেছে। শুধু
তাই নয়, তারা জড়িয়ে পড়ছে মাদক
ব্যবসাতেও। বাড়ছে চাঁদাবাজি, ছিনতাই,
প্রতারণা ও ডাকাতিসহ নানা ধরনের
অপরাধ। হত্যাকাণ্ডও ঘটছে এই
মাদকের কারণে। সম্প্রতি পর পর
নয়টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এই
মাদককে কেন্দ্র করে। এসব অপরাধ ও
খুনের সঙ্গে মাদকের সম্পর্ক
রয়েছে বলে পুলিশের তদন্তে প্রমাণ
মিলেছে।
সীমান্তের ওপার
থেকে আসছে বস্তা বস্তা ফেনসিডিল,
হেরোইন, ইয়াবা ও যৌন উত্তেজক
ট্যাবলেট। অবাধে মাদক কেনা-
বেচা হচ্ছে রাজশাহীতে। কিছু অসাধু
পুলিশ সদস্য, মাদক নিয়ন্ত্রণ
অধিদফতরের এক শ্রেণীর
কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কিছু
রাজনৈতিক নেতা এই মাদক ব্যবসায়
জড়িত বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এদের
কারণেই রাজশাহীতে মাদকের কেনা-
বেচা চলছে প্রকাশ্যে।
রাজশাহী অঞ্চলের মাদক নিয়ন্ত্রণ
অধিদফতরের সুপার মো. সলিম উল্লাহ
বলেন, আগের চেয়ে এ অঞ্চলে মাদক
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। গতকাল
মঙ্গলবার বিশ্ব মাদক দিবসের
আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি করেন।
ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, গণ্যমান্য
ব্যক্তি এবং সুশীল সমাজের ১০ জন
ইত্তেফাককে বলেন,
রাজশাহী অঞ্চলে মাদকের
পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির
দিকে যাচ্ছে। কোমলমতি শিশুরা পর্যন্ত
নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল, কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মাদকের
সর্বনাশা ছোবলে ধুঁকছে।
র্যাব-৫-এর (রাজশাহী) অধিনায়ক লে.
কর্নেল মো. কামরুল হাসান বলেন,
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে র্যাব অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে। অপরাধের
সঙ্গে মাদকের সম্পর্ক রয়েছে।
র্যাব-৫ সূত্রে বলা হয়, মাদকের
বিরুদ্ধে অভিযান ও ধরপাকড় অব্যাহত
রয়েছে। এ পর্যন্ত র্যাব-৫ পাঁচ লাখ
৯৪ হাজার ৬৪ বোতল ফেনসিডিল,
বোতলজাত না করা ফেনসিডিল ১৮০৬
লিটার, একশ কেজি হেরাইন ও ২৩৬২
পুরিয়া হেরোইন, ১ কেজি আফিম,
৪১০৩ কেজি কোকেন, ৩৫৩০
কেজি গাঁজা, ৩৯৪৫ পিস
ইয়াবা ট্যাবলেট ও ৪ লাখ ৩৪ হাজার
৬৯৬টি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট
উদ্ধার করে।
রাজশাহীতে মাদকের
অপব্যবহারে অপরাধ দ্রুত বাড়ছে।
মাদকের টাকার জন্য চাঁদাবাজি, চুরি,
ছিনতাই, ব্ল্যাকমেইলিং এমনকি খুনসহ
ভয়ংকর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্র ও
যুবকরা। মাদকসেবী সন্তানের অর্থের
যোগান দিতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অনেক
পরিবার। সংশ্লিষ্ট মাদক ব্যবসায়ীদের
নিত্য নতুন কৌশলে কুপোকাত পুলিশ ও
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
র্যাব-৫ রাজশাহীর একটি নির্ভরযোগ্য
সূত্র জানায়, জুলাই ২০১১ থেকে জুন
২০১২ পর্যন্ত এলাকায় অভিযান
চালিয়ে ৮১ হাজার ৮৯৪ বোতল ও
১০৩ লিটার তরল ফেনসিডিল, ৪.৭৫
কেজি ও ৭শ পুরিয়া হেরোইন, প্রায়
৫৫০ কেজি গাঁজা, ১৮০ লিটার তরল
ও ৪শ বোতল মদ, ৪৬ বোতল হুইস্কি,
৩০ বোতল স্পিরিট, ৩৪৩ লিটার
তাড়ি, ১০৭ বোতল বিয়ার, ৬৮০
বোতল অ্যালকোহল, ১ কেজি আফিম,
প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পিস
ইয়াবা ট্যাবলেট, ২ লাখ ৮৭ হাজার
যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, প্রায়
সাড়ে ৯ হাজার নেশাজাতীয় ইনজেকশন,
আড়াই হাজার মরফিন ইনজেকশন ও
প্রায় ১০০ পিস অজ্ঞান করার
ইনজেকশন উদ্ধার করেছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা মাদক বহনের
কাজে তারা ব্যবহার করছে নারী ও
শিশুদের। দারিদ্র্য, পারিপার্শ্বিক
অবস্থা, প্রলোভন
এমনকি কখনো চাপের মুখে নারীরা মাদক
ব্যবসায় জড়াচ্ছে বলে জানা যায়।
মাদকের ছোবলে ধ্বংসের
দারপ্রান্তে ছাত্র ও যুব সমাজ।
জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের
একশ্রেণীর শিক্ষক এমনকি সরকারি-
বেসরকারি কর্মকর্তা ও
কোমলমতি শিশুরাও। বিভিন্ন সময়
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
হাতে মাদকসেবী ও ক্ষুদ্র
ব্যবসায়ীরা আটক হলেও মূল
হোতারা সবসময় থাকছে ধরাছোঁয়ার
বাইরে। ফলে মাদক ব্যবসা বন্ধ
হচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহী শহরের
প্রায় সকল মহল্লায় পুরুষের
পাশাপাশি কমবেশি নারীরাও প্রত্যক্ষ
মাদক ব্যবসায় জড়িত। কোনো এলাকায়
নারীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে মাদক
ব্যবসা। নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত
বলে মাদক ব্যবসায় নারীদের ব্যবহার
করা হচ্ছে। রাজশাহী থেকে উত্তরের
বিভিন্ন জেলায়
এমনকি ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন
জেলায় ফেনসিডিল বহনের কাজ
করছে নারীরা। বিশেষ করে বগুড়াসহ
উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন
জেলা থেকে রাজশাহীতে ফেনসিডিল
বহনের উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতিদিনই
আসে নারীরা। আবার
রাজশাহী থেকে নারীরা বিভিন্ন
গন্তব্যে মাদক বহন করে নিয়ে যায়।
রাজশাহী থেকে বগুড়ায় ফেনসিডিল
বহনকালে এক বছরে (জুন ২০১১
থেকে ২০১২) আইন-
শৃংখলা বাহিনী ৬০ নারীকে মাদকসহ
গ্রেফতার করেছে। এদের
অনেককে ভ্রাম্যমাণ
আদালতে সাজা দেয়া হলেও থেমে নেই
মাদক ব্যবসা। জামিনে মুক্ত
হয়ে তারা আবারো মাদক ব্যবসায়
জড়িয়ে পড়েছে; কিন্তু মাদকদ্রব্য
নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের
কাছে নারী মাদক
ব্যবসায়ী কিংবা বহনকারীদের
ব্যাপারে সঠিক ও সুনির্দিষ্ট
কোনো তথ্য নেই। মাদক ব্যবসায়
জড়িত নারীদের অধিকাংশই দরিদ্র
পরিবারের। বেশিরভাগ
স্বামী পরিত্যক্তা অথবা বিধবা।
অধিকাংশেরই বয়স চল্লিশের কোটায়। এ
সুযোগ গ্রহণ করে মাদক ব্যবসায়ীরা।
নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত বলে তারা মাদক
ব্যবসা ও বহনের কাজে নারীদের
ব্যবহার করে।
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়,
নারীরা শরীরের সঙ্গে বিশেষ কায়দায়
মাদক বহন করলে তাদের সন্দেহ
কিংবা তল্লাশি করা দুরূহ কাজ। সোর্সের
মাধ্যমে নিশ্চিত তথ্য থাকলেই কেবল
নারীদের মাদকসহ গ্রেফতার সম্ভব।
আবার মাদক বহনের সময়
নারীরা গ্রেফতার হলেও মূল
হোতারা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী মাদক
বহনকারী বলেন, বিশেষ কায়দায়
তারা ফেনসিডিল বহন করেন। এ জন্য
তৈরি হয় বিশেষ ধরনের সালোয়ার।
এতে ফেনসিডিলের বোতলের
মাপে তৈরি করা থাকে পকেট। হেরোইন ও
গাঁজা বহনে ব্যবহূত হয় হাফপ্যান্ট।
এছাড়া শরীরের বিশেষ
স্থানে লুকিয়ে পাচার করা হয় হেরোইন।
আবার অনেক বয়স্ক
নারী স্বাভাবিকভাবে ব্যাগে করে বহন
করেন মাদক। পবার নওহাটায় মাদক
ব্যবসায়ী লিপি কারাগার
থেকে জামিনে বেরিয়ে আবারো একই
ব্যবসা শুরু করে। পরে ভ্রাম্যমাণ
আদালত তার
বাড়িতে হানা দিয়ে মাদকদ্রব্য উদ্ধার
করে। আদালত তাকেসহ মা, ভাই ও
ভাবীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়।
নগরীর পাঠানপাড়ার অবিরণ
একাধিকবার গ্রেফতার হলেও তার মাদক
ব্যবসা বন্ধ হয়নি। গত ১ জুন
সে আবারো গ্রেফতার হয়েছে। ১৮ জুন
বাঘায় ৭১ বোতল ফেনসিডিলসহ
গ্রেফতার হয়েছে নারী মাদক
ব্যবসায়ী রোকসানা।
মে মাসে পুঠিয়া থেকে বগুড়ায় ফেনসিডিল
বহনের সময় সেনভাগ এলাকায় বগুড়ার
৬ নারী গ্রেফতার হয়। ২৫ এপ্রিল
বগুড়ার আরেক নারী পামেলা বেগম
গ্রেফতার হন। ২১ এপ্রিল
মহানগরী থেকে ফেনসিডিলসহ দুই
নারীকে র্যাব গ্রেফতার করে। ১৬
এপ্রিল হরগ্রামে গ্রেফতার হয় ফুলবানু।
২৫ মার্চ পুঠিয়ায় গাঁজাসহ গ্রেফতার
হয় ফরিদা বেগম। ১৫
ফেব্রুয়ারি গুড়িপাড়ার
গোলজারবাগে ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজাসহ
গ্রেফতার হয় আরেক নারী আনসুরা।
গত বছর সেপ্টেম্বরে শিরোইল
ঢাকা বাসটার্মিনালে হেরোইনসহ এক
নারী গ্রেফতার হয়। একই বছর
আগস্টে বাসটার্মিনাল ও
কোটাখালিতে হেরোইন ও ফেনসিডিলসহ
৩ নারী গ্রেফতার হয়।
এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায়
পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ
অধিদফতরের অভিযানে ফেনসিডিল,
হেরোইন, গাঁজা, চোলাইমদসহ অগণিত
সংখ্যক নারীকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিকে গত বছরের ২৩ জুন মোহনপুর
উপজেলার ধোরসা গ্রামে মাদকের টাকার
জন্য ১১ বছরের শিশু সুইটি আক্তার
বন্যার কানের স্বর্ণের দুল
ছিঁড়ে নিয়ে তাকে সেফটি ট্যাংকে ফেলে হত্যা করে মাদকসেবী ফারুক
হোসেন। এভাবে বিগত এক বছরে (জুন
২০১১ থেকে ২০১২)
রাজশাহীতে সংঘটিত ৯টি হত্যাকাণ্ড
ঘটেছে মাদকের কারণে এবং পুলিশের
তদন্তে তা প্রমাণিত হয়েছে। এদের
মধ্যে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী স্বামীর
হাতে হত্যার শিকার হন ৫ নারী। জুন
২০১০ থেকে মে ২০১১ পর্যন্ত
মাদকের কারণে রাজশাহীতে হত্যাকাণ্ড
ঘটে ৫টি। চলতি বছরের ২১ মার্চ
চারঘাটের গৌরশহরে মাদক
ব্যবসায়ী স্বামী গৃহবধূ
রেহেনাকে হত্যা করে বলে জানা যায়।
আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে ফেনসিডিল
আটকের পর বাপের
বাড়ি থেকে টাকা আনতে রেহেনাকে চাপ
দেয়া হয়। গত ৪ জানুয়ারি মাদকের
টাকার জন্য তিন কিশোর ইজিবাইক
চালক মইনুলকে গলাকেটে খুন করে। ১৪
জুন ছোট বনগ্রাম বাইপাস এলাকায়
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তর্কের এক
পর্যায়ে সহযোগীর ছুরিকাঘাতে খুন হয়
যুবক শামীম হোসেন। ২৭ এপ্রিল
খিরসিন টিকরে মাদকসেবী হান্নান ও
ফারুকের বিরোধে সংঘর্ষে মনজুর রহমান
খুন হয়। ৪ এপ্রিল রানীনগরে যৌতুকের
জন্য গৃহবধূ সাথীর গায়ে আগুন
ধরিয়ে দেয় তার মাদকসেবী স্বামী। ২৫
এপ্রিল মতিহারের কুখণ্ডিতে গৃহবধূ
রূপালীকে মাদকাসক্ত স্বামী হত্যা করে।
২০১১ সালের ২৯ অক্টোবর
নওদাপাড়ায় গৃহবধূ
নাসরিনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে তার
মাদকসেবী স্বামী। ১১ আগস্ট
মোহনপুরের
কালিগ্রামে মাদকসেবী স্বামীর হাতে খুন
হয় গৃহবধূ সাথী। ৫ আগস্ট বাগমারার
নদীতে পা বাঁধা মাদকসেবী যুবকের লাশ
পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এসব
হত্যার নেপথ্যে যৌতুক ও পারিবারিক
নির্যাতন থাকলেও স্বামীরা মাদকাসক্ত
হওয়ায় হত্যা ত্বরান্বিত হয়েছে।
বিভিন্ন হত্যা মামলা তদন্তের সময়
পুলিশ অন্য কারণের পেছনে মাদকের
উপস্থিতি খুঁজে পেয়েছে। এছাড়া মাদক
ব্যবসায় আধিপত্য বিস্তার
নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায়
সংঘর্ষ-হানাহানি লেগেই আছে।
Source: http://
new.ittefaq.com.bd/news/
view/107318/2012-06-27/1
খবরটি শেয়ার করে সবাইকে সচেতন
করে তুলতে সাহায্য করুন।
ধন্যবাদ।

আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :