রজব সংক্রান্ত প্রচলিত হাদিসগুলো দুর্বল ও ভিত্তিহীন →পাতা ১←
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন নালিখেছেনঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ
১. রজবের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসের ব্যাপারে ইবনেহাজার রহ. এর বক্তব্য মূলনীতিরন্যায়।
ইবনে হাজার রহ. বলেন, রজব মাসের ফজিলত, রজব মাসের রোজার ফজিলত বা রজব মাসের নির্দিষ্টকোন দিনের রোজার ফজিলত বা রজবের নির্দিষ্ট কোন রাতে সালাতের ফজিলত সম্পর্কে বিশুদ্ধ কোন হাদিস নেই, যা প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করানো যায়। হাফেজে হাদিস আবু ইসমাইল আল-হিরাবি আমার পূর্বেই এ ব্যাপারে অনুরূপ মতখুব দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন, ইতিপূর্বে বিশুদ্ধ সূত্রে যার বর্ণনা আমরা দিয়েছি।
তিনি আরো বলেছেন, যেসব হাদিস রজবের ফজিলত বা রজবের রোজার ফজিলত বা রজবের নির্দিষ্ট কোনদিনের রোজার ফজিলতের ব্যাপারেস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা দুপ্রকার : (ক) দুর্বল (খ) জাল বা বানোয়াট।
আমরা এখানে দুর্বল হাদিসগুলোরউলেখ করব আর জাল বা বানোয়াট হাদিসগুলোর প্রতি সামান্য ইঙ্গিত দিব।
দেখুন : হাফেজ ইবনে হাজার রচিত তাবইনুল উজব ফিমা ওরাদা ফি ফাজলে রজব (পৃ. ৬ ও ৮) এবং আল্লামা শাকিরি রচিত কিতাবুস সুনান ওয়াল মুবতাদিআত (পৃ. ১২৫)
দ্বিতীয়ত : এখন লক্ষ্য করুন দুর্বল হাদিসগুলো, যা মানুষের মুখে, সভা ও মাহফিলে বারবার উচ্চারিত হয়, অথচ তা বিশুদ্ধ সূত্রে রাসূল সা. থেকে প্রমাণিত নয়। যেমন,
১. হাদিস :
اللهم بارك لنا في رجب و شعبان و بلغنا رمضان অর্থ : হে আল্লাহ, রজব ও শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করুন এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফিক দান করুন। হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ তার মুসনাদ গ্রন্থে এবং ইমাম তাবরানি তার আওসাত গ্রন্থে। হায়সামি রহ. বলেন, এ হাদিসটি বাজ্জার বর্ণনা করেছেন। এ হাদিসের বর্ণনাকারীদের একজন রয়েছেন জায়েদা বিন আবি রাকাদ, তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেছেন, মুনকিরুল হাদিস। ইবনে হাজার রহ. স্বয়ং ইমাম বুখারি থেকে সহি সূত্রে বর্ণনা করেন, যার ব্যাপারে আমিমুনকিরুল হাদিস বলব, তার হাদিসগ্রহণ করা বৈধ নয়।
দেখুন : আলফাজ ও ইবারাতুল জারহি অত্তাদিল বাইনাল ইফরাদ অত্তাকরির অত্তারকিব (পৃ.২৬৭)
হাদিস বর্ণনাকারীদের বৃহৎ একটি জামাত তাকে অখ্যাত বলেছেন। অখ্যাত বলার অর্থও তার হাদিস দুর্বল। খুব যাচাই বাছাই করে প্রমাণিত হলে গ্রহণকরা যায়।
দেখুন : মাজমাউজ্জা ওয়ায়েদ (খ.:২, পৃ.:১৬৫, প্রকাশক : দারুর রাইয়ান, সন : ১৪০৭ হি.)
ইমাম নববি রহ. তার আজকার নামক গ্রন্থে এ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন। ইমাম জাহাবি রহ.ও তার রচিত মিজান (খ. ৩, পৃ. ৯৬, মুদ্রন : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, সন : ১৯৯৫ ইং) গ্রন্থে এ হাদিসটি দুর্বল বলেছেন।
২. হাদিস :
فضل شهر رجب على الشهور كفضل القرآن على سائر الكلام
অর্থ : রজম মাসের ফজিলত অন্যসব মাসের তুলনায় তেমন, যেমন কুরআনের ফজিলত অন্যসব কালামের ওপর।
এ হাদিসের ব্যাপারে ইবনে হাজার রহ. বলেছেন, এটা জাল ও বানোয়াট।
দেখুন : আজালুনি কর্তৃক রচিত কিতাব কাশফুল খাফা (খ. ২, পৃ. ১১০, প্রকাশক : মুআসসাসাতুর রিসালা, সন : ১৪০৫ হি.) এবং আলি ইবনে সুলতান আল-কারি কর্তৃক রচিত, কিতাব আল-মাসনু (খ. ১, পৃ.১২৮, প্রকাশক : মাকতাবাতুর রুশদ, সন : ১৪০৪ হি.)
৩. হাদিস :
رجب شهر الله وشعبان شهري ورمضان شهر أمتي
অর্থ : রজব আল্লাহর মাস, শাবানআমার মাস আর রমজান আমার উম্মতের মাস। এ হাদিসটি দায়লামি রহ. ও আরো কতক মুহাদ্দেস, সাহাবি আনাস রা. এর সূত্রে সরাসরি রাসূল সা. থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনুল জাওজি রহ. এ হাদিসটি তার রচিত জাল হাদিস সমগ্র কিতাবে উলেখ করেছেন। তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এ হাদিস বর্ণনার বেশ কয়েকটি সূত্র পর্যালোচনা করার পর। তদ্রুপ হাফেজ ইবনে হাজার রহ.ও এ হাদিসটি তার রচিত তাবইনুল উজব ফিমা অরাদা ফি রজব কিতাবে জাল বলেছেন।
দেখুন : ইমাম মুনাবি রহ. রচিত ফয়জুল কাদির (খ. ৪, পৃ. ১৬২ ও ১৬৬, প্রকাশক : মাকতাবা তিজারিয়া কুবরা, সন : ১৩৫৬হি.)
৪. হাদিস :
لا تغفلوا عن أول جمعةمن رجب فإنها ليلة تسميها الملائكة الرغائب
অর্থ : রজবের প্রথম জুমার ব্যাপারে তোমরা উদাসীন থেকো না, কারণ, তা এমন একটি রাত, ফেরেশতারা যার নামকরণ করেছে রাগায়েব হিসেবে …। এটা দীর্ঘ হাদিস, এর মাধ্যে আরো মিথ্যাচার রয়েছে।
দেখুন : আজলুনি কর্তৃক রচিত কাশফুল খাফা গ্রন্থ। (খ. ১, পৃ. ৯৫, প্রকাশক : মুআসসাসাতুর রিসালা, সন : ১৪০৫ হি.)
ইমাম জারয়ি রচিত নাকদুল মানুকল গ্রন্থ, (খ. ১, পৃ. ৮৩, প্রকাশক : দারুল কাদেরি, সন : ১৪১১ হি.)
৫. হাদিস :
رجب شهر عظيم يضاعف الله فيه الحسنات فمن صام يوما من رجب فكأنما صام سنة ومن صام منه سبعة أيام غلقت عنه سبعة أبواب جهنم ومن صام منه ثمانية أيام حسنة له ثمانية أبواب الجنة ومن صام منه عشر أيام لم يسأل الله إلا أعطاه ومن صاممنه خمسة عشر يوما نادى مناد في السماء قدغفر لك ما مضى فاستأنف العمل ومن زاد زاده الله وفي رجب حمل الله نوحا فصام رجب وأمر منمعه أن يصوموا فجرت سبعة أشهر أخر ذلك يوم عاشوراء اهبط على الجودي فصام نوح ومن معه والوحش شكرا لله عز وجل وفي يوم عاشوراء فلق الله البحر لبني إسرائيل وفي يوم عاشوراء تاب الله عز وجل على آدم صلى الله عليه وسلم وعلى مدينة يونس وفيه ولد إبراهيم صلى الله عليه وسلم
আরো পড়ুন......→রজব সংক্রান্ত প্রচলিত হাদিসগুলো দুর্বল ও ভিত্তিহীন→পাতা ২←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন