রজব সংক্রান্ত প্রচলিত হাদিসগুলো দুর্বল ও ভিত্তিহীন →পাতা ২←
অর্থ : রজব মাস একটি মহৎ মাস। আল্লাহ তাআলা এতে নেকির পরিমাণ খুব বৃদ্ধি করেন। যে ব্যক্তি রজবের একদিন রোজা রাখল, সে প্রায় এক বৎসর রোজা রাখল। যে ব্যক্তি রজবে সাত দিন রোজা রাখবে, তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি রজবের আট দিন রোজা রাখবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা সুসজ্জিত করা হবে। যে ব্যক্তিরজবের দশ দিন রোজা রাখবে, সে যা চাইবে আল্লাহ তাকে তাই দেবেন। যে ব্যক্তি রজবের পনেরদিন রোজা রাখবে, তাকে আসমান থেকে একজন ঘোষণাকারী বলবে, আল্লাহ তোমার পিছনের সব কিছু মাফ করে দিয়েছেন, তুমি নতুন করে আমল কর। আর যে আরো বেশি রোজা রাখবে আল্লাহ তাকে আরো বেশি দেবেনে। এ রজব মাসেই আল্লাহ নুহ আ.কে নৌকায় আরোহন করিয়েছেন। তিনি রজব মাসে রোজা রাখেন এবং যারা তার সঙ্গে ছিল তাদেরকেও তিনি রোজারাখার নির্দেশ দেন। যার ফলে সাত মাস পানিতে নৌকা বিচরণ করে, যার সর্ব শেষ দিন হচ্ছে আশুরা। তারা জুদি পাহাড়ে অবতরণ করেন। অতঃপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য নুহআ. রোজা রাখেন এবং যারা তার সঙ্গে ছিল তারা, এমনকি অন্যান্য জীবজন্তুও। আশুরার দিন আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলের জন্য সমুদ্র বিদীর্ণকরেছিলেন। এ আশুরার দিনই আল্লাহ তাআলা আদম আ. এর তওবা ও নবি ইউনুস আ.এর সমপ্রদায়ের তওবা কবুল করেছেন। এবং আশুরাতেই ইবরাহিম আ. জন্ম গ্রহণ করেছেন।জাহাবি রহ. বলেছেন, এ হাদিস বাতিল ও ভ্রান্ত এর সনদ অস্পষ্ট। হায়সামি রহ. বলেছেন,এ হাদিস তাবরানি তার কাবির গ্রন্থে উলেখ করেছেন। এ হাদিসের সনদে আব্দুল গাফুর নামক একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, যে মুহাদ্দিসিনের নিকট পরিত্যাক্ত।
দেখুন : ইমাম জাহাবি রচিত, মিজান গ্রন্থ। (খ. ৫, পৃ. ৬২, প্রকাশক : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, সন : ১৯৯৫ ই.)
ইমাম হায়সামি রচিত, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ গ্রন্থ। (খ. ৩, পৃ. ১৮৮, প্রকাশক : দারুর রাইয়ান, সন : ১৪০৭ হি.)
৬. হাদিস :
(ক) রজবের প্রথম জুমার রাতে প্রচলিত সালাতে রাগায়েবের ব্যাপারে যত হাদিস রয়েছে, তা সব বাতিল ও রাসূল সা. এর ওপর মিথ্যাচার।
(খ) রজবের রোজা বা রজবের কতক রাতের নির্দিষ্ট রোজার ব্যাপারে যেসব হাদিস রয়েছে, তাসব মিথ্যা ও রাসূল সা. এর ওপর অপবাদ।
(গ) রজব মাসের প্রথম রাতে মাগরিবের পর যে ব্যক্তি বিশ রাকাত সালাত পড়বে, সে নাপাক বিহীন পুলসিরাত পার হবে।
(ঘ) যে ব্যক্তি রজবের কোন একদিন রোজা রাখল এবং তাতে দুরাকাত সালাত আদায় করল, যার প্রথম রাকাতে একশত বার আয়াতুল কুরসি পড়ল ও দ্বিতীয় রাকাতে একশত বার সুরায়ে ইখলাস পড়ল, সে জান্নাতে তার স্থান না দেখে মারা যাবে না।
(ঙ) যে রজব মাসে রোজা রাখল, সে…, সে …।
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর জারয়ি (মৃত : ৬৯১ হি.) বলেন, এসব হাদিস মিথ্যা ও বানোয়াট।
দেখুন : জারয়ি রচিত নাকদুল মানকুল (খ. ১, পৃ. ৮৩-৮৪, প্রকাশক : দারুল কাদেরি, সন : ১৪১১ হি.)
৭. হাদিস :
من صام ثلاثة أيام من شهرٍ حرامٍ الخميس والجمعة والسبت كتب الله له عبادة تسعمائة سنة). وفي لفظ: (ستين سنة
অর্থ : যে ব্যক্তি সম্মানিত মাসে (জিলকদ, জিলহজ, মুহাররম ও রজব) বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবারতিনটি রোজা রাখবে, আল্লাহ তাকেনয়শত বৎসরের ইবাদত দেবেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তাকে ষাট বৎসরের ইবাদত দেবেন।
তাবরানি তার আওসাদ (খ. ২, পৃ. ২১৯, প্রকাশক : দারুল হারামাইন, সন : ১৪১৫ হি.) গ্রন্থে এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এ হাদিসটি মাসলামা থেকে একমাত্রইয়াকুব বর্ণনা করেছে এবং তারথেকে শুধু মুহাম্মদ ইবনে ইয়াহইয়া বর্ণনা করেছে।
হায়সামি রহ. বলেছেন, এ হাদিসটি তাবরানি তার আওসাত গ্রন্থে ইয়াকুব বিন মুসা আল-মাদানি থেকে বর্ণনা করেছেন, সে বর্ণনা করেছে মাসলামা থেকে। বর্ণনাকারী ইয়াকুব মুহাদ্দিসিনের নিকট অখ্যাত। আর মাসলামার পুরো না হচ্ছে মাসলামা বিন রাশেদ আল-হামানি। তার ব্যাপারে ইমামহাতেম বলেছেন, সে হাদিসের ব্যাপারে দুদোল্যমান। ইমাম আজদি বলেছেন, সে হাদিসের ব্যাপারে খুবই দুর্বল, তার হাদিস দলিলের উপযুক্ত নয়।
দেখুন : মাজমাউজ জাওয়ায়েদ (খ. ৩, পৃ. ১৯১, প্রকাশক : দারুর রাইয়ান, সন : ১৪০৭)
ইবনে জাওজি রহ. তার রচিত আল-ইলাল আল-মুতানাহিয়াহ (খ. ২, পৃ. ৫৫৪, প্রকাশক : দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, সন : ১৪০৩ হি.) গ্রন্থে এ হাদিসটি বিশুদ্ধ নয় বলে প্রমাণ করেছেন।
৮. হাদিস :
صوم أول يوم من رجب كفارة ثلاث سنين، والثانيكفارة سنتين، ثم كلّ يوم شهراً
অর্থ : রজব মাসের প্রথম রোজা তিন বৎসরের কাফ্ফারা স্বরূপ।দ্বিতীয় দিনের রোজা দুবৎসরেরকাফ্ফারা স্বরূপ। অতঃপর প্রত্যেক দিনের রোজা এক মাসেরকাফ্ফারা স্বরূপ।
দেখুন : মুনাবি রচিত ফায়জুল বারি গ্রন্থ। (খ. ৪, পৃ. ২১০, প্রকাশক : মাকতাবা তিজারিয়া কুবরা, সন : ১৩৫৬ হি.)
৯. হাদিস :
ইমাম আজলুনি রহ. বলেন, আরেকটি বানোয়াট হাদিস হচ্ছে, রজবের প্রথম জুমার রাতে বানোয়াট সালাত। যার নাম করণ করা হয়েছে সালাতে রাগায়েব হিসেবে। রাসূল সা. এর সুন্নত ওমুহাদ্দিসিনের নিকট এর কোন ভিত্তি নেই।
দেখুন : তার রচিত কাশফুল খাফা (খ. ২, পৃ. ৫৬৩, প্রকাশক : মুআসসাসাতুর রিসালা, সন : ১৪০৫হি.)
১০. হাদিস :
হাফেজে হাদিস আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন আবু বকর দিমাশকি(মৃত:৬৯১হি.) বলেছেন, রজব মাসে রোজার ব্যাপারে ও তার বিশেষ রাতের সালাতের ব্যাপারে যে হাদিস রয়েছে, তা সব মিথ্যা, রাসূল সা. এর ওপর অপবাদ। তার মধ্যে একটি হাদিস যেমন, যে ব্যক্তি রজবের প্রথম রাতে বিশরাকাত সালাত আদায় করবে, সে নাপাক বিহীন পুলসিরাত পার হয়ে যাবে।
দেখুন : আল-মানার আল-মুনিফ গ্রন্থ। (খ. ১, পৃ.৯৬, প্রকাশক :মাকতাবা মাতবুআতুল ইসলামিয়া,সন : ১৪০৩ হি.)
আল্লাহ ভাল জানেন। সমস্ত প্রসংশা তার জন্য এবং সালাত ও সালাম নাজিল হোক তার রাসূল সা.এর ওপর, তার বংশধর, সাহাবা ওসবার ওপর।
ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ-ই- গাফফার
সৌজন্যঃ কুরআনের আলো ডট কম ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন