মাইগ্রেন হলে কী করবেন? ডা. শামস্‌ মোহাম্মদ নোমান

কোন মন্তব্য নেই
মাইগ্রেন হলো একটি ভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা। মেয়েদের মাঝে এ রোগ বেশি দেখা যায়। তবে পুরুষেরও এরোগ হতে পারে।
এই রোগ কেন হয়?
*. মাথার ভেতরের রক্তচলাচলের তারতম্যেরকারণে এই রোগ হয়। রক্তচলাচল কমে গেলে হঠাৎ করে চোখে সব অন্ধকার দেখা যায় এবং পরবর্তীতে রক্তচলাচল হঠাৎ বেড়ে গিয়ে প্রচণ্ড মাথাব্যথার অনুভূতি তৈরি হয়।
*. চকলেট, পনির, কফি ইত্যাদি খাবার, জন্মবিরতিকরণ ওষুধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ভ্রমণ, ব্যায়াম ইত্যাদির কারণে এই রোগের সূচনা হতে পারে।
কমন মাইগ্রেন
*. মাথাব্যথা, বমি ভাব এই রোগের প্রধান লক্ষণ।
*. তবে, অতিরিক্ত হাইতোলা,কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট হওয়া, বিরক্তবোধ করা ইত্যাদি উপসর্গ মাথাব্যথা শুরুর আগেও হতে পারে।
*. মাথার যে কোনো অংশ থেকেএই ব্যথা শুরু হয়। পরবর্তীতে পুরো মাথায় ছড়িয়ে পড়ে। চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি তৈরি হতে পারে। চোখের ওপর হালকা চাপ দিলে আরাম বোধ হয়।
*. মাথার দু পাশে কানের ওপরে চাপ দিলে এবং মাথার চুল টানলে ভালো লাগে।
*. তখন শব্দ এবং আলো ভালো লাগে না। কখনো কখনো অতিরিক্ত শব্দ এবং আলোতে মাথাব্যথা বেড়ে যায়।
ক্লাসিকাল মাইগ্রেন
এখানে চোখে দৃষ্টি সমস্যা যেমন চোখে উজ্জ্বল আলোর অনুভূতি, হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, দৃষ্টি সীমানা সরু হয়ে আসা অথবা যে কোনো এক পাশ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হতে পারে। ২০ মিনিট স্থায়ী এইউপসর্গের পর বমির ভাব এবংমাথাব্যথা শুরু হয় যা সাধারণত এক পাশে হয়।
*. দৃষ্টির সমস্যা ১ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হলে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়। ব্রেইন অথবা চোখে অন্য কোনো সমস্যার কারণে দৃষ্টিরএ সমস্যা বেড়ে যেতে পারে
*. মাথাব্যথাবিহীন শুধু ভিজুয়াল অরা বা দৃষ্টি সমস্যাও ক্লাসিকাল মাইগ্রেনের লক্ষণ হতে পারে।
করণীয়
*. যাদের এ রোগ আছে, তাদের অন্তত দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক।
*. যেসব খাবার খেলে মাইগ্রেন শুরু হতে পারে সেসব খাবার যেমন কফি, চকলেট, পনির, আইসক্রিম, মদ ইত্যাদি বর্জন করা উচিত।
*. অধিক সময় উপবাস থাকা যাবে না।
*. জন্মবিরতিকরণ পিল সেবননা করা শ্রেয়। প্রয়োজনে অন্য পদ্ধতি বেছে নেয়া ভালো।
*. পরিশ্রম, মানসিক চাপ এবং দীর্ঘ ভ্রমণ বর্জনের মাধ্যমে মাইগ্রেনের আক্রমণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

চিকিৎসা
*. বারবার মাইগ্রেনের আক্রমণ কমানের জন্য পিজোটিফেন, অ্যামিট্রিপটাইলিন, বিটাব্লকার জাতীয় ওষুধকার্যকর।
*. মাথাব্যথা শুরু হলে প্যারাসিটামল, এসপিরিন,ডাইক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ কার্যকর। বমির ভাব কমানোর জন্যে মেটোক্লোর প্রোমাইড, ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
*. উপরোল্লিখিত ওষুধে মাথাব্যথা না কমলে সুমাট্রিপটান, আরগোটামাইন জাতীয় ওষুধে কোনো কোনো রোগী অনেক আরামবোধ করেন। সবচেয়ে বড় কথা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধমে অনেক ক্ষেত্রেই এই রোগের বারবার আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। মনে রাখবেন, সব মাথাব্যথা মাইগ্রেন নয়,দৃষ্টিস্বল্পতা, ব্রেইন টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে চোখের ডাক্তারের পাশাপাশি স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন পড়ে।
লেখক : চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।

কোন মন্তব্য নেই :