বিবাহ ৪

কোন মন্তব্য নেই
বিয়ের অনুষ্ঠানের সর্বশেষ পর্যায় কনে সমর্পণ, যাকে গ্রিক ভাষায়বলা হয় Ekdosis যার অর্থকারো কর্তৃক থেকে কোনো বস্তু বা অধিকার অন্য কারো কাছে হস্তান্তর করা। এর দ্বারা উপলব্ধি করা সহজ যে, গ্রিক সমাজে মেয়েদের পিতার অধীনে কোনো সামগ্রী অথবা এক টুকরো জমির মতো সম্পদ ছাড়া আর কিছু বিবেচনা করাহতো না। প্রথম জাঁকজমকপূর্ণ নৈশভোজের আয়োজন হতো কনের পিতৃগৃহে। ভোজের স্থান সাজানো হতো জলপাই-এর ডাল ও পাতা দ্বারা। বর ও কনে পক্ষের সকল আত্মীয়-স্বজনও বন্ধু-বান্ধব এতে যোগ দিত। মহিলারা বসত পৃথক জায়গায়। পেশাদার শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করত।
কনে অনুষ্ঠানে আবির্ভূত হতো তার সখীর সাথে, যে তার পর্দার দিকটি খেয়াল রাখত। প্রথাগতভাবে কনেকেআপাদমস্তক পর্দায় ঢেকে রাখা হতো, খোলা থাকত শুধুচোখের অংশটুকু এবং খাবার শেষে সে সেই আবরণী খুলে রাখতে পারত। একটি ব্যাখ্যা অনুসারে অশুভ দৃষ্টি থেকে কনেকে রক্ষার জন্যই পর্দাপ্রথাচালু ছিল অন্তত বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। অন্যদিকে বর ফুলের মালায় সজ্জিত হয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু পরিবেষ্টিতঅবস্থায় থাকত।
একজন যুবকের বাবা-মা উভয়েই যদি জীবিত থাকত তাহলে সে কাঁটা ও ওক গাছের পাতার মুকুট ধারণ করে বিয়ে উপলক্ষে আগত অতিথিদের কাছে ঝুড়িতে করে রুটি নিয়ে যেত এবং উচ্চারণ করত যে, ‘আমি সবসময় নিজেকে মন্দ থেকে দূরে রেখেছি এবং উত্তম কীতা আমি জানি।’ এর মর্মার্থ হচ্ছে যে, নববিবাহিত দম্পতি প্রাপ্তবয়স্ক এবং অগোছালো জীবন থেকে এখন পরিকল্পিত জীবনে প্রবেশ করেছে। এক্ষেত্রে তার বক্তব্যের প্রতীকী সাক্ষ্য ছিল তার দেয়া রুটি, যা মাটি থেকে চাষ করে উৎপাদিত এবং সভ্যতার মূল্যবোধের চিরন্তন প্রতীক।
ভোজপর্ব শেষে এবং নববধূকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে ‘ঘোমটা উন্মোচন’ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হতো। কনের বান্ধবী যে এতক্ষণ ধরে তার পর্দা রক্ষার দায়িত্বে ছিল সে ঘোমটা তুলে বরকে প্রথমবারের মতো কনের মুখ প্রদর্শন করত। উপস্থিত অতিথিরাও নববধূকে দেখে তাদের প্রশংসা উচ্চারণ এবং উপহার প্রদান করত।
এরপর নবদম্পতি সুন্দরভাবে সাজানো একটি শকটে আরোহণ করলে সেটি টেনে নিয়ে যেত ষাঁঢ় অথবা ঘোড়া এবং অতিথিরা শোভাযাত্রা সহকারে বরের বাড়িতে গমন করত। বর যখন শকটটি চালিয়ে নিয়ে যেত তখন বধূ বসে থাকত তার বামদিকে। হয় সে ফুলের স্তবক ধরে থাকত, কিংবা একটি দোলনা, অর্থাৎ এগুলো তার বিবাহিত জীবনের প্রতীক। শকটে বধূ ঘোমটা ঢাকা অবস্থায় থাকত না, বিশেষত শোভাযাত্রার কারণে।শকটে বধূ ঘোমটা ঢাকা অবস্থায় থাকত না, বিশেষত শোভাযাত্রার কারণে। বিয়েকে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা এবং কনেকে পিতৃগৃহ থেকে যে তার স্বামীর নেতৃত্বে ন্যস্ত করা হচ্ছে তা প্রমাণ করা হতো এর মাধ্যমে।
বর ও কনেকে বহনকারী শকট ধীরে ধীরে এগিয়ে যাওয়ার সময় সামনে থাকত মশাল এবং মশালধারীদের পেছনে উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুরা, যারা কোরাস, বিয়ের গান গাইত বাঁশির সুরের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে।
বর যখন তার নবপরিণীতা স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে পৌঁছে তখন তার বাবা-মা তাদের স্বাগত জানাত। তার পিতার মাথায় পরা থাকত সবুজ লতার মুকুটএবং মায়ের হাতে মশাল।
দম্পতি যখন শকট থেকে মাটিতে অবতরণ করে তখন সমাগত অতিথিরা পুত্রবধূরওপর শুকনো ডুমুরের টুকরো,কাঠবাদাম ছিটাত এবং তিল ওমধু দিয়ে তৈরি বিয়ের পিঠার একট টুকরো খেতে দিত। মোরব্বাও দিত তাকে। মোরব্বা দেয়া হতো প্রেম ওউৎপাদনক্ষমতার প্রতীক হিসেবে, যা প্রেমের দেবী আফ্রোদিতের সাথে জড়িত। এরপর বধূর পরিচারিকা তাকে প্রথমে নিয়ে যায় পরিবারের বেদীতে এবং পরে বাসর ঘরে। বরও প্রবেশ করেসেখানে। ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং বিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে।
বাসর ঘরের বাইরে বন্ধুদের একজন সারারাত দাঁড়িয়ে থাকত প্রহরী হিসেবে। অন্য বন্ধুরা বিয়ের গান গাইত এবং শোরগোল করত অশুভ কোনো কিছুকে দূরে রাখতে।
বাসর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়ার পর ঘরের মধ্যে কী ঘটে, সে সম্পর্কিত কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না। কিংবা কোথাও এর কোনো প্রতিকৃতি বা চিত্রও অংকিত নেই। এর কারণ সপষ্টএবং বোধগম্য। শ্রদ্ধাভাজন কোনো এথেনীয়রমণীর একান্ত জীবন কখনো প্রকাশ্যে আসতে পারে না, কিংবা তার নাম প্রকাশ্যে বলাও হতো না। এটি অদ্ভুত রীতি হলেও এত কঠোরভাবে পালন করা হতো যে, কোনো খ্যাতিমান ব্যক্তির বক্তৃতাতেও আমরা এথেন্সের কোনো মহিলার নাম দেখতে পাই না। যাদের নাম বিভিন্ন স্থানে উচ্চারিত হয়েছে বা দেখতে পাওয়া যায় তারা হয় ক্রীতদাস অথবা বেশ্যা। চিত্রের ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। প্রাচীন গ্রিক কাহিনীবহির্ভূত যতযৌন চিত্রপ্রতিকৃতি তা যে কোনো যুগেরই হোক না কেন সেগুলোতে নারীচিত্র নৈতিকভাবে স্খলিত চরিত্রের মহিলা ও দাসীদের, সমমানিত কোনো মহিলার চিত্রের অস্তিত্বকোথাও পাওয়া যায় না।
তাছাড়া বিবাহিত যৌন সম্পর্কের মধ্যে সুড়সুড়িমূলক কিছু নেই। কারণ বিবাহিত যৌনমিলন প্রমোদ বা উপভোগের বিষয় নয় বরং সন্তান উৎপাদনের উদ্দেশ্যে।তবুও কিছু প্রাচীন গ্রিক পাত্রের গায়ে নববিবাহিতদের বাসর ঘরে অবস্থান করার চিত্র দেখা যায়। কিন্তু কোনো ধরনের যৌন মিলনরত আসনের ভঙ্গিমায় নয়।
বিয়ের পরদিন গানের সুরে নবদম্পতি ঘুম থেকে জাগ্রত হয় এবং কনের বাবা-মা এবং অন্যান্য আত্মীয় উপহার সামগ্রীসহ উপস্থিত হন। সারাদিনের আচার অনুষ্ঠান শেষে তারা বিয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট দেবদেবী, বিশেষ করে হেরা ও আফ্রোদিতের উদ্দেশ্যে তাদের কৃতজ্ঞতা জানায় এবং Nymphs (ঝর্ণা, বনজঙ্গল গুহা ও পর্বতের সাথে সংশ্লিষ্ট দেবী। এই দেবীরা তারুণ্যে পরিপূর্ণ, সুন্দরী এবং সহৃদয়)-এর মন্দিরে গিয়ে বিয়ের প্রতীক উৎসর্গ করার মাধ্যমে। আর্কোপলিসের দক্ষিণ দিকের ঢালুতে অবস্থিত এই মন্দির। এই অনুষ্ঠান দুই অথবা তিনদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতো এবং নগরপালের তালিকায় বিয়ের বিষয়টি লিপিবদ্ধ করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটত।সেখানে দুজন লোককে এই মর্মে সাক্ষ্য দিতে হতো যে, যে মেয়েটিকে বিয়ে করাহয়েছে সে দুজন এথেনীয়ের মধ্যে বৈধ বিয়ের ফলে জন্মগ্রহণকারী কন্যা। এইশনাক্তকরণের ফলে তার গর্ভে যেসব সন্তানের জন্ম হবে তারা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারবে।
সপার্টায় বিয়ের রীতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্নরকম। কোনোপুরুষ বিবাহযোগ্যা কোনো মেয়েকে তুলে নিয়ে আসত।

কোন মন্তব্য নেই :