গর্ভবতীর পাইলস প্রফেসর ডা. মোঃ সহিদুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই
মলদ্বারের রক্তনালি ফুলেযাওয়ার নাম পাইলস। এটা দুই প্রকার। যথাক্রমে-এক্সটারনাল ও ইন্টারনাল।
কারণ
১. মলদ্বারে ক্যান্সার হলে এর উৎপত্তি হয় ২. গর্ভকালীন মহিলাদের ক্ষেত্রে এর হার অধিক ৩. বয়স্ক পুরুষের অনেক সময় প্রস্রাবে বাধা সৃষ্টি হয়। প্রস্রাব করার সময় প্রচণ্ড কোঁথ দিতে হয়। তার ফলে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে ওঠে ৪. ক্রনিক কষা পায়খানা (পায়খানা পরিষকার না হওয়ায় মলত্যাগ করতে বসে প্রচণ্ড বেগে কোঁথ দিতে হয়। যার ফলে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলে ওঠে) ৫. গার্ডে চাকরিরত যাদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয়।
রোগের লক্ষণসমূহ
১. মলত্যাগের সময় একটু চাপ পড়লেই ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরে। শক্ত পায়খানা হলে এই রক্তক্ষরণের হার অধিক হয়
২. নরম পায়খানা হলে এটি কম হয়। নরম মাংসপিণ্ড বাইরে বেরিয়ে থাকে। অনেক সময় পায়খানা করার সময় এটিবাইরে থাকে। একটু চাপ দিলে ভেতরে চলে যায়। অনেকক্ষেত্রে এটি চাপ দিলেও আর ভেতরে যেতে চায় না। তাকে তখন তৃতীয় ডিগ্রি ধরে নেয়া হয়।
৩. অনেকের মলদ্বার দিয়ে নিয়মিত রস ঝরতে থাকে। যা পরিধেয় কাপড়-চোপড় নষ্ট করে দেয় ৪. মলদ্বারে অনেকসময় ব্যথা অনুভূত হয় ৫. রক্ত ঝরার ফলে অনেকে রক্তশূন্য হয়ে পড়ে।
পরীক্ষাসমূহ
নানাবিধ পরীক্ষা রয়েছে এই রোগ নির্ণয়ের জন্য। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অভিজ্ঞ সার্জন একমাত্র এই রোগ নির্ণয় করতে সমর্থহন। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, অনেকেই এই রোগ নির্ণয়ে ভুল করে থাকেন। যার ফলে চিকিৎসাও ভুল হয়।সংশ্লিষ্ট রোগীকে সারা জীবন ভুগতে হয়।
জটিলতা
১. ইনফেকশন ২. ঘা ৩. গ্যাংগ্রিন ৪. ক্যান্সার ৫. মলদ্বার সংকোচন ৬. লিভার অ্যাবসেস ৭. ফিস্টুলা।
চিকিৎসা
একাধিক চিকিৎসা পদ্ধতি বিশ্বে স্বীকৃত যথা-
১. অপারেশন ছাড়া ঃ যে কারণে পাইলস হয়েছে তার চিকিৎসা দিলেই এই রোগ নিরাময় হয়ে যায়। যদি পাইলস প্রাথমিক পর্যায়ে হয়ে থাকে আর যদি ক্যান্সারের কারণে পাইলসহয়ে থাকে তাহলে ক্যান্সারসহ পাইলসের চিকিৎসা দিতে হবে।
২. ইনজেকশন পদ্ধতি ঃ প্রথম ডিগ্রির ক্ষেত্রে শুধু প্রযোজ্য। যেক্ষেত্রে সুষ্ঠু অভিজ্ঞতার যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। অন্যথায় এই রোগ আবার হবে।৩. রাবার রিং লাইগেশন ৪. সার্জারি ৫. স্ট্যাপলিং পদ্ধতি। অত্যাধুনিক পদ্ধতি (কাটা-ছেঁড়া লাগে না, হাসপাতালে না থাকলেও চলে, আউটডোর পদ্ধতির চিকিৎসা, রক্তপাত নেই, ব্যথামুক্ত ও খুবই আরামদায়ক। আমরাই এই চিকিৎসার প্রথম প্রবর্তকবাংলাদেশে)।
নারীর অহঙ্কার
নারীর অহঙ্কার গর্ভধারণ।সন্তানসম্ভবা মহিলারা সমাজে খুবই সমমানের অধিকারী। এই সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সমস্যার একটি হচ্ছে পাইলস। যা তারা বুঝে উঠতেপারেন না। আজকে এই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
কেন হয় এই রোগ
অনেক কারণের মধ্যে আসল কারণটি হলো সন্তান পেটে আসার পর এর একটা নিম্নমুখী চাপ থাকে। যা মলদ্বারের রক্ত চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। ফলে মলদ্বারের শিরাগুলো ফুলতে থাকে। তা ছাড়া আছে হরমোনের প্রভাব। শরীরের টিস্যুগুলো নরম হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, শিরাগুলো আর চাপ ধরে রাখতে পারে না। তখন অনবরত রক্ত ঝরতে থাকে। কিন্তু কোনো ব্যথা থাকে না। গঠনগতভাবেই রক্ত ঝরা বন্ধ হয়ে যায়। মল নরম হলে তেমন একটা সমস্যা নেই। মল কঠিন হলে এই সমস্যা প্রকট হয়ে পড়ে।রক্ত ঝরা সামান্য হলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই, বেশি হলে রোগী রক্তশূন্য হয়ে পড়ে। এমনিতেই মহিলাদের বা গর্ভবতী মহিলারা রক্তশূন্যতায় বেশি ভোগেন। এতে মা ও সন্তান উভয়ের ক্ষতি হয়। তাই এই অবস্থায় পাইলসের চিকিৎসা করতে হবে।
এর প্রতিকার
অনেক ক্ষেত্রে সার্জারি দরকার পড়ে না। যদি রোগী সচেতন থাকেন। বিশেষ করে খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার অবশ্যই সংযুক্ত থাকবে। মল নরম রাখার জন্যদিনে অন্তত দুবার মলত্যাগের অভ্যাস করতে হবে। পাশাপাশি মাংস কম খাবেন। বেশি কষা মনে করলেইসবগুলের ভুসি খাবেন। এতে কাজ না হলে ডাক্তারেরপরামর্শ নিতে হবে। অনেক সময় হিপবাথ নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার। অনেকে এতেই ভালো হয়ে যায়। এতে ভালো না হলেরাবার রিং লাইগেশন কার্যকরী, যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগে না। একটি রিং পরিয়ে দিলেই যথেষ্ট। এটি ক্রমান্বয়ে কেটে পড়ে যাবে। এটি বেশ নিরাপদ পদ্ধতি। যথেষ্ট সফল, এতে ঝুঁকি নেই। নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন। এটি প্রয়োগের পর খুবই সামান্য সংখ্যক রোগীর সার্জারি লাগে।
সচেতনতা
অভিজ্ঞ সার্জন ছাড়া এটি কখনো করা ঠিক হবে না। সর্বশেষ অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু হয়েছে। যা হলো স্ট্যাপলিং-যা সারা বিশ্বে সমাদৃত, খুবই সফল, কাটা-ছেঁড়া লাগে না, রক্তক্ষরণ নেই, আউটডোরে করা যায়, ব্যথা নেই, দ্রুতআরোগ্য লাভ। আর এ বিষয়ে আমরাই একমাত্র অগ্রগামী ও বাংলাদেশে প্রথম। এই রোগ দীর্ঘদিন লালন করলে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
মহিলাদের সেকেলে ধারণা
লজ্জা নারীর ভূষণ। এ লজ্জাকে কেন্দ্র করে অনেক নারীই নিজেকে এ ধরনের রোগের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে। এসব মারাত্মক রোগকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। বর্তমান বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, নারী-পুরুষ কেউ বসে নেই তার নিজস্ব ভুবনে। মহিলাদের প্রাচীন ধারণা-মহিলাদের আবার এই রোগ কেনহবে? আর এই রোগের চিকিৎসাই কী বা কারা করবে? তাদের ধারণা, আমাদের দেশে এসব রোগের অভিজ্ঞ মহিলা ডাক্তারের সংখ্যা কম। এসব বিষয়ের ওপর কোনো মহিলা ডাক্তারও নেই। কিন্তু তারা জানে নাবা বোঝে না, রোগ কোনো ছেলেখেলা নয়। সেটা পুরুষ ডাক্তারই হোক বা মেয়ে ডাক্তারই হোক। সুস্থভাবেবাঁচার জন্য ওদের দ্বারাই চিকিৎসা করাতে হবে। এ জন্য দরকার একজন অভিজ্ঞ সার্জন। তবে সান্ত্বনার বিষয়, এই আধুনিক যুগেও ইসলামী চিন্তাধারায় এই রোগের চিকিৎসার জন্য আবিষকৃত হয়েছে অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও ব্যবস্থা।
রিপোর্ট মনোজগত

কোন মন্তব্য নেই :