চোখ বন্ধ কর, গহনা পরাবো’ বলেই স্ত্রীর কব্জি কেটে ফেলল স্বামী
তিন বছর আগে জুঁইয়ের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার নুরজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা বাতেন মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিকেরসঙ্গে বিয়ে হয়। তখন জুই মাত্র এসএসসি পাশ করেছে। বিয়ের পরপরই রফিক সাফ জানিয়ে দেয় আর লেখাপাড়া করা যাবে না । এর কিছুদিন পরই রফিক চলে যায় আবুধাবি। জুঁইয়ের বাবা ইউসুফ মিয়া একজন তাঁতশ্রমিক। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে জুঁইয়ের ছেলেবেলা থেকেই লেখা পড়ারকরার স্বপ্ন। মেয়ের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কথা জানতেন ইউসুফমিয়া। আর্থিক দৈন্যদশার মধ্যেও মেয়ের পড়াশোনার খরচ যুগিয়েছেন তিনি।স্বামীর সংসারে এসে লেখাপড়ার নেশায় জুঁই নরসিংদী সরকারি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয় মানবিক বিভাগে। বর্তমানে সে শেষ বর্ষের ছাত্রী। অশিক্ষিত রফিক স্ত্রীর কলেজে ভর্তির সংবাদ শুনেইমারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়। রফিকের আত্নীয় স্বজনও বিষয়টি ভালচোখে দেখেননি। টেস্ট পরীক্ষার আগে রফিক তার শ্বাশুড়ি পারভীন বেগমকে জানিয়ে দেয় টেস্ট পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করলে জুঁইকে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেয় জুঁই। স্বামী যখনতাকে মানা করতো আর পড়াশোনা করা যাবে না তখন জুই স্বামীকে বলতো, তুমি ভয় পেয়ো না। মেয়েদের স্বামী একজনই। আমি এইচএসসি পর্যন্ত পড়বো। তবুও মন গলেনি পাষণ্ড রফিকের।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জুঁইকে তার ননদ নাইমা জানায়, তোমার স্বামী বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও কসমেটিকস পাঠিয়েছে। তুমি বাসায় এসেনিয়ে যাও। ননদের স্বামী সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মো.শফিকুল ইসলামও অনুরূপ সংবাদ জুঁইকে দেয়।
১ ডিসেম্বর জুঁই নরসিংদী থেকে স্বামীর পাঠানো জিনিসপত্র নিতে জিয়া কলোনীর ননদের বাসায় যায়। তিন দিন অতিবাহিত হলেও জুঁইকে কোন জিনিসপত্র দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে সে ননদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আর একদিন পরই তোমার জিনিসপত্র দিয়ে দিবো।
৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ঘুমথেকে উঠে দেখি বিছানার সামনে রফিক দাঁড়ানো। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কখন আসছো। উত্তরে রফিক বলে, এইতো কিছুক্ষণ আগে আবুধাবি থেকে আসলাম। তোমার সঙ্গে একা কথা আছে বলে রফিক তাকে একটি কক্ষেনিয়ে যায়।'
অনেক দিন পর স্বামীকে দেখে আনন্দে ভরে উঠে জুঁইয়ের মন। চরম আবেগে পাশের কক্ষে দুইজনে গিয়ে বসে। এ সময় নাইমা ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামসহ পরিবারের অন্য কক্ষে ছিল।রফিক কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। রফিক জুঁইকে বলে তুমি তাহলে ঠিকই পরীক্ষা দিয়েছো।
। চোখবন্ধ করো, তোমাকে এমন পুরস্কার দিবো, যা তুমি কখনো কল্পনা করতে পারবে না। স্বামীর এমন মধুর কথাশুনে আবেগে জুঁই চোখ বন্ধকরে ফেলে। এ সুযোগে ওড়না দিয়ে জুইয়ের দুই চোখ টাইটকরে বেঁধে ফেলে রফিক। স্কচটেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয় মুখ। এরপর রফিক জুঁইকে বলে, তুমি ডান হাত লম্বা করো। জুই ডান হাত লম্বা করার সঙ্গে সঙ্গে ধারাল চাপাতি দিয়ে কোপ দেয় রফিক। এক কোপেই জুঁইয়ের কব্জি হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুখে স্কচটেপ থাকায় জুঁই চিত্কার করতে পারেনি। মেঝে ভেসে যায় রক্তে। রক্তাক্ত জুঁইকে ঐ কক্ষেরবারান্দায় ফেলে রাখে রফিক। কিছুক্ষণ পর ননদ ও তার স্বামী এসে রক্ত পরিস্কার করে। জুঁইকে পরেউত্তরার একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা।সেখানে ডাক্তার ডান হাতে কবজি কিভাবে কেটেছে জুঁইয়ের কাছে জানতে চাইলেসে পুরো ঘটনা প্রকাশ করে।এ সময় ননদ ও তার স্বামী দ্রুত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। জুইকে ডাক্তার দ্রুত পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন