ইউনিসেফের প্রতিবেদন: বাংলাদেশে ৫০ লাখ নারী নিখোঁজ
কোন মন্তব্য নেই
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে অন্তত ৫০ লাখ নারী নিখোঁজ রয়েছেন। গতকাল আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এই তথ্য প্রকাশ করেছে। এর পেছনে যুক্তি উপস্থাপন করে বলা হয়েছে, ছেলে-মেয়ের অনুপাতের ‘প্রাকৃতিকনিয়ম’ হলো ১০৫ জন ছেলের বিপরীতে জন্ম নেয় ১০০ মেয়ে শিশু। অথচ বাংলাদেশে এক বছরের কমবয়সীদের মধ্যে অনুপাত হলো ১০৭.৫ ছেলে শিশুর বিপরীতে ১০০ মেয়ে
শিশু। আর প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ১০৫ পুরুষের বিপরীতে রয়েছে ১০০ নারী। এভাবেই নারীদেরনিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি দেখানো হয়েছে। ২০০৯ সালে করা জরিপের আলোকে প্রণীত প্রতিবেদনে একে ‘দুশ্চিন্তাজনক’ বলে মন্তব্য করা হয়। তবে প্রতিবেদনে নারীদেরনিখোঁজ হওয়ার ক্ষেত্রে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। সম্ভাব্য কারণ হিসেবে কন্যা ভ্রূণ হত্যা, যৌতুকের কারণে মৃত্যু, কন্যা শিশু হওয়ায় যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়া, বাসাবাড়িতে কাজ করছে এমন নারীদের গণনায় অন্তভুক্ত নাকরা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ড. অর্মত্য সেনের অর্থনৈতিক সংজ্ঞাকে সামনে রেখে তৈরি করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নারী-পুরুষের অনুপাত স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এই চিত্রটি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করাযায় বান্দরবান, কুমিল্লা, চুয়াডাঙ্গা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। এসব অঞ্চলেই লিঙ্গবৈষম্য প্রকট। তবে ইউনিসেফের এই হিসাব অস্বীকার করেছে সরকার। ইউনিসেফের দাবি নাকচ করে শিশু ও নারী বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এটা হতেই পারে না। আমরা এর সঙ্গে একমত নই। এই পরিসংখ্যান বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণও না। রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ইউনিসেফের পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা লুজমা মোনতানো বলেন, লিঙ্গ ভেদে পাঁচ বছর বয়সী এবং এক বছরের কম বয়সী মেয়েশিশুদের মৃত্যুর হার, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিতি এসব বিষয়ের ওপর ভিত্তিকরেই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।দারিদ্র্য ছাড়াও বেশ কিছু কারণে বাংলাদেশের নারীরা কৈশোর থেকেই বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হয়। ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যারল ডি রয় বলেন, সাধারণ ধারণা ও অর্থনীতি- এ দু’টি নিয়ামকই বলে যে, একটি সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা অবস্থায় রেখে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব নয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিরীন শারমিন চৌধুরী আরও বলেন, এটা ঠিক যে আমাদের দেশে নারী ও মেয়ে শিশুরা ছেলেদের চেয়ে শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে। বিশেষ করে মফস্বল ও বস্তি এলাকায়। এর কারণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক। পারিবারিকভাবে বৈষম্যের কারণেও মেয়ে শিশুরা পড়ালেখা থেকে দূরে থাকছে। ইউনিসেফের প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে বলেন, এটা সবই যে সত্য তা নয়। যা বলা হয়েছে তা আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার গবেষণা দরকার। তবে এদেশে শিক্ষাথেকে বিপুল পরিমাণ মেয়ে শিশুর ঝরেপড়া এবং বাল্য বিবাহ এখনও রয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। এর পরিবর্তন আনতে সরকার চেষ্টা করছে। বেসরকারি উদ্যোগেও প্রচেষ্টা চলছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশুকালে মেয়ে শিশুরা নিজঘরে নাহলেও বয়সঃসন্ধিকালে পৌঁছানো এবং কৈশোরে পড়া মেয়েরা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপের মুখে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছানোর পর তাদের স্কুল ছেড়ে দেয়া, সঙ্গী ছাড়া মেয়েদের বাড়ির বাইরে যেতে না দেয়া, যৌন হয়রানি বা ইভটিজিং, এসিড নিক্ষেপ ও উত্ত্যক্তকরণের মতো শারীরিক ও মানসিক সহিংসতা। প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের সমতায় অগ্রগতি আনতে সরকারের সঙ্গে সুশীল সমাজ ও সংস্থা, বেসরকারি খাত, উন্নয়ন সহযোগী এবং অন্যান্য দাতাদের সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব প্রয়োজন। ‘এ পারসপেকটিভ অন জেন্ডার ইকুয়ালিটি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাখ্যা দেন ইউনিসেফের কনসালটেন্ট ড. ডার্ক ওয়েস্টহফ। বক্তৃতা করেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ইকবাল মাহমুদ, ইউএন উইমেন-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাহিদ এম আহমেদ, ইউনিসেফের শিশু অধিকার বিষয়ক এডভোকেট চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মৌসুমী।

রিপোট-www.mzamin.com

কোন মন্তব্য নেই :