মাথার যন্ত্রণা-মাইগ্রেন (আরিফ মাহমুদ সাহাবুল)

৩টি মন্তব্য

 

দৃশ্য-১
আপন আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কলেজেই যেতে পারছে না, পারছে না লাইব্রেরিতে যেতে। পারবেই বা কেমনে বেচারা আপনের মাথাটায় হঠাৎ করে এমন ব্যথা হচ্ছে যেন মাথাটায় কেউ কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করছে। ওহ! সে কি যন্ত্রণা ব্যথায় কাতর অথচ পড়া লেখার কত চাপ। এইতো কিছুদিন হল একটি মেয়েকে তার ভালো লেগেছে; জীবনে এই প্রথম সুন্দর প্রশান্তিময় ভালো লাগা!!
বেচারা আপন ভেবেছিল; না! মনে মনে অনুভূতি লুকিয়ে না রেখে মনের কথাটাই প্রকাশ করে ফেলি। মেয়েটি; ওহ! কতইনা ভালো মনের। কিন্তু্তু এই মাথা ব্যথাটাই যত্তসব নষ্টের মল। এই ব্যথাটা আপনকে সে মেয়েটির সাথে দেখাই করতে দিচ্ছে না। তবে সে মেয়েটির কথা ভাবলে তার কেমন যেন ভালো লাগে। এ ভালোলাগা তাকে আপস্নুত করে দেয়, শান্ত করে সুখের ঘুম আনায়, যন্ত্রণা কমায়...।
দৃশ্য-২ আজ স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল ভূবনের। সেই সকাল থেকেই ঘরের সব কাজকাম সেরে ফেলেছে। কতই না মজা! স্বামীকে নিয়ে বেড়াতে যাবে অনেক দিন পর-কিন্তু্তু ওমা! এ আবার কেমন লাগছে? ভূবনের মাথার এক পাশে দপদপ করে ব্যথা শুরু হল-এ ব্যথা যেনতেন ব্যথা নয় একেবারে তীব্র প্রচন্ড ব্যথা। ভূবনের শরীরটাও যেন কেমন ক্লান্ত লাগছে, চোখের সামনে যেন কেমন ঝলমল আলোর বিন্দু ফুটে উঠছে। অবসাদে শরীর মন ভেঙ্গে আসছে। ব্যাড লাক; শেষ পর্যন্ত তার প্রিয়তম স্বামীর সাথে বেড়ানোটা আর হল না।
দৃশ্য-৩ মোজামেমল সাহেব প্রায়ই কাজে যেতে পারেন না। কিছুদিন পরপরই কয়েক দিনের জন্য তিনি অবসন্ন হয়ে পড়েন। এজন্য মাঝে মধ্যে বসের কাছে কিছুটা লজ্জিতও হতে হয়। যখন খারাপ লাগে মোজামেমলের বমি বমি ভাব লাগে-বমিও হয়ে যায় কখনও কখনো। বমির ভাবের সাথেই শুরু হয় এক অসহ্য মাথাব্যথা। এব্যথা অসহনীয় বিধ্বস্ত ব্যথা। মোজামেমল সাহেব ভাবেন ‘না আর নয় অবহেলা’ এবার ডাক্তারের কাছে যাবো। মাথাব্যথা কেন হয় তা জিজ্ঞেস করবো, ব্যথার চিকিৎসা করবো। এই ভেবে ভেবে একদিন সন্ধ্যার পর তিনি ডাক্তারের কাছে যান এবং সব খুলে বলেন। ডাক্তার তার প্রেসার মাপে, পরীক্ষা করে কিছু ওষুধ পত্র লিখে দেয়। তার দুদিন পর থেকেই মাথাব্যথাটা ধীরে ধীরে ভ্যানিস হতে শুরু করে আর তিনিও আবার তার কাজ কর্ম শুরু করেন।
সুপ্রিয় পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ এতক্ষণ আপনারা উপরে বর্ণিত গল্পগুলো নিশ্চয়ই পড়েছেন। হ্যাঁ ঠিকই ধরেছেন মাথাব্যথার বিষয় নিয়েই আজকে কিছু তথ্য জানাবো-জানাবো মাথাব্যথার সাইকোলজিক্যাল বিশেস্নষণ। উপরে গল্পে বর্ণিত সবারই মাইগ্রেন নামক মাথা ব্যথাটি হয় এবং এর কারণে তারা দারুণ কষ্ট ভোগ করে। আসুন এবার মল বিষয় নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
মাইগ্রেন কি?
এটা এক প্রকার মাথাব্যথা। এই প্রকার মাথাব্যথা পুরুষ-নারী সবারই হয়ে থাকে। তবে মজার কথা হল এই মাথাব্যথায় নারীরাই বেশি ভুগে থাকেন কিছু দিন পরপর। সাধারণত-
  • মাথার অর্ধেক অংশে বা একপাশে
  • মাথার উভয় পাশে
  • মাথার বা কপালের সমমুখের অংশে
  • মাথার পেছনের দিকে কিংবা
  • সুম্পর্ণ মাথা জুড়ে হঠাৎ হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথাব্যথা হয়।
এই ব্যথাটি সাধারণত দপদপ করে হয় এটাকে ঞযৎড়ননরহম ঢ়ধরহ ও বলা হয়। মাইগ্রেনের ব্যথা বাল্য জীবন বা যৌবনের প্রথম দিকে শুরু হয়ে বয়স বাড়ার সাথে সাথে বারবার দেখা দিয়ে বেশি বয়সের দিকে প্রশমিত বা রিকভার হয়ে আসে।
কারণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০০% সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে বংশগতভাবে অনেকের বেলাতেই মাইগ্রেন হতে পারে। এটি ক্যারোটিড ও মস্তিষক গোড়ায় অবস্থিত ভারটেবরো বেসিলার ধমনী ব্যবস্থায় অসঙ্গতির ফলেও দেখা যায় বলে ধারণা করা হয়। আরো মনে করা হয় যে মস্তিষক অভ্যন্তরের ও বাইরের উভয় প্রকার রঙ সংবহনকারী রক্তনালীর মাত্রাতিরিক্ত আক্ষেপ ও সম্প্রসারণে মাইগ্রেন হয়ে থাকে। তবে বর্তমানে মনে করা হচ্ছে যে মস্তিষেকর গভীরে একটা মাইগ্রেন জেনারেটর থাকে এটি ব্রেনে বা মস্তিষেকর স্নায়ুতে কিছু ক্যামিকেল পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে আর এসব ক্যামিকেল বা রাসায়নিক পরিবর্তন রক্তনালীর ওপর কাজ করে থাকে। এতে করে রক্তসংবহনকারী নালীতে প্রদাহ হয় আর এই প্রদাহজনিত কারণে ব্যথা সংবেদী স্নায়ুর সাহায্যে ব্রেইনে চলে যায় আর তখনই আমরা মাথাব্যথা দারুণভাবে অনুভব করতে থাকি।
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ মাইগ্রেন জাতীয় মাথাব্যথা নিয়ে বিজ্ঞানীরাও দারুণ মাথাব্যথায় আছেন; তারা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন ভবিষ্যতে আরো নতুন কারণ আমরা জানতে পারবো আর তখন মাইগ্রেনকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবো।
মাইগ্রেন বৃদ্ধির ফ্যাক্টরগুলো-
  • দুশ্চিন্তা, দুর্ভাবনা, উৎকণ্ঠা, ভয়, আতঙ্ক
  • মজার মজার অতিরিক্ত চকোলেট খাওয়া
  • পনির বা চিজ খাওয়া (ঘন ঘন)
  • রেড ওয়াইন, মদ্যপান
  • মনোসোডিয়াম গস্নুটামেট
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণ
  • সবুজ শিম (ইটালিয়ান)
  • বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ যেমন কার্বন মনোক্সাইড, সিগারেটের নিকোটিন, পারফিউম, সেন্ট, বডি সেপ্র, কীটনাশক।
  • অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, সারাদিনের এক ঘেয়েমি পূর্ণ কাজ, নিরস কাজ।
  • ঘুম না হওয়া, মানসিক অবসাদ, বিষণ্নতা
  • তীব্র ও উজ্জ্বল আলো ও আলোর ঝলকানি
  • অত্যধিক ও বিকট শব্দ, হৈচৈ, ঝগড়া, বিবাদ
  • ধোঁয়াপূর্ণ পরিবেশ
  • মেয়েদের মাসিকের সময়ে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন ইত্যাদি।
মাইগ্রেনের লক্ষণ
  • মাথার একপাশ বা উভয় পাশে তীব্রভাবে টনটনে ব্যথা হয়। পস্নাসঃ
  • সাথে বমিবমিভাব বা বমি হয়ে থাকে
  • চোখের সামনে রঙিন আলোকচ্ছটা দেখা দিতে পারে।
  • দৃষ্টি শক্তির গোলযোগ হতে পারে
  • কথা ভালোভাবে বলতে না পারা
  • শারীরিক দুর্বলতা, ক্লান্তি দেখা দেয়া
  • মাথা ঘোরানো
  • শরীরের একপাশে দুর্বলতা বা অনুভূতিহীন লাগতে পারে।
  • চিন্তা ভাবনার গন্ডগোল দেখা দিতে পারে, চিন্তা-ভাবনার অসচ্ছতা পরিলক্ষিত হতে পারে।
  • স্বল্প সময়ের জন্য চোখে ঝাপসা দেখা, যে পাশে মাথাব্যথা দেখা দেবে তার বিপরীত পাশের চোখে অথবা দুই চোখেই এই অবস্থা দেখা দিতে পারে।
মাইগ্রেনের প্রকার
বিভিন্ন ধরনের মাইগ্রেন হয়ে থাকে যেমন-
১. ফেশিও পেস্নজিক মাইগ্রেন ঋধপরড়-ঢ়ষবমরপ গরমৎধরহব.
২. অপথালমোপস্ন্যাজিক মাইগ্রেন ঙঢ়ঃযধষসড় ঢ়ষবমরপ গরমৎধরহব
৩. বেসিলার আর্টারি মাইগ্রেন ইধংরষধৎধৎঃবৎু গরমৎধরহব
৪. অ্যাবডোমিনাল মাইগ্রেন অনফড়সরহধষ গরমৎধরহব
চিকিৎসা
সাধারণত মাইগ্রেনের চিকিৎসা অনেক দিন ধরে করতে হয়। যেসব কারণে বা ফ্যাক্টরে মাইগ্রেন হয় বা বৃদ্ধি পায় তা আপনার ডাক্তার খুঁজে বের করবেন।
মাইগ্রেনের চিকিৎসা সাধারণত দুইভাগে ভাগ করে করা হয়, প্রথমত হল-মাথাব্যথা চলাকালীন সময়ে ও দ্বিতীয়ত মাথাব্যথা প্রতিরোধের চিকিৎসা।
মাইগ্রেনে ব্যবহৃত ওষুধগুলো ডাক্তার নির্বাচন করেন। এসব ওষুধ বা মেডিসিনগুলো হল-
  • এনালজেসিক
  • অ্যারগট উপাদান যেমন- অ্যারকটা, ডিএইচএ ৪৫, ইনজেকশন
  • নরট্রিপটাইলিন/এ্যামিট্রিপটাইলিন
  • জলমিট্রিপটান/ সুমাট্রিপটান
  • বেটাব্লকার ও ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার
  • ট্রাইসাইক্লিক বা এন্টিডিপ্রেসেন্টস
  • ডাইভেলপ্রোক্স সোডিয়াম
  • মিথাই সারজাইড (এটিতে বহু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে)।
  • ননস্টেরয়েডাল প্রদাহরোধী মেডিসিন ইত্যাদি।
শেষ কথা
মাইগ্রেন এক প্রকার মাথাব্যথার রোগ-এই ব্যথা অনেক সময় নিজে থেকেই চলে যায় অনেক সময় চিকিৎসার মাধ্যমে প্রশমিত হয় আবার অনেক সময় এই অসহ্য মাথার যন্ত্রণা বছরের পর বছর শত্রুর মতো পেছনে লেগেই থাকে। মেয়েরাই এই ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তবে এই ব্যথা সংক্রামক নয়।
এই রোগের আজকাল চমৎকার চমৎকার চিকিৎসা ও ওষুধ বের হচ্ছে তাই নো-টেনশন, নো ঘাবড়ানো, দুশ্চিন্তা নয় আনন্দে উপভোগ করুন জীবনকে, পৃথিবীর সৌন্দর্যতাকে, আর হ্যাঁ, সবসময় মনটাকে পানসে করে রাখার দরকার নেই, দরকার নেই ব্যথাটাকে প্রশ্রয় দেয়ার। একজন সুন্দর মনের বন্ধু খুঁজে নিন, খুঁজে নিন সুন্দর মনের জীবন সঙ্গী। আর সেই সঙ্গীর কাছে মনের ভার হাল্কা করুন, নিজেকে নিজের সব দুঃখ কষ্টকে তার কাছে শেয়ার করে নিন দেখবেন মন হাল্কা হয়ে গেছে আর মাথাব্যথা, গা বাঁচিয়ে পালিয়ে গেছে।
আর হ্যাঁ, নিজের ডাক্তারি নিজে করার মত ভুল যেন কেউ করবেন না তবে হয়ত সেই ভুলের খেসারত আপনাকে ভয়ানক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে। দিতে পারে সুন্দর জীবনটাকে অসুন্দর করে।
ফেসবুকে আমি

Next post @  মহিলাদের স্তন ক্যান্সার (ডা. শিমুল আখতার)

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

৩টি মন্তব্য :

mdyousuf বলেছেন...

hallo baya, matha bathar fure madicine ki ,,,amar
ammur aaj thaka 6 years aga thaka matha batha
onak doctor dakhiachi,but kono lab hoini,tai
kindly apni jodi kono balo madicine ar kotha,,
bolan ami v happy fill korbo,,,,ma ar 45years old

please baya......half me.....

mdyousuf বলেছেন...

gyufy

mdyousuf বলেছেন...

hallo baya, matha bathar fure madicine ki ,,,amar
ammur aaj thaka 6 years aga thaka matha batha
onak doctor dakhiachi,but kono lab hoini,tai
kindly apni jodi kono balo madicine ar kotha,,
bolan ami v happy fill korbo,,,,ma ar 45years old

please baya......half me.....