মানসিক স্বাস্থ্য এবং হরমোন

কোন মন্তব্য নেই

মন-মানসিকতায় হরমোন
মন-মানসিকতার ওপর রয়েছে হরমোনের জাদুকরি প্রভাব। হরমোনের কারণে ব্যক্তির মন-মেজাজের ওঠা-নামা হয়। মনের রোগ উৎপাদনে বিভিন্ন হরমোনের প্রভাব লক্ষ করা যায়। অপ্রত্যক্ষভাবে আচরণের অসঙ্গতি, মানসিক বিশৃঙ্খলা ও মনের বিকার সাধনে প্যারাথাইরয়েড, থাইমাস ও পিনেল গ্রন্থির অসামঞ্জস্যপূর্ণ ক্রিয়াও কিছু পরিমাণে দায়ী থাকে। পিটুইটারি গ্রন্থি মস্তিষ্কের নিম্ন অংশে একটি হাড়ের খাঁচার মধ্যে অবস্থিত। এ গ্রন্থির ২টি অংশ-
  • একটি হলো অগ্রভাগ এবং
  • অন্যটি হলো পশ্চাৎভাগ
যেসব গ্রন্থির ওপর ব্যক্তির সংগঠন প্রত্যক্ষভাবে নির্ভর করে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
  • পিটুইটারি গ্রন্থি
  • অ্যাড্রিন্যালগ্রন্থি
  • থাইরয়েড গ্রন্থি এবং
  • গোনাডস গ্রন্থি
অ্যান্টিরিওর পিটুইটারি মনের বিকারের জন্য বেশি ক্রিয়াশীল। এই গ্রন্থির রস ক্ষরণের মাত্রা যদি বেশি হয় তাহলে দেহ দ্রুত বর্ধিত আকার ধারণ করে অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে থাকে। অন্যদিকে যদি এই গ্রন্থির রসক্ষরণ কমে যায় তবে বিপরীতভাবে দেহ বামনাকৃতি ধারণ করে থাকে। অন্যান্য গ্রন্থিরসের ক্ষরণকে পিটুইটারি হরমোন প্রভাবিত করে বলেই ব্যক্তির গঠন ও বিশৃঙ্খলা সাধনে এই গ্রন্থির ক্ষরণ এত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ACTH বা অ্যাড্রিনাল করটিকো ট্রাফিক হরমোন ক্ষরণ ব্যক্তির বিন্যাসে বাধা দেয়। এই রস বা হরমোন ক্ষরণের জন্যই দৈহিক ও মানসিক স্বাভাবিক বিন্যাস সম্ভবপর হয়। অন্যান্য গ্রন্থিরস ক্ষরণের ওপর পিটুইটারি এত প্রভাব বিস্তার করে যে এই গ্রন্থিকে সেই জন্য ‘মাস্টার গ্ল্যান্ড’ বলা হয়। এক জোড়া অ্যাড্রিনাল গ্ল্যান্ড মানুষের কিডনির দুই পাশে অবস্থান করে। এরও দুই অংশ-
  • ঊর্ধ্বাংশের নাম অ্যাড্রিনাল করটেক্স এবং
  • অভ্যন্তরীণ অংশের নাম মেডুলা
এই দুই অংশের গ্রন্থিরস ক্ষরণের উপযোগিতা আছে ব্যক্তিত্ব গঠনে। বিশেষ করে অ্যাড্রিনোসটেরোন যৌনতা বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়া আরো নানা ধরনের গবেষণামূলক পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, অ্যাড্রিনোকরটিক্যাল ক্রিয়ার গণ্ডগোল হলে মনের রোগ সহজেই আক্রমণ করতে পারে। আবার অ্যাড্রিনোকরটিক্যালের ক্রিয়া স্বাভাবিক হলেও মনের রোগ দেখা দিতে পারে। সে জন্যই অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ক্রিয়াকে মনের রোগের কারণ হিসেবে নির্দেশিত করা যায় না। কখনো কখনো অবশ্য দেখা যায় যে, যদি কোনো রোগীর ওপর ACTH প্রয়োগ করা হয় অনেক সময় তার মানসিক উপসর্গ প্রকাশ পায়। ACTH ব্যবহারে যেমন মানসিক উপসর্গ দেখা যায় অনেক সময় কর্টিসোন ব্যবহার করলেও একই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কারণ ACTH-এর কর্টিসোনও এক ধরনের উত্তেজক বৈকল্য। সুতরাং যে রোগীর মধ্যে মানসিক রোগের প্রবণতা প্রচ্ছন্ন ছিল স্টেরয়েড প্রয়োগে সেই রোগ সহজেই প্রকট হয়ে পড়ে।
অ্যাড্রিনাল মেডুলা যে হরমোন বা রস ক্ষরণ করে তার নাম ‘অ্যাড্রিনালিন’। এই রস বা হরমোন সুস্থ ব্যক্তিত্ব গঠনে বিশেষ সহায়তা করে। যে কোনো প্রাক্ষোভিক উত্তেজনার সময় রক্তপ্রবাহে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয় এবং তার ফলে প্রাক্ষোভিক কারণে রক্তের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধে। এই সমস্ত পদ্ধতিটি প্রকৃতি প্রদত্ত বিধান, যার ফলে যে কোনো উত্তেজনাপূর্ণ জরুরি অবস্থার স্বাভাবিক মোকাবিলা সম্ভব হয়। রক্তের চাপ বৃদ্ধি পেলে দেহের পেশিগুলোতে আরো রক্ত আসে, যকৃৎ উৎপাদিত শর্করা রক্তে মিশলে দৈহিক বল বৃদ্ধি হয় এবং যদি কোনো আঘাতের ফলে কেটে ছিঁড়ে যায় তাহলে দ্রুত রক্ত জমাট বাঁধে বলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
মানুষের কণ্ঠনালিতে ল্যারিঙকস-এর নিম্নাংশে এক জোড়া গ্রন্থি আছে, যাকে থাইরয়েড গ্রন্থি বলা হয়। এই গ্রন্থির হরমোনের নাম ‘থাইরক্সিন’। উক্ত হরমোন বিপাক কোষের বিন্যাস সাধনে এবং দেহের বৃদ্ধি ও পূর্ণতা প্রাপ্তিতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। পিটুইটারি ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সাথে সাথে থাইরয়েড গ্রন্থিও মানসিক সাম্য ও স্থিতি রক্ষা করার সহায়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ হরমোনের অতি ক্ষরণ বা অল্প ক্ষরণ নিউরোটিক আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। হাইপার থাইরয়েডিজম সম্পর্কে এই পরীক্ষিত তথ্য দিয়েছে আর জে গ্রেন্স। হাইপার থাইরয়েডিজম বা অতিরিক্ত থাইরক্সিন রক্তে প্রবাহিত হলে মস্তিষ্ক এবং আদ্য পিটুইটারি বেশি ক্রিয়াশীল হয়ে পড়ে এবং এর ফলে
  • অল্পতেই মেজাজ করা
  • অসহিষ্ণুতা
মানসিক চাপ ইত্যাদি মানসিক উপসর্গ প্রায়ই দেখা যায়। সঙ্গে সঙ্গে দেহের ওজন কমে যাওয়ায় রোগ ও দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং তাপের তারতম্যে অতিরিক্ত কাতর হয়ে পড়া ইত্যাদি উপসর্গ প্রকাশ পায়। অপরপক্ষে হাইপার থাইরয়েডিজম বা থাইরক্সিনের অল্প রক্ষণ হলে রোগী কাজেকর্মে-
  • নিরুৎসাহী
  • ক্লান্তিবোধ করে
হরমোনের ক্ষরণের সাথে ব্যক্তিত্বের নিগূঢ় সম্পর্ক ব্যক্তির দৈনন্দিন আচরণের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায়-
  • মানসিক উদ্বেগ
  • ক্ষণে ক্ষণে অকারণ বিরক্তি
  • অবসাদ
  • ভারাক্রান্ত মন
  • অলস কল্পনাপ্রবণতা
  • দিবাস্বপ্ন
শরীর ও মনের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক হেতু শারীরিক পরিবর্তন বা শারীরিক অস্থিরতা ব্যক্তির মানসিক ভারসাম্যকেও ব্যাহত করে। আর এ ক্ষেত্রে হরমোনের লক্ষণীয় প্রভাব অস্বীকার করার নয়। তাই ব্যক্তির মাঝে কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে দেরি না করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন।
বিষণ্নতা এবং হরমোন
বিজ্ঞানীদের মতে, সন্তান জন্মের সময় মেয়েদের শরীরে যে হরমোনের পরিবর্তন হয় তার কারণে বিষণ্নতা দেখা দেয়। আবার অনেকের মতে, সন্তান জন্মদানের ফলে মহিলাদের মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়, যা কিনা তাদের মানসিক অস্থিরতার কারণ। তাছাড়া ‘থাইরয়েড’ হরমোনও এ সমস্যার কারণ কিনা তাও বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন। সন্তান জন্মের পর অনেক মহিলাই-
  • অস্থির মন
  • উদ্বিগ্নতা
  • মনমরা প্রভৃতি সমস্যার শিকার হন
এ অবস্থা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। কিন্তু ১০-১৫% মহিলা এর চেয়েও মারাত্মক পিপিডি সমস্যায় ভোগেন যা কিনা দু সপ্তাহ পর্যন্ত বা তার চেয়েও বেশি স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত সন্তান জন্মের ৩ মাসের মধ্যে এসব সমস্যা সৃষ্টি হলেও এ সমস্যা যে কোনো সময়ই সৃষ্টি হতে পারে। এ সময় যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তা হলো-
খিটখিটে মেজাজ
  • কান্না পাওয়া
  • খুব বেশি উদ্বিগ্নতা
  • বমি বমি ভাব
  • সব কাজে অনীহা
  • আত্মহত্যার চিন্তা-ভাবনা করা
অনেকেই মনে করেন তাদের বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা ও অন্যান্য সমস্যার জন্য হরমোন দায়ী। উনিশ শতকে চিকিৎসকরা দেখতে পান যে, মহিলাদের মানসিক অসুস্থতা তাদের সন্তান জন্মদান পদ্ধতিকে অস্বাভাবিক করে দিতে পারে। অনেকেরই দৃঢ় বিশ্বাস যে, মনের ‘পালভিক সার্জারি’ একটি ভালো চিকিৎসা।
সমপ্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেয়েদের হরমোন তাদের ব্রেনের রাসায়নিক দূত হিসেবে কাজ করে এবং তাদের আচার-আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে। মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর হরমোনের প্রস্রাব এ সংক্রান্ত সামপ্রতিক গবেষণায় বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বহু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
মেয়েদের বয়ঃসন্ধি, সন্তান প্রসব এবং মেনোপজের সময় তাদের মন বেশ চাপের মধ্যে থাকে। এর ফলে এ সময় তাদের মনে অস্থিরতা দেখা যায়। তা ছাড়া-
  • প্রতারিত হওয়া
  • সন্তান লালন-পালন
  • দারিদ্র্য ইত্যাদি কারণে মহিলারা প্রায়ই বিষণ্নতা নামক মানসিক রোগে ভোগে। হরমোনের কারণে এই বিষণ্নতা হয় না (এটা হরমোনসংক্রান্ত বিতর্ক)। কিন্তু হরমোনের প্রভাবকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যেসব মহিলার মেনোপজের বা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহারের কারণে ‘পিএমএস’ ‘পিপিডি’ এবং অস্থির মন সৃষ্টি হয় তাদের ওপর হরমোনের প্রভাবের ফলেই এমনটি হয়। যেসব মহিলা তুলনামূলকভাবে অধিক সংবেদনশীল তাদের মধ্যেই মূলত হরমোনের প্রভাব কাজ করে। মহিলাদের হরমোনের পরিবর্তনের সময় তাদের মধ্যে মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। বয়ঃসন্ধির সময় মহিলাদের বিষণ্নতায় ভোগার মাত্রা পুরুষদের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। কারণ এ সময় মহিলাদের দেহে ‘ইস্ট্রোজেন’ এবং ‘প্রজেস্টেরন’ নামক হরমোনের আবির্ভাব ঘটে থাকে।
অনেক মহিলাই আবার বয়ঃসন্ধির পূর্বে বেশ উদ্বিগ্ন বা উদাসীন হয়ে পড়ে। অনেকে আবার সন্তান জন্মদানের পরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। মেনোপজের সময় হরমোনের মাত্রা যখন পরিবর্তিত হয় তখনো তাদের মধ্যে সামান্য বিষণ্নতা দেখা যায়।
সমপ্রতি ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ’ ‘পজিশন ইমোশন টমোগ্রাফির মাধ্যমে মানুষের ব্রেন পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছে যে, ব্রেনের ওপর ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। আরো দেখা গেছে, ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে ‘সেরোটনিন’ নামক ব্রেনের এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান সৃষ্টি হতে পারে। এই সেরোটনিন মানুষের মন পরিবর্তন করে এবং বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি করে। এসব মহিলা যদি বুঝতে পারে যে, তাদের মনের অস্থিরতা কিছু বায়োলজিক্যাল কারণে হয়েছে। তবে তারা এর চিকিৎসা করাতে পারে এবং সহজেই এ থেকে মুক্তি পেতে পারে।
রোগের কারণ যাই হোক না কেন এটা নিশ্চিত যে, বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে তার পিপিডি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের মতে, ৯০% মহিলার পিপিডি চিকিৎসার জন্য বিষণ্নতার ওষুধ এবং সাইকোথেরাপি পাশাপাশি চালানো উচিত। অনেকের মতে, কারো যদি ‘পিপিডি’ সমস্যার পূর্ব ইতিহাস থেকে থাকে তবে বিষণ্নতার ওষুধ ব্যবহার করলে উক্ত সমস্যার প্রতিরোধ করা যায়। কিন্তু অন্যান্য ওষুধের মতো বিষণ্নতার ওষুধও মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে প্রবেশ করে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, সেরোটনিন জাতীয় ওষুধ শিশুর দেহে প্রবেশ করলে শিশুর পেট ব্যথা করতে পারে। যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তাদের জন্য ‘ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস’ ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় ট্রাইসাইক্লিক অ্যান্টিডিপ্রেশান্টস ব্যবহার করলে উক্ত শিশুর জন্মের পর তার জ্ঞান বুদ্ধি বা আইকিউ, ভাষা বা আচরণ বা অন্যান্য কিছুর ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। এটা সত্যিই সবার জন্য সুসংবাদ। কারণ, নবজাতকের মায়ের পিপিডি থাকলে এবং এর চিকিৎসা করা না হলে এটা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, যেসব মা গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্মের পরও বিষণ্নতায় ভোগেন তাদের সন্তানের জ্ঞান-বুদ্ধি কম হয় এবং সামাজিকভাবেও তারা ঠিকমতো গড়ে উঠতে সমস্যায় পড়তে পারে।
যেসব মহিলার মনোপজ হয় এমন ২৫০০ মধ্যবয়সী মহিলার ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, তাদের মেনোপজাল পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর ৭০% মহিলাই সুস্থ হয়ে গেছে। মেনোপজের কারণে মহিলাদের যতটুকু মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় তার চেয়েও বেশি মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় বিষণ্নতার কারণে। অনেক সময়েই দেখা যায়, ৫০-৬০ বছর বয়স হলে মানুষ বেশি একাকী হয়ে পড়ে। কারণ, এ সময় সাধারণত তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে যায়, ফলে তারা বাইরে তাদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সাথে কথা বলা বা তাদের সঙ্গ দেয়ার কেউই থাকে না। ফলে তারা বেশ বিষণ্ন হয়ে পড়েন। আবার চীন-জাপানের মতো দেশে বয়স বাড়লে মহিলাদের সামাজিক মর্যাদাও বাড়ে। তাই এসব দেশের মহিলাদের সাধারণত বার্ধক্যজনিত বিষণ্নতা কম হতে দেখা যায়। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে যে, মেনোপজ বিষণ্নতার একটি গৌন কারণ, কখনোই প্রধান কারণ নয়। অন্যদিকে কারো কারো মেনোপজের কারণেও বিষণ্নতা হয়। এতে করে মহিলাদের-
  • ঘুম নষ্ট হয়
  • ক্লান্তিবোধ করেন এবং
  • খিটখিটে মেজাজ হয়ে যায়
হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির মাধ্যমে খিটখিটে মেজাজ দূর করা যায়। তাছাড়া ইস্ট্রোজেনের মাধ্যমে মনকে কিছুটা শান্ত করা যেতে পারে, যদিও এটি বিষণ্নতার ওষুধ নয়। কোনো মহিলার পূর্বে বিষণ্নতার সমস্যা থেকে থাকলেই কেবল সঠিকভাবে বলা যায় যে, মেনোপজের কারণে তিনি পুনরায় বিষণ্নতায় আক্রান্ত হবেন কি না।
যেসব মহিলার মেনোপজ হয় এমন ২৫৯ জনের ওপর একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা বেশি মাত্রায় মানসিক সমস্যায় ভোগেন তাদের বিষণ্নতা, পিএমডিডি এবং কিছু ওষুধের কারণে মনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।
প্রায় ৭৫% মহিলাই তাদের মাসিক-পূর্ববর্তী কিছু উপসর্গের শিকার হন। যেমন-
  • ক্লান্তি
  • তলপেটে ব্যথা
  • তলপেট ভারী ভারী বোধ করা
  • হতাশা
  • মনের প্রতিক্রিয়া বেড়ে যাওয়া
অনেকে আবার বিষাদে ভোগেন এবং এ জন্য তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এই সমস্যাকে বলে পিএমএস। প্রায় ৩-৭% মহিলা পিএমএস-এর চেয়েও বেশি গুরুতর সমস্যায় ভোগেন। এই সমস্যাকে বলা হয় পিএমডিডি। পিএমএস এবং পিএমডিডি উভয়েই ২০-৩০ বছর বয়সী গর্ভবতী মহিলা এবং যারা পিল খান তাদের জন্য একটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক সমস্যা। যাদের বিষণ্নতা রোগের পূর্ব ইতিহাস আছে তাদের পিএমডিডি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মনোচিকিৎসকদের মতে, পিএমডিডি হওয়ার ক্ষেত্রে হরমোন এবং মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব থাকতে পারে। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য মহিলাদের মাসিক-পূর্ববর্তী সময়ে কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে। সুসংবাদ হলো এই যে, বর্তমানে এ ব্যাপারটিকে বেশ গুরুত্বের সাথে নেয়া হচ্ছে এবং এর বেশ কিছু ফলপ্রসূ চিকিৎসাও বের হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহিলাদের মাসিকের ঠিক পূর্ববর্তী সময়ে যে হরমোনের পরিবর্তন হয় তা থেকেই পিএমডিডি সমস্যা সৃষ্টি হয়। গবেষকরা পিএমএস সমস্যা আছে এমন কিছু মহিলার ওপর ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন পরীক্ষা চালিয়েছেন। যখনই তাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন প্রবেশ করানো হয়েছে তখনই দেখা গেছে পিএমএস সমস্যাযুক্ত মহিলাদের দেহে রোগের উপসর্গগুলো ফুটে উঠতে। পাশাপাশি যাদের পিএমএস ছিল না তারা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। সুতরাং বোঝা যায় হরমোন রোগের উপসর্গের কারণ। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মহিলাদের মাসিকের পূর্বে প্রজেস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা কিনা বিষণ্নতা সৃষ্টি করতে পারে (যদিও পিএমএসযুক্ত মহিলাদের উচ্চমাত্রায় এই হরমোন থাকে না) সুসংবাদ হচ্ছে ভালোমতো খাওয়া-দাওয়া ও-
  • ব্যায়াম করলে এবং
  • চাপ কমানো
  • জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারলে পিএমএস সমস্যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভালো হয়ে যায়। পিএমএস ও পিএমডিডির মাত্রা বেশি হলে স্বল্পমাত্রার বিষণ্নতার ওষুধ সেবনে উপকার পাওয়া যায়। বিষণ্নতার ওষুধ কারো কারো এ রোগ দূর করে। সবার জন্য এটি কার্যকর নাও হতে পারে সমানভাবে। একজনের একটি ওষুধ কাজ না করলে তার জন্য বিকল্প ওষুধ রয়েছে। পিএমডিডির চিকিৎসা ঠিকমতো করা হলে ভবিষ্যতে মারাত্মক বিষণ্নতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
শরীরে হরমোনের ওঠা-নামার কারণে মহিলাদের যেসব মানসিক সমস্যা হয় সে বিষয়ে গবেষণা অব্যাহত রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এর সমাধানের জন্য চালিয়ে যাচ্ছেন চেষ্টা আর গবেষণা।

বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ, মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ
মানসিক রোগ শিক্ষা, গবেষণা, চিকিৎসা ও জনসচেতনতায় পথিকৃৎ
 facebook me
Syed Rubel
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।
 তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।
প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেল
লেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :