ভালোবাসার এনাটমি (আরিফ মাহমুদ সাহবুল)

কোন মন্তব্য নেই

 

দৃশ্য-১: গ্রাম ছেড়ে যেদিন শহরে চলে আসলো সেদিন মোজামেমল তার প্রিয়তমা ইতিকে কথা দিয়ে আসলো যে, সে তাকে ভালোবাসে-ভালোবাসবে এবং খুব জলদিই তাকে সে নিজের করে নেবে। মোজামেমল ইতিকে সেই কবে থেকেই ভালোবাসে। ভালোবেসে সমস্ত মনপ্রাণ উজাড় করে। প্রতিমাসেই সে তার প্রিয়তমার কাছে চিঠি পাঠায়। চিঠির পাতাতে মনের সব লুকানো কথা ভালোবাসার কথা লিখে পাঠায়। লিখে পাঠায় তার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার কথা-ভালোবাসার হৃদয় জুড়ানো কথা।
দৃশ্য-২: ওহ! ভালোবাসায় এত্ত বাধা। এত্ত জ্বালা-যন্ত্রণা তারপরও তুষার ভালোবাসে তার প্রিয় মনের মানুষকে। তুষার জানে ভালোবাসলে বাঁধা আসবেই। আর এই বাধা বিঘ্নতাকে উপেক্ষা করেই ভালোবাসার অমৃত সুধাকে জয় করতে হয়। ভালোবাসা সে তো সোনালী সুখের বিষয় পরম শান্তির বিষয়। তুষার জানে ভালোবাসায় সাময়িক কিছু কষ্ট করতে হয়-কষ্টের আড়ালেই তো মনের বিশাল সুখ লুকিয়ে রয়। এ সুখ তো সারা মুহর্তের সারা বেলার-সারা জীবনের।
দৃশ্য-৩: মোস্তফার মনটা শিউলীর জন্য বড়ই কাঁদে। সে যে শিউলীকে প্রচন্ড ভালোবাসে। শিউলী কি বোঝে মোস্তফার হৃদয়ে জমে থাকা ভালোবাসার কথা। শিউলী কি মোস্তফার মনের ভেতর খুঁজে দেখেছে সেখানে কত ভালোবাসা রয়েছে। মোস্তফা ভেবে পায় না কি করবে সে, কি বা তার করার আছে। মাঝে মাঝে মনটা যেন কেমন অদ্ভুতভাবে বিদ্রোহ করে। বড় কষ্ট পায়! মোস্তফা জানে কষ্ট থাকলেও ভালোবাসা সুন্দর-মহিমান্ব্বিত। মোস্তফা জানে ভালোবাসায় টাকার সুখ না থাকলেও ভালোবাসার চিরস্থায়ী সুখ ঠিকই আছে। যে সুখ মানুষকে মাধুর্যতায় পুলকতায় ভরিয়ে দিতে পারে। সুখের জন্যই তো সারা পৃথিবী ব্যাকুল। মোস্তফা শিউলীকে কোনো দিনই ভুলবে না ভুলতে পারবে না। ভালোবাসা কোনোদিনই ভোলা যায় না। কোনোভাবেই না।
দৃশ্য-৪: কলেজ লাইব্রেরীতে বসে নোট করার সময় লাকির পরিচয় হয় রফিকের সাথে। দু’জনেই ভালো স্টুডেন্ট; দারুণ মেধাবী। প্রথম পরিচয়ের দিন আপনার নাম কি? আপনি কোথায় থাকেন? এই ধরনের কয়েকটি কথার মধ্য দিয়েই পড়া শেষে দু’জনেই যার যেখানে গন্তব্য সেখানে রওয়ানা দেয়। এরপর হঠাৎ একদিন আবার রফিকের সাথে লাকির সেই কলেজ লাইব্রেরিতে দেখা হয়ে যায়। দু’জন-দু’জনাকে দেখে অজান্তেই হেসে দেয়। শুরু হয় কথা; হাজারো কথা। দু’জন-দু’জনার মাঝে জন্ম নেয় সহমর্মিতা, জন্ম নেয় বন্ধুত্ব। তাদের এই বন্ধুত্বের কোনোদিনই কোনো কারণেই ফাটল ধরেনি, সৃষ্টি হয়নি কোনো অবিশ্বাস আর ভুল বোঝাবুঝির। সুখে-দুঃখে তারা দু’জনে-দু’জনার হয়ে থাকে। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, যায় বছর; সময়ের গন্ডি পেরিয়ে তারা দু’জনে বন্ধুত্বের গন্ডি পেরিয়ে ভালোবাসার জগতে হারিয়ে যায়। আবিষকৃত হয় দুটি মানব-মানবীর মাঝে গভীরতম ভালোবাসা। আর এই ভালোবাসাই তাদেরকে নিয়ে যায় বিয়ের বন্ধনে-সারা জীবনের বন্ধনে। একজন ভালো বন্ধুই তো একজন ভালো স্বামী হতে পারে-হতে পারে ভালো স্ত্রী।
দৃশ্য-৫: মিতু ভাবতেও পারেনি জীবন চলার পথে হঠাৎ করে সে এমন একজনকে মন দিয়ে দেবে যে তার জীবনটাকে পুরোপুরি বদলে দেবে। যে তার জীবনে ছায়ার মত হয়ে আসবে। হ্যাঁ, মিতু আপনকে ভালোবেসে ফেলেছে মনের অজান্তেই। ভালোবাসা এমনই এক জিনিস যা মানুষকে বদলে দেয়-অন্য রকম করে ফেলে। মিতুর মনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে আপন ছড়িয়ে পড়েছে ভালোবাসার সুরভিত শোভা নিয়ে, মনের মাধুরী মিশিয়ে। আপনের ভালোবাসা মমতায় ভরা স্নিগ্ধতায় ছোঁয়া। আপনের ভালোবাসায় শান্তি আছে, সুখের সৌরভ আছে, আছে বিশালতা। আপনের কথা ভাবতে মিতুর ভালো লাগে, ভালো লাগে তাকে নিয়ে স্বপ্নের রঙ তুলি সাজাতে। চোখ বন্ধ করলেই আপন ভেসে ওঠে মিতুর প্রতিটি নীরবতায়, হৃদয়ের পর্দায়, ছবির মত। আনন্দতায়, বিষণ্নতায় আপনের ভালোবাসা মিতুকে শিহরিত করে প্রফুলস্নতায়-আবেশতায়-তন্ময়তায়। আপনের ভালোবাসায় মিতু আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সারাক্ষণ-সারা বেলায়। এটাই তো ভালোবাসা এটাই তো অন্তরের মাধুরতা। এরই নাম ভালোবাসা।
দৃশ্য-৬: জীবন-সাথীকে ভালোবাসে। ভালোবাসে সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে। ভালোবাসে মনে প্রাণে। ভালোবাসে পাগলের মতো করে। জীবনের তো কেউ নেই, কেউ নেই সাথী ছাড়া। সাথীই তো জীবনের সকল আশা-আকাক্ষা, কামনা-বাসনা। সাথীই তো জীবনের দেহের মাঝে; প্রাণ। সাথী তো জীবনের আত্মা, জীবনের জান। বেচারার জীবন বড়ই অসহায় সাথী ছাড়া; বড়ই একলা সে- সাথী ছাড়া। জীবন বড়ই ছটফট করে সাথীর জন্য। বড়ই তড়পায় সাথীর জন্য। সাথী ছাড়া জীবন তিলেতিলে শেষ হয়ে যাবে ফুরিয়ে যাবে।
জীবনের প্রতিটি আবেগে, প্রতিটি শিহরণে, প্রতিটি স্বপ্ন সাধনায়, বাস্তবতায়, প্রতিটি আকুলতায়, প্রতিটি ব্যাকুলতায় সাথী মিশে আছে। মিশে আছে গভীরভাবে- দেহের প্রতিটি পশমে পশমে। ওহ! সাথীই তো জীবনের সব। যে জীবনে সাথী নেই সে জীবনে; জীবনের কিছুই নেই-কিছুই নেই। জীবন জানে তার সাথী মরে যাবে তবু তাকে ছেড়ে যাবে না; ধোঁকা দেবে না, ছলনা করবে না। জীবনের জীবন নষ্ট করবে না। সাথীর জন্যই তো জীবন বেঁচে আছে। আছে পথ চেয়ে...।
মনোজগতের জ্ঞান পিপাসু কৌতূহলী প্রিয় পাঠক-পাঠিকাবৃন্দ। আপনারা ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন যে, এবারের সংখ্যায় আপনাদের জন্য ভালোবাসা নিয়ে কিছু কথা, কিছু বৈজ্ঞানিক বিশেস্নষণ, কিছু অদৃশ্য মনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে। মনোজগত মানব মনের সব সাইডের বিষয় নিয়ে প্রকাশিত হয়, আলোচনা করে, মানব মনের অজানাকে জানার তৃষ্ণা মেটায়। মনোজগত মনকে বিকশিত করে, প্রস্ফুটিত করে জ্ঞানের ভান্ডার। আপনাদের অঢেল ভালোবাসাই মনোজগতের অমূল্য পুঁজি, অনন্য অনুপ্রেরণা। আপনাদের জন্যই মনোজগত চলছে চলবে চমৎকার গতিতে। মনোজগত জ্ঞানের পত্রিকা বিজ্ঞান ভিত্তিক মনোবৈজ্ঞানিক বিশেস্নষণ ধর্মী মনস্তাত্ত্বিক পত্রিকা।
পাঠক/পাঠিকা মহল আসুন এবার জেনে নেই ভালোবাসার কথা, হৃদয়ের কথা। ভালোবাসা আসলে কি? আপনি কি ভালোবাসেন? এই প্রশ্ন অনেকেরই তাই আসুন না ভালোবাসার জগতে হারিয়ে যাই, হারিয়ে যাই অন্তত কিছু সময়ের জন্য। এ লেখা তাদের জন্য যারা তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, যারা ভালোবাসা চায় ভালোবাসতে চায়, এ লেখা তাদের জন্য যারা বয়স হওয়া সত্ত্বেও মনের দিক থেকে তরুণ, এ লেখা তাদের জন্য যারা ভালোবাসায় বিশ্বাসী যারা ভালোবাসার মল্য বোঝে এবং যারা বোঝে না, যারা ভালোবাসায় অবিশ্বাসী তাদের জন্য এ লেখা।
ভালোবাসা কি?
ভালোবাসা হল এক রহস্যময়, আবেগময়, রোমাঞ্চময়, শিহরিত, পুলকিত সুখময় অনুভূতি-আসক্তি। ভালোবাসা মানব জীবনের এক আশ্চর্যময় জৈবিক মানসিক অনুভূতি-চাহিদা। মানুষের পারসপরিক সম্পর্কের সর্বপেক্ষা ও তীব্র আবেগময় মানসিক অবস্থাই হচ্ছে ভালোবাসা। কথায় আছে, ‘Love is heaven and heaven is love. Love is growing or full Constant light,Love is not love which alters when it alteration finds,Love is like linen often changed the sweater.'
বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধানে ভালোবাসার অর্থ করা হয়েছে এভাবে-
(১) কারো প্রতি অনুরক্ত হয়ে প্রীতিযুক্ত বা আসক্ত হওয়া।
(২) (কাউকে) শ্রদ্ধা করা, ভক্তি করা, স্নেহ করা।
(৩) (কারো সাথে) বন্ধুত্ব সৃষ্টি হওয়া এবং
(৪) কারো প্রতি প্রেম-প্রীতি, অনুরাগ বা মনের টান সৃষ্টি হওয়া।
ইংরেজি ভাষায় ভালোবাসাকে বলে ‘লাভ’ (কলিংস গেম ইংলিশ) ডিকশনারীতে ভালোবাসা বা লাভ এর অর্থ করা হয়েছে এভাবে, হ্যাভ এ গ্রেট অ্যাফ্যাকশন ফর ফিল সেক্সুয়াল প্যাশন ফর হুল হার্টেড লাইকিং ফর সামঅন বিলাভড পারশন।
ইংরেজি লাভ শব্দের বেশ কয়েকটি প্রতিশব্দ লক্ষ্য করা যায়, যেমন-অ্যাফ্যাকশন, অ্যাটাচমেন্ট, ফন্ডনেস, টেনডারনেস, ডিভৌশন, অ্যাডরেইশন, লাইকিং, পারশিঅ্যালাটি, ইনক্লাইনেশন, উঈকনেস, ইনফ্যাচুএইশন, প্যাশন ইত্যাদি।
ভালোবাসা অনেক রকমেরই হতে পারে, যেমন-ফ্রয়েডীয় লাভ, পেস্নটনিক লাভ, প্যাশি অনেট লাভ, রোমান্টিক লাভ প্রভৃতি। পৃথিবীর সেই আদিকাল থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত মানুষের মনে-মনে, হৃদয়ে-হৃদয়ে, অন্তরে অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে আসছে, সৃষ্টি হতে থাকবে দুনিয়ার শেষ দিন পর্যন্ত, কেয়ামত পর্যন্ত। ভালোবাসা মানব মনের এক অদৃশ্য-ইনভিসিবল, আকর্ষণ, এট্রাকশন। মন আছে বলেই তো মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। যার একটা সুন্দর মন আছে সেই তো ভালোবাসে, সেই তো ভালোবাসতে পারে। সেই তো নিজেকে অন্যের সুন্দর মনের মাঝে বিলিয়ে দিতে পারে-হাসি মুখে। ভালোবাসাকে বাদ দিয়ে মানব মানবীকে ভাবাই যায় না। ভালোবাসাহীন মানুষ যেন কাগজের ফুলের মত; যার কোনো সুভাশ মাখা সুগন্ধ নেই, নেই মিষ্টি মনোরোম সৃষ্টি জাগানো অনুভূতি। ভালোবাসাহীন মানুষ যেন মরা গাছের মত, যার মাঝে প্রাণের কোনো সবুজ উজ্জীবিত সঞ্চারণ নেই, নেই মন মাতানো সজিবতা। ভালোবাসাই তো পরকে আপন করে, আপনকে আরো আপন ঘনিষ্ট করে তোলে, বন্ধুত্বের বন্ধনে। ভালোবাসা শূন্য হৃদয় তো পাথরের মতো আর পাথর মন নিয়ে মানুষ কখনোই দয়াশীল, স্নেহশীল, উদার ও করুণাদীপ্ত হতে পারে না, হতে পারে না মনে শিহরণ জাগানো ‘রোমান্টিক মানুষ’ কঠিন মনের মানুষেরা নিতান্তই নিরস পানসে। জড় পদার্থের মতো অনুভূতিহীন। ভালোবাসা শূন্য অন্তর দৃষ্টি শূন্য চোখের মতো।
ভালোবাসা মানব জীবনের সুখের ছোঁয়া এনে দেয় আর সুখ মানুষকে এনে দেয় নির্মল শান্তি সুন্দর স্বর্গীয় প্রশান্তি। ভালোবাসা একটি মানসিক চাহিদা। এই চাহিদাকে কোনোভাবেই অবমূল্যায়ন করা ঠিক নয় কিংবা ঠিক নয় এই চমৎকার চাহিদাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। মনোবিজ্ঞান দেখেছে যে, মানুষের মন যেমন অপরকে ভালোবাসতে চায় তেমনি প্রিয়জনের কাছ থেকে সত্য সুন্দর সুখের ভালোবাসা পেতেও চায়। মানুষের জীবনে চাহিদার কমতি নেই, অন্যান্য চাহিদা পরণের দ্বারা ভালোবাসা বঞ্চিত ব্যক্তির ভালোবাসা পাবার প্রতি আকাক্ষা মেটানো যায় না। এমনকি টাকা-পয়সা, সোনা-গহনা, বিশাল প্রতিপত্তি দিয়েও ভালোবাসা পাবার প্রতি অদৃশ্য আকাক্ষা কমানো যায় না; যদি যেত তবে অনেক ধনী কোটিপতির ঘরের সন্তান তার প্রিয় ভালোবাসার দরিদ্র্য মানুষটির হাত ধরে সব ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যেত না। বেরিয়ে যেত না ভালোবাসার অদৃশ্য তীব্র সুখ সন্ধানে; ছোট সুখের ঘর বাঁধতে। প্রচুর ধন সম্পত্তির মাঝে যা নেই তা আছে একটি সত্য সুন্দর নিখুঁত ভালোবাসার মাঝে। ভালোবাসার সুখ অন্যরকম সুখ, অন্য রকম অনুভূতি। মানুষের এই কঠিন বাস্তবতার জীবনে চলার পথে অর্থ সম্পদ, টাকা-পয়সার ডলার, পাউন্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অবশ্যই! কিন্তু্তু তাই বলে তা কোনোভাবেই একটি সত্য সুন্দর ভালোবাসার বিকল্প হতে পারেন না। ভালোবাসা স্নেহে পেট ভরে না ঠিকই তবে মন ঠিকই ভরে আর মন সুখী তো সব সুখী। সুখী মনে খুশী মনে সব কিছুই করা যায় অসুখী মনে হায়! কিছুই করা যায় না। ভালোবাসা সেতো স্বর্গীয় শান্তির মত বিষয়। বিজ্ঞান দেখেছে যে, ভালোবাসায় প্রচুর সুখ আছে, আছে মনের সুখ-মনের সুখই তো বড় সুখ। এই মনের সুখ পাওয়ার জন্য পৃথিবীতে কত মানুষই না দিক ভ্রান্তের মত সুখ খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু্তু এ সুখ কি আর সবার ভাগ্যে জোটে? না সবার ভাগ্যে নয় তবে যারা এর প্রকৃত মল্য বোঝে, যারা চেষ্টা করে, সাধনা করে, যারা ত্যাগ করে, তারাই মনের এই অবর্ণনীয় সুখ সুধা পেয়ে যায়। কোটি টাকা দিয়েও সত্যিকার মনের সুখ কিনে পাওয়া যায় না। যদি যেত তবে মার্কেটে মার্কেটে তা পণ্যের মতোই বেচনাকেনা হত। তখন অঢেল বিত্তবানরাই টাকার কুমীররা সামান্য মনের সুখের জন্য এত্ত অস্থির হতেন না, হতেন না বেসামাল, দিকভ্রান্ত। জগতে অর্থের দাপট আছে, আছে অন্য রকম প্রভাব, অর্থ দিয়ে অনেক কিছুই করা যায় অনেক অঘটন ঘটানো যায়, অর্থ দিয়ে বাড়ি, গাড়ি, নারী পাওয়া যায় কিন্তু্তু সত্য সুন্দর বিশুদ্ধ ভালোবাসা পাওয়া যায় না। ভালোবাসাকে কেবল ভালোবাসা দিয়েই পাওয়া যায়; জয় করা যায়।
মনোবিজ্ঞান দেখেছে যে, প্রতিটি নারী-পুরুষের মনেই ভালোবাসা পাবার আর দেবার এক নিবিড় আকাক্ষা থাকে। আর তা পূরণ করতে না পারলে জীবন অর্থহীন, রসহীন, সুখহীন এবং অপূরণীয় হয়েই থেকে যায়। বিজ্ঞান প্রমাণ পেয়েছে যে, পেট ভরে খাইয়ে দিলেও ভালোবাসা বঞ্চিত মানুষটি ভালোবাসার কাঙ্গালই হয়ে থেকে যায়-চেতন অবচেতন মনে। সাইকোসায়েন্স দেখেছে যে, প্রতিটি নারী-পুরুষই ভালোবাসার সান্নিধ্য কামনা করে, অপরের আচরণে সাড়া দিতে পছন্দ করে, এর কারণ আমরা ভালোবাসা চাই, চাই অনুমোদন, চাই অন্যের চমৎকার সমর্থন। আমরা পুরুষরা যেমন সুন্দর সঙ্গী পেতে চাই, জীবন সাথী চাই, চাই মনের বন্ধু, চাই প্রেয়সী মমতাময়ী স্ত্রী; তেমনি নারীরাও মিষ্টি মনের প্রেমময় রোমান্টিক মনের আদরের স্বামী চায়। সত্যিকার অর্থে এসব চাওয়া বা কামনা নারী-পুরুষের অবচেতন মনের চাওয়ার মলে লুকিয়ে রয়েছে স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসা দেয়ার ও পাওয়ার ইচ্ছা অপ্রকাশিত আশা-আকাক্ষা, কামনা।
ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপিত হয় সংগোপনে ধাপে ধাপে বা তীব্র গতিতে। প্রথমে একটু দেখা তারপর এক অজানা অদৃশ্য আকর্ষণ। লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমপত্র বিনিময়, সেই অমৃত সমতুল্য লাভ লেটার শতবার পড়েও মন ভরে না। তারপর লোক চক্ষুর আড়ালে একটু আধটু দেখা, একটু উষ্ণ পরশ পুলকিত শিহরণ। এখন যুগের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের মন মানসিকতা। ভালোবাসার ব্যাপার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি কিছুটা হলেও সম্প্রসারিত হচ্ছে। শিক্ষা ও সভ্যতা ভালোবাসাকে করেছে কিছুটা পরিমার্জিত ও কিছুটা খোলামেলা। মজার কথা হল ভালোবাসার মল আবেদন সর্বকালে সর্ব সময়ে একই রকম আছে। তবে তা দেশ-কাল, বয়স, মিলন ও বিবাহ ভেদে ভিন্নরূপ ধারণ করে। কৈশোর শেষ হয়ে যখন তারুণ্য এসে মনে প্রাণে প্রভাব জাগায় আলোড়ন সৃষ্টি করে দেহ মনে তখন তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী তাদের ভালোবাসার মানুষটির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এ সময় তারা পরসপর পরসপরকে প্রচন্ডভাবে ফিল করে। কথায় কথায় মান অভিমান করতে থাকে, থেকে থেকে কথাবার্তা বন্ধ করে দেয় আবার পরক্ষণেই সৌহার্দ্যপূর্ণ সান্নিধ্যের জন্য মন-প্রাণ ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই ভালোবাসার কারণেই একে অন্যকে প্রাণ ভরে উপলব্ধি করে গভীরভাবে। কাছে যেতে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। আর কাছে গেলেও একে অপরের দিকে চোখ তুলে বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না। মনে কেমন কেমন যেন লাগে তখন। ভালোবাসায় প্রচন্ড এক ভালোলাগার রেশ আবেশ মন-প্রাণকে পস্নাবিত করে রাখে। এই ভালোবাসার কথা কেউ কেউ তার মনের মানুষটির কাছে মুখ ফুটে প্রকাশ করে দেয়, কেউ কেউ করে না বা প্রকাশ করতে পারে না আজীবন।
ভালোবাসায় থাকে স্নায়বিক প্রেরণা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা। ভালোবাসায় মনের মানুষটির কাছাকাছি বসে থাকার ইচ্ছা জাগে। প্রিয়জনের কোমল সপর্শে একটা হাল্কা শিরশির ভাব জাগে মনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে, প্রতিটি অলিতে গলিতে, প্রতিটি কোষে কোষে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে, কথাবার্তা, আলোচনা, হাসি-কান্না মনকে প্রচ্ছন্ন করে তোলে মুগ্ধতায় আনমনায়। ঠোঁট ভারী হয়ে আসে ভালোবাসার উষ্ণ আবেশে তাইতো দু’জন দু’জনার কপালে মিষ্টি চুমো দিয়ে ভালোবাসার বিস্তারণ ঘটায়।
ভালোবাসার সরল সমীকরণ অনির্দেশ্য বহুমাত্রিক এবং আন কন্ট্রোল যা আক্ষরিক অর্থে প্রেমিক প্রেমিকাকে অন্যরকম করে দেয়। সকল শৃখল কিংবা শৃখলতাকে, পার্থিব শাসন, অনুশাসনকে ভালোবাসা ছিড়ে ফুড়ে, তুমুল বিক্ষোভে ঝড়ের দুর্নিবার শক্তিতে। ভালোবাসার অদৃশ্য টানেই স্বর্গচ্যুত মানব-মানবী নির্বাসন দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে পৃথিবী নামক এই ছোট গ্রহে নিক্ষিপ্ত হন, এভাবেই সেই আদিকাল থেকে ভালোবাসা মানুষকে আনকন্ট্রোলড করে রেখেছে রাখবে ধরণীর শেষ দিনটি পর্যন্ত। তাইতো-চধৎধফরংব ষড়ংঃ- এ বলা হয়েছে-
্তুড়ভ সধহদং ভরৎংঃ ফরংড়নবফরবহপব ধহফ ঃযব ভৎঁরঃ ড়ভ ঃযধঃ ভড়ৎ নরফফবহ ঃৎবব, ডযড়ংব সড়ৎ ঃধষ ঃধংঃব ইৎড়ঁমযঃ ফবধঃয রহঃড় ঃযব ড়িৎষফ, ধহফধষষ ড়ঁৎ ড়িব রিঃয ঃযব ষড়ংং ড়ভ বফবহ.দ
ভালোবাসা এক অতি প্রাকৃতিক দুর্বোধ্য উপলব্ধি অনুভব। ভালোবাসা জীবনের এমন এক সঞ্জীবনী জল যা জীবনকে বিচিত্র অভিধায় উদ্বুদ্ধ ও অভিষিক্ত করে, জীবনকে ব্যাপক কর্মযোগের তাড়নায় অশেষ ও অগ্রগামী অর্থময় করে তোলে। ভালোবাসা সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকার মহাজাগতিক সমগ্র আন্দোলনে জীবনকে সুসংগত করে। কথায় বলে, প্রেমিক-প্রেমিকার থাকে শত চোখ আর এ চোখ হল মনের চোখ। এই মনের চোখে তারা প্রিয়জনকে দেখে উপলব্ধি করে, বোঝে। প্রিয়জনের সান্নিধ্যে, মায়া মমতায়, আদরে মুগ্ধ হয়। জীবনে নারী-পুরুষের প্রথম জিজ্ঞাসা ভালোবাসা এবং প্রতিনিয়তই তা অভূতপূর্ব এবং এ এক অনির্বচনীয় সত্য। জীবনের মল সূত্র ভালোবাসা, জগত সংসারের মল সূত্র ভালোবাসা। শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, সভ্যতার যা কিছু নিয়ামক শক্তি তার সম্পর্ণ অবকাঠামোর মল বুনিয়াদ রচনা করেছে এই ভালোবাসা। ভালোবাসা নামক চিরপরিচিত এই একটি শব্দের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে সহস্র ডাইমেনশনাল একটি অমেয় সত্য। ভালোবাসা অনন্ত আধুনিক, চিরকাল, আধুনিক এবং মানবিক একটি বিষয়। যুক্তিবাদী কোনো মহাপন্ডিতের যুক্তিসংগত ব্যাখ্যার বিষয় নয় এটি। পার্থিব সম্পর্ণ জ্ঞান দিয়েও একে অভিহিত করা যায় না। ভালোবাসা রোমান্টিক এক বোধ, এটি একটি সার্বক্ষণিক নিমগ্নতার ব্যাপার যা অনিঃশেষ ধৈর্য্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার চিরন্তন অঙ্গিকার। বলা হয় ভালোবাসা নাকি অন্ধ! হ্যাঁ, চর্ম চক্ষুতে অন্ধ হতে পারে বলেই তো মানুষ এত গভীরভাবে একজন আরেকজনকে ভালোবাসতে পারে, যারা সত্যিকার ভালোবাসে যারা সত্যিকারভাবে ভালোবাসতে জানে ভালোবাসতে পারে তারা তো বাইরের চোখ দিয়ে নয় ভেতরের চোখ দিয়েই মনের চোখ দিয়েই মনের মানুষটির মনের ঘরে ঢুকে যায় অবলীলায়, অনায়াসে, ছড়িয়ে যায় সমস্ত চেতনায় সমস্ত অস্তিত্বে। ভালোবাসা হল এমন মল্যবোধের বিকাশ যা কিনা মানুষকে ইতর প্রাণী থেকে পৃথক করে আলাদা করে। ভালোবাসা এক প্রকার আশ্চর্য ইন্দ্রিয়াতীত উপলব্ধি। মাইকেল মধুসদন দত্তের একটি ইংরেজি কবিতায় বলা হয়েছে-
there was a life in the smile ,there was death in thy frown .
thy voice it was sweeter then melody's own !
ভালোবাসা প্রতিটি নারী-পুরুষেরই একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। ভালোবাসার সঠিক সংজ্ঞা স্থির করা সহজসাধ্য নয়। গভীর ভালোবাসায় চৎড়ঃবপঃরাব বষবসবহঃ থাকে। আমরা যাকে ভালোবাসি সে আঘাত পেলে আমরা উদাসীন হয়ে পড়ি, হয়ে পড়ি ব্যাকুল, অস্থির, উদ্বিগ্ন। ভালোবাসা যতখানি নিরাপত্তার অভাব বোধকে দূর করতে সক্ষম, ততখানিই তা মানুষকে তার বিপন্ন এবং কঠিন অবস্থায় পৃথিবী সম্পর্কে তার যে আকর্ষণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল সেই আকর্ষণ অনুভব করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়। খাঁটি বা সত্য ভালোবাসা যে দেয় এবং যে তা পায় দু’জনাই তাতে অনুপ্রাণিত হয়। দু’জনেই আনন্দের সাথে ভালোবাসা গ্রহণ করে এবং পারসপরিক সুখের জন্য একত্রিত হয়ে সারাটা জীবন এক সঙ্গে কাটানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠে হয়ে ওঠে বেসামাল।
অনেক অসুখী স্বামী-স্ত্রী বা ভালোবাসাহীন দম্পতি তাদের দাম্পত্য জীবনের করুণ, দিনের পর দিন অবর্ণনীয় মন-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে অনেকেই মনে প্রাণে ভেঙ্গে পড়ে, অনেকেই আবার মানসিক যন্ত্রণায় তিলেতিলে শেষ হয়ে যায় বা নিজেকে শেষ করে ফেলে। সাইকোলজিক্যাল সাইন্স দেখেছে যে, ভালোবাসা না পাবার করুণ বেদনা সহ্য করতে না পেরে অনেকেই মানসিকভাবে মেন্টালীভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। আসলে ভালোবাসা ছাড়া মানুষের জীবন কখনোই সুন্দর হতে পারে না, হতে পারে না পরমতম শান্তির নির্মল ঝর্ণাধারার মত আনন্দের।
ভালোবাসার সাথে ত্যাগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, ইংল্যান্ডের রাজ সিংহাসনের অধিকারী রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড তার প্রিয়তমার ভালোবাসার জন্য বিশাল রাজ সিংহাসনও অবলীলায় ত্যাগ করে দিয়েছিলেন-এ তো হল মাত্র একটা উদাহরণ। মানব মানবীর ইতিহাসে এমন শত শত ত্যাগের অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে যেখানে আদর-মমতা ভালোবাসার আকাক্ষা অন্যান্য সমস্ত আকাক্ষাকে ্নান করে দিয়েছে।
ভালোবাসাকে সংঘর্ষ হ্রাসকারী পিচ্ছিল পদার্থের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যার ব্যবহারে জীবনের পথ মসৃণ হয় অগ্রগতি থাকে অব্যাহত। ভালোবাসা হল মানুষের ‘ওহঃবৎহধষ ঢ়ড়বিৎ’ বা অন্তর্নিহিত শক্তি। ভালোবাসার শক্তি প্রকাশিত হয় ভালোবাসা পাবার ক্ষমতার ভেতর দিয়ে। অর্থাৎ কিনা ভালোবাসা পাওয়া এবং দেয়া দুটিই সমান জোরদার চাহিদা জোরদার শক্তি। সাইকোলজিক্যাল সাইন্স প্রমাণ করেছে যে, মানুষ যতটা ভালোবাসা পেয়েছে সে ততটা ভালোবাসা দিতেও পারে। এজন্য ভালোবাসা পাওয়া এবং ভালোবাসা দেয়া দুটোই মানসিক সু স্বাস্থ্যের বা মেন্টাল হাইজিনের একটি মৌলিক উপাদান।
মানব সভ্যতার সেই উষা লগ্ন থেকেই তো কবি এবং শিল্পীদের কবিতার মালা আর রঙ তুলিতে এ ভালোবাসার রাগ লহোরী তুলে গায়ক তার ভালোবাসার গীত মালায় সুর তুলে অমর; অসাধারণ ও কালজয়ী শিল্পী বনে যায়। সৃষ্টির সেই প্রথম দিন আদম আর হাওয়ার মাঝে যে ভালোবাসার স্ফুরণ ঘটেছিল তাতো আজও ঠিক একইভাবে প্রজ্বলিত হয়ে রয়েছে, থাকবে ধরিত্রীর শেষ দিনটি পর্যন্ত। তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সে কত অতীত সময় হতেই এই অনুপম হৃদয় চর্চা করে আসছেন। রোমিও জুলিয়েট, লাইলী মজনু, শিরি ফরহাদ, রাধা কৃষ্ণ এরা তো মন মাতানো হৃদয় রাঙানো সুন্দরতম প্রস্ফুটত গভীর ভালোবাসার অনন্য কিংবদন্তি হয়ে আছেন।
কতটা সময় পেরিয়ে গেছে কত যুগ চলে গেছে, এতটা সময় অতিক্রান্ত হবার পরেও মানুষের হৃদয়ের মাঝে লুকানো এই বিমর্ত ভালোবাসাকে কোনোভাবেই মানব হাত দ্বারা ধরা সম্ভব হয়ে ওঠেনি বা কারোর দেখারও সুযোগ ও সৌভাগ্য ঘটেনি যে, ভালোবাসলে দুটি হৃদয়ের মাঝে কি রকম মায়া-মমতা, আদর-সোহাগের ছবি ফুটে ওঠে কিংবা কি ঘটে সেই প্রেমিক-প্রেমিকার অদৃশ্য মন দুটিতে। ভালোবাসা অদৃশ্য কিন্তু্তু এর শক্তি অত্যন্ত তীব্র। আজও এটি মানুষের চর্ম চক্ষুর সামনে কেমন যেন অসপষ্ট ঢাকা-ঢাকা আর অপ্রকাশিত হয়ে রয়ে গেছে। এটি কি হৃদয়ের একটা উষ্ণ আবেগ? এটি কি মনের অন্য রকম টান? নাকি সহজাত প্রবৃত্তি? নাকি মানব সভ্যতার একটা বৈচিত্র্যময় সামাজিক ধারণা।
যেমনই হোক ভালোবাসার অনুভূতির ভালোবাসার সুখের কোনো তুলনা করা যায় না কিংবা বোঝানো যায় না। ভালোবাসাকে শুধু হৃদয় দিয়েই অনুভব করতে হয় আর বুঝে নিতে হয় জ্ঞান দিয়ে, বিবেক দিয়ে। একটা সুন্দর মনই তো আরেকটা সুন্দর মনকে বুঝতে পারে চিনতে পারে।
ভালোবাসা প্রেমিক প্রেমিকার জীবনে সঞ্জিবনী এক টনিক বিশেষ। এর গুরুত্ব অপরিসীম। মানব মন ভালোবাসা চায় ভালোবাসতে চায়। আর এই মধুরতম চাওয়া জীবনের শেষ লগ্ন পর্যন্তই চলতে থাকে বিরামহীনভাবে। বিশুদ্ধ ভালোবাসাকে বিত্ত দিয়ে ক্রয় করা যায় না-তবে ভেজালে ভরা নড়বড়ে, দিকভ্রান্ত ভালোবাসাকে বিত্ত দিয়ে অবশ্যই ক্রয় করা যায়; বারবারই কেনা যায়। ভালোবাসাকে একটা বিশুদ্ধ সুন্দর পবিত্র মন দিয়েই আজীবন রক্ষা করতে হয়। সত্যি বলতে কি, ভালোবাসা দিয়ে বহু কঠিন জিনিসও জয় করা যায়। ভালোবাসা থাকলে সব হয়-সব। পাঠক/পাঠিকাবৃন্দ; ভালোবাসা থাকলে সব হয় এই কথাটি শুনে নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন তাই না? অবাক হবার কিছু নেই, একটু গভীভাবে কথাটির তাৎপর্য বিশেস্নষণ করে দেখুন উত্তর আপনার মনের ভেতর থেকেই বেরিয়ে আসবে।
ভালোবাসা এমনই এক ব্যাপার যা একজন মানুষকে দয়ালু ও আদর্শ মানুষ হতে উৎসাহিত করে অনুপ্রেরণা যোগায়। ভালোবাসা ম্যাজিকের মতো কাজ করে-যা হুমকি ধমকি দিয়ে করানো যায় না তা অনায়াসেই চমৎকার ভালোবাসা দিয়ে করানো সম্ভব হয়। বিশ্বাস হয় না? দেখুন পরীক্ষা করে। প্রমাণ পেয়ে যাবেন হাতে-নাতেই।
ভালোবাসা তো হয় মন দিয়ে মনে-মনে, চুপি-চুপি-নীরবে। ভালোবাসা মনকে অন্যরকম করে দেয়। মন তো একটা বিমর্ত অবয়ব। মন রহস্যময়; মনের মাঝে সৃষ্টি হয় ভালোবাসার চৌম্বকীয় আকর্ষণ। মনমনকে কাছে টানে আপন করে নেয়। সুশোভিত অমৃতসম মমতা দিয়ে-অনুরাগ দিয়ে।
ফেসবুকে আমি

Next post @ আপনি একজন গর্ভবতী মা, অতএব.. (ডা. শিমুল আখতার)

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।প্রকাশক ও সম্পাদক ব্লগার_সৈয়দ রুবেললেখকজানার আছে অনেক কিছু

কোন মন্তব্য নেই :