নেক আমলের তাওফীক - অন্তদৃষ্টির গুরুত্ব

কোন মন্তব্য নেই
নেক আমলের তাওফীক
সবকিছুর মালিক আল্লাহ পাক। নেক
আমলের তাওফীকের মালিকও আল্লাহ
পাকই। তিনি যাকে তাওফীক দেন,
সে কেবলই নেক আমল করতে সক্ষম
হয়। আর যাকে তিনি তাওফীক না দেন
সে কোন ক্রমেই নেক আমল
করতে পারে না। তবে তিনি জালিম নন।
ন্যায়-নিষ্ঠা তারই নির্ধারিত বিধান।
অত্যন্ত
কঠোরভাবে তিনি তা কর্যকর
করে থাকেন। তবে এর জন্য
রয়েছে স্বতন্ত্র নীতি ও নিয়ম-
শৃঙ্খলা। মানুষকে সেই নিয়ম-
শৃঙ্খলা প্রতিপালনে বাধ্য
করা হয়েছে এবং তা করা হয়েছে মানুষের
মঙ্গলের জন্যই। মানুষ যখন আল্লাহ
প্রদত্ত বিধি-নিষেধ মেনে চলার
প্রতি ব্রতী হয় এবং অবিরাম
প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে তখন তার
ইহকাল-পরকাল উভয় জীবনেই মঙ্গল
সাধিত হয়, ধন্য হয় তার জীবন। নেক
আমলের তাওফীক লাভের ব্যাপারেও
আল্লাহপাকের এই নিয়মই কার্যকর
রয়েছে। নেকের জন্য
যারা প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে, আল্লাহ
পাক তাদের প্রচেষ্টার মূল্যায়ণ
করে থাকেন, তারা নেক আমলের
তাওফীক লাভ করে থাকে। হাজী যুবকের
জীবনে এর প্রতিফলন ঘটেছিল
এবং আজকের যুবকদের জীবনেও এর
প্রতিফলনের সুনিশ্চিত অবকাশ
রয়েছে। রাতের আঁধারে মানুষ যখন
নিদ্রার তৃপ্তি ভোগে ব্যস্ত,
ধীরচিত্তে আরামে বিছানায় ঘুমন্ত,
হাজী যুবক তখন জাগ্রত হয়ে অধীর
চিত্তে প্রেমাস্পদের সাক্ষাতের
অপেক্ষায় অপেক্ষমান। গভীর রাতের
আঁধারে প্রেমাস্পদের সাক্ষাতের
প্রতিশ্র“তির প্রতি অগাধ বিশ্বাস
রেখে সে নফল ইবাদতের হাদিয়া পেশ
করে প্রার্থনা জানায়Ñ“ হে আমার
মালিক! আপনি ইবাদতে খুশী হন, তাই
আমাকে ইবাদতের তাওফীক দিন,
আপনিই তাওফীকদাতা। আমি অবশ্যই
গোনাহ করেছি এবং অপরাধী।
আপনি যদি আমাকে ক্ষমা করেন
তবে আপনার কোন ক্ষতি নাই,
তবে আমার বিরাট উপকার হবে।”
আল্লাহর রাসূল বলেছেন, “যুবক
বয়সে যারা ইবাদত রিয়াজত
করে থাকে আল্লাহ পাক
তাদেরকে কিয়ামতের ভীষণ সংকটময়
মুহূর্তে স্বীয় আরশের নীচে স্থান
দিয়ে আশংকামুক্ত করবেন। এই যুবক
যে তাদেরই একজন ছিল তাতে বিস্ময়ের
কিছু নেই।
অন্তদৃষ্টির গুরুত্ব
চর্মচোখে মানুষ বস্তুকে দেখে বিশ্বাস
স্থাপন করে এবং তার দ্বারা উপকৃত
হয়। বস্তু জগতের আড়ালে বিশাল এক
অদৃশ্য জগত রয়েছে।
সেখানে রয়েছে অনেক কিছু বুঝার
এবং বিশ্বাস স্থাপনের। কিন্তু
চর্মচোখে তার অবলোকন করা যায় না।
এর জন্য প্রয়োজন হয় অন্তদৃষ্টির
অধিকারী হওয়ার। অন্তদৃষ্টির
মাধ্যমে অদৃশ্য জগতের বিষয়ে দৃঢ়
ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপনের সুযোগ লাভ
হয়। তাই অন্তদৃষ্টির গুরুত্ব
অপরিসীম। এই নেয়ামত লাভের উপায়
কি? এ সম্পর্কে এক সাহাবী বিশ্ব
রাসূলকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনÑ
ﺍﻟﺘﺠﺎﻓﻲ ﻋﻦ ﺩﺍﺭ ﺍﻟﻐﺮﻭﺭ ﻭﺍﻻﻧﺎﺑﺔ
ﺍﻟﻲ ﺩﺍﺭﺍﻟﺨﻠﻮﺩ ﻭﺍﻻﺳﺘﻌﺪﺍﺩ
ﻟﻠﻤﻮﺕ ﻗﺒﻞ ﻧﺰﻭﻟﻪ
অর্থাৎ, ‘মরীচিকাময় বস্তুর আকর্ষণ
থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা, আখেরাতের
প্রতি ধাবিত ও আকৃষ্ট
হওয়া এবং মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুর জন্য
প্রস্তুতি গ্রহন করা।’ কিন্তু
এটি সহজ কোন পথ নয়। অতি সংকীর্ণ
এবং কাঁটাযুক্ত এই পথ অতিক্রম
করা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। তবে যার
অন্তদৃষ্টি সক্রিয়, যার
সম্মুখে অদৃশ্যও দৃশ্যময়, তার জন্য
এই পথ অতিক্রম করা কোন কঠিন
ব্যাপার নয়। এই হাজী যুবক ছিল সেই
পথেরই পথিক। না জানি আমাদর
অজ্ঞাতে কত যুবক এই পথ অতিক্রম
করেছে এবং করছে। হাজী যুবকের
অন্তর্দৃষ্টি ছিল অত্যন্ত প্রখর
এবং উন্মুক্ত। তার সম্মুখে অদৃশ্য বহু
কিছুই ছিল দৃশ্যময়। এই দৃষ্টিই
তাকে চলার পথে সহায়তা করেছে।
একদিন সে মিনার মরুভূমিতে মনের
আবেগে স্বীয় মনোভাব এভাবে প্রকাশ
করেছিল, “হে পৃথিবীর মানুষ!
আমি একজনের প্রেমে মুগ্ধ, যার
প্রেমে আমার অন্তর দাউ দাউ
করে জ্বলছে। আমার জীবন-মরণ
সবকিছুই তার হাতে সোপর্দ
করে দিয়েছি। তার জন্য জীবন উৎসর্গ
করতে পারলে আমার জীবন
হবে স্বার্থক, আমি হব শান্ত ও
পরিতৃপ্ত। এ প্রেমের
কারণে তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো
না। আমি যার প্রেমে আবদ্ধ
তাকে আমি দেখেছি,
তোমরা তাকে দেখনি তাই
আমাকে ভর্ৎসনা করছো।
যদি তোমরা তাকে অবলোকন
করতে তাহলে আমাকে ভর্ৎসনা করতে
না, বরং আমার প্রতি ঈর্ষাকাতর
হয়ে উঠতে। তোমরা তো বায়তুল্লাহ
তাওয়াফ ও জানোয়ার
কুরবানী করে ক্ষান্ত হয়েছ।
যদি তাকে অবলোকন করতে,
তাকে তাওয়াফ করার সৌভাগ্য অর্জন
করতে তবে জানোয়ার
কুরবানী করে ক্ষান্ত হতে পারতে না,
বরং নিজের জান কুরবানী করতেও
কুন্ঠাবোধ করতে না।”
বস্তুতঃ এই যুবকের দৃঢ় ঈমান,
আল্লাহর প্রতি আসক্তি ও অনুরাগের
মূলে ছিল তার প্রখর
অন্তরর্দৃষ্টি। এই অন্তর্দৃষ্টি লাভের
জন্য প্রয়োজনীয় মুজাহাদা-মেননত,
শ্রম-পরিশ্রম শুধু তাকে নয় বরং তার
মত অসংখ্য যুবকের
ভাগ্যকে করতে পারে উজ্জ্বল। এই
যুবক আমাদের নিকট অমর
হয়ে আছে এবং থাকবে। তার জীবন
আমাদের যুব সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ
পাথেয়। আল্লাহ পাক তাকে উপযুক্ত
প্রতিদানে ভূষিত করুন। আমীন।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next post ছয়. নও-মুসলিম যুবক

কোন মন্তব্য নেই :