ছয়. নও-মুসলিম যুবক islam117

কোন মন্তব্য নেই
নেক স্বভাব ঈমানের উপায়
আল্লাহ পাক মানুষকে অত্যন্ত সুন্দর
করে সৃষ্টি করেছেন এবং সকল সৃষ্টির
মাঝে তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন।
এই শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ
হচ্ছে ঈমান। একারণেই যাদের ঈমান
নেই, সৃষ্টির
মাঝে তারা সবচেয়ে মূল্যহীন। মানুষের
মধ্যে আল্লাহ পাক
সৃষ্টিগতভাবে মেধা ও জ্ঞানের
যে উপাদান বিদ্যমান রেখেছেন সেই
মেধা ও জ্ঞান তাকে সততাপরায়ণ ও
চরিত্রবান করে তোলে। মানুষ
যদি সঠিক বিবেচনা, গবেষণা ও
নিরোপেক্ষ চিন্তা-ভাবনা অব্যাহত
রাখে, তাহলে মেধা, বুদ্ধি ও স্বভাব-
চরিত্রের সৌন্দর্য একদিন
তাকে পারিপার্শ্বিকতার অন্ধকার
থেকে মুক্ত করে ঈমান-আমলের আলোয়
উদ্ভাসিত করে তোলে। এক নও-মুসলিম
সাহাবী রাসূলকে প্রশ্ন করেছিলেন
“ইয়া রাসূলাল্লাহ! কাফের অবস্থায়
অনেক ভালো ও নেক কাজ সম্পাদন
করেছি, সেগুলোর কি কোন প্রতিদান
আছে?” রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে বলেন,
ﺍﺳﻠﻤﺖ ﺑﻤﺎ ﺍﺳﻠﻔﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻴﺮ এই
হাদীসের এক অর্থ এই যে, কাফের
অবস্থায় তুমি যে নেক কর্ম সম্পাদন
করেছিলে তারই বরকতে আজ
ঈমানে দৌলত লাভে ধন্য হয়েছ।
ইতিহাসে এমন অসংখ্য যুবকের সন্ধান
পাওয়া যায়, যারা মুসলমানের
ঘরে লালিত-পালিত হয়ে বিধর্মী ও
পাপাচারী হয়েছে। আবার এমন বহু
যুবকের সন্ধান পাওয়া যায়, যার জন্ম
ও লালন-পালন কুফরী পরিবেশে হয়েছে,
কিন্তু এক সময় তার
বুদ্ধি বিবেচনা এবং স্বভাবে সৌন্দর্য
তাকে কুফরীর অন্ধকার থেকে মুক্ত
করে ঈমানের নেয়ামতে গৌরবান্বিত
করেছে।
বিধর্মী যুবক
এমন এক যুবকের সন্ধান দিয়েছেন
সিলসিয়ারে চিশতিয়ার প্রসিদ্ধ বুযুর্গ
আবদুল ওয়াহিদ ইবনে যায়েদ (রহঃ)।
তিনি একবার সামুদ্রিক ভ্রমণে নৌকায়
আরোহী ছিলেন। ঘটনাক্রমে প্রচন্ড
ঘূর্ণিবাতাস ও সমুদ্রের ঢেউ
তাদেরকে অজানা-
অচেনা স্থানে নিয়ে পৌঁছায়।
সেখানে তিনি অতি সুঠাম সুন্দর
স্বাস্থ্যের অধিকারী এক
যুবককে মূর্তিপূজারত
দেখে তাকে নছীহত শুরু করেন।
তিনি তাকে বলেন, “তুমি তো এমন
মাবুদের পূজা করছ যাকে তুমি নিজ
হাতেই তৈরী করেছ। আর আমরা এমন
মাবুদের ইবাদত
করি যিনি স্বয়ং স্রষ্টা। নিজ
হাতে তৈরী করা মাবুদকে আমরা পূজা
করি না।”
উপদেশ ফলপ্রসূ হলো
ইসলামের ঐতিহাসিক জাগরণ ও
প্রসারের পিছনে বিরাট ভূমিকা পালন
করেছে মুসলমানদের ধর্ম প্রচারের
আগ্রহ ও তাদের অবিরাম প্রচেষ্টা।
পবিত্র কুরআন ও হাদীসে এর
প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ
করা হয়েছে। এই
প্রচেষ্টা একদিকে যেমন নিজের
জন্যে পূণ্যের কারণ হয়,
অপরদিকে তেমনি তা কাফেরদের জন্য
ঈমান লাভের উপায় হয়। আজ
সর্বশ্রেণীর মুসলমানদের
মধ্যে এক্ষেত্রে উদাসীনতা বিরাজমান।
মুসলমানদের অধঃপতনের একটি কারণ
এটাও। যারা আজও দাওয়াত ও
তাবলীগের মহান দায়িত্ব পালনে রত
আছেন, তাদের দ্বারা এই যুগেও
অসংখ্য বিধর্মী ও পথহারা যুবক-
যুবতী ঈমানের নিয়ামত লাভে ধন্য
হচ্ছে। যে কোন কারণেই হোক না কেন
সেই যুবক ছিল ভাগ্যবান। ঈমান
গ্রহণের সৌভাগ্য লাভের সময় তার
ঘনিয়ে এসেছিল। কুদরতের
খেলা বুঝা দুষ্কর। বুযুর্গ ইবনে যায়েদ
ঝড়ো বাতাসে পথহারা হয়ে সেখানে
পৌঁছেন, আল্লাহ পাক
তাকে সেখানে পৌঁছান। আর এই বুযুর্গ
নীরব ভূমিকা পালন না করে আল্লাহর
দেয়া যবানে তাকে তাওহীদের
বাণী শোনান। একদিকে বুযুর্গের
তাওয়াজ্জুহ, অপরদিকে যুবকের
স্বভাবগত পরিশুদ্ধি মেধা ও চিন্তা-
উভয়ের সম্মিলন যুবকের
মনকে সত্যের প্রতি আকৃষ্ট
করে তুলে। সর্বোপরি আল্লাহর চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার সময়
ঘনিয়ে আসে। তাই যুবক নছীহত
শুনে অত্যন্ত অনুরাগের সূরে প্রশ্ন
করেÑ“আপনার মাবুদের পরিচয়
জানাবে কি?”
আল্লাহর পরিচয়
ইবনে যায়েদ বলেন, “আল্লাহ বিশাল
আসমানের উপর বিদ্যমান
আরশে আজীমের মালিক। তিনি জগতের
স্রষ্টা। সমগ্র সৃষ্টি তারই সৃজিত
এবং তারই কীর্তি। তার সাথে কেউ
শরীক নেই। সবকিছুই তার ক্ষমতাধীন
ও নিয়ন্ত্রণে। তিনি আসমান
সৃষ্টি করেছেন, যমীনও সৃষ্টি করেছেন।
মানুষ সৃষ্টি করে তাকে অসংখ্য
নেয়ামত দিয়ে লালন-পালন করেছেন।
সমস্ত মানুষকে একদিন তারই
দরবারে ফিরে যেতে হবে এবং নিজ নিজ
কর্মকাণ্ডের হিসাব দিতে হবে।
অতঃপর শাস্তি অথবা শান্তির
চিরস্থায়ী জীবনের অধিকারী হতে হবে।
রাসূল পরিচয়
বুযুর্গের বর্ণনা শুনে যুবকের হৃদয়
আন্দোলিত হয়। সে তার অতীত
জীবনের ভূলের কথা স্মরণ
করে ভবিষ্যত জীবনের দিক
নির্দেশনা লাভের
তাগিদে বুযুর্গকে প্রশ্ন করে,
“আপনি আল্লাহর বিষয়ে অবগত হলেন
কি করে? তার সাথে দেখা-সাক্ষাত ও
আলাপ-আলোচনা করা যাবে কি?”
বুযুর্গ বললেন, “তাকে দেখা, তার
সাথে সাক্ষাত ও
সরাসরি কথাবার্তা বলার
ক্ষমতা মানুষের নেই। তবে মৃত্যুর পর
পরকালের
জীবনে জান্নাতী শক্তিতে যারা বলীয়ান
হবে, তারা অবশ্যই তার সান্নিধ্য
লাভে ধন্য হবে। বাদশার সাথে সবসময়
সকলের দেখা সাক্ষাৎ ও
কথা বলা কি সম্ভব হয়?
তবে তিনি তার বিষয়ে অবহিতকরণের
জন্য আমাদের কাছে তাঁর মনোনীত
রাসূল পাঠিয়েছেন। তাঁর প্রেরিত রাসূল
ছিলেন শিষ্টাচার সম্পন্ন ও উদার।
তিনি আমাদেরকে সকল বিষয়ে অবহিত
করেছেন, আমাদেরকে দিক-
নির্দেশনা দিয়েছেন।” যুবক প্রশ্ন
করে, “রাসূল কোথায় আছেন?” বুযুর্গ
বললেন, “তিনি তার দায়িত্ব পালন
করে চলে গিয়েছেন। আল্লাহ পাক তাঁর
দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথ পালনের
পুরস্কারে ভূষিত করার জন্য
তাঁকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন।”
পবিত্র কুরআনের প্রভাব
যুবকটি প্রশ্ন করে, “রাসূল
কি আপনাদের কাছে তার কোন পরিচয়
রেখে গিয়েছেন?” বুযুর্গ বললেন,
“হ্যা তিনি আমাদের কাছে আল্লাহর
বাণী পবিত্র কুরআন রেখে গিয়েছেন।
তাতে সবকিছুই বিদ্যমান রয়েছে।”
যুবক বলল, ‘আমাকে সেই পবিত্র
কালাম দেখাতে পারেন কি?’ বুযুর্গ
বললেন, “অবশ্যই!” এই
বলে তিনি পবিত্র কুরআন যুবকের
সম্মুখে হাজির করেন। পবিত্র
কুরআনের তেলাওয়াত শুনে অসংখ্য
কাফের ইসলাম গ্রহণ করেছে। এই
কুরআনের তেলাওয়াতের প্রভাবেই
হযরত উমর ফারুকের অন্তর
আলোকিত হয়েছিল এবং ঈমানের দৌলত
লাভে তিনি ধন্য হয়েছিলেন। আজ এই
যুবকের সম্মুখে সেই পবিত্র কুরআন।
কুরআন আজও তার প্রভাব নিয়েই
অক্ষত আছে এবং থাকবে।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next Postযুবকের ইসলাম গ্রহণ

কোন মন্তব্য নেই :