আপনি কিভাবে শয়তান থেকে বাঁচবেন?

কোন মন্তব্য নেই
লেখক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী
সম্পাদক: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী
আল্ হামদু লিল্লাহ্ ওয়াছ্ ছালাতু ওয়াস্
সালামু আলা রাসূলিল্লাহ্।
সম্মানিত পাঠক-পাঠিকা! আল্লাহ
আপনাকে এবং আমাকে শয়তান
থেকে রক্ষা করুন। শয়তান মানুষের
প্রথম এবং শেষ শত্রু প্রকাশ্য শত্রু।
তার কুমন্ত্রণা ও অনিষ্ট থেকে বাঁচার
জন্য মানুষ মাত্রেই প্রচেষ্টা চালায়।
কিন্তু অস্ত্র যদি ধারালো না হয়
বা সঠিকভাবে নিক্ষিপ্ত না হয়
তবে শত্রু লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে। তাই
শয়তান নামক শত্রু থেকে বাঁচার জন্য
মহান ক্ষমতাধর আল্লাহ্ তা‘আলার
এলাহী অস্ত্রই হচ্ছে সবচেয়ে বড়
মাধ্যম।
মনে রাখবেন, এই শয়তান
থেকে বাঁচতে হলে মনগড়া রক্ষা-কবচ
ব্যবহার করলে হবে না। যেমন তাবীয-
কবচ, সুতা, তাগা, রিং প্রভৃতি।
কেননা এগুলো ব্যবহার করা শির্ক।
যেমন রাসূলুল্লাহ্ (ছাল্লাল্লাহু
আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“যে ব্যক্তি তাবীয ব্যবহার
করবে সে শির্ক করবে।” (আহমাদ)
আমরা আপনাদের
সামনে ইসলামে অনুমোদিত সেই সমস্ত
মাধ্যম উল্লেখ
করছি যা দ্বারা আপনি শয়তানকে বিতাড়িত
ও পরাজিত করতে পারবেন। তার
চক্রান্ত
থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
১) মহান আল্লাহর উপর শিরক মুক্ত
নিখাদ পরিপূর্ণ ঈমান।
কেননা বান্দা শিরক করলে শয়তান
সবচেয়ে বেশী খুশি হয়। চাই তা বড়
শির্ক হোক বা ছোট শিরক। কারণ
এতে বান্দার ঈমান নষ্ট হয় তার জন্য
জান্নাতের পথ বন্ধ হয়।
২) একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর ইবাদত-দাসত্ব
করা। রিয়া বা লোক দেখানোর আমল
পরিত্যাগ করা।
৩) সার্বিক ক্ষেত্রে নবী মুহাম্মাদ
(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা।
পরিপূর্ণরূপে তাঁর অনুসরণ করা।
সবধরনের বিদআত থেকে দূরে থাকা।
কেননা সাধারণ পাপকর্মে লিপ্ত হওয়ার
চেয়ে বিদআতে লিপ্ত হওয়াতে শয়তান
বেশী খুশি হয়। কারণ সাধারণ পাপকর্ম
থেকে তওবা করা হয় কিন্তু বিদআত
থেকে তওবা করা হয়না।
তাছাড়া বিদআত পরিত্যাগ
না করা পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলা তার
তওবা কবুল করেন না। (ছহীহ্ তারগীব
তারহীব)
৪) পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত
যথাসময়ে আদায় করা। বিনয়-নম্রতার
সাথে ছালাত সমূহ আদায়
করা এবং মসজিদে গিয়ে মুসলমানদের
জামাতে শরীক হওয়া।
৫) ফরয সমাপনান্তে সুন্নত-নফল
ছালাত সমূহ অধিকহারে আদায়ের
চেষ্টা করা।
৬) অধিকহারে নফল ছিয়াম আদায়
করার চেষ্টা করা। কেননা ছিয়াম
শয়তানী প্রবৃত্তিকে দুর্বল করে দেয়।
৭) সবধরনের নফল ইবাদত
বেশী বেশী আদায় করা।
৮) গোপনে-প্রকাশ্যে সর্বাবস্থায়
আল্লাহকে ভয় করা। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“তুমি যেখানেই থাক আল্লাহকে ভয়
কর।” (মুসলিম)
৯) অধিকহারে আল্লাহর জিকির করা।
কেননা শয়তান বিতাড়িত করার
সর্বোত্তম মাধ্যম হল আল্লাহর
জিকির।
১০) আল্লাহর
দরবারে তওবা করা এবং আত্ম
সমালোচনা করা।
১১) আল্লাহর কাছে দু‘আ
করা এবং তাঁর কাছে সাহায্য
কামনা করা।
১২) আল্লাহর দরবারে বিতাড়িত
শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করা।
যে সকল স্থানে শয়তান থেকে আশ্রয়
কামনা করতে হয় তা হল: ছালাতে,
কুরআন তেলাওয়াত করার সময়,
রেগে গেলে, সকাল-সন্ধ্যায়,
নিজগৃহে প্রবেশ করার সময়, দ্বীনের
মৌলিক কোন বিষয়ে সন্দেহ হলে,
স্ত্রী সহবাস করার আগে, ঘুমানের
সময়, কোন খারাপ স্বপ্ন দেখলে।
১৩) কুরআন তেলাওয়াত করা। বিশেষ
করে সূরা বাক্বারা পাঠ করা।
১৪) ঘুমানোর আগে আয়াতুল
কুরসী (সূরা বাক্বারার ২৫৫
নং আয়াত) পাঠ করা।
১৫) বেশী ক্রোধান্বিত হলে ওযু
করে নিবে।
কেননা তা একটি শয়তানী প্রবণতা।
শয়তান আগুন থকে সৃষ্টি হয়েছে। আর
পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়।
১৬) অধিকহারে ইস্তেগফার
(ক্ষমা প্রার্থনা) করা।
‘লাহওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্’
বেশী বেশী পাঠ করা।
১৭) নিজ
গৃহকে শয়তানকে খুশী করে এমন আসবাব
থেকে মুক্ত করা। যেমন বাদ্য-যন্ত্র,
ঘণ্টা, কুকুর, ছবি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য
এবং যাবতীয় খেল-তামাশা ও গর্হিত
বিষয়-বস্তু থেকে বাড়ীকে মুক্ত ও
সংরক্ষণ করা।
১৮) পরিবার
এবং সন্তানদেরকে শরীয়ত সম্মত
দু‘আ-যিকর দ্বারা ঝাড়-ফুঁকের
মাধ্যমে হেফাজত করা। এবং এ ঝাড়-
ফুঁক নিয়মমাফিক সবসময় করা। যেমন:
আয়াতাল কুরসী, (সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব
ও নাস) প্রভৃতি পাঠ করা।
১৯) দৃষ্টি অবনত রাখা। পরনারীর
প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকা।
কেননা নারী যখন সামনে আসে তখন
শয়তানের আকৃতিতে আসে আর যখন
ফিরে যায় তখন শয়তানের
আকৃতিতে ফিরে যায়।
২০) পরনারীর সাথে নির্জন না হওয়া।
কেননা উক্তাবস্থায় শয়তান তাদের
তৃতীয় জন হিসেবে সেখানে বিরাজ করে।
২১) ইচ্ছাকৃত ভাবে শয়তানী কাজের
বিরোধিতা করা। যেমন, ডান হাতে খানা-
পিনা করা। কেননা শয়তান বাম
হাতে খানা-পিনা করে।
ক্বায়লুলা করা অর্থাৎ- যোহরের পর
সামান্য সময়ের জন্য নিদ্রা যাওয়া।
কেননা শয়তান এরকম নিদ্রা যায় না।
অপব্যয় অপচয় না করা।
কেননা অপব্যায়কারী শয়তানের ভাই।
প্রতিটি বিষয়ে ধীরস্থীরতা অবলম্বন
করা। কেননা তাড়াহুড়া শয়তানের কাজ
এবং ধীরস্থীরতা আল্লাহর পক্ষ থেকে।
সাধ্যানুযায়ী হাই উঠানোকে প্রতিরোধ
করা। কেননা হাই শয়তানের পক্ষ
থেকে আসে।
২২) একাকী কোথাও ভ্রমণে না যাওয়া।
কেননা একক ভ্রমণকারী শয়তান। দু‘জন
ভ্রমণকারী দু‘জন শয়তান এবং তিনজন
হচ্ছে ভ্রমণকারী।
২৩) প্রত্যেক কাজের সময় বিসমিল্লাহ্
বলা। কেননা বিসমিল্লাহ্ বললে শয়তান
ক্ষুদ্র হয়ে যায় এমনকি মাছির মত
ছোট্ট হয়ে যায়।
২৪) দিনে একশবার পাঠ
করা ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু
লাশারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল
হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন
ক্বাদীর।’
২৫) প্রথম ওয়াক্তে ফজরের নামাজ
আদায় করা। কেননা যে ফজর ছালাত
আদায় করবে সে আল্লাহর জিম্মাদারির
মধ্যে হয়ে যাবে।
২৬) ছালাত অবস্থায় এদিক-ওদিক
না চাওয়া। কেননা ছালাতাবস্থায় এদিক-
ওদিক দৃষ্টিপাত করা শয়তানের পক্ষ
থেকে হয়ে থাকে।
২৭) বিনা প্রয়োজনে নারীর নিজ গৃহ
থেকে বাইরে না যাওয়া। কেননা যখন
সে বের হয় তখন শয়তান
তাকে অভ্যর্থনা জানায়
এবং উঁকি দিয়ে দেখে।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।

Next post দুআ-মুনাজাত : কখন ও কিভাবে দুআ কবুলের অনুকূল অবস্থা ও সময়ঃ

প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

কোন মন্তব্য নেই :