জিহাদ ফরজ হওয়ার শর্ত কী?

কোন মন্তব্য নেই
জিহাদ ফরজ হওয়ার শর্ত কী?
জিহাদের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাআতের আকীদাহ কী? কার
ডাকে সাড়া দিয়ে জিহাদ করতে হবে?
ইমাম তাহাভী (রঃ) বলেনঃ মুসলমানদের
ইমামের নের্তৃত্বে কিয়ামত পর্যন্ত
জেহাদের বিধান বলবৎ থাকবে। কোন
কিছুই এটিকে বাতিল ও রহিত
করতে পারবে না।
(দেখুনঃ শরহে আকীদাতুত তাহাভী,
৩৮১ পৃষ্ঠা) তবে জেহাদ ফরজ হওয়ার
নির্দিষ্ট শর্ত ও উদ্দেশ্য রয়েছে।
বর্তমান সময়ে জেহাদ
সম্পর্কে নানা ধরণের ভুল-
ভ্রান্তি রয়েছে। কতিপয় মূর্খ লোক
জেহাদের নামে জঙ্গি তৎপরতা ও
এখানে সেখানে বোমাবাজিতে লিপ্ত
রয়েছে। এ ধরণের অপকর্ম ইসলাম
কখনই সমর্থন করে না। জেহাদ ফরজ
হওয়ার উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীতে তাওহীদ
তথা আল্লাহর একত্ববাদ
প্রতিষ্ঠা করা এবং কুফর ও শির্কের
অবসান ঘটানো। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
ﻭَﻗَﺎﺗِﻠُﻮﻫُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﺎ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ
ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦُ ﻛُﻠُّﻪُ ﻟِﻠَّﻪِ
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক
যতক্ষণ না ফিতনা (কুফর-শির্ক) শেষ
হয়ে যায় এবং আল্লাহর দ্বীন
সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়।
(সূরা আনফালঃ ৩৯) নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
ﺃُﻣِﺮْﺕُ ﺃَﻥْ ﺃُﻗَﺎﺗِﻞَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱَ ﺣَﺘَّﻰ
ﻳَﺸْﻬَﺪُﻭﺍ ﺃَﻥْ ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺃَﻥَّ
ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻳُﻘِﻴﻤُﻮﺍ
ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﻳُﺆْﺗُﻮﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠُﻮﺍ
ﺫَﻟِﻚَ ﻋَﺼَﻤُﻮﺍ ﻣِﻨِّﻲ ﺩِﻣَﺎﺀَﻫُﻢْ
ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﺤَﻖِّ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ
ﻭَﺣِﺴَﺎﺑُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ
“আমাকে মানুষের সাথে জেহাদ করার
আদেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ
না তারা এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ
ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই
এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল
এবং নামায প্রতিষ্ঠা না করবে ও
যাকাত না দিবে। যখন তারা উপরের
কাজগুলো সম্পাদন করবে তখন
তারা আমার হাত থেকে নিজেদের জান ও
মাল নিরাপদ করে নিল। জেহাদ ফরজ
হওয়ার শর্ত সম্পর্কে আলোচনা করার
পূর্বে জেহাদের প্রকারভেদ
সম্পর্কে অবগত হওয়া অত্যন্ত
জরুরী। কারণ অনেক মানুষই জেহাদের
প্রকারভেদ সম্পর্কে অজ্ঞ। কুরআন
ও হাদীছ গবেষণার
মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, জেহাদ
মোট পাঁচ প্রকার।
(১) নফসের সাথে জেহাদ করাঃ
নফসের সাথে জেহাদের অর্থ হল
নফসকে আল্লাহর আনুগত্যের
কাজে বাধ্য করা, ভাল কাজের
প্রতি সর্বদা তাকে আদেশ
করা এবং অসৎ কাজ হতে বারণ করা।
নফসের সাথে জেহাদ ব্যতীত কেউ
শত্রুর বিরুদ্ধে জেহাদ করতে সক্ষম
হবেনা।
(২) শয়তানের বিরুদ্ধে জেহাদ করাঃ
শয়তান মানুষের আদি শত্রু।
সে মানুষকে নানা অপকর্মের আদেশ
করে থাকে। তাই শয়তানের
সাথে সদা সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে।
শয়তানের আদেশ অমান্য
করতে হবে এবং সে যা হতে নিষেধ
করে তাই করতে হবে।
(৩) পাপী মুসলমানদের সাথে জেহাদঃ
অভ্যন্তরীণ শত্রু তথা শয়তান ও
নফসের বিরুদ্ধে জেহাদ
করে যে ব্যক্তি জয়লাভ করতে পারবে,
তার উপর অন্যান্য শত্রুদের
সাথে জেহাদ করা ওয়াজিব। প্রথমেই
আসে গুনাহগার ও পাপী মুসলমানদের
কথা। তাদের সাথেও জেহাদ করতে হবে।
তবে তাদের বিরুদ্ধে তলোয়ারের জেহাদ
নেই। তাদেরকে সাধ্য
অনুযায়ী সৎকাজের আদেশ
এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেনঃ
ﻣَﻦْ ﺭَﺃَﻯ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣُﻨْﻜَﺮًﺍ ﻓَﻠْﻴُﻐَﻴِّﺮْﻩُ
ﺑِﻴَﺪِﻩِ ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ
ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒِﻘَﻠْﺒِﻪِ ﻭَﺫَﻟِﻚَ
ﺃَﺿْﻌَﻒُ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অন্যায়
কাজ হতে দেখে সে যেন হাত
দিয়ে বাধা দেয়। হাত
দিয়ে বাধা দিতে না পারলে জবান
দিয়ে বাধা দিবে। তাও
করতে না পারলে অন্তর দিয়ে হলেও
বাধা দিবে। এটি সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের
পরিচয়”। (সহীহ মুসলিম)
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে এক
শ্রেণীর মুসলমান জেহাদের
নামে মুসলমানদেরকে হত্যা করার মত
জঘণ্য কাজে লিপ্ত রয়েছে।
তারা জেহাদের সঠিক অর্থ
বুঝতে সক্ষম হয়নি।
(৪) মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদঃ
মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদের অর্থ এই
যে, তাদের সন্দেহগুলো খন্ডন
করা এবং তাদের
থেকে সরলমনা মুসলমানদেরকে সাবধান
করা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﻫُﻢْ ﺍﻟْﻌَﺪُﻭُّ ﻓَﺎﺣْﺬَﺭْﻫُﻢْ
“তারাই শত্রু। অতএব তাদের
সম্পর্কে সতর্ক হোন।
(সূরা মুনাফিকূনঃ ৪) মুনাফেকদের
বিরুদ্ধে জেহাদ জবানের মাধ্যমেই হবে।
তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ
করা যাবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺟَﺎﻫِﺪْ ﺍﻟْﻜُﻔَّﺎﺭَ
ﻭَﺍﻟْﻤُﻨَﺎﻓِﻘِﻴﻦَ ﻭَﺍﻏْﻠُﻆْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ
“হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের
বিরুদ্ধে জেহাদ করুন এবং তাদের
প্রতি কঠোর হোন। (সূরা আত-
তাহরীমঃ ৯) সুতরাং মুনাফেকদের
বিরুদ্ধেও যুক্তি-তর্কের
মাধ্যমে জেহাদ করতে হবে এবং কঠোর
ভাষায় তাদের কর্ম-কান্ডের প্রতিবাদ
করতে হবে। যেহেতু তারা মুসলিম
সমাজেই বসবাস করে থাকে তাই তাদের
বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা যাবেনা।
এতে মুসলমানদের
মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে। এজন্য
নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন
নি এবং তাদেরকে দল থেকে বেরও
করে দেন নি। তবে মুনাফেকদের
চক্রান্তের বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ
থাকতেন।
(৫) কাফেরদের বিরুদ্ধে জেহাদঃ
পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার
জন্য এবং শির্কের পতন ঘটানোর
জন্য আল্লাহ তা’আলা কাফেরদের
বিরুদ্ধে অস্ত্রের মাধ্যমে জেহাদ
করা এই উম্মতের উপর ফরজ
করেছেন। তবে প্রথমেই এই জেহাদ
ফরজ করেন নি।
মক্কাতে থাকা অবস্থায় মুসলমানদের
উপর জেহাদ করা নিষেধ ছিল।
তাদেরকে হাত গুটিয়ে বসে থাকার আদেশ
দেয়া হয়েছিল। এমনিভাবে নবুওয়াতের
পর তেরোটি বছর চলে গেল। আপন
গোত্রের লোকদের হাতে নির্যাতিত
হয়েও আল্লাহর দ্বীনের
প্রতি মানুষকে আহবান
করতে থাকলেন।
সে সময় জেহাদ থেকে বিরত থাকার
আদেশ দেয়ার কারণ এই যে, তখন
মুসলমানগণ ছিল দুর্বল। এ অবস্থায়
তাদেরকে সস্বস্ত্র জেহাদের আদেশ
দেয়া হলে কাফেরেরা সহজেই তাদের
বিরুদ্ধে জয়লাভ
করতো এবং তাদেরকে নির্মূল
করে ফেলত। ফলে অঙ্কুরেই দ্বীনের
দাওয়াত মিটে যেত।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যখন মদীনায় হিজরত করলেন
এবং সেখানে গিয়ে শক্তি, সামর্থ
এবং সহযোগী সংগ্রহ করতে সক্ষম
হলেন তখন আল্লাহ
তা’আলা মুসলমানদেরকে জেহাদের
অনুমতি দিলেন। তবে বাধ্যতামূলক
আদেশ দেন নি। আল্লাহ তা’লা বলেনঃ
ﺃُﺫِﻥَ ﻟِﻠَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻘَﺎﺗَﻠُﻮﻥَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻇُﻠِﻤُﻮﺍ
ﻭَﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻧَﺼْﺮِﻫِﻢْ ﻟَﻘَﺪِﻳﺮٌ
“যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে,
যাদের সাথে কাফেরেরা যুদ্ধ করে; কারণ
তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে।
আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য
করতে অবশ্যই সক্ষম”।
(সূরা হজ্জঃ ৩৯) এই আয়াতে শুধুমাত্র
জেহাদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। অথচ
ইতিপূর্বে জেহাদ করা নিষিদ্ধ ছিল।
অতঃপর ঐসমস্ত কাফেরদের
বিরুদ্ধে জেহাদের আদেশ
দেয়া হয়েছে যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করতে নিষেধ করা হয়েছে যারা যুদ্ধ
করেনা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﻭَﻗَﺎﺗِﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﻳُﻘَﺎﺗِﻠُﻮﻧَﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻌْﺘَﺪُﻭﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﺎ
ﻳُﺤِﺐُّ ﺍﻟْﻤُﻌْﺘَﺪِﻳﻦَ
“আর লড়াই কর আল্লাহর রাস্তায়
তাদের সাথে যারা লড়াই করে তোমাদের
সাথে। অবশ্য
কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করোনা।
নিশ্চয়ই আল্লাহ
সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন
না”। (সূরা বাকারাঃ ১৯০) এখানে শুধু
মাত্র আক্রমণকারী শত্রুদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে।
অতঃপর পরবর্তীতে মুসলমানদের যখন
শক্তি অর্জিত হল এবং স্বাধীন রাষ্ট
প্রতিষ্ঠিত হল তখন
পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন
প্রতিষ্ঠা করার জন্য সকল প্রকার
কাফেরের বিরুদ্ধে জেহাদ করার জন্য
সাধারণ আদেশ দেয়া হল। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
ﻓَﺎﻗْﺘُﻠُﻮﺍ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ ﺣَﻴْﺚُ
ﻭَﺟَﺪْﺗُﻤُﻮﻫُﻢْ ﻭَﺧُﺬُﻭﻫُﻢْ
ﻭَﺍﺣْﺼُﺮُﻭﻫُﻢْ ﻭَﺍﻗْﻌُﺪُﻭﺍ ﻟَﻬُﻢْ ﻛُﻞَّ
ﻣَﺮْﺻَﺪٍ ﻓَﺈِﻥْ ﺗَﺎﺑُﻮﺍ ﻭَﺃَﻗَﺎﻣُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ
ﻭَﺁﺗَﻮْﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻓَﺨَﻠُّﻮﺍ ﺳَﺒِﻴﻠَﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻏَﻔُﻮﺭٌ ﺭَﺣِﻴﻢٌ
“অতঃপর মুশরিকদের হত্যা কর।
যেখানেই তাদের পাও, তাদের
বন্দী এবং অবরোধ কর। আর
প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ
পেতে বসে থাক। কিন্তু
যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম
করে এবং যাকাত প্রদান
করে তবে তাদের রাস্তা ছেড়ে দাও
নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম
দয়ালু”। (সূরা তাওবাঃ ৪)
মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত কাফেরদের
বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ
দেয়া হয়েছে। কারণ এ জন্যই
তথা আল্লাহর এবাদতের জন্য আল্লাহ
তা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন
এবং রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন।
সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্যের এবাদত
উচ্ছেদ করে পৃথিবীতে আল্লাহর এবাদত
প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ
জেহাদ ফরজ করেছেন। এজন্যই
যারা তাওবা করবে, ঈমান আনয়ন
করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবেনা।
কাফেরদেরকে যদি বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেয়া
হয় তবে মুসলমানদের উপর তাদের
অত্যাচার বেড়ে যাবে।
কেননা তারা চায়না যে, পৃথিবীতে কোন
মুসলমান অবশিষ্ট থাকুক। তাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ
না করা হলে তারা মুসলমানদেরকে হত্যা
করবে, বাড়ি-ঘর থেকে বের
করে দিবে এবং বিভিন্ন প্রকার কষ্ট
দিবে। মুসলমানগণ যখন থেকে জেহাদ
ছেড়ে দিয়েছে তখন থেকে তাদের উপর
বিপদ-মুসীবত নেমে এসেছে এবং মুসলিম
দেশ সমূহে বিভিন্ন মিশনারী সেবার
নামে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার
চালিয়ে যাচ্ছে।
সর্বোপুরি কথা হল জেহাদ
করতে হবে আল্লাহর দ্বীনকে বলুন্দ
করার জন্যে। নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
কে জিজ্ঞাসা করা হলঃ এক
ব্যক্তি জেহাদ করে নীজের
গোত্রকে সাহায্য করার জন্যে, অন্য
একজন জেহাদ করে বীরত্ব প্রদর্শন
করার জন্যে আবার কেউ
বা করে গণীমতের সম্পদ হাসিল করার
জন্যে। এদের মধ্যে হতে কে আল্লাহর
রাস্তায় জেহাদ করে থাকে?
নবী (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
বললেনঃ যে ব্যক্তি জেহাদ
করবে আল্লাহর বাণীকে বলুন্দ করার
জন্যে তার জেহাদ হবে আল্লাহর পথে।
এছাড়া অন্য
উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি জেহাদ করবে তার
জেহাদ কখনই আল্লাহর পথে জেহাদ
হিসাবে গণ্য হবেনা।
যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জেহাদ
করতে গিয়ে নিহত হবে তাকে শহীদ
হিসেবে গণ্য করা হবে। যদি নিহত
না হয় তবে সে সাওয়াব ও গণিমত
থেকে বঞ্চিত হবে না। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﻟِﻤَﻦْ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺕٌ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﻟَﺎ
ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
“আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত
হয় তাদের মৃত বলনা;
বরং তারা জীবিত, কিন্তু
তোমরা তা বুঝনা।
(সূরা বাকারাঃ ১৫৪) নিহত না হলেও
তারা ছাওয়াব, গণীমতের মাল, দুনিয়া ও
আখেরাতের সম্মান নিয়ে ফেরত
আসবে”। আলেমগণ আল্লাহর রাস্তায়
কাফের বিরুদ্ধে জেহাদকে দুইভাগে ভাগ
করেছেনঃ
১) ফরজে আঈনঃ
জেহাদ করতে সক্ষম এমন
প্রতিটি মুসলিমের উপর তিন অবস্থায়
জেহাদে অংশ গ্রহণ করা ফরজে আঈন।
(ক) আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধঃ
কোন মুসলিম দেশের উপর
যদি শত্রুরা আক্রমণ
করে তবে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
মুসলমানদের সম্মান রক্ষার্থে তখন
সকল মুসলমানের উপর
সাধ্যানুযায়ী জেহাদে অংশ গ্রহণ
করা ফরজ।
(খ) মুসলমানদের ইমামের আদেশে যুদ্ধঃ
মুসলমানদের ইমাম যখন যুদ্ধের ডাক
দিবে তখন তার কথা মেনে জেহাদে বের
হওয়া সকলের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻜُﻢْ ﺇِﺫَﺍ ﻗِﻴﻞَ
ﻟَﻜُﻢْ ﺍﻧﻔِﺮُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ
ﺍﺛَّﺎﻗَﻠْﺘُﻢْ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺭَﺿِﻴﺘُﻢْ
ﺑِﺎﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﻓَﻤَﺎ
ﻣَﺘَﺎﻉُ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓِ ﺇِﻟَّﺎ
ﻗَﻠِﻴﻞٌ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল,
যখন আল্লাহর পথে বের হওয়ার
জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন
মাটি জড়িয়ে ধর,
তোমরা কি আখেরাতের
পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট
হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায়
দুনিয়ার জীবনের উপকরণ
অতি অল্প”। (সূরা তাওবাঃ ৩৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেনঃ
ﻟَﺎ ﻫِﺠْﺮَﺓَ ﺑَﻌْﺪَ ﺍﻟْﻔَﺘْﺢِ ﻭَﻟَﻜِﻦْ ﺟِﻬَﺎﺩٌ
ﻭَﻧِﻴَّﺔٌ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘُﻨْﻔِﺮْﺗُﻢْ ﻓَﺎﻧْﻔِﺮُﻭﺍ
“মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরত
নেই। কিন্তু প্রয়োজন অনুসারে জেহাদ
অবশিষ্ট রয়েছে।
সুতরাং তোমাদেরকে যখন জেহাদের
জন্য আহবান করা হবে তখন
তোমরা আহবানে সাড়া দাও।
(গ) যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার
পর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াঃ
তা থেকে পলায়ন করা না জায়েয;
বরং তার উপর জেহাদ করা ওয়াজিব।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴﺘُﻢْ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ
ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﺯَﺣْﻔًﺎ ﻓَﻠَﺎ ﺗُﻮَﻟُّﻮﻫُﻢْ ﺍﻟْﺄَﺩْﺑَﺎﺭَ
ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻮَﻟِّﻬِﻢْ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺩُﺑُﺮَﻩُ ﺇِﻟَّﺎ
ﻣُﺘَﺤَﺮِّﻓًﺎ ﻟِﻘِﺘَﺎﻝٍ ﺃَﻭْ ﻣُﺘَﺤَﻴِّﺰًﺍ ﺇِﻟَﻰ ﻓِﺌَﺔٍ
ﻓَﻘَﺪْ ﺑَﺎﺀَ ﺑِﻐَﻀَﺐٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﻣَﺄْﻭَﺍﻩُ
ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﻭَﺑِﺌْﺲَ ﺍﻟْﻤَﺼِﻴﺮُ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন
কাফেরদের মুখামুখী হবে তখন
পশ্চাদপসরণ করবেনা। আর যে লোক
সেদিন তাদের থেকে পশ্চাদপসরণ
করবে সে আল্লাহর ক্রোধ
নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার
ঠিকানা হল জাহান্নাম”।
(সূরা আনফালঃ ১৫-১৬) উপরোক্ত
তিন অবস্থায় প্রত্যেক সমর্থবান
মুসলমানের উপর জেহাদ করা ফরজ।
২) ফরজে কেফায়াঃ
অমুসলিম দেশের নিষ্ক্রিয় কাফেরদের
বিরুদ্ধে জেহাদ
পরিচালনা করা ফরজে কেফায়া।
মুসলমানদের কিছু লোক এই প্রকারের
জেহাদে আঞ্জাম দিলে অন্যরা দায়িত্ব
হতে রেহাই পেয়ে যাবে। তবে অন্যদের
ক্ষেত্রে জেহাদ সুন্নাত
হিসেবে থেকে যাবে।
জিহাদ ফরজ হওয়ার শর্ত কী?
মুসলমানদের নিকট শক্তি থাকলে শির্ক
ও মূর্তি পূজার অবসান
ঘটিয়ে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন
প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহ
তা’আলা মুসলমানদের উপর জেহাদ
ফরজ করেছেন। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
ﻭَﻗَﺎﺗِﻠُﻮﻫُﻢْ ﺣَﺘَّﻰ ﻟَﺎ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﻓِﺘْﻨَﺔٌ
ﻭَﻳَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦُ ﻛُﻠُّﻪُ ﻟِﻠَّﻪِ
“আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক
যতক্ষণ না ফিতনা (কুফর-শির্ক) শেষ
হয়ে যায়। এবং আল্লাহর দ্বীন
সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়।
(সূরা আনফালঃ ৩৯)
সুতরাং পৃথিবী হতে কুফর ও শির্কের
অবসান ঘটিয়ে তাতে আল্লাহর এবাদত
প্রতিষ্ঠা করার জন্যে মুসলমানদের
উপর জেহাদ করা ফরজ করা হয়েছে।
কিন্তু জেহাদ পরিচালনা করার
পূর্বে কাফেরদেরকে ইসলামে প্রবেশের
দাওয়াত দেয়া জরুরী।
তারা যদি ইসলামে প্রবেশ
করতে অস্বীকার করে তবে তাদের
বিরুদ্ধে জেহাদ করতে হবে।
আমরা কাফের-মুশরেকদের দেশ ও
সম্পদ দখল করার
জন্যে এবং তাদেরকে হত্যা করার
জন্যে জেহাদ করবো না;
বরং আমরা তাদের কল্যাণের
জন্যে এবং তাদেরকে অন্ধকার
থেকে বের করে আলোর পথের
দিকে আনার জন্যে জেহাদ করবো।
কে জিহাদের ডাক দিবে?
প্রশ্ন হলো কে জেহাদের ডাক
দিবে এবং জেহাদের নেতৃত্ব দিবে?
উত্তর হলো মুসলমানদের ইমামই কেবল
জেহাদ পরিচালনা করবেন। ইমামের
অনুমতি ব্যতীত জেহাদে অংশ গ্রহণ
বৈধ নয়। তবে শত্রুরা যদি মুসলিম দেশ
আক্রমণ করে তখন ইমামের অনুমতির
প্রয়োজন নেই। সকলেই কাফেরদের
আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য
প্রতিরোধমূলক জেহাদে লিপ্ত হবে। এই
ক্ষেত্রে ইমাম বা নেতার আদেশ
বা অনুমতির কোন দরকার নেই।
মোটকথা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ
পরিচালনার জন্য আমীর আবশ্যক।
আমীরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ
হয়ে তাঁরা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে।
কোন প্রকার দলাদলী ও
ফির্কাবন্ধীতে লিপ্ত হবে না।
তারা যখন একই ইমামের
নের্তৃত্বে একত্রিত হয়ে জেহাদে লিপ্ত
হবে তখন তাদের শক্তি ও প্রভাব
বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু তারা যদি বিচ্ছিন্ন
হয়, দলে দলে বিভক্ত হয় এবং ইমামের
অনুগত না থাকে তাহলেই
নেমে আসবে তাদের উপর মহা বিপদ।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
ﻳَﺎﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴﺘُﻢْ ﻓِﺌَﺔً
ﻓَﺎﺛْﺒُﺘُﻮﺍ ﻭَﺍﺫْﻛُﺮُﻭﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺜِﻴﺮًﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ
ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ ﻭَﺃَﻃِﻴﻌُﻮﺍ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻨَﺎﺯَﻋُﻮﺍ ﻓَﺘَﻔْﺸَﻠُﻮﺍ ﻭَﺗَﺬْﻫَﺐَ
ﺭِﻳﺤُﻜُﻢْ ﻭَﺍﺻْﺒِﺮُﻭﺍ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻣَﻊَ
ﺍﻟﺼَّﺎﺑِﺮِﻳﻦَ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন কোন
বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও তখন
সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক
পরিমাণে স্মরণ কর
যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য
হতে পার। আর আল্লাহ তা’আলার
নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রাসূলের।
তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত
হইওনা। যদি তা কর,
তবে তোমরা ব্যর্থ
হয়ে যাবে এবং তোমাদের প্রভাব
চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য ধারণ
কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা রয়েছেন
ধৈর্যশীলদের সাথে”।
(সূরা আনফালঃ ৪৫-৪৬)
উপরোক্ত দলীলগুলোর
মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ
তা’আলা আমাদেরকে একই ইমামের
নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার আদেশ
দিয়েছেন। যাতে আমাদের ঐক্য বজায়
থাকে। ইমামের আনুগত্য না করে যখন
প্রত্যেকেই নিজেকে আমীর
ঘোষণা করবে তখন
বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে।
সুতরাং মুসলমানদের জন্য ইমাম ও
নেতৃত্ব আবশ্যক। কারণ জিহাদের
বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম ও
শক্তি ব্যতীত জেহাদ পরিচালনা সম্ভব
নয়।
শাইখ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল মাদানী

Next post নবী (সাঃ)এর কাছে শাফাআত চাওয়ার ব্যাপারে বিন বাযের একটি ফতোয়া।

প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল Syed Ru߀£ব্লগের প্রকাশিত পোস্ট গুলি ফেসবুকে শেয়ার করে আমাদের চলার পথকে আরো গতিময় করে তুলুন । আমরা দিন রাত খাটিয়ে পোস্ট গুলি লেখি । ব্লগে প্রকাশ করে আপনাদেরকে উপহার দেয় । আপনারা যদি শেয়ার না করেন?তাহলে আমরা তো সামনে এগিয়ে যেতে পারবোনা । আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । সাথে থাকুন সব সময় । আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :