বিবাহের খুতবা - বিবাহে মেয়ের অধিকার

কোন মন্তব্য নেই
বিবাহের খুতবা
বিবাহের নিয়ম অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত
এবং সহজসরল করা হয়েছে। আসল কাজ
হচেছ ইজাব-কবূল। বিবাহ সম্পাদনের
জন্য ইজাব এবং কবূলই যথেষ্ট।
তবে সুন্নত হলো এই যে,
শুরুতে খুৎবা পড়ে নেয়া। স্বামী-স্ত্রীর
সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং শান্তির জীবন
গড়ে তোলা, উভয়ের মধ্যে ধর্মীয়
অনুভূতির প্রয়োজনীয়তা, আল্লাহ
পাকের ভয় এবং রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সুন্নতের অনুসরনের বিষয় সম্বলিত
খুৎবা প্রদান করা চাই। কেননা স্বামী-
স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত
হওয়া আল্লাহ পাকের ভয় ব্যতীত
সম্ভব হয় না। কারণ নারীগণ
স্বভাবগতভাবে কোমল হয়ে থাকে।
তারা স্বামীর সম্মুখে লাজুক
এবং দুর্বল হয়। অপরদিকে যে সকল
পুরুষের অন্তরে আল্লাহ পাকের
ভয়ভীতি থাকে না তারা কখনই দুর্বলের
হক এবং অধিকার যথাযথভাবে আদায়
করে না,
অথবা আদায়ে অবহেলা করে থাকে।
উপরন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার
বিষয়াদি এমনই
হয়ে থাকে যে এগুলোকে আপন বন্ধু-
বান্ধব এবং নিকটতম আত্মীয়দের
সম্মুখে পেশ করাই কঠিন হয়ে থাকে।
আদালতে এবং মুকাদ্দামায় যাওয়ার
তো প্রশ্নই আসে না। তাই এ
ক্ষেত্রে পারস্পরিক হক অধিকার
যথাযথভাবে লাভ করতে আল্লাহপাকের
ভয়-ভীতি সহায়ক হয়ে থাকে। মনে হয়
এজন্যই সাধারণত বিবাহের খুতবায়
যে তিনটি আয়াত তেলাওয়াত করা হয়
এর প্রত্যেকটিতে তাকওয়া অর্থাৎ
আল্লাহর ভয়ের বিষয় বিদ্যমান
রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সূরায়ে নিসার
আয়াতে বলা হয়েছে যে, স্বামী-
স্ত্রী উভয়ই মানুষ হওয়ার
প্রশ্নে সমান। এক আদমের সন্তান।
একের উপর অন্যের মানুষ হওয়ার দিক
দিয়ে প্রাধান্য নাই। সুতরাং স্বামীর
জন্য স্ত্রীকে খাটো করে দেখার
অবকাশ নেই।
বিবাহে মেয়ের অধিকার
বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েকে শরীয়ত
কর্তৃক এমন অধিকার দেয়া হয়নাই যে,
সে লাগামছাড়া হয়ে অভিভাবকদের
মতামতের বিরুদ্ধে তাদের ভালমন্দ
বিবেচনা করার
তোয়াক্কা না করে কেবল নিজের
মতামতে নিজের
পছন্দমতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিবাহ
বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়বে। এ ধরনের
বিবাহ সম্পর্কে পবিত্র হাদীসে কঠোর
বাণী উচ্চারিত হয়েছেÑ
ﻻﺗﺰﻭﺝ ﺍﻟﻤﺮﺃﺓ ﻧﻔﺴﻬﺎﻓﺎﻥ ﺍﻟﺰﺍﻧﻴﺔ
ﻫﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺰﻭﺝ ﻧﻔﺴﻬﺎ ( ﺍﺑﻦ
ﻣﺎﺟﺔ(
মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় বিবাহ করবে না,
এরূপ বিবাহ যিনারই নামান্তর।
কেবল যৌনবিকারগ্রস্ত এবং নির্লজ্জ
নারীদের দ্বারা এ ধরনের জঘন্য
কর্মকাণ্ড হতে পারে। কোন
সতী সাধ্বী শিষ্টাচারপূর্ণ ভদ্র নারীর
দ্বারা এরূপ কর্মকাণ্ড হতে পারে না ।
যারা এরূপ হঠকারী ও অবিবেচকের মত
কাজ
করে থাকে পরিণামে তাদেরকে পস্তাতে
হয় এবং তাদের জীবন হয় বড্ড
নিষ্ফল। পরবর্তী সময়ে নিজের
অজ্ঞানতা, মূঢ়তার
কথা চিন্তা করে মন অনুশোচনায়
ভরে যায়। জীবনের
প্রতি জাগে বিত”ষ্ণা।
পক্ষান্তরে যারা বিবাহের
ব্যাপারে অভিভাবকদের সার্বিক বিচার
বিবেচনা চিন্তা ভাবনার যথাযথ
মূল্যায়ন করে দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়
তাদের দাম্পত্য জীবন
প্রশান্তিতে ভরে যায়। বংশ মর্যাদাও
অক্ষুণœ থাকে। সামাজিক মান
মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এ কারণেই অসংখ্য
হাদীসে অভিভাবকদের মতামত
উপেক্ষা করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ
হতে মহিলাদেরকে কঠোরভাবে নিষেধ
করা হয়েছে। বলা হয়েছে ﻻﻧﻜﺎﺡ
ﺍﻻﺑﻮﻟﻲ
অভিভাবকদের মতামত ব্যতীত বিবাহ
না হওয়ারই নামান্তর। অবশ্য অনেকেই
এই হাদীসটিকে দুর্বল বলে মন্তব্য
করেছেন। কিন্তু ইমাম বুখারী ইমাম
তিরমিজি এবং মুহাদ্দিস ইবনে সালাহ এই
হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলে সুস্পষ্ট
উক্তি করেছেন। (ইবনে সালাহ ৩২)
যদি কোন নারী অভিভাবকদের মতামত
উপেক্ষা করে স্বেচ্ছায় বিবাহ করে নেয়
তাহলে হানাফী মাজহাবের বিশিষ্ট ফকীহ
ইমাম মুহাম্মাদসহ অধিকাংশদের মতে এ
ধরনের বিবাহ বিশুদ্ধ নয়।
হানাফী মাজহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব
বাদায়ে সানায়েতে (২/২৪৭)
বলা হয়েছেÑ
ﻭﻓﻲ ﻗﻮﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﻻﻳﺠﻮﺯ ﺣﺘﻲ
ﻳﺠﻴﺰﻩ ﺍﻟﻮﻟﻲ ﺍﻭﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻓﻼﻳﺤﻞ
ﻟﻠﺰﻭﺝ ﻭﻃﺆﻫﺎ ﻗﺒﻞ ﺍﻻﺟﺎﺯﺓ ﻭﻟﻮ
ﻭﻃﻴﻬﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﻭﻃﻴﻬﺎ ﺣﺮﺍﻡ ﻭﻟﻮ
ﻣﺎﺕ ﺍﺣﺪﻫﻤﺎﻟﻢ ﻳﺮﺛﻪ ﺍﻻﺧﺮ
“ইমাম মুহাম্মাদের মতে এরূপ বিবাহ
অভিভাবক অথবা হাকিমের সমর্থন
ব্যতীত বিবাহ বলে গণ্য নয়। তাই
সমর্থন ও অনুমতি ব্যতীত মিলন বৈধ
নয়। যদি মিলিত হয় তাহলে তা হারাম
বলে গণ্য হবে, তাদের একজন মৃত্যুবরণ
করলে অন্যের ওয়ারিছ বলে গণ্য
হবে না।” এ বিষয়ে অবশ্য
হানাফী মাজহাবে যথেষ্ট মতভেদ
রয়েছে। আর ইমাম আবু হানীফার
মতানুসারে এরূপ বিবাহ যদিও
গ্রহণযোগ্য হয়ে যায়, তবে বিশেষ
বিশেষ ক্ষেত্রে অভিভাবকের এরূপ
বিবাহ রহিতকরণেরও অধিকার রয়েছে।
(ফতহুল কাদীর ৪১)
হানাফী মাজহাবে এরূপ বিবাহ গ্রহণীয়
হলেও অত্যন্ত নির্লজ্জ
বলে অপছন্দনীয় হওয়ার ব্যাপারে কোন
সন্দেহ নেই।
অপরপক্ষে মেয়ের অধিকার
এবং মতামতকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষাও
করা হয়নি। বরং মেয়ের
অনুমতি এবং মতামতের
তোয়াক্কা না করে বিবাহ
পড়ানো হলে এই বিবাহ মোটেই
হয়না বলে চুড়ান্ত মতামত দেয়া হয়েছে।
হাদীসে পাকে স্পষ্ট
করে বলে দেয়া হয়েছে যে,
ﻻﺗﻨﻜﺢ ﺍﻻﻳﻢ ﺣﺘﻲ ﺗﺴﺘﺄﻣﺮ
ﻭﻻﺗﻨﻜﺢ ﺍﻟﺒﻜﺮ ﺣﺘﻲ ﺗﺴﺘﺄﺫﻥ (
ﻣﺸﻜﻮﺓﺝ২ﺹ২৭০(
“প্রাপ্তাবয়স্কা মহিলার
অনুমতি ব্যতীত যেন বিবাহ
পড়ানো না হয়।” এ নির্দেশ মহিলার
প্রথম বিবাহ এবং দ্বিতীয় বিবাহ উভয়
ক্ষেত্রেই সমানভাবে কার্যকর
করা হয়েছে। তবে যেহেতু মেয়েরা লাজুক
স্বভাবের হয়। এজন্য নারী সুলভ
লাজুক স্বভাবের প্রতি গুরুত্ব প্রদান
করে প্রথম বিবাহের সময় নারীর পক্ষ
থেকে প্রকাশ্যে অনুমতির
কথা বলা হয়নি, বরং চুপ থাকাকেই
অনুমতির স্থলাভিষিক্ত
মেনে নেয়া হয়েছে। এই কঠিন
বিষয়টি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রশ্ন
করে অবগত হওয়া হযরত আয়শার
পক্ষেই সম্ভব হয়েছে যে, তিনি বলেন
অনুমতি দানে নারীগণ লজ্জাবোধ করে।
এর উত্তরে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
ﺭﺿﺎﻫﺎ ﺻﻤﺘﻬﺎ
“তাদের চুপ থাকাই
অনুমতি।” (বুখারী ২/৭৭১)
নারীদের অনুমতি এবং মতামতের
গুরুত্ব সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগতির
জন্য খানসা বিনতে খিজামের
ঘটনা পর্যালোচনা করা যেতে পারে,
তার পিতা খানাসার অনুমতি ব্যতীততই
এক লোকের সাথে তার বিবাহ কাজ
সম্পাদন করে ফেলেছিল। কিন্তু এই
বিবাহ তার মনমত না হওয়ায় সে হযরত
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
খেদমতে হাজির হয়ে নিজের অপছন্দের
কথা জানায়। ফলে রাসূলে পাক
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই
বিবাহকে বাতিল ঘোষণা করেনঃ
ﻋﻦ ﺧﻨﺴﺎﺀ ﺑﻨﺖ ﺧﺬﺍﻡ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻳﺔ
ﺃﻥ ﺃﺑﺎﻫﺎ ﺯﻭﺟﻬﺎ ﻭﻫﻲ ﺛﻴﺐ
ﻓﻜﺮﻫﺖ ﺫﻟﻚ ﻓﺄﺗﺖ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﺮﺩ ﻧﻜﺎﺣﻬﺎ
এতে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এ
ব্যাপারে শরীয়ত অত্যন্ত মধ্যম
এবং ন্যায়নীতির পথ অবলম্বন
করেছে। বিবাহের
ব্যাপারে নারীদেরকে তাদের অধিকার
থেকে মোটেই বাঞ্চিত
করে নি এবং অভিভাবকদেরকেও
অবমূল্যায়ন করে নাই। না নারীদের
অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে,
না অভিভাবকদেরকে শাসরুদ্ধ
করে বসিয়ে দেয়া হয়েছে বরং উভয়ের
প্রতি দৃষ্টি রাখা হয়েছে।


সূত্রঃ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তরদাওয়াতি সংগঠন মজলিসে দাওয়াতুলহক। এর মৌল উদ্দেশ্য মানব জীবনেসকল ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ওআদর্শের প্রতিফলন ঘটানো।কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লামের ইত্তিবা-অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলারইবাদত আনুগত্যের দাবি পূরণ করাই হলএকজন মুসলমানের ইহকালীন জীবনেরমূল উদ্দেশ্য।।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :