আদর্শ মহীয়সী♥♥উম্মুল মুমিনীন সাওদা (রা.)

কোন মন্তব্য নেই
উম্মুল মুমিনীন সাওদা (রা.)
এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ
করেন – মুমিনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য
হচ্ছে সরলতা ও কোমলতা।”
হাদীসে বর্ণিত এ মুমিনী স্বভাব-
চরিত্রের দৃষ্টান্ত হচ্ছেন উম্মুল
মুমিনীন হযরত সাওদা (রা.)।
তিনি ছিলেন অতি সহজ-সরলা। তাঁর
মধ্যে না ছিল কোন অহংকার, হিংসা,
বিদ্বেষ, না ছিল কোন লৌকিকতা। তাঁর
সরলতা নিয়ে মাঝে-মধ্যে রাসূলুল্লাহ
(সা.) হাস্যরস করতেন।
হযরত খাদীজা (রা.)-এর
ইন্তিকালে রাসূলুল্লাহ (সা.) যে বিরহ
ব্যথা পেয়েছিলেন, তা যেমন সাওদা (রা.)
দ্বারা দূর হয়েছিল, তেমনি তাঁর
দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গৃহের
অভিভাবকশূন্যতা পূরণূ হয়েছিল।
তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
পরিবারে পুনরায় সুখ-সাচ্ছন্দ্য
ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘরের যাবতীয়
কাজ-কর্ম তিনি সুষ্ঠু ও
সুন্দরভাবে আঞ্জাম দিয়েছিলেন।
গৃহকর্মে ছিল তাঁর অসাধারণ
নিপুণতা এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুখ-
শান্তির প্রতি তিনি খুব লক্ষ্য
রাখতেন। এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
কল্যাণদ্বয় হযরত ফাতিমা ও হযরত
কুলছুম (রা.)কে তিনি পরম যতেœ
লালন-পালন করেন।
পূর্ব বিবাহ
হযরত সাওদা (রা.)-এর প্রথম বিবাহ
তাঁর চাচাত ভাই সাকরান-এর
সাথে হয়েছিল। তাঁরা উভয়ই
অগ্রগামী মুসলিমদের দলভুক্ত ছিলেন
এবং তারা হাবশায় হিজরতও করেছিলেন।
হাবশা থেকে ফিরে এসে সাকরান (রা.)
মক্কা মু‘আজ্জমায় ইন্তিকাল করেন।
হাবশা থেকে ফিরে এসে মক্কায়
থাকাকালীন হযরত সাওদা (রা.)
একদা স্বপ্নে দেখেন যে, রাসূলুল্লাহ
(সা.) আগমন করে তাঁর কাঁধে হাত
মুবারক রেখেছেন। হযরত সাওদা (রা.)
যখন এ স্বপ্ন
সম্পর্কে স্বামী সাকরানকে অবহিত
করেন, তখন তিনি বললেন, ‘সত্যিই
যদি তুমি এ স্বপ্ন দেখে থাকো,
তবে অতিশীঘ্রই আমার ইন্তিকাল
হবে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
সাথে তোমার বিবাহ হবে।
বর্ণনাকারী বলেন, সেদিনই সাকরান
অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুদিন পর
তিনি ইন্তিকাল করেন।
হযরত সাওদা (রা.)-এর পিতার নাম ছিল
যাম‘আ এবং মাতার নাম ছিল শামসু।
তাঁর প্রথম স্বামীর ঘরে আবদুল্লাহ
নামে একটি পুত্রসন্তান ছিল
এবং তিনি যৌবনে পর্দাপণ করে আল্লাহ
তা‘আলার পথে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ
করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি আনুগত্য
হযরত সাওদা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত
আবেদা ও যাহেদা। বিদায় হজ্বের পর
রাসূলুল্লাহ (সা.) তার সকল
বিবিগণকে বলেছিলেন যে, আমার পর
তোমরা ঘর থেকে বের হবে না। হযরত
আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পরলোকগমনের
তাঁর সকল বিবিই হজ্ব করেন, কিন্তু
হযরত সাওদা ও হযরত যাইনাব (রা.)
হজ্ব করেননি। কারণ, অন্যান্য বিবিগণ
বাইরে বের হওয়া থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-
এর নিষেধ করার উদ্দেশ্য
তারা ধরে নিয়েছিলেন কোন বৈষয়িক
কারণে বের হওয়া। কিন্তু হযরত
সাওদা ও হযরত যাইনাব (রা.)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ বাণী এত
মধুরভাবে গ্রহণ করেন যে, রাসূলুল্লাহর
(সা.) পরলোকগমনের পর কোন কারণেই
তাঁরা বাইরে বের হননি। হযরত
সাওদা (রা.) বলতেন, ‘আমি পূর্বেই হজ্ব
ও উমরা করেছি, এখন আল্লাহর রাসূল
(সা.)-এর নির্দেশমত ঘরে বসে সময়
কাটাবো।’ (তাবকাত, ৮ম খ-,
৩৭পৃষ্ঠা)
উদারতা ও বদান্যতা
হযরত সাওদা (রা.) যদিও সহজ-সরল
ছিলেন, কিন্তু তিনি মাঝে-
মধ্যে রসিকতাও করতেন।
এমনকি কখনও
তিনি রসিকতা করে রাসূলুল্লাহ (সা.)কেও
হাসাতেন। একদিন তিনি বললেন,
‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)!
গতরাতে নফল নামাযে আমি আপনার
সাথে শরীক হয়েছিলাম।
নামাযে আপনি এত দীর্ঘ রুকু করেন যে,
নাক ফেটে রক্ত বের হওয়ার
ভয়ে আমি নাক চেপে ধরেছিলাম।’
হযরত সাওদা (রা.) ছিলেন অত্যন্ত
দানশীলা। দরিদ্র, ইয়াতিম ও গরীব-
মিসকীনদের জন্য তাঁর দ্বার ছিল
সদাউন্মুক্ত। তিনি কখনো কোন গরীব-
মিসকীনকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতেন
না। বরং তিনি নিজে না খেয়ে ইয়াতীম-
মিসকীনদেরকে দিয়ে দিতেন।
হযরত সাওদা (রা.) ছিলেন অসহায়-
কাঙ্গালদের আশ্রয়স্থল। তাই অসহায়
লোকদের সমাগমে তাঁর গৃহে প্রায়ই
পরিচিত-অপরিচিত লোকদের ভীড়
জমে যেত। এ দৃশ্য দেখে হযরত উমর
(রা.) বিরক্তবোধ করতেন
এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে অনুরোধ
করেন, যেন তিনি স্বীয়
বিবিগণকে পর্দায় থাকার নির্দেশ দেন।
কারণ, তখন পর্যন্ত পর্দার বিধান
নাযিল হয়নি।
হযরত উমর (রা.) একবার হযরত
সাওদা (রা.)-এর নিকট একথলে দিরহাম
পাঠিয়েছিলেন। হযরত সাওদা (রা.)
জানতে চান, তাতে কী আছে? বলা হল,
দিরহাম। তখন তিনি বললেন, খেজুরের
থলের মত দেখাচ্ছে। অতঃপর তিনি সকল
দিরহাম দরিদ্রের মাঝে বন্টন
করে দেয়ার নির্দেশ দেন।
ত্যাগ স্বীকার
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই হযরত
সাওদা (রা.) অত্যন্ত
বয়োবৃদ্ধা হয়ে যান। তাই রাসূলুল্লাহ
(সা.) তাঁকে তালাক দিয়ে দেন কি-না এই
আশংকায় তিনি আরজ করলেন,
হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! স্বামীর
খাহেশাত আমার নেই, কিন্তু আমি চাই
আপনার বিবিদের সাথে আমার হাশর
হোক। অতএব, আপনি আমাকে আপনার
বিবাহ বন্ধনে রেখে দিন আর
আমি আমার পালার দিন হযরত
আয়িশাকে দিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সা.)
তাঁর আরজী কবুল করেন। এ সম্পর্কেই
পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নাযিল হয়
– যদি কোন নারী স্বীয়
স্বামী থেকে অনাকাঙ্খিত আচরণ
কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে,
তবে পরস্পর
মীমাংসা করে নিলে তাতে কোন পাপ নেই।
আর মীমাংসা করে নেয়াই
উত্তম।” (সূরাহ নিসা, আয়াত :১২৯)
এ হিসেবেই হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
বিবাহ বন্ধনে একই সময় যখন ৯জন
স্ত্রী একসাথে ছিলেন, তখন আটজন
বিবির নিকট
তিনি পালাক্রমে রাত্রি যাপন করতেন।
এক্ষেত্রে সবার সাথে একরাত্রি যাপন
করতেন আর হযরত আয়েশা (রা.)-এর
নিকট দুইরাত্রি যাপন করতেন।
পর্দার বিধানে শিরকত
যেহেতু ইসলাম চারিত্রিক পবিত্রতার
প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে, আর
চারিত্রিক পবিত্রতা সংরক্ষিত হয়
বিশেষভাবে পর্দার মাধ্যমে, তাই হযরত
উমর ফারুক (রা.)-এর দিলে এই
তামান্না ছিল যে, পর্দার হুকুম অবর্তীণ
হোক। আর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিবিগণ
পর্দায় থাকুন
এটা তিনি বিশেষভাবে কামনা করতেন।
কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) এ
সম্পর্কে ওহী না আসায় ঐ হুকুম
জারী করেননি। তাই অন্যান্য সাহাবীদের
মত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিবিগণও
প্রকৃতির
ডাকে সাড়া দিতে জংগলে যেতেন।
একবার হযরত সাওদা (রা.) হাজত
সারার জন্য জংগলে বের হন।
পথিমধ্যে তিনি হযরত উমর (রা.)-এর
সামনে পড়ে যান এবং হযরত
সাওদা (রা.) যদিও
নিজেকে পুরোপুরি কাপড়
দিয়ে ঢেকে নিয়েছিলেন, কিন্তু
তিনি মোটা ও লম্বা হওয়ার
কারণে হযরত উমর (রা.)
তাকে চিনে ফেলে বললেন, হে সাওদা!
আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি।
একথা দ্বারা হযরত উমর (রা.)-এর
উদ্দেশ্য ছিল যে, রাসূলুল্লাহর (সা.)
বিবিগণ যেন এভাবে বের না হন, সেজন্য
পর্দার বিধান অবতীর্ণ হোক।
অতঃপর পর্দার আয়াত নাযিল হয় –
হে নবী! আপনি আপনার পতীদেরকে,
কন্যাদেরকে এবং মুমিন
স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের
চাদরের অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।
এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে।
ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।
আল্লাহ অসীম ক্ষমাশীল ও পরম
দয়ালু।” (সূরাহ আহযাব, আয়াত : ৬০)
পর্দার আয়াত নাযিল হওয়ার পর হযরত
সাওদা (রা.) নিজেকে খুব
ভালো করে ঢেকে হাজত সারার জন্য
জংগলে বের হন। তিনি খুব মোটা ও
লম্বা ছিলেন বিধায় তখনও তাকে সহজেই
চেনা যায়। তাই হযরত উমর (রা.)
তাকে দেখে চিনে ফেলে বললেন, হে সাওদা!
আল্লাহর কসম, আপনি কাপড়ে খুব
ভালোভাবে ঢেকে বের হলেও
আপনি আমার থেকে অজ্ঞাত থাকবেন
না। সুতরাং ভেবে দেখুন, এখন
আপনি কিভাবে বের হবেন।
এ কথা শুনে হযরত সাওদা (রা.)
ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর
খিদমতে হাজির হয়ে আরজ করলেন,
হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমি হাজত
সারার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিলাম।
পথিমধ্যে হযরত উমর (রা.)-এর
সাথে দেখা হয়ে যায়। তিনি আমাকে এই
এই বললেন। হযরত সাওদা (রা.)
বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঐ সময়
আমার ঘরে রাতের খাবার খাচ্ছিলেন,
তাঁর হাতে ছিল গোশতের হাড়,
তিনি তা থেকে গোশত নিয়ে খাচ্ছিলেন।
ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উপর
ওহী অবর্তীণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)
-এর বিবিগণকে হাজত সারার জন্য
বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
এটা ঐ সময়ের কথা হাজত সারার জন্য
যখন বাড়ীর আশেপাশে বাথরুম-এর
ব্যবস্থা ছিল না। অতঃপর যখন বাড়ীর
আশেপাশে বাথরুম-এর ব্যবস্থা হয়ে যায়,
তখন বাইরে বের হওয়ার অনুমতি রহিত
হয়ে যায়।
ইন্তিকাল
হযরত সাওদা (রা.) হযরত উমর (রা.)-
এর খিলাফত কালের শেষ দিকে ৫৪
হিজরীতে ইন্তিকাল করেন।
**পড়া শেষে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
মানবতার মুক্তির
লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন,
একটি অগ্নিশিখা থেকে
জ্বেলে দিন লক্ষ আলোক প্রদীপ।

ব্লগ সম্পাদক ও এ্যাডমিনঃসৈয়দ রুবেল উদ্দিন
Next post "নারীদের মাহরাম তথা যাদের সাথে দেখা করা জায়েজ
ব্লগের প্রকাশিত পোস্ট গুলি ফেসবুকে শেয়ার করে আমাদের চলার পথকে আরো গতিময় করে তুলুন ।আমরা দিন রাত খাটিয়ে পোস্ট গুলি লেখি ।ব্লগে প্রকাশ করে আপনাদেরকে উপহার দেয় ।আপনারা যদি শেয়ার না করেন?তাহলে আমরা তো সামনে এগিয়ে যেতে পারবোনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :