যৌন ইচ্ছায় বাধানিষেধ /অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ এমবিবিএস এফসিপিএস এমআরসিপি এফআরসিপি E-mail : professorfiroz@yahoo.com ১

কোন মন্তব্য নেই
বাধানিষেধহীন বিভিন্ন প্রকারের যৌন জাগরণ ও যৌনআচরণের একটি ইতিবাচক সমর্থনকে বলা হয় erotophilia যার অর্থ হচ্ছে যৌন জাগরণকে পছন্দ করা। এই যৌন জাগরণের বিপরীতে ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তাকে বলা হয়ে থাকে erotophilia । আমাদের বেশিরভাগ লোকই হচ্ছে এই দুটোর মাঝামাঝি অবস্থানে।
যাই হোক অনেক লোকই এই ধরনের ভয় এবং দুশ্চিন্তা অনুভব করে, তারা মনে করে এটাই তাদের যৌন পরিচালনাকে বন্ধ করে দেয়। তারা যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তারা যৌনকর্মের জন্য সুযোগ তালাশ করে না এবং সুযোগ পেলেও তার সদ্ব্যবহার করে না। এটাকে বলা হয় যৌনইচ্ছায় বাধানিষেধ বা hypoactive sexual desire
যৌনতার ভয় হচ্ছে যৌন ইচ্ছায় বাধানিষেধের অন্যতম প্রধান কারণ। কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। অন্য কারণগুলো হচ্ছে ডিপ্রেশন, একজন যৌনসঙ্গীর সাথে গোস্বা, বিবাহ-বিচ্ছেদ এবং অন্য ক্ষতি, চাপ, অসুস্থতা এবং একজনের যৌন পূর্বাভিমুখীনতাকে গ্রহণ করায় অসুবিধা। কারণ যা-ই হোক যৌন ইচ্ছায়বাধা-নিষেধকে একটা যৌন অসামর্থ্যতা বলে বিবেচনাকরা হয়। অন্যান্য অকার্যকারিতার মতো এটাকেও পেশাদারি চিকিৎসকের দ্বারা শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা করা যেতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে সাইকোথেরাপি এবং সেক্সথেরাপি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার বিপরীত ওষুধপত্র কার্যকরহতে পারে।
যৌন বিরূপভাব
অনেক লোক যৌনতার বিষয়ে এতটা ভীত এবং দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয় যে, যৌন সংযোগের একান্ত ধারণাটাই বিতৃষ্ণাকর হয়েওঠে। তারা যৌনতা ও যৌন সংযোগকে পরিহার করে চলে, যদিও তাদের যৌনতার ইচ্ছা হতে পারে বাধানিষেধহীন। তারা যে কোনো ধরনের সপর্শে বিতৃষ্ণাবোধ করতেপারে। তাদের ঘৃণাবোধ তাদেরকে অসুস্থ করে তুলতে পারে। তাদের যৌনমিলনের ভয়ে অনেক সময় ঘাম দিতে পারে, বমি বমি ভাব, বমিটিং অথবা ডায়রিয়াহতে পারে। যৌনমিলনের ভয়কে বলা হয় সেক্সুয়াল অ্যাভারশন ডিসঅর্ডার। যেসব লোকের সেক্সুয়াল অ্যাভারশন ডিসঅর্ডার আছেতারা বিশেষ ধরনের যৌনকর্ম সম্পাদন করতে পারে, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে, বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে।
সেক্সুয়াল অ্যাভারশন ডিসঅর্ডার হতে পারে যৌনভাবে ভীত অথবা নিগৃহীত মাতৃত্ব-পিতৃত্বের জন্য, যৌন নিপীড়নের জন্য, যৌনসঙ্গীর নিকট থেকে চাপের জন্য অথবা লিঙ্গের পরিচিতির সমস্যার জন্য। আত্মাভিমানের সমস্যার এবং শরীরের প্রতিবিম্বেরজন্য আমাদের সেক্সুয়াল অ্যাভারশনের সমস্যা দেখাদিতে পারে। সাইকোসেক্সুয়াল থেরাপি ওইসব নারী ও পুরুষের জন্যউপকারী হতে পারে যাদের রয়েছে সেক্সুয়াল অ্যাভারশন ডিসঅর্ডার।সাইকোসেক্সুয়াল থেরাপি ওইসব নারী ও পুরুষের জন্যউপকারী হতে পারে যাদের রয়েছে সেক্সুয়াল অ্যাভারশন ডিসঅর্ডার। যদিও আমাদের বেশিরভাগ লোকেরই সেক্সুয়াল অ্যাভারশন ডিসঅর্ডার নেই, তথাপি আমাদের অনেকেরই থাকতে পারে দুশ্চিন্তা এবং বাধানিষেধের ভয়, যার কারণে যৌন সম্ভোগ যতটা আনন্দদায়ক হওয়ার কথা, ততটা আমাদের ক্ষেত্রে পাওয়া হয়ে ওঠে না।
লিঙ্গের অকার্যকারিতা ও যৌনতার বাধানিষেধ
যৌনাঙ্গের পরিচিতি যতটা সহজ মনে হয় আসলে কিন্তু ততটা সহজ নয়। আমাদের যৌনাঙ্গগুলো এবং হরমোনসমূহ হচ্ছে আমাদের লিঙ্গের দৈহিক উপাদান; যেভাবে আমাদের যৌন পরিচালনা এবং সম্ভবত আমাদের যৌনতার পূর্বাভিমুখীনতা। আমাদের যৌন নিজস্বতা সম্বন্ধে অনুভবের গঠন শুরু হয়, তখন থেকেই যখন আমাদের শরীরে যৌনাঙ্গ সংযোজিত হয়। আমাদের যৌনাঙ্গের অনুভব দেয়া হয় জন্মের সাথেই। এটা সাধারণত নির্ভর করে আমাদের যৌনাঙ্গের শারীরিক গঠনের ওপরে। ডাক্তার বা ডিডওয়াইফ বলেছেন যে, আমরা হয় বালক অথবা বালিকা। এই সিদ্ধান্ত একটি জন্ম প্রশংসাপত্রে লেখা হয় এবং হয়ে যায় আমাদের লিঙ্গের ব্যাপারে একটি আইনসিদ্ধ বক্তব্য। লিঙ্গপ্রদান হচ্ছে সমাজের জন্য একটি অত্যন্ত জরুরি বিষয়। আমাদের মতো সমাজে নারী ও পুরুষ বিপরীতমুখী লিঙ্গধারী হিসেবে বিবেচিত হয়।
বেশিরভাগ লোকই সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে আলাদা লিঙ্গের হয়ে জন্মগ্রহণ করে। তারা হয়তো নারী অথবানর। যাই হোক অতি নগণ্য সংখ্যক লোক আলাদাভাবে চেনা যায় না এমন অথবা সমস্যাপূর্ণ যৌন অঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, যা স্বচ্ছভাবে পুরুষ বা নারী কোনোটাই নয়। কিছু সংখ্যক জন্ম নেয় উভয় লিঙ্গ সহকারে। অনেক সময় অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহ হয় এক লিঙ্গের, কিন্তু বহিরঙ্গ হয় অন্য লিঙ্গের। একজন লোকের যার সম্পূর্ণ আলাদাভাবে চেনাযায় এমন যৌনাঙ্গসমূহের সংমিশ্রণে জন্ম হয়, তাদেরবলা হয় উভলিঙ্গ বা দ্বিলিঙ্গ। এটা খুব কম ঘটে থাকে।
কিছু উভলিঙ্গ শিশু বিতর্কিত যৌনাঙ্গ নিয়ে বয়স্ক হয় কিন্তু তাদের আলাদা কোনো লিঙ্গের পরিচয় থাকে না। অনেকে একথা বুঝার পূর্বেই বড় হয়ে যায় যে, তাদের ভেতরেরযৌনাঙ্গসমূহ বাইরের অঙ্গসমূহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। কিছু কিছু শিশুর পুনর্গঠনমূলক অস্ত্রোপচার করা হয় জন্মের সময়ে, যাতে তাদের আলাদাভাবে নর কিংবা নারী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। এই অস্ত্রোপচার কোনো কোনো ক্ষেত্রে উপকারে আসে, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচারের ফলে প্রদত্ত লিঙ্গের ব্যক্তিবিশেষের লিঙ্গের পরিচিতি ও অনুভবের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না এবং অন্যান্য ঘটনায় অস্ত্রোপচার দ্বারা প্রদত্ত লিঙ্গের কারণে ব্যক্তির অনুভূতি হারিয়েযায়- বিশেষ করে অস্ত্রোপচার দ্বারা যখন ভগাঙ্কুরের আকার ছোট করে ফেলা হয়। যে কারণেই হোক না কেন বিতর্কিত, দ্ব্যর্থক বা সন্দেহজনক লিঙ্গের জন্য ব্যক্তির যৌন জীবনের ওপর সমাজের ব্যাপক প্রভাব পড়ে, বিশেষকরে যে সমাজের মধ্যে রয়েছে বিতর্কিত যৌনাঙ্গের জন্য অনেক কম বা দুর্বল সহনশীলতা।
আমাদের যৌনাঙ্গ প্রদান করার পর আমরা আমাদের নিজ যৌনাঙ্গ বিষয়ে আমাদের মানসিক কল্পচিত্রকে গঠন করি সমাজের ওপর নির্ভরশীল হয়ে। আমরা আমাদের পরবর্তী সমস্ত জীবন এই আচরণ শিক্ষার মাধ্যমে অতিবাহিত করি যে,কোন ধরনের আচরণ নারীর জন্য এবং কোন ধরনের আচরণ পুরুষের জন্য শোভনীয় ও সঠিক। কিন্তু আমাদের যৌনতার পূর্বাভিমুখীনতা,ভালোবাসার মানচিত্র, যৌনাঙ্গের ভূমিকা এবং যৌনাঙ্গের প্রমাণপত্র আমাদের যৌনাঙ্গের পরিচিতিকে আক্রান্ত করতেপারে। এমনভাবে আক্রান্ত করতে পারে যে, তাতে আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ ও সামাজিক আদর্শকে ব্যাহত করতে পারে এবং দ্বন্দ্বের সূচনা করতে পারে।

আরো
পড়তে থাকুন ২

কোন মন্তব্য নেই :