যৌন রোগ বনাম যৌন সমস্যা ডা. এ এইচ মুস্তাফিজুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই
প্রথমেই আমাদের জানা উচিত যে যৌনরোগ এবং যৌন সমস্যা বলতে আমরা কি বুঝি? কারণ এ দুটি সমস্যাযে এক নয় তা আমাদের অনেকের নিকট পরিষকার নয়। যে জন্য আমরা অনেক সময় বিভ্রান্তিতে পড়ে যাই। ফলশ্রুতিতে আমাদের অনেক কষ্ট ও হয়রানির শিকার হতেহয়। অনেকে পথে ঘাটে বিভিন্ন চটকদারি কথায় বিশ্বাস করে অবৈজ্ঞানিক ও ভুল চিকিৎসা করে প্রচুরটাকা নষ্ট করেন। অথচ এসব সমস্যা সম্বন্ধে আমাদের জানা থাকলে আমরা অপচিকিৎসা থেকে পরিত্রাণপেতে পারি
যৌন রোগ
যৌন রোগ নারী-পুরুষের যৌনমিলনের মাধ্যমেই ছড়ায়। অর্থাৎ কোনো নারী পুরুষের যৌনমিলনের সময় যদি তাদের একজনের মধ্যে যৌন রোগ থাকে তবে তা অন্যজনের মধ্যে সংক্রমিতহতে পারে। আর এভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে যৌনমিলনের মাধ্যমে সংক্রমিত রোগের নাম যৌন রোগ। তবে উক্ত নারী এবং পুরুষের মধ্যে যদি কারো যৌন রোগ না থাকে তবে তাদের যৌনমিলনে যৌনরোগ হবে না। সুতরাং যৌনমিলনের মাধ্যমে পাওয়ারোগের নাম যৌনরোগ। যেমন সিফিলিস, গনোরিয়া এবং এইডস। এর মধ্যে সবেচেয়ে মারাত্মক হলো এইডস। সিফিলিস এবং গনোরিয়া হলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত রোগ। সিফিলিসেরজীবাণুর নাম ট্রিপেনোমা প্যালিডাম এবং গনোরিয়ার জীবাণুর নাম নাইসেরিয়া গনোরি। এইডস এর জীবাণুর নাম হলো হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস। কেউ সিফিলিস বা গনোরিয়া নামক যৌনরোগে আক্রান্ত হলে সময়মত এন্টিবায়োটিক প্রয়োগের মাধ্যমে ভালো হয়ে যাবেন। আর ভাইরাসের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো কার্যকরী ওষুধ আবিষকার হয়নি বিধায় এইডস এ আক্রান্ত হলে তেমন কোনোচিকিৎসা নেই।
পুরুষের সিফিলিস হলে লিঙ্গের মাথায় গোটা বা ক্ষত হবে যা চিকিৎসা না করালেও কিছুদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে তবে পরবর্তীতে এ রোগ অন্যভাবে দেখা দিতে পারে। গনোরিয়া হলে মূত্রনালীতে ক্ষত হবে এবং পুঁজ বের হবে। যদি কোনো নারী-পুরুষের যৌনমিলনের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে যৌন অঙ্গে উল্লেখিত ক্ষত বা পুঁজের সৃষ্টি হয় তবে হয়তবা তিনিসিফিলিস অথবা গনোরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এইডস রোগ হলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যে সমস্ত জীবাণু মানুষের কোনো ক্ষতি করে না তখন তারাও বিভিন্নভাবে মানুষকে আক্রমণ করে। এ অবস্থায় কোনো রোগ দেখা দিলে সেটা থেকে তাকে সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় না। সাধারণভাবে এ তিনটি যৌনরোগেই মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়।
যৌন সমস্যা
যৌন সমস্যাকে অনেক সময় যৌন মানসিক সমস্যা বলা হয়ে থাকে। কারণ বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যৌনসমস্যার ৯০ ভাগ কারণ হলো মানসিক। অর্থাৎ মানুষ যে কারণে যৌন সমস্যায় ভোগে তা সুস্থ মন মানসিকতার অভাবেই হয়ে থাকে। মানুষের যৌন জীবন একটি নির্দিষ্ট বয়সে শুরু হয়ে তা অনেকদিন একইরকম চলতে থাকে যদিও বয়সের সাথে সাথে কিছুটা কমতে থাকে। শেষ বয়সে শুরু হয়ে তা অনেকদিন একইরকম চলতে থাকে যদিও বয়সের সাথে সাথে কিছুটা কমতে থাকে। শেষ বয়সে হরমোনের অপর্যাপ্ততা এবং মন-মানসিকতার পরিবর্তনেরকারণে এমন হয়। মানুষভেদে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও সব মানুষই একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সক্রিয় যৌনজীবন যাপন করে। তবে বিভিন্ন কারণে মানুষের এই স্বাভাবিক যৌনজীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে কিছু সমস্যার সৃষ্টি করে। একজন মানুষের সুস্থ যৌন জীবনে যখন কোনো অস্বাভাবিকতা আসে এবং স্বাভাবিক যৌন প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা দেখা দেয়, সেই সমস্যাকে যৌন সমস্যা বলা হয়। অতএব,পাঠকবৃন্দ যৌন রোগ যা যৌনমিলনের মাধ্যমে একজনের থেকে অন্যজনের হয় সেটা স্বাভাবিক যৌনজীবনের সমস্যা অর্থাৎযৌনসমস্যা এক জিনিস নয়। সুতরাং যৌনরোগ এবং যৌন সমস্যা যখন দুটো আলাদা সমস্যা এদের চিকিৎসাও ভিন্ন। এখন দেখা যাক যৌন সমস্যা কি কি হতে পারে? এখানে একটি কথা জেনে রাখাদরকার তা হলো স্বাভাবিক যৌনজীবন সব মানুষের ক্ষেত্রে এরকম হবে না। মানুষের ব্যক্তিত্বে, স্বাদে, গন্ধে বর্ণে, রুচিতে যেমন ভিন্নতা আছে তেমনি যৌনজীবনেও ভিন্নতাথাকতে পারে। একজনের যৌন অভিজ্ঞতা বা সমস্যা অন্য জনের থেকে ভিন্ন হতে পারে।
যৌন সমস্যাঃ পুরুষের ক্ষেত্রে
১. যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া
২. যৌন অতৃপ্তি
৩. দ্রুত বীর্যপাত
৪. লিঙ্গের দৃড়তাজনিত সমস্যা
মেয়েদের ক্ষেত্রে
১. যৌন ইচ্ছা না হওয়া বা কমে যাওয়া
২. যৌন অতৃপ্তি
৩. কষ্টদায়ক যৌনমিলন
যৌন সমস্যা কেন হয়
আমরা আগেই বলেছি যেন সমস্যার মূল কারণই হলো মানসিক অর্থাৎ মনের ব্যাপার। মানসিক কারণ ছাড়া আর অন্য যে কারণগুলোরয়েছে ওইগুলো হলো ওষুধের প্রভাব। কিছু কিছু শারীরিক রোগ যেমন বহুমূত্র, কিছু কিছু স্নায়বিক সমস্যা, কিছু কিছু মূত্রনালী সংক্রান্ত রোগ ইত্যাদি। তবে আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হলো মনের ব্যাপার নিয়ে। একজন সুস্থ মানুষ তাকেই বলা যায় যিনি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সুস্থ। তেমনি একজন মানুষের সুস্থ যৌন জীবনের জন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। যে কোনো ধরনের আবেগ বা উদ্বেগ মানুষের বিষয় হলো মনের ব্যাপার নিয়ে। একজন সুস্থ মানুষ তাকেই বলা যায় যিনি শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিকভাবে সুস্থ। তেমনি একজন মানুষের সুস্থ যৌন জীবনের জন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা। যে কোনো ধরনের আবেগ বা উদ্বেগ মানুষের সুস্থ যৌনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। উদ্বেগহলো মনের কারণের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যৌন সমস্যা বিয়ের আগে বা পরেও দেখা দিতে পারে। একটি কথা মনে রাখতে হবে যে সুস্থ যৌনজীবনেরও মাঝে মাঝে পারিপার্শ্বিকতার কারণে যৌন সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে তা ক্ষণস্থায়ী এবং অনেকটা স্বাভাবিক বলা যেতে পারে। মানুষের সবকিছুতেই একটা কৌতূহল থাকে। সেটা যৌন ক্ষমতার বেলায়ও বাদ যায় না। বিবাহের পূর্বে প্রায় সব ছেলেদের মাঝে একটা ব্যাপার পরিলক্ষিত হয় তা হলো সে যৌনভাবে কতখানি যোগ্য। এ নিয়ে তার চিন্তার শেষ থাকে না। সমস্ত কাজকর্ম পড়াশোনা সবকিছুর মধ্যে তার মনের মধ্যে এ চিন্তাটি বিরাজ করে। ব্যাপারটি নিয়ে সে এতই উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে যে বিবাহের পূর্বে সে একটা পরীক্ষা দিতে চায়। আর এজন্য নিষিদ্ধ স্থানে গমন করে। স্বাভাবিকভাবে নিষিদ্ধ স্থানে সে ব্যর্থ হয়। আর এ ব্যর্থতাতার মনের মধ্যে এ ধারণাই জন্ম দেয় যে সে যৌনভাবে সক্ষম নয়।

কোন মন্তব্য নেই :