সেক্স বিজ্ঞান ও ডাঃ কিনসে

কোন মন্তব্য নেই
ডাঃ কিনসে ও তার সহকর্মীদের গবেষণার ফল যৌন সাহিত্যে এক উল্লেখযোগ্য অবদান। তার 'Sexual behavior in the human male' এবং 'Sexual behavior in the human female' প্রায় পনেরো বছরের তথ্যানুসানের ফলে রচিত হয়। আমেরিকায় পুরুষদের যৌনতা সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করবার প্রয়াসে ডাঃ কিনসে এবং তার সহকর্মীরা প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিনীর কাছ হতে প্রশ্নচ্ছলে তাদের বিভিন্নমুখী যৌন অভিজ্ঞতা ও অভিমতগুলো তালিকাভুক্ত করেছেন। এসবপ্রশ্নগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়; বিবাহপূর্ব এবং বিবাহোত্তর যৌন অভিজ্ঞতাবিষয়ে। একথা বলা যেতে পারে যে, ডাঃ কিনসের বই দুটি যৌন ব্যবহারের তথ্য সমাবেশের দিক হতে যৌন সমস্যার নতুন আলোকপাত করেছেন। তার সমস্ত মতামত অবশ্য সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তথ্যানুসানে অক্লান্ত কর্মী হিসেবে এবং সেক্স সাইন্সে অমূল্য তথ্য পরিবেশক হিসেবে ডাঃ কিনসে অমর হয়ে থাকবেন।
আধুনিক সেক্স বিজ্ঞানে মাস্টার এন্ড জনসনের অবদান
কিনসের অনুসান ও তথ্য প্রকাশের প্রায় দশ বছর পরআরও দু’জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এক নতুন পদ্ধতিতে নারী-পুরুষের সেক্স লাইফ সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করেন। এরা হলেন ডাঃ মাস্টার এবং মিসেস ভার্জিনিয়া জনসন। এরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল ‘হিউম্যান সেক্সুয়াল রিসপন্স’ নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। এরা যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সে পদ্ধতি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষকরা প্রত্যক্ষভাবে নারী-পুরুষের যৌনমিলনকে যন্ত্রাদির সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের গবেষণালব্ধ বইটি আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।এই দুই গবেষক আমেরিকার সেন্টলুয়িস-এ রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলজি রিসার্স ফাউন্ডেশন সংস্থায় সপ্তাহে গড়ে ৮৫ ঘন্টা করে নিয়মিতভাবে দীর্ঘ এগারো বছর যৌনতা সেক্সের ওপর গবেষণা করেন। এই দীর্ঘ গবেষণাকালে তারা নারী-পুরুষের দেহের অভ্যন্তরে যৌনমিলনকালে কি ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় তা নথিভুক্ত করেছেন। এই বিজ্ঞানীদ্বয় নর-নারীর যৌনানুভূতি বা সেক্সুয়ালরেসপন্সকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো-
*. উত্তেজনা স্তর (একসাইটমেন্ট ফেস)
*. চরম উত্তেজনা স্তর (প্লাটু ফেস)
*. চরম তৃপ্তি বা সুখ লাভের স্তর (অর্গাজম) এবং
*. বিরতির স্তর (রিসলোশন ফেস)।
এই গবেষকরা গভীর মনোনিবেশ সহকারে যৌন বা সেক্স উত্তেজনাকালে দৈহিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং করেছেন চমৎকার বিশ্লেষণ-বর্ণনা। । এদের গবেষণা আধুনিক সেক্স সাইন্সকে দারুণ উন্নতি করেছে যা কিনা যৌন বিজ্ঞানের ইতিহাসে আন্তরিকভাবে অভিনন্দিত ও গৃহীত হয়েছে।
সেক্স ও শরীর
শরীরকে বাদ দিয়ে সেক্সকে কখনো কল্পনা করা যায় না। নারীর সাধারণত দুই ধরনের। যেমন- নারীর শরীর এবং পুরুষের শরীর। তাই সেক্সকে জানতে হলে প্রথমে শরীরকে জানতে হবে,জানতে হবে যৌন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বৈচিত্র্যতা।
পুরুষের যৌন অঙ্গ প্রত্যঙ্গসমূহ
পুরুষের সাধারণ যৌন অঙ্গ বা মেল সেক্সুয়াল অর্গাজম হল অন্ডকোষ যা কিনা এক প্রকার অন্ডথলির ভেতরে অবস্থান করে। আর এইঅন্ডকোষে শুক্র তৈরি হয়। আর এ শুক্র থেকেই মানব শিশু জন্ম লাভ করে। যৌনমিলনের সময় পুরুষাঙ্গবা পেনিসের ছিদ্র পথ দিয়েশুক্র নির্গত হয়। পুরুষের জননযন্ত্রের প্রধান অংশটি হচ্ছে দুটি যথা টেস্টিস বা অন্ডকোষ এবং পুরুষাঙ্গ বা পেনিস। এছাড়া এগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য যৌন অংশগুলো হচ্ছে- এপিডিডিমিস, প্রস্টেটগ্ল্যান্ড, শুক্রবাহী নালী, শুক্রথলি (সেমিনাল ভেসিকল), ভাসডিফারেন্স, ব্লাডার, কপারগ্ল্যান্ড, পায়ুপথ বা মলদ্বার।
পুরুষাঙ্গের গঠন ও কর্মকান্ড (পেনিস ফাংশন)
এটি পুরুষের যৌনতার প্রধান অঙ্গ। এই অঙ্গের সাহায্যেই পুরুষরা অবর্ণনীয় তীব্র যৌনসুখ লাভ করে থাকেন। এটি নারীদের যোনিতে প্রবেশ করে প্রচুর সেক্স প্লেজার সৃষ্টি করে। সেই সাথে আরেকটি নতুন জীবন তৈরির উপাদান বীর্য ছড়িয়ে দেয়।
এই পুরুষাঙ্গটি অন্ডকোষের সামনে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এটি দেখতে প্রায় একটা বুড়ো আঙ্গুলের মত। এই পেনিসটি হচ্ছে পুরুষের প্রস্রাব (ইউরিনেশন) করার এবং নারীসহবাস করার একমাত্র এবং অভিন্ন চমৎকার যন্ত্র। লিঙ্গের যে অংশটি দেহের সাথে অর্থাৎ বস্তিদেশে বা পেলভিসে যুক্ত থাকে তাকে বলে লিঙ্গ মূল বা গোড়া। এর পর থেকে লিঙ্গ গ্রীবার কাছে গোড়া খাঁজের মত অংশ পর্যন্তকে বলে লিঙ্গ দেহ। বাকি অংশটুকু অর্থাৎ সেই দেহের ডগায় বা লিঙ্গের অগ্রভাগে টুপির মত দেখতে যে লালচে বর্ণের কোমল মাংসপিন্ডের অংশটি দেখা যায় তাকে বলে লিঙ্গমণি বালিঙ্গমন্ডু বা গ্ল্যান্স। এই লিঙ্গ মুন্ডের সামনের দিকটা ঈষৎ সরু হয়ে এসেছে এবং এরমুখের কাছেই থাকে মূত্রনালীর মুখ। পুরুষাঙ্গের এই অগ্রভাগ বা অংশটি খুবই ‘সপর্শকাতর’ তথা অত্যন্ত যৌন অনুভূতিশীল অংশ।
আমাদের পুরুষাঙ্গটি ‘স্পঞ্জের মত’ এক প্রকার নরম সংকোচনশীল ও সম্প্রসারণশীল পেশিতন্তু বা উত্থানশীল তন্ত বা ইরেক্টাল টিস্যু দিয়ে গঠিত।এর মধ্যে অসংখ্য রক্তবাহী নালী ও নার্ভের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্বাভাবিক অবস্থায় লিঙ্গবা পুরুষাঙ্গটি নরম ও ছোটথাকে কিন্তু সেক্স উত্তেজনার সময় এইসব রক্তনালীতে প্রচুর রক্ত এসে পূর্ণ হয়ে যায় ফলে এটি আকারে বৃদ্ধি পেয়ে লম্বা, মোটা-তাজা ও দৃঢ় হয় আর একেই বলে ইরেকশন অফপেনিস বা পুরুষাঙ্গের উত্থান। কারো কারো লিঙ্গ উত্তেজিত হলে শক্ত হয়ে ডানে বা বামে বেঁকে যায়- এটা স্বাভাবিক এটা কোনো রোগ নয়। একজন পূর্ণ বয়স্কলোকের পুরুষাঙ্গের আকার স্বাভাবিক ও সুপ্ত অবস্থায় ৩-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা থাকে এবং এর পরিধি বা ঘের প্রায় ২-৩ ইঞ্চির মত চওড়া থাকে।

আরো
পড়তে থাকুন সেক্স বিজ্ঞান ও ডাঃ কিনসে ২

কোন মন্তব্য নেই :