নববর্ষে শ্লীলতাহানির ঘটনা সব পৈশাচিকতাকে হার মানিয়েছে

কোন মন্তব্য নেই
’৭১ সালে মা-বোনেরা যেভাবে নিপীড়িত-লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। ‘নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা সব পৈশাচিকতাকে হার মানিয়েছে।
অপরদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করছেন। পেট্রলবোমা নিক্ষেপের শিকার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যদের কান্না এক। এই দুটিকে আলাদাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, অপরটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
গতকাল মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অধিকার আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনীতে এসব কথা বলেন বক্তারা। অধিকারের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরিদা আখতারের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সেক্রেটারি আদিলুর রহমান খানের সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্যারোলিন ট্রাউটইউলার। সম্মেলনে দেশের ৩৪ জেলা থেকে ৬০ জন মানবাধিকার রক্ষাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে বাংলা নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে দুর্র্বৃত্তরা নারীদের শ্লীলতাহানি করার প্রতিবাদে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে হোপ ফাউন্ডেশনের বাইরে মানববন্ধন ও একটি   সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
কবি ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মূলমন্ত্র ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাই যেখানে সব মানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে, সুরক্ষা করা হবে।
সাংবাদিক ও কলাম লেখক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সময় নারীদের শ্লীলতাহানির যে ঘটনা ঘটলো, এখনও পর্যন্ত দৃশ্যতভাবে কাউকে তার কার্যকরী প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। ‘৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মা-বোনেরা যেভাবে নিপীড়িত-লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রক্টর ও অধ্যাপকরা এই ঘটনার সাফাই গাইছেন।
তিনি আরও বলেন, পেট্রলবোমা নিক্ষেপের শিকার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যদের কান্না এক; সবার চোখের জলই নোনা। এই দুটিকে আলাদাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। একটি হচ্ছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস, অপরটি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন ক্যারোলিন ট্রাউটইউলার সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব মানবাধিকারের সুরক্ষা করা। মানবজাতি ইতিহাসের পথপরিক্রমায় যে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার অর্জন করেছে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের স্বার্থেই রক্ষা করতে হবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যারা সংবিধান ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করেন তাদেরও দায়িত্ব নাগরিকদের জানমাল রক্ষা করা। অথচ এদেশে তার ভিন্ন চিত্র।
তিনি বলেন, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে ভাড়াটিয়া বাহিনী হিসেবে কাজ করছেন, যা বিদ্যমান রাষ্ট্রের জন্য এক গভীর উদ্বেগের বিষয়।

কোন মন্তব্য নেই :