আমতলীতে যুবলীগ নেতার নির্যাতনে বাড়ি ছাড়া ১৪ পরিবার

কোন মন্তব্য নেই
যুবলীগ নেতার নির্যাতনে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়েছে আমতলীর ১৪টি হিন্দু পরিবার। তালতলী উপজেলার পঞ্চাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের চন্দনতলা গ্রাম এখন শুধুই বিরানভূমি। যেখানে পড়ে আছে শূন্যভিটে। ঘর নেই, গাছ নেই, পুকুরে কোন মাছ নেই। তবে তুলসীগাছ, পূজা দেয়া ফুলের গাছগুলো অবহেলা আর অনাদরে রয়েছে পড়ে। কিছুদিন আগেও সেখানে চুলায় আগুন জ্বলেছিল। ছিল মানুষের বসবাস। এখন সেখানে সাধারণ মানুষ যেতেও ভয় পান। শিশুরা আঁতকে ওঠে ভয়ে।ভিটেবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া পরিবারগুলোর মধ্যে রয়েছেন- কার্তিক রায় (৬০), হরেণ রায় (৫৫), যাদব সরকার (৪২), মাধব সরকার (৪৫), ধীরেন সরকার (৭৫), সুভাষ সরকার (৪৪), রমেশ সরকার (৩২), রিপন রায় (৪০), নীলা রানী (৫০), রণজিৎ সরকার (৬০), শ্যামল (৪১), সুমন্ত (৪২), বাবুল (৩৫) ও জিতেন রায়ের (৬৫) পরিবার। জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ সন্ত্রাসী জাকির হোসেন সরদারের (৪০) ও তার সহযোগী আবদুর রশিদ আকন (৪২) হিন্দু পরিবারগুলোর প্রতি অব্যাহত সন্ত্রাস চালিয়ে আসছিল। আবদুর রশিদ আকন স্থানীয় মুনসুর আলী আকনের ছেলে। জাকির হোসেন একই এলাাকর হাকিম আলী সরদারের ছেলে। তাদের জন্য উঠতি বয়সী মেয়ে ও নারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সম্প্রতি রশিদ আকন রাস্তা আটকে এক কিশোরীকে যৌন নিপীড়ন করেছে। নারী-শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেও জাকির সরদারের চাপে মামলাটি তুলে নিতে হয়েছে। ওই সব পরিবার জানায়, আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে বলেছি, তারাও আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি। এমনকি সহযোগিতার মানসিকতা পর্যন্ত পোষণ করেননি তারা। এক কথায় তারা বলতে চান, কারও প্রতিই আস্থা নেই। তাই ঘর বিক্রি করে প্রাণ নিয়ে পালিয়েছি। তাদের বাড়িটি বিলের মধ্যে হওয়ায় প্রথমে এলাকার মানুষও বিষয়টি টের পাননি। আর যারাও জানতে পেরেছেন, তারাও সন্ত্রাসীদের ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানাননি। বাড়িঘর ছেড়ে পালানো হিন্দু পরিবারগুলো দিয়েছে গা-ঢাকা। তাদের খুঁজে বের করা গেলেও মৃত্যু-আতঙ্কে কারও বিরুদ্ধে মুখ খুলতে চান না। ভুক্তভোগী যাদব সরকার বলেন, স্থানীয় মুনসুর আকনের ছেলে আ. রশিদ আকন প্রায়ই তাদের কাছে চাঁদা দাবি করতো। না দিতে পারলে ভয়ভীতি দেখাতো। তার স্কুলপড়ুয়া মেয়েকেও সে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করতো। তিনি আরও বলেন, রশিদের রক্তচক্ষুর ভয় উপেক্ষা করে স্থানীয়ভাবে বিচার চেয়েও না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছিলাম। মামলায় রশিদ জেলও খেটেছে। জেল থেকে ফিরে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে বিচারের আশ্বাসে মামলা তুলে নেয়া হয়। কিন্তু বিচার পাওয়া তো দূরের কথা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রশিদ হিন্দু পরিবারগুলোর ওপর বিভিন্নভাবে অত্যাচার শুরু করে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, নির্যাতনের মুখে ২০১৩ সালের শুরুর দিকে প্রথম তিনটি পরিবার গ্রাম ছেড়ে বরগুনা শহরে আশ্রয় নেয়। একই কারণে ২০১৪ সালের শুরুর দিকে আরও দুটি পরিবার শহরে আশ্রয় নেয়। সর্বশেষ ১৩ই মার্চ মগপাড়া গ্রাম থেকে নয়টি পরিবার একযোগে ভিটেমাটি ত্যাগ করে। এবারে বাড়িঘর ছেড়ে চলে আসা পরিবারগুলোর মধ্যে ইতি রানী (১৪) জানিয়েছে, বগীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। তার লেখাপড়া এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, একের পর এক অন্যায়ের বিচার না পেয়ে পরিবারগুলোর সদস্যদের বুক ফেটেছে তবু মুখ ফোটেনি। অবশেষে অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছে পরিবারগুলো। ভয়ে-আতঙ্কে মামলা পর্যন্ত করতে তারা সাহস পাননি। গত ২৩শে মার্চ বিষয়টি জানাজানি হয়। এ নিয়ে জেলার নাগরিক সমাজে ব্যাপক আলোচনার ঝড় ওঠে। অবশেষে বিচারের আশ্বাস পেয়ে ওই দিন যাদব সরকার বাদী হয়ে আ. রশিদকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তালতলী থানায় মামলা করেন। ওই দিনই তালতলী থানা পুলিশ ঘটনার মূলহোতা আ. রশিদ আকনকে গ্রেপ্তার করেছে। তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বাবুল আখতার বলেন, মামলাটি গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। পঞ্চাকোড়ালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজির হোসেন কালু পাটোয়ারী বলেন, তার অত্যাচারে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ। তিনিও বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক করেছেন; কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। হিন্দু পরিবারগুলোর চলে যাওয়ার বিষয়টি কোনভাবেই মানতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, হিন্দুরা ইচ্ছা করেই এলাকা থেকে ঘরগুলো বিক্রি করে চলে গেছে। বরগুনা জেলা যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, জাকির যুবলীগ করে তবে কোন কমিটিতে তার নাম নেই। বরগুনা জেলা প্রশাসক মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, বিতাড়িত হিন্দুদের আবার বাড়িঘরে ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। দরকার হলে প্রশাসনের টাকায় আবার তাদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ। সূত্র মানব জমিন
 

কোন মন্তব্য নেই :