নবম শ্রেণীর ‘ইসলামও নৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে ভয়াবহ ইসলাম অবমাননা

কোন মন্তব্য নেই

দেবদেবীর নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত খাওয়া হালাল! নবম দশম শ্রেণীর ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ সরকারি পাঠ্য বইয়ে এমন কথাই লেখা হয়েছে। বইটির শরিয়তের উত্স অধ্যায়ে ইসলাম অবমাননার ওই ধৃষ্টতার বিষয়টি পাওয়া গেছে। ৮২ নম্বর পৃষ্ঠায় হালাল-হারাম অংশে হারাম বিষয় ও দ্রব্যের তালিকায় উল্লেখকরা হয়েছে-‘দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত হারাম ।’ বইটিতে ইসলামী শরিয়ত হালাল-হারাম’ এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে আল্লাহর সঙ্গে দেবদেবীকে সমান্তরাল (নাউজুবিল্লাহ) করে দেয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৭৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকর মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অপর কারও নামে উত্সর্গ করা হয়।’
সরকারি পাঠ্য বইয়ে ইসলামের এমন ভয়াবহ অবমাননায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী, ধর্মপ্রাণ মানুষ এবং দেশের বিশিষ্ট আলেম সমাজ। শোলাকিয়া ঈদগাহ-এর ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মসউদ বলেছেন,বইটিতে যদি ইচ্ছাকৃত ওই তথ্য দেয়া হয়, তাহলে তাদের ক্ষমা নেই। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতিমোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেছেন, ইসলামবিদ্বেষী সরকার এমন ধৃষ্টতা দেখিয়ে সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।
জানুয়ারিতে নবম-দশম শ্রেণীর ২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে নতুনওই বইটি তুলে দেয়া হয়। সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বইটি প্রকাশ করে।
১৭৮ পৃষ্ঠার বইটিতে মোট পাঁচটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় ‘আকাইদ ও নৈতিক জীবন’, দ্বিতীয় অধ্যায় ‘শরিয়তের উত্স’, তৃতীয় অধ্যায় ‘ইবাদত’, চতুর্থ অধ্যায় ‘আখলাক’ এবং পঞ্চম অধ্যায় ‘আদর্শ জীবনচরিত’।এরমধ্যে ৮১ ও ৮২ পৃষ্ঠায় শরিয়তের উত্স অধ্যায়ের পাঠ-২৪ (শরিয়তের আহকাম সংক্রান্ত পরিভাষা) ‘হালাল-হারাম’ বিষটি আলোচনা করা হয়েছে। ৮২ পৃষ্ঠায় হালাল-হারামের সংজ্ঞাও দেয়া হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে যেহেতু হারাম সীমিত সংখ্যক, সেহেতু নিম্নে বর্তমান সমাজে প্রচলিত কতিপয় হারাম বিষয় ও দ্রব্যের তালিকা উল্লেখ করা হলো- ১. মৃত জীবজন্তু (তবে মৃত মাছ খাওয়া হারামনয়), ২. রক্ত পান করা (তবে হালাল জন্তুর গোশত লেগে থাকা রক্ত হারাম নয়), ৩. মানুষের গোশত খাওয়া, ৪. শূকরের গোশত খাওয়া, ৫. দেবদেবীর বা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের নামে উত্সর্গীকৃত পশুর গোশত খাওয়া।
এরকম ১৭ নম্বর তালিকা পর্যন্ত হারাম বিভিন্ন বিষয় ও দ্রব্যের তালিকা দেয়া হয়েছে। বইটিতে ইসলামী শরিয়তবিরোধী দেবদেবীর সঙ্গে কেন আল্লাহর সমান্তরাল তুলনা করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবি, বইটির লেখক ও সম্পাদকের দায়ী করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও আলেম সমাজ।
বইটির প্রচ্ছদের পরের পৃষ্ঠায় এর লেখক ও সম্পাদকের নাম দেয়া আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক বইটি রচনা করেন। এরা হলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগেরশিক্ষক মুহাম্মদ আবদুল মালেক, ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ ও আরবি বিভাগের ড. মোহাম্মদ ইউছুফ। বইটি সম্পাদনা করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। বইয়ের প্রসঙ্গ-কথা লিখেছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তফা কালামউদ্দিন। এরা সবাই সরকার সমর্থক শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।
ইসলামী শরিয়তবিরোধী দেবদেবীর সঙ্গে কেন আল্লাহর সমান্তরাল তুলনাকরেছেন এ বিষয়ে লেখকদের একজন ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটি কাঙ্ক্ষিত নয় এবং অনিচ্ছাকৃত ভুল। তাড়াহুড়া করে বইটি ছাপানো হওয়ায় এমনটি হয়েছে। আগামী জানুয়ারিতেনতুন বইয়ে ভুল সংশোধন করাহবে।
বিষয়টিতে বইটির সম্পাদকের দায় বর্তায় কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বাক্যটি জটিল তবে ভুল নয়। এ বিষয়ে এনসিটিবির দায়িত্বহীনতা রয়েছে কিনা তা জানতে গতকাল প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মোস্তফা কালামউদ্দিনের সঙ্গে দুপুর-থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বারবারই ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা বলেননি।
আলেমদের প্রতিক্রিয়া ও ক্ষোভ : এ বিষয়ে শোলাকিয়াঈদগাহ-এর ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মসউদ বলেন, ইসলামে দেবদেবীর কোনো অবস্থান নেই। হালাল-হারাম বিষয়ে আল্লাহর নামেই পশু জবাই ও গোশত খাওয়া হালাল হবে। তিনি বলেন, পাঠ্য বইতে এরকম লিখে থাকলে তা দেখতে হবে।যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও বই রচনাকারিরা ভুল করে তা হলে সংশোধন করতে বলব। আর ইচ্ছাকৃতভাবে করলে কোনো ক্ষমা নেই। ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতিমুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, বর্তমান সরকার মুসলমানদের দুশমন। সরকারযে শিক্ষানীতি করেছে এর উদ্দেশ্য হলো ইসলামকে নির্মূল ও বিকৃত করা। নবম-দশম শ্রেণীর ‘ইসলাম ওনৈতিক শিক্ষা’ বইয়ে দেবদেবীর যে কথা বলা হয়েছে তা সরকারের মহাপরিল্পনারই অংশ। তিনিবলেন, হালাল-হারাম নিয়ে সূরা আল মায়িদাহ ৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-, শূকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উত্সর্গকৃত হয়, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যায়, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরাযবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শরদ্বারা বণ্টন করা হয়। এসবগোনাহর কাজ। মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ইসলামবিদ্বেষী এ সরকার সরাসরি আল্লাহর বিরুদ্ধেযুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর আমরা সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব অধ্যাপক মাওলানা সালাউদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি পরে এ বিষয়ে কথা বলবেন বলে জানান।


 আমার দেশ পত্রিকা থেকে।

আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ। এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :