ইসলামে পর্দার বিধান

কোন মন্তব্য নেই
আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করছেন, ‘তোমরা নারীদের কাছ থেকে যখন কিছু চাইবে, তখন হিজাবের আড়াল থেকে চাইবে, এটা তোমাদের ও তাদের মনের অধিকতর পবিত্রতার জন্য খুবই উপযোগী’ (সূরা আল আহজাব : ৫৩). উল্লিখিত আয়াতে ‘হিজাব’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পর্দা বা আচ্ছাদন বা আবৃতকরণ বা ঢেকে নেয়া। নারী-পুরুষের মধ্যে গায়ের মাহরিমদের জন্য পর্দা করা, এটা আল্লাহ তায়ালার হুকুম বা আইন। এ হুকুম বা আইন মানা সব প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারীর ওপর ফরজ। যাদের বিয়ে করা হারাম তাদেরকে মাহরিম বলে। আর তাদের ব্যতীত সবাই গায়ের মাহরিম। গায়ের মাহরিমদের মধ্যে পর্দা বাধ্যতামূলক বা ফরজ করা হয়েছে, এটা আল্লাহর ইবাদত।

আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘আমি জিন ও মানুষ সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদতের জন্য’(সূরা আজ জারিয়াত : ৫৬). আরো নির্দেশ হচ্ছে, ‘হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করো, যিনি তোমাদের ও পূর্ববর্তীদের সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আল বাকারা : ২১). আল্লাহ তায়ালার প্রতিটা হুকুম মেনে চলাই হচ্ছে ইবাদত।

ইবাদতের েেত্র আমাদের কিছু স্বেচ্ছাচারিতা আছে। আমরা কখনো সালাত আদায় করি আবার ছেড়ে দেই, সিয়াম পালন করি আবার ছেড়ে দেই, হজ ফরজ হলেও বিভিন্ন অজুহাতে হজ পালন করি না, জাকাতদাতা হলেও সঠিকভাবে জাকাত পরিশোধ করি না। ঈমানের দাবি পূরণ করা না করা বা ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা হচ্ছে, ‘যারা একবার ঈমান আনল আবার ছেড়ে দিলো বা কুফরি করল, আবার ঈমানের দাবি পূরণ করল আবার ছেড়ে দিলো বা কুফরি করল, এমনিভাবে তারা দিনে দিনে কুফরিকেই বাড়িয়ে দিলো, এমনি করে ঈমান নিয়ে তামাশা করার এ লোকদের আল্লাহ তায়ালা কখনো মা করবেন না, আর তিনি এসব ব্যক্তিকে সঠিক পথও দেখাবেন না’ (সূরা আন নিসা : ১৩৭)।

ঈমানের পর সালাত, সিয়াম, হজ ও জাকাতের মতো প্রাপ্তবয়স্ক নর-নারী নির্বিশেষে সবাই পর্দা পালন করাও গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদত। আল্লাহতায়ালা নির্দেশ করেছেন, ‘আর তোমরা ঘরে অবস্থান করবে, পূর্বেকার জাহেলিয়াতের জমানার নারীদের মতো নিজেদের সৌন্দর্য প্রদর্শনী করে বেড়াবে না, সালাত কায়েম করবে, জাকাত আদায় করবে, আল্লাহ ও তার রাসূল সা:-এর আনুগত্য করবে, আল্লাহতায়ালা মূলত এসব কিছুর মাধ্যমে নবী পরিবার তথা তোমাদের মাঝ থেকে সব ধরনের অপবিত্রতা দূর করতে চান’ (সূরা আল আহজাব : ৩৩). আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ হচ্ছে, ‘হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ, এবং মুমিন মহিলাদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের ওপর নিজেদের চাদরের আঁচল ঝুলিয়ে দেয়, এটা তাদের জন্য ভালো নিয়ম ও রীতি, যেন তাদের চিনতে পারা যায় ও তাদের উত্ত্যক্ত করা না হয়’ (সূরা আল আহজাব : ৫৯)।

রাসূল সা: বলেছেন, ‘মানুষ তার সমগ্র ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে জিনা করে। দেখা হচ্ছে চোখের জিনা, ফুঁসলানো কণ্ঠের জিনা, তৃপ্তির সাথে কথা শোনা কানের জিনা, হাত দিয়ে স্পর্শ করা হাতের জিনা, কোনো অবৈধ উদ্দেশ্যে পথ চলা পায়ের জিনা, এভাবে ব্যভিচারের যাবতীয় ভূমিকা যখন পুরোপুরি পালিত হয়, তখন লজ্জাস্থান তার পূর্ণতা দান করে অথবা পূর্ণতা দান থেকে বিরত থাকে’ (বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদ)।

পর্দা নারী-পুরুষ সবার জন্য : ‘(হে! রাসূল সা:) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানসমূহের হেফাজত করে, এটাই হচ্ছে তাদের জন্য উত্তম পন্থা, কেননা তারা তাদের চোখ ও লজ্জাস্থান দিয়ে যা করে আল্লাহতায়ালা সে সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত রয়েছেন’ (সূরা আন নূর : ৩০). রাসূল সা: হজরত আলী রা:কে নির্দেশ করছিলেন, ‘হে আলী! নারীদের প্রতি প্রথম দৃষ্টির পর দ্বিতীয় দৃষ্টি নিপে করো না, কেননা প্রথম দৃষ্টি মার যোগ্য দ্বিতীয়টি নয়। হজরত জাবের রা: জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা:! হঠাৎ যদি দৃষ্টি পড়ে তা হলে কী করব? রাসূল সা: বললেন, তাৎণিক দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো’ (আবু দাউদ)।

নারীদের ব্যাপারে নির্দেশ হচ্ছে, ‘ (হে! রাসূল সা:) আপনি ঈমাদার নারীদের বলে দিন তারা যেন তাদের দৃষ্টি নিম্নগামী রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থানসমূহ হেফাজত করে, তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে, তবে তাদের শরীরের যে অংশ এমনিই খোলা থাকে তার কথা আলাদা, তারা যেন তাদের বদেশ তাদের মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে, তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর আগের ঘরের ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, তাদের সাথে মেলামেশার মহিলা, নিজেদের অধিকারভুক্ত সেবিকা বা দাসী, নিজেদের অধীনস্থ এমন পুরুষ যাদের মহিলাদের কাছ থেকে কোনো কিছু (যৌন) কামনা করার নেই কিংবা এমন শিশু যারা এখনো মহিলাদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে কিছুই জানে না, এসব মানুষ ছাড়া তারা যেন অন্য কারো সামনে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, চলার সময় জমিনের ওপর তারা যেন এমনভাবে নিজেদের পা না রাখে, যে সৌন্দর্য তারা গোপন করে রেখেছিল তা তাদের পায়ের আওয়াজে লোকদের কাছে জানাজানি হয়ে যায়’ (সূরা আন নূর : ৩১)।

রাসূল সা: তার স্ত্রী হজরত উম্মে সালমা ও মায়মুনা রা:কে অন্ধ সাহাবা হজরত ইম্মে মাকতুম রা:-এর সাথে পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন’ (বুখারি ও তিরমিজি)।

মাহরিম সম্পর্কে নির্দেশ : ‘নারীদের মধ্য থেকে যাদের তোমাদের পিতা, পিতামহ বিয়ে করেছে (সৎ মা ও দাদী), তোমরা কখনো তাদের বিয়ে করো না, হ্যাঁ এ নির্দেশ আসার আগে যা হয়ে গেছে তা তো হয়েই গেছে, এটি আসলেই ছিল একটি অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট আচরণ’। ‘বিয়ের ব্যাপারে তোমাদের জন্য হারাম করে দেয়া হয়েছে তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, আরো হারাম করা হয়েছে সেসব মা যারা তোমাদেরকে বুকের দুধ খাইয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছ তাদের আগের স্বামীর ঔরসজাত মেয়েদেরকেও হারাম করা হয়েছে, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে রয়েছে, অবশ্য যেসব স্ত্রীর সাথে বিয়ের পর তোমরা সহবাস করোনি, তাহলে তাদের আগের স্বামীর ঔরসজাত মেয়েদের বিয়ে করতে দোষের কিছু নেই, তোমাদের নিজেদের ঔরসজাত ছেলেদের স্ত্রীদেরও আর এক সাথে দুই বোনকে হারাম করা হয়েছে’ (সূরা আন নিসা : ২২-২৩)।

সালাত, সিয়াম, হজ ও জাকাত যেমন ফরজ পর্দাও তেমন ফরজ। সালাত ব্যক্তিকে পবিত্র করে, সিয়াম ব্যক্তিগত তাকওয়া বৃদ্ধি করে, হজ ব্যক্তির আত্মার প্রশান্তি আনে, জাকাত ব্যক্তির মালসম্পদ পবিত্র ও বৃদ্ধি করে। জাকাত আদায় না করলে ধনীর সম্পদে গরিবের যে হক আছে, তা নষ্ট বা আত্মসাৎ করা হয়। কিন্তু পর্দা পালন না করলে ব্যক্তিগত তির সাথে সাথে সমাজও তিগ্রস্ত হয়।

আল্লাহ তায়ালার হুকুম হচ্ছে, পুরুষরা তাদের দৃষ্টি অবনত রাখবে, নারীরা তাদের ঘরে অবস্থান করবে, বের হলেও দৃষ্টি অবনত রাখবে, আপাদমস্তক চাদর দিয়ে ঢেকে নেবে। একটি মাত্র বেপর্দা যুবতী হাজার হাজার পুরুষকে জাহান্নামি বানানোর জন্য যথেষ্ট। হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, রাসূল সা: বলেছেন, ‘শয়তানের কাজ হচ্ছে মহিলাদের পুরুষের সামনে সুশ্রী করে উপস্থাপন করা’। রাসূল সা: আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অপরিচিত নারীর প্রতি যৌন লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাবে, কিয়ামতের দিন তার চোখে উত্তপ্ত গলিত লোহা ঢেলে দেয়া হবে’ (ফাতহুল কাদির). রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে নারী আতর বা সুগন্ধি দ্রব্যাদি ব্যবহার করে লোকদের মধ্যে যায় সে একটি ভ্রষ্টা নারী’।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনি আদম, আমি তোমাদের জন্য পোশাকের বিধান পাঠিয়েছি, যাতে করে এর দ্বারা তোমরা তোমাদের গোপন অঙ্গ বা লজ্জাস্থানসমূহ ঢেকে রাখতে পার এবং নিজেদের সৌন্দর্যও ফুটিয়ে তুলতে পার, তবে আসল পোশাক হচ্ছে তাকওয়ার, আর এটাই হচ্ছে উত্তম পোশাক এবং এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহেরও একটি’ (সূরা আল আরাফ : ২৬)।

অতএব ঈমানদারদের উচিত আল্লাহ তায়ালাকে অভিভাবক মেনে ও রাসূল সা:-এর সুন্নাহর অনুসরণ করে, আল্লাহ প্রদত্ত রাসূল সা: প্রদর্শিত পথে চলা। কুরআন ও হাদিসের আলোকে সালাত, সিয়াম, হজ ও জাকাত যেমন ফরজ, পর্দা বা হিজাবও তেমনি ফরজ। আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ করছেন, ‘তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর কথা মেনে চলো, আশা করা যায় তোমাদের ওপর দয়া করা হবে’ (সূরা আলে ইমরান : ৩২)।


শেয়ার করে আপনি ও হোন ইসলাম প্রচারক
শেয়ার করতে এখানে ক্লিক  করুন ।

 এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :