সেক্স এনাটমি-- আরিফ মাহমুদ সাহাবুল

কোন মন্তব্য নেই
সেক্স সাইন্স (যৌনবিজ্ঞান): সেক্স অর্থ যৌনতা বা যৌন উত্তেজনা। এই সেক্স শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ ‘সেক্সাস’ থেকে। পৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যার কোনো সেক্সুয়াল অনুভূতি নেই। প্রায় প্রতিটি মানুষই যৌন উত্তেজনা, যৌন মনোভাব, যৌন চিন্তা ও কামনা-কল্পনা করতে পছন্দ করে। মানুষের জীবনের সাথে সেক্স ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে, মিশে আছে রক্তের প্রতিটি বিন্দুর সাথে ‘জেনেটিক কোডের ধারাবাহিকতায়’। জেনেটিক হল প্রজনন বা জন্ম সৃষ্টি সংক্রান্ত ব্যাপার স্যাপার।
সেক্স থেকেই উদ্ভব হয়েছে মডার্ন সেক্সোলোজি বা যৌন বিজ্ঞান। মনে হতে পারে সেক্স এতো শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব মানুষই জানে। হ্যাঁ, জানে ঠিকই কিন্তু্তু পুরোপুরি জানে না। জানে না এর সুশৃখলিত কারুকার্যময় বিজ্ঞান ভিত্তিক নিয়ম কানুন। তাইতো তৈরি হয়েছে যৌন বিজ্ঞানের। আর যে জিনিসটায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগে সে জিনিস হয়ে ওঠে আরো সুচারু আরো রুচিসম্পন্ন এবং আরো সহজসাধ্য গ্রহণীয়। সেক্সকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশেস্নষণ করতে সবসময়ই মানুষ এক প্রকার অহেতুক লজ্জাবোধ করে এসেছে। সমাজ, রাষ্টনীতি সবাই কোমর বেঁধে এক সঙ্গে যৌনবোধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। সেন্ট ভিক্টরের ধর্ম মন্দিরে ধর্ম যাজকগণের যৌনবোধ সংযত করার জন্য বছরে প্রায় পাঁচবার তাদের দেহের রক্ত বের করে নেয়া হত। দুনিয়া জুড়ে কোনো যুগে কোনো দেশেই এরকম ব্যবস্থার কোনো কমতি ছিল না। কিন্তু যৌন জোয়ারকে কে আটকাতে পারে। কোনো মানুষেরই যৌনবোধের তীব্রতা তাতে কিছুমাত্র কমেনি। বরং দিনের পর দিনই এই যৌন অনুভূতি মানুষের মাঝে বাড়তেই থেকেছে। যা এখনও পর্যন্ত চলছে, চলবে পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত বা কেয়ামত হওয়ার আগ মুহর্ত পর্যন্ত।
সেক্সুয়াল অনুভূতি বা যৌনতা কি? সহজ কথায় বলা যায় যে, এক লিঙ্গের প্রাণী বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীর দিকে যে দৈহিক এবং মানসিক আকর্ষণবোধ করে তাই হল সেক্সুয়াল অনুভূতি বা যৌনতা। যৌনবোধ আছে বলেই মানুষ এত সুন্দর। সুন্দর তার বাহ্যিক প্রকাশময়তা। যৌনতা বা সেক্সকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা ভারতীয় পন্ডিতগণও উপলব্ধি করেছিলেন। গ্রীক ও মিশরীয় পন্ডিতগণ ও প্রসঙ্গক্রমে যৌনাঙ্গের পরিচয় ও সন্তান জন্মের বিষয় উলেস্নখ করেছেন। তবে সুশৃখল পদ্ধিতিতে যৌন তত্ত্বের বিশেস্নষণের অনুপ্রেরণা সম্ভবত ভারতীয় পন্ডিতগণই দিয়েছিলেন। খ্রীষ্টীয় প্রথম দিক দ্বিতীয় শতাব্দীতে বাৎসায়ন নামক এক পন্ডিত ‘কামসত্র’ নামক একখানি সুন্দর পুস্তক রচনা করেছিলেন। ব্যাৎসায়নের পূর্বেও প্রায় দশজন পন্ডিত নারী-পুরুষের সেক্স বৃত্তিকে অধ্যয়নের বিষয়ীভূত করার উপকরণ রেখে গিয়েছিলেন, ব্যাৎস্যায়নের কামসূত্র সেই প্রাচীন হলেও তাতে বিষয়টি এমন ধারাবাহিক প্রণালীতে আলোচিত হয়েছে যে, তা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। সেসব আলোচনার মাঝেও যে অন্তর্দৃষ্টি দেখতে পাওয়া যায় তা কিছুটা হলেও আধুনিক বৈজ্ঞানিকের মত। তবে পুরাতন পুঁথি হিসেবে এটি যৌনতত্ত্ববিদদের কাছে আদরণীয় হলেও সাধারণ পাঠক পাঠিকা এগুলো হতে তেমন কোনো বিশেষ উপকার লাভ করতে পারবেন না। কারণ এসব পুস্তক প্রণয়নের সময়ে শরীর বিদ্যা বা এনাটমি অপূর্ণাঙ্গ ছিল এবং সেসব কারণে এসব পুস্তকগুলোতে অন্ধবিশ্বাস ও কল্পনার প্রভাবই বেশি রয়ে গেছে। ব্যাৎসায়নের কামসূত্র ছাড়াও সংস্কৃত সাহিত্যে আরও কিছু যৌনশাস্ত্রের পুস্তক পাওয়া যায় এদের মধ্যে কোক্কক পন্ডিতের কামশাস্ত্রই প্রধান।
কোক্কক পন্ডিত বেনুদত্ত নামক এক রাজার মন সন্তুষ্টির জন্য ‘কোক শাস্ত্র’ বা রতি রহস্য নামক প্রস্তক প্রণয়ন করেছিলেন। এই কোক্কক পন্ডিতের উক্ত পুস্তক তদানীন্তন ও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে রতি শাস্ত্র বা সেক্সোলোজি অবশেষে শুধু মাত্র কোক শাস্ত্র নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিল। সংস্কৃত ভাষায় রতি শাস্ত্র বা সেক্স বিষয়ক শেষ পুস্তক কল্যাণ মলল নামক এক পন্ডিতের রচিত আনন্দ রঙ্গ। এই পুস্তকটি খ্রীষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দিতে লোদী পরিবারের কোনো এক রাজার অনুরোধে পন্ডিত কল্যাণ মলল কর্তৃক রচিত হয়েছিল। এছাড়াও ঋষি নাগার্জুন তার প্রিয় শিষ্যকে উপদেশ দেয়ার ছলে সিদ্ধ বিনোদন নামক এক প্রকার যৌন শাস্ত্র প্রণয়ন করে গেছেন বলে বর্ণিত আছে।
রোমীয় সম্রাটগণও সেক্স বা যৌনতা বিষয়ে যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছিলেন। সেজন্য ক্যাটুলাস, টিবুলাস, পেট্রোনিয়াস, মার্শাল, জুভেনাল প্রভৃতি বহু কবি ও পন্ডিতরা তাদের লেখায়, কবিতায় রস বচনীয় এবং প্রবন্ধে সেক্স বা যৌনতা বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন। ইউরোপের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড প্রথম এবং পরে হ্যাভলক এলিস প্রভৃতি বিজ্ঞানীরা সেক্সোলোজিস্ট বা যৌন বিজ্ঞান সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ গবেষণাসহ বিশ্লেষণ করেছেন।
যৌন পথ প্রদর্শক ফ্রয়েডঃ ইউরোপের ভিয়েনা শহরের বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসক ফ্রয়েডই প্রথম আবিষকার করেন যে, মানুষের শরীরের মত মনেরও রোগ হয়। সম্ভবত তিনিই সর্ব প্রথম গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের মনে প্রতিনিয়ত যে সব চিন্তা-ভাবনা, ইচ্ছা-কামনা ও অনিচ্ছার সৃষ্টি হচ্ছে তারও একটা কারণ রয়েছে। আর যা কিনা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দ্বারাই প্রমাণ করা সম্ভব। আর এই মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা-ভাবনার পেছনে রয়েছে নারী-পুরুষের যৌন জীবনের প্রেরণা। ফ্রয়েডই প্রথম যিনি মানুষের বিচিত্র সব মানসিকতার পূর্ণ বিশ্লেষণ করে সেই প্রাচীন চিরাচরিত ধারণাটা বদলে দিয়েছেন। বিংশ শতাব্দির চিন্তার জগতে তার এই অবদান মানব সমাজে যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। যৌন মনস্তত্ত্ব (সেক্সুয়াল সাইকোলজি) এবং মনোসমীক্ষণ বা সাইকো এনালাইসিসের শুরু বিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড থেকেই। আর সেই কারণে সারা বিশ্বের বিদগ্ধ মানুষ জনের বিচারে যৌন মনো বিজ্ঞানে ফ্রয়েডের স্থান সবার আগে। ফ্রয়েডের মতে কামভাবটা নারী-পুরুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি (ন্যাচারাল টেনডেন্সি) এবং এর অনুপস্থিতি ঘটলে কোনো নারী কিংবা পুরুষ স্বয়ংসম্পর্ণ হতে পারে না। সিগমন্ড ফ্রয়েড একাধারে যৌন মনোবিজ্ঞানের প্রথম বৈজ্ঞানিক, তারপর প্রথম চিকিৎসক এবং প্রথম যৌন পথ প্রদর্শক। তার অবদান চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভুলবার নয়। তার রচিত ‘Three contributions to the theory of sex’ নামক গবেষণা ধর্মী বইটি মেডিকেল বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
যৌন বিজ্ঞান ও হ্যাভলক এলিসঃ শরীর বিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের দিক থেকে যৌন শাস্ত্রের সক্ষ্ম গবেষণার জন্য বর্তমান জগতে হ্যাভলক এলিসের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বিশ্ববিশ্রুত মনীষীর একনিষ্ঠ বিশ্লেষণ হিসেবে তার ‘Studies in the psychology of sex’ নামক সুবৃহৎ ও তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ্থটি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। সেক্স লাইফ সম্পর্কে তিনি বিজ্ঞানসমমতভাবে রীতিমতো খোলামেলা আলোচনা করেছেন বলেই তিনি পথিকৃৎ হয়ে আছেন আজও। যৌন মনোদর্শনের উপর তার লেখার সম্ভার প্রচুর সমৃদ্ধ। সারা বিশ্বে যেসব বইগুলো আজও সবার কাছে সমাদৃত। জীবনের প্রায় প্রতিটি গ্রন্থ্থই তার অনন্য হয়ে আছে। একথা অনস্বীকার্য যে, সত্যিই এলিস তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পেরেছিলেন। সেকালের অন্ধ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন বিষয়গুলোর ওপর বর্তমান বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তিনি এমন স্বচ্ছভাবে বিশ্লেষণ করেছেন যা সবার কাছে গ্রহণীয় হয়ে আছে।
বিজ্ঞানী এলিসের কাছে কোনো সেক্সুয়াল আচরণই বিকৃত নয় কিংবা নয় অস্বাভাবিক। তিনিই প্রথম মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন যৌনতা স্বাভাবিক কিংবা কোনটি অস্বাভাবিক বা বিকৃতির পর্যায়ে পড়ে তা বিচার করেছেন। মোট কথা হল, কোনো যৌন আচরণকেই তিনি বিকৃতি বা আনন্যাচারাল বলে মনে নিতে চাননি তার যৌনগ্রন্থ্থে। আর এ থেকেই বোঝা যায় যে সেক্স বিষয়ে বিজ্ঞানী এলিসের দৃষ্টিভঙ্গি কতই না খোলামেলা ছিল।
সেক্স বিজ্ঞান ও ডাঃ কিনসেঃ ডাঃ কিনসে ও তার সহকর্মীদের গবেষণার ফল যৌন সাহিত্যে এক উল্লেখযোগ্য অবদান। তার ‘Sexual behaviour in the human male’ এবং ‘Sexual behaviour in the human female’ প্রায় পনেরো বছরের তথ্যানুসন্ধানের ফলে রচিত হয়। আমেরিকায় পুরুষদের যৌনতা সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করবার প্রয়াসে ডাঃ কিনসে এবং তার সহকর্মীরা প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিনীর কাছ হতে প্রশ্নচ্ছলে তাদের বিভিন্নমুখী যৌন অভিজ্ঞতা ও অভিমতগুলো তালিকাভুক্ত করেছেন। এসব প্রশ্নগুলোকে প্রধানত দু’ভাগে ভাগ করা যায়; বিবাহপূর্ব এবং বিবাহোত্তর যৌন অভিজ্ঞতা বিষয়ে। একথা বলা যেতে পারে যে, ডাঃ কিনসের বই দুটি যৌন ব্যবহারের তথ্য সমাবেশের দিক হতে যৌন সমস্যার নতুন আলোকপাত করেছেন। তার সমস্ত মতামত অবশ্য সমানভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু্তু তথ্যানুসন্ধানে অক্লান্ত কর্মী হিসেবে এবং সেক্স সাইন্সে অমূল্য তথ্য পরিবেশক হিসেবে ডাঃ কিনসে অমর হয়ে থাকবেন।
আধুনিক সেক্স বিজ্ঞানে মাস্টার এন্ড জনসনের অবদানঃ কিনসের অনুসন্ধান ও তথ্য প্রকাশের প্রায় দশ বছর পর আরও দু’জন চিকিৎসা বিজ্ঞানী এক নতুন পদ্ধতিতে নারী-পুরুষের সেক্স লাইফ সম্পর্কে ব্যাপক গবেষণা করেন। এরা হলেন ডাঃ মাস্টার এবং মিসেস ভার্জিনিয়া জনসন। এরা দীর্ঘদিন গবেষণা করে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল ‘হিউম্যান সেক্সুয়াল রিসপন্স’ নামক গ্রন্থ্থ প্রকাশ করেছেন। এরা যে পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সে পদ্ধতি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। এই গবেষকরা প্রত্যক্ষভাবে নারী-পুরুষের যৌনমিলনকে যন্ত্রাদির সাহায্যে পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করেন। তাদের গবেষণালব্ধ বইটি আমেরিকায় দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই দুই গবেষক আমেরিকার সেন্টলুয়িস-এ রিপ্রোডাক্টিভ বায়োলজি রিসার্স ফাউন্ডেশন সংস্থায় সপ্তাহে গড়ে ৮৫ ঘন্টা করে নিয়মিতভাবে দীর্ঘ এগারো বছর যৌনতা সেক্সের ওপর গবেষণা করেন। এই দীর্ঘ গবেষণাকালে তারা নারী-পুরুষের দেহের অভ্যন্তরে যৌনমিলনকালে কি ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয় তা নথিভুক্ত করেছেন। এই বিজ্ঞানীদ্বয় নর-নারীর যৌনানুভূতি বা সেক্সুয়াল রেসপন্সকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো-
  • উত্তেজনা স্তর (একসাইটমেন্ট ফেস)
  • চরম উত্তেজনা স্তর (প্লাটু ফেস)
  • চরম তৃপ্তি বা সুখ লাভের স্তর (অর্গাজম) এবং
  • বিরতির স্তর (রিসলোশন ফেস)।
এই গবেষকরা গভীর মনোনিবেশ সহকারে যৌন বা সেক্স উত্তেজনাকালে দৈহিক প্রতিক্রিয়াগুলোকে পুখানুপুখরূপে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং করেছেন চমৎকার বিশেস্নষণ-বর্ণনা। এদের গবেষণা আধুনিক সেক্স সাইন্সকে দারুণ উন্নতি করেছে যা কি না যৌন বিজ্ঞানের ইতিহাসে আন্তরিকভাবে অভিনন্দিত ও গৃহীত হয়েছে।
সেক্স ও শরীর
শরীরকে বাদ দিয়ে সেক্সকে কখনো কল্পনা করা যায় না। নারীর সাধারণত দুই ধরনের। যেমন- নারীর শরীর এবং পুরুষের শরীর। তাই সেক্সকে জানতে হলে প্রথমে শরীরকে জানতে হবে, জানতে হবে যৌন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বৈচিত্র্যতা।
পুরুষের যৌন অঙ্গ প্রত্যঙ্গসমূহ
পুরুষের সাধারণ যৌন অঙ্গ বা মেল সেক্সুয়াল অর্গাজম হল অন্ডকোষ যা কি না এক প্রকার অন্ডথলির ভেতরে অবস্থান করে। আর এই অন্ডকোষে শুক্র তৈরি হয়। আর এ শুক্র থেকেই মানব শিশু জন্ম লাভ করে। যৌনমিলনের সময় পুরুষাঙ্গ বা পেনিসের ছিদ্র পথ দিয়ে শুক্র নির্গত হয়। পুরুষের জননযন্ত্রের প্রধান অংশটি হচ্ছে দুটি যথা টেস্টিস বা অন্ডকোষ এবং পুরুষাঙ্গ বা পেনিস। এছাড়া এগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য যৌন অংশগুলো হচ্ছে- এপিডিডিমিস, প্রস্টেটগস্ন্যান্ড, শুক্রবাহী নালী, শুক্রথলি (সেমিনাল ভেসিকল), ভাসডিফারেন্স, বস্নাডার, কপারগস্ন্যান্ড, পায়ুপথ বা মলদ্বার।
পুরুষাঙ্গের গঠন ও কর্মকান্ড (পেনিস ফাংশন)
এটি পুরুষের যৌনতার প্রধান অঙ্গ। এই অঙ্গের সাহায্যেই পুরুষরা অবর্ণনীয় তীব্র যৌনসুখ লাভ করে থাকেন। এটি নারীদের যোনিতে প্রবেশ করে প্রচুর সেক্স পেস্নজার সৃষ্টি করে। সেই সাথে আরেকটি নতুন জীবন তৈরির উপাদান বীর্য ছড়িয়ে দেয়।
এই পুরুষাঙ্গটি অন্ডকোষের সামনে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে। এটি দেখতে প্রায় একটা বুড়ো আঙ্গুলের মত। এই পেনিসটি হচ্ছে পুরুষের প্রস্রাব (ইউরিনেশন) করার এবং নারী সহবাস করার একমাত্র এবং অভিন্ন চমৎকার যন্ত্র। লিঙ্গের যে অংশটি দেহের সাথে অর্থাৎ বস্তিদেশে বা পেলভিসে যুক্ত থাকে তাকে বলে লিঙ্গ মল বা গোড়া। এর পর থেকে লিঙ্গ গ্রীবার কাছে গোড়া খাঁজরে মত অংশ পর্যন্তকে বলে লিঙ্গ দেহ। বাকি অংশটুকু অর্থাৎ সেই দেহের ডগায় বা লিঙ্গের অগ্রভাগে টুপির মত দেখতে যে লালচে বর্ণের কোমল মাংসপিন্ডের অংশটি দেখা যায় তাকে বলে লিঙ্গমণি বা লিঙ্গমন্ডু বা গস্ন্যান্স। এই লিঙ্গ মুন্ডের সামনের দিকটা ঈষৎ সরু হয়ে এসেছে এবং এর মুখের কাছেই থাকে মত্রনালীর মুখ। পুরুষাঙ্গের এই অগ্রভাগ বা অংশটি খুবই স্পর্শকাতর’ তথা অত্যন্ত যৌন অনুভূতিশীল অংশ।
আমাদের পুরুষাঙ্গটি ‘স্পঞ্জের মত’ এক প্রকার নরম সংকোচনশীল ও সম্প্রসারণশীল পেশিতন্তু বা উত্থানশীল তন্ত বা ইরেক্টাল টিস্যু দিয়ে গঠিত। এর মধ্যে অসংখ্য রক্তবাহী নালী ও নার্ভের শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। স্বাভাবিক অবস্থায় লিঙ্গ বা পুরুষাঙ্গটি নরম ও ছোট থাকে কিন্তু সেক্স উত্তেজনার সময় এইসব রক্তনালীতে প্রচুর রক্ত এসে পূর্ণ হয়ে যায় ফলে এটি আকারে বৃদ্ধি পেয়ে লম্বা, মোটা-তাজা ও দৃঢ় হয় আর একেই বলে ইরেকশন অফ পেনিস বা পুরুষাঙ্গের উত্থান। কারো কারো লিঙ্গ উত্তেজিত হলে শক্ত হয়ে ডানে বা বামে বেঁকে যায়- এটা স্বাভাবিক এটা কোনো রোগ নয়। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের পুরুষাঙ্গের আকার স্বাভাবিক ও সুপ্ত অবস্থায় ৩-৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা থাকে এবং এর পরিধি বা ঘের প্রায় ২-৩ ইঞ্চির মত চওড়া থাকে। কিন্তু্তু সেক্স উত্তেজনার সময় এবং যৌনমিলনের মজাদার সময় এটি উত্থিত উত্তেজিত হয় এবং শক্ত ও মোটা হয় এবং আকারে বৃদ্ধি পেয়ে লম্বা প্রায় ৫-৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হয় এবং এর পরিধিটিও  বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ অনেকটা মোটা হয় প্রায় ৩-৫ ইঞ্চির মত। তবে পুরুষদের লিঙ্গের স্বাভাবিক আকার সবার বেলায় সমান নয়। ক্ষেত্র বিশেষে এটি কম বেশি ছোট বড়, মোটা, চিকন হয়। তবে সুখের কথা লিঙ্গের এই ছোট বড় মাপের জন্য যৌনক্ষমতা বা ভিরিলিটি যৌন সুখ, যৌন আরাম এবং সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা বা ফার্টিলিটির সাথে তেমন কোনো আহামরি সম্পর্ক বা যোগসূত্র নেই। অনেকের মাঝে এরকম ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, পুরুষাঙ্গের আকৃতির কিছুটা ছোট হলে তারা হয়ত সেক্সুয়াল লাইফে সেটিসফাইড হতে পারবেন না। তাই অনেক সময় এরকম ভাবনার বশবর্তী হয়ে তারা নানা রকম মানসিক চাপ, মানসিক অশান্তি, ভয় ও অহেতুক দুশ্চিন্তায় ভুগতে থাকেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। তবে এই মেন্টাল কমপেস্নক্সের সাথে যদি শারীরিক কোনো অক্ষমতা বিদ্যমান থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসা সহায়তা গ্রহণ করার প্রশ্ন আসে।
অন্ডকোষ বীর্যের ভান্ডার
পুরুষের যৌন ইন্দ্রিয় বা পুরুষাঙ্গের পেছনে যে দুটি গ্লান্ড বা বিচি একত্র ঝুলতে দেখা যায় তাকেই বলে অন্ড। এই দুটি অন্ড যে থলি বা আবরণের মধ্যে থাকে তাকে বলে অন্ডকোষ বা স্ক্রুরোটাম। এই অন্ড দুটিকে পুরুষের যৌনগ্রন্থ্থি বা ম্যাল সেক্স গ্র্যান্ডস বলে। মেয়েদের যৌনগ্রন্থ্থি যেমন তাদের দুটি ডিম্বাশয় বা ওভারি তেমনি পুরুষদের সেক্সগ্রন্থ্থি হচ্ছে এই অন্ডকোষ। মেয়েদের ডিম্বাশয়ের প্রধান কাজ হল যেমন ডিম্বাণু তৈরি করা ও স্ত্রী হরমোন ক্ষরণ করা তেমনি পুরুষদের অন্ড দুটির কাজ হচ্ছে শুক্রকীট প্রস্তুত করা এবং পুরুষ হরমোন ক্ষরণ করা। এই হরমোন নিঃসৃত হয়ে সরাসরি রক্তের সাথে মিশে যায়। এই হরমোন পুরুষের সেকেন্ডারি সেক্স কেরেক্টার গঠনে যথা যৌনাঙ্গের স্বাভাবিক গঠন, যৌনক্ষমতা ও প্রজনন সংক্রান্ত কাজে প্রভাব বিস্তার করে।
বীর্যতে কি থাকে
বীর্যের মাথায় ক্রোমোজম থাকে এটি পুরুষের উর্বরতার উদ্ভব ঘটায়। এক ফোঁটা বীর্যের মাথা হল একটি ক্ষুদ্র পিনের মাথার আকারের সমান। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে এটি দেখা যায়। একজন মানুষের দিনে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০,০০০০০০০ কোটি (পঞ্চাশ কোটি) বীর্য কণা তৈরি হয়। বীর্য একা একা নিজে থেকেই লিঙ্গ থেকে পতন হতে পারে না। যৌনমিলনকালে বা অন্যকোনো উপায়ে যেমন হস্তমৈথুনের সময় বীর্য স্খলন ঘটে। প্রতিবার যে পরিমাণ বীর্য স্খলন হয় তাতে ৪০-৫০ কোটির মত শুক্রকীট থাকে। কিন্তু মজার কথা হল নারীকে গর্ভবতী হওয়ার জন্য কেবলমাত্র একটি শুক্রকীটই যথেষ্ট। পুরুষের লিঙ্গের মাধ্যমে নারীর যোনি বা জরায়ু মুখে বীর্যরস নিক্ষিপ্ত হবার পর শুক্রকীটগুলো এক প্রকার লেজের দ্বারা সাঁতার কেটে জরায়ুর ভেতরে প্রবেশ করে এগিয়ে যায়। পুরুষের মধ্যে যখন যৌবনের আগমন ঘটে তখন তার টেস্টিসে বা অন্ডকোষে শুক্রকীট অনবরত তৈরি হতে আরম্ভ করে দেয়। আর এ সময় থেকেই পুরুষরা সন্তান জন্মদানে সক্ষম হয়ে ওঠে।
গবেষকরা ল্যাবরেটরিতে টেস্টটিউবে কাচের মধ্যে গবেষণা করে দেখেছেন যে, শুক্র ব্যতীত অন্যান্য যেসব উপাদান বীর্যে পাওয়া যায় তার ৯০ শতাংশই তরল পানি জাতীয় উপাদান। এছাড়াও বীর্যে থাকে সুগার বা গ্লুকোজ যা কি না শুক্রাণুর কার্যকারিতা ও বলিষ্ঠতার জ্বালানিস্বরূপ। বীর্যে আরো থাকে ক্ষারীয় উপাদান। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের কিছু পরিমাণ এনজাইম ও কিছুমাত্রায় ভিটামিন সি, কিঙ্ক এবং থাকে কোলেস্টেরল। দেহের বীর্য সংশেস্নষণ প্রক্রিয়াটি অন্যান্য দশ বারোটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মতোই সাধারণ। এটি তৈরিতে বিশেষ রকমের খাদ্য উপাদানের সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। আসল কথা হল বীর্যের সাথে খাবারের কোনো প্রত্যক্ষ বা ডাইরেক্ট সম্পর্ক নেই। যদি এ জাতীয় কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকতো, তবে মাননীয় ডাক্তার মহাশয়বৃন্দরা প্রজনন বা সন্তান উৎপাদনে অক্ষম পুরুষদেরকে বেশি বেশি খাদ্য খেতে উপদেশ দিতেন।
আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা বীর্য তৈরি হচ্ছে আর তা সাময়িকভাবে সেমিনাল ভেসিক্যালে জমা থাকছে। ধারণক্ষমতা পূর্ণ হবার পরে এর বাড়তি অংশ যৌন সঙ্গম বা মাস্টারবেশন প্রক্রিয়া ও স্বপ্নদোষের মাধ্যমে তা বেরিয়ে যায়। একটা কথা সবারই মনে রাখা দরকার যে, দেহের মাঝে বিরতিহীনভাবে বীর্য সংশেস্নষণ ঘটছে স্খলনের উদ্দেশ্যে, জমা বা সঞ্চিত থাকার জন্য বয়। বীর্য নির্গমন যে প্রক্রিয়াই ঘটুক না কেন, তা মানব দেহের উৎপাদন কর্মকান্ডকে সচল, সবল আর গতিশীল রাখে। কাজেই স্বাভাবিক সেক্স সঙ্গম বা নিদ্রার মধ্যবর্তী স্বপ্নদোষ বা যে কোনোভাবেই হোক না কেন, বীর্যস্খলন বা বীর্যপাত ক্ষতিকারক নয় বরঞ্চ স্বাস্থ্যসমমত।
এতক্ষণ আমরা পুরুষের সেক্স অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে যৎসামান্য জানতে পারলাম। জানতে পারলাম পুরুষাঙ্গের মত প্রধান কয়েকটি যৌন অর্গাজমের কার্যকলাপ। এখন আমরা অনুরূপভাবে নারী দেহ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করবো। বুঝতে চেষ্টা করবো ফুলের মত কোমল চাঁদের মত সুন্দর নারীদের সেক্স অঙ্গগুলোর কার্যকলাপ। পুরুষ আর নারী একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজনের সেক্স কোনোভাবেই ভাবা যায় না। নারী আর পুরুষের যৌথ অংশগ্রহণ ও মিলনেই পরিপূর্ণতা লাভ যৌনজীবনে। আর তার ফলেই রচিত হয় একটি সুখময়-তৃপ্তিময়-ভালোবাসাময় সুখী দাম্পত্য জীবন।


 বিষয়ঃ  সেক্স গাইড 


আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুণ। এই ব্লগে পড়তে কি সমস্যা হয়?আপনার কি টাকা বেশি খরচ হয়ে যায়?

কোন মন্তব্য নেই :