মাসিক যা একান্তই মেয়েদের

কোন মন্তব্য নেই


মেয়েদের মাসিক
বিষয়টা আসলেই ভয় পাওয়ার মতো। কাকলির বয়স এখন কতোই বা হবে। ১২ কিংবা ১৩। এতোটুকুন বয়সে এরকম ঘটনায় কে না ভয় পায়? সকালে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে আঁতকে উঠলো কাকলি। রক্ত? চাকা চাকা রক্তে কমোড লাল হয়ে গেছে! রক্ত এলো কোত্থেকে? কোনো কিছু বুঝতে পারছে না সে। পরনের জামা কাপড়েও রক্ত লেগে আছে। কাল রাত থেকেই তলপেটটায় বেশ ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল, কেমন ভার ভারও লাগছিল। মামুলি ব্যথা মনে করে কাউকে বলা হয়নি। কিন্তু্তু এখন যে অবস্থা, তা তো আর না বলে থাকা যায় না। কোনো রকমে সবকিছু পরিষকার করে, পরনের কাপড় বদলে নিয়ে বাথরুম থেকে এক রকম কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলো কাকলি। বিমর্ষ ভীত চেহারায় অস্ফুট গলায় মাকে ঘটনাটা খুলে বললো সে। কিন্তু এতে মায়ের চোখেমুখে তেমন কোনো উৎকণ্ঠা লক্ষ্য করা গেলো না। বরং ওকে জড়িয়ে ধরে আশ্বস্ত করার মতো করে পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে বললেন-ও কিছু না, তুই বড়ো হয়েছিস না, বড়ো হলে সব মেয়েরই প্রতি মাসে এটি হয়, এ নিয়ে ভাবিস না।
সেক্স মেয়েদের ছবি- সেকসি মেয়েদের ছবি
মেয়েদের এই স্বাভাবিক বিষয়টির নাম মিসট্রয়েশন/সাধারণের কাছে যা মাসিক কিংবা ঋতুস্রাব বলে পরিচিত। প্রচলিত শহরে সাংকেতিক ভাষায় একে বলা হয় পিরিয়ড। বয়স ১০-এ পড়তে না পড়তেই মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক সেক্স হরমোনের আগমন ঘটতে শুরু করে। এই হরমোন মেয়েদের বিশেষ শারীরিক পরিবর্তনের সচনা করে। সেই সঙ্গে অন্য মেয়েলি বিষয়গুলোও একে একে আবির্ভত হতে থাকে। জীবনের প্রথম পিরিয়ড খুব বেশি সংক্ষিপ্ত কিংবা দীর্ঘ হতে পারে। প্রথম দিকে পিরিয়ডে কিছু অনিয়ম দেখা দিতে পারে। অনেক সময় একবার হয়ে ২/৩ মাস পর পরবর্তী পিরিয়ড হতে পারে। তবে ২/১ বছরের মধ্যে পিরিয়ড স্বাভাবিক ছন্দে চলে আসে। অর্থাৎ প্রতি ২৮ দিন পরপর এটি হতে থাকে। মেয়েদের এই পিরিয়ড ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যেই শুরু হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি আরো আগে কিংবা একটু দেরিতে শুরু হতে পারে। এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে কিশোরীদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার গড় বয়স ১৩ বছর। পিরিয়ডের সময় সামান্য পেট ব্যথায় প্রায় সব মেয়েই ভোগে। তবে স্কুল ও কলেজ পড়ূয়াদের মধ্যে শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ মেয়েই পিরিয়ডকালীন অতিরিক্ত পেট ব্যথায ভুগে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ডিসম্যানোরিয়া। ধারণা করা হয় হরমোনের প্রভাবে পিরিয়ড শুরুর প্রস্তুতিপূর্বে জরায়ুর ভেতরের শ্লৈষ্মিক ঝিলিস্ন যখন ছিড়তে উদ্যত হয় এবং ছিড়তে শুরু করে তখন প্রোস্টাগস্ন্যান্ডিন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ নিগৃত হয়। এই প্রোস্টগস্ন্যান্ডিনের প্রভাবে জরায়ুর সংকোচন ও প্রসারণ হতে থাকে। ফলে তলপেটে ব্যথা অনুভূত হতে থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই ব্যথা তলপেটে ছাড়াও যোনি, নিতম্ব, উরু পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পিরিয়ডের ব্যথার সঙ্গে মাথাব্যথা, বমিভাব, শরীর ম্যাজম্যাজ ইত্যাদি উপসর্গও থাকতে পারে। এই ব্যথা পিরিয়ড শুরু হওয়ার ২/১ দিন আগে থেকে শুরু হয় এবং পিরিয়ডের ২/৩ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ডিসম্যানোরিয়ার এই ব্যাপারটি অনেক ক্ষেত্রেই লজ্জায় বলা হয়ে ওঠে না। তাই এর চিকিৎসাও করা হয় না। দেখা গেছে, বিয়ের পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটি এমনিতেই সের যায় কিংবা না সারলেও ৩০ বছর বয়সের পর এই ব্যথার তীব্রতা নিজে থেকেই কমে আসে। তবে তার আগেও পিরিয়ডজনিত ব্যথা উপশমের উপায় আছে। এ জন্য কিছু নিয়মকাকুন মেনে চলতে হয়, ২/১টি ওষুধও খেতে হয় অনেক সময়। প্রথমত এ ব্যাপারে মেয়েটির মনোবল বাড়িয়ে তুলতে হবে। আর এই কাজটি মা, খালা কিংবা বোনকেই করতে হবে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বা খালি হাতে ব্যায়াম করতে হবে। তলপেট ও উরুর ব্যায়ামকেই প্রাধান্য দিতে হবে।
খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার যেমন-দুধ খাওয়া ভালো। ব্যায়াম এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার মাংসপেশির ক্রাম্প বা খিঁচুনির প্রবণতা কমাতে সাহায্য করবে। প্রোস্টগস্ন্যান্ডিন তৈরিতে বাধা দেয় এমন কিছু ওষুধ যেমন-এসপিরিন, ইনডেমেথাসিন, আইবুপ্রুফেন ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে এগুলো ভরাপেটে খেতে হয়। শুধু প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেলেও অনেকের ব্যথা কমে যায়। জরায়ুর খিঁচুনি কমানোর জন্য হাইসোমাইড, নসপা ইত্যাদি ট্যাবলেট ব্যথার তীব্রতা অনুযায়ী বিভিন্ন মাত্রায় গ্রহণ করা যায়। তাছাড়া পিরিয়ডের সময়ে উষ্ণ পানিতে গোসল করা যেতে পারে। হট ওয়াটার ব্যাগ বা বোতল দিয়ে তলপেটে স্যাঁক দিলেও কিছু স্বস্তি পাওয়া যায়। অনেক সময় জন্মগত কোনো ত্রুটির কিংবা জরায়ুর কিছু সমস্যার জন্যও এমনটি হতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে একজন স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞকে দেখিয়ে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ভালো।
www.amarbanglapost.com/m/women/

নারী-বৈচিত্র্যময় এক বিচিত্র উপাখ্যান। কৈশোরের অভিজ্ঞতার পর যৌবনে একটা স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে। তার পর যৌনজীবন বা বিবাহিত জীবনের শুরুতেই আরেক ভীতি এসে ভর করে। এই জীবনের সর্বপ্রথম সমস্যাকে বলা হয়ে থাকে ডিফ্লোরেশন। এটি ফুলসজ্জার ব্যাপার। পুরুষের সঙ্গে প্রথম শরীরী অভিজ্ঞতা। কারো কারো ক্ষেত্রে এ সময় হাইমেন বা তথাকথিত সতীচ্ছেদ পর্দা ছিড়ে যায়। যা সাধারণত খেলাধুলা কিংবা ব্যায়ামের সময়ে এমনিতেই ছিড়ে যেতে পারে। এটি মেয়েদের জন্য একটি ব্যথার প্রহর।
এসব ক্ষেত্রে কখনো রক্তপাত হয় আবার কখনো হয় না। রক্তপাত হলে তুলো দিয়ে একনাগাড়ে ৫/৭ মিনিট চেপে ধরলেই সাধারণত রক্ত বন্ধ হয়ে যায়। খুব বেশি রক্তপাত হলে এক সপ্তাহ শরীরী সম্পর্ক বন্ধ রাখা উচিত। প্রয়োজনে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। একই সময়ে কোনো কোনো মেয়ে ভ্যাজিনিসমাস নামক ব্যথাযুক্ত সমস্যায় আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় ইন্টারকোর্স তীব্র যন্ত্রণার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ভীতির কারণে এ সময়ে যোনিপথের মাংসপেশি সঙ্কুচিত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সমাধানের জন্য নারীকে নিজের শরীর সম্পর্কে জানার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে KY জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে পারসপরিক আকর্ষণ, আন্তরিকতা এবং সহানুভূতি এ সমস্যার সমাধানে বিশেষ ভূমিকা রাখে। হানিমুন সিসটাইট নামেও আরেকটি সমস্যা মধুচন্দ্রিমা যাপনের সময়ে মেয়েদের কষ্ট দেয়। বিয়ের সপ্তাহখানেকের মধ্যে নববিবাহিতার তলপেটে ব্যথা হয় এবং প্রস্রাবে জ্বালা করে। এটিই হানিমুন সিসটাইটিস। এক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো পানি পান এবং কোট্রাইমোক্সাজল, এমোক্সিলিন ইত্যাদি এন্টিবায়োটিক খেলেই এ থেকে নিষকৃতি পাওয়া যায়। ডিপ্যারুনিয়া বা ইন্টারকোর্সে ব্যথা দাম্পত্যজীবনের আরেকটি সমস্যা। আবেগহীন অনিচ্ছাকৃত ইন্টারাকার্সের সময় নারী সাধারণত এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়। এছাড়াও প্রসবের পর, যোনিপথ ও মত্র পথে ইনফেকশন, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ (পিআইডি) ইত্যাদি অসুস্থতায় ডিসপ্যারুনিয়া দেখা দেয়।
গর্ভধারণ এবং প্রসব নারী জীবনের আরেকটি কষ্টকর অধ্যায়। প্রসব বেদনা যে কতোটুকু কষ্টকর তা কেবল একজন মা-ই জানেন। স্তনব্যথা নারীর বেদনাসঙ্কুল আরেকটি পূর্ব। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ব্যথার পেছনে জটিল কোনো কারণ দায়ী থাকে না। তবে ব্যথা যদি অবিরামভাবে নির্দিষ্ট একটি পয়েন্টে হতে থাকে অথবা নিপল সপর্শ করলেই হয়, তাহলে বিশেষজ্ঞ সার্জন দেখিযে সুস্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। স্তনব্যথা সাধারণত পিরিয়ডের আগে, গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের কয়েকদিন পর উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয়। উভয় ক্ষেত্রেই স্তন ভারীবোধ হয়। ঋতুবন্ধ বা মেনোপজ নারী জীবনে আরেকটি অস্বস্তিকর অধ্যায়ের সচনা করে। সাধারণত বয়স ৪০ পেরোতেই অনেকের মাসিকের সমাপ্তি ঘটে। মেনোপজ বা ঋতুসমাপ্তির অন্যতম উপসর্গ হচ্ছে-হট ফ্লাশ অর্থাৎ হঠাৎ করে মাথা, মুখমন্ডল, কান গরম হওয়া। এছাড়া মেজাজ খারাপ থাকা, অনিদ্রা, প্রস্রাবে কষ্ট হওয়া, যোনিপথ শুষক হওয়ার কারণে ডিসপ্যারুনিয়া অনুভব করা ইত্যাদি উপসর্গ লক্ষ করা যায়।
মেনোপজের সময় নারীর একটি সমস্যা নিয়ে সারা বিশ্বের গবেষকরা চিন্তিত। সেটি হচ্ছে অস্টিওপেরোসিস অর্থাৎ হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। নারীর ঋতু সমাপ্তির সমস্যা সমাধানের একটি পদ্ধতি হচ্ছে হরমোন রিপেস্নসমেন্ট থেরাপি সংক্ষেপে এইচআরটি।
কাজেই জীবনের প্রকাশ্যে সৃষ্ট সমস্যার চেয়ে আড়ালের এইসব সমস্যা যে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, তা নারীকেই উপলব্ধি করতে হবে। এতে অনেক ক্ষেত্রে কষ্টের অবসান হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা না হলেও যন্ত্রণা কিছুটা লাঘব তো হবেই।- মেয়েদের মাসিক নিয়ে আরো পোস্ট দেখুন
মেয়েদের গোসল

মনের কু-ধারণা দূর করার উপায়

ধূমপানের অপকারিতা

নির্জনে নারী পুরুষের দেখা-দেখি করার বিধান

ডা. শিমুল আখতার
মনোজগত : মার্চ, ২০০৪
ফেসবুকে  ব্লগারের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করুণ

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান । তাদের কে জানতে দিন অজানা বিষয় গুলি।

কোন মন্তব্য নেই :