রমযানের রোযা ফাযায়েল ও মাসায়েল

কোন মন্তব্য নেই
মাওলানা হেমায়াতুদ্দীন
*সুব্হে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত
নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পান,
আহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত
থাকাকে রোযা বলা হয়। প্রত্যেক
আকেল (বোধ সম্পন্ন), বালেগ
(বয়সপ্রাপ্ত) ও সুস্থ্য নর-নারীর
উপর রমযানের রোযা রাখা ফরয।
* ছেলে মেয়ে দশ বৎসরের
হয়ে গেলে তাদের
দ্বারা (শাস্তি দিয়ে হলেও)
রোযা রাখানো কর্তব্য। এর পূর্বেও
শক্তি হলে রোযা রাখার অভ্যাস
করানো উচিত।
রোযার নিয়তের মাসায়েল
* রমযানের রোযার জন্য নিয়ত
করা ফরয। নিয়ত ব্যতীত সারাদিন
পানাহার ও যৌনতৃপ্তি থেকে বিরত
থাকলেও রোযা হবে না।
* মুখে নিয়ত করা জরূরী নয়।
অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে,
তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম।
* মুখে নিয়ত করলেও
আরবীতে হওয়া জরুরী নয়- যে কোন
ভাষায় নিয়ত করা যায়। নিয়ত
এভাবে করা যায়-
আরবীতে ﻧﻮﻳﺖ ﺑﺼﻮﻡ ﺍﻟﻴﻮﻡ
অথবা ﺑﺼﻮﻡ ﻏﺪ ﻧﻮﻳﺖ
বাংলায় আমি আজ রোযা রাখার নিয়ত
করলাম।
* সূর্য ঢলার দেড় ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত
রমযানের রোযার নিয়ত করা দুরস্ত
আছে, তবে রাতেই নিয়ত
করে নেয়া উত্তম।
* রমযান মাসে অন্য যে কোন প্রকার
রোযা বা কাযা রোযার নিয়ত করলেও
এই রমযানের রোযা আদায় হবে- অন্য
যে রোযার নিয়ত করবে সেটা আদায়
হবে না।
* রাতে নিয়ত করার পরও
সুব্হে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার
ও যৌনকর্ম জায়েয। নিয়ত করার
সাথে সাথেই রোযা শুরু হয়না,
বরং রোযা শুরু হয় সুব্হে সাদেক থেকে।
সেহরী মাসায়েল
* সেহরী খাওয়া জরূরী নয়
তবে সেহরী খাওয়া সুন্নাত, অনেক
ফযীলতের আমল, তাই
ক্ষুধা না লাগলে বা খেতে ইচ্ছে না
করলেও সেহরীর ফযীলত হাছিল করার
নিয়তে যা-ই হোক কিছু পানাহার
করে নিবে।
* নিদ্রার
কারণে সেহরী খেতে না পারলেও
রোযা রাখতে হবে।
সেহরী না খেতে পারায়
রোযা না রাখা অত্যন্ত পাপ।
* সেহরীর সময় আছে বা নেই
নিয়ে সন্দেহ
হলে সেহরী না খাওয়া উচিত। এরূপ
সময়ে খেলে রোযা কাযা করা ভাল। আর
যদি পরে নিশ্চিত- ভাবে জানা যায় যে,
তখন সেহরীর সময় ছিল না,
তাহলে কাযা করা ওয়াজিব।
* সেহরীর সময়
আছে মনে করে পানাহার করল অথচ
পরে জানা গেল যে, তখন সেহরীর সময়
ছিল না, তাহলে রোযা হবে না;
তবে সারাদিন তাকে রোযাদারের ন্যায়
থাকতে হবে এবং রমযানের পর ঐ
দিনের রোযা কাযা করতে হবে।
* বিলম্বে সেহরী খাওয়া উত্তম।
আগে খাওয়া হয়ে গেলেও শেষ সময়
নাগাদ কিছু চা-
পানি ইত্যাদি করতে থাকলেও
বিলম্বে সেহরী করার ফযীলত অর্জিত
হবে।
ইফ্তার-এর মাসায়েল
* সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর বিলম্ব
না করে তাড়াতাড়ি ইফতার
করা মোস্তাহাব। বিলম্বে ইফতার
করা মাকরূহ।
* মেঘের দিনে কিছু দেরী করে ইফতার
করা ভাল। মেঘের দিনে ঈমানদার
ব্যক্তির অন্তরে সূর্য অস্ত
গিয়েছে বলে সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত
ছবর করা ভাল। শুধু ঘড়ি বা আযানের
উপর নির্ভর করা ভাল নয়, কারণ
তাতে ভুলও হতে পারে।
* সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ
থাকা পর্যন্ত ইফতার করা দুরস্ত
নেই।
* সবচেয়ে উত্তম হল খোরমার
দ্বারা ইফতার করা, তারপর কোন
মিষ্টি জিনিস দ্বারা, তারপর
পানি দ্বারা।
* লবণ দ্বারা ইফতার শুরু
করা উত্তম-এই আকীদা ভুল।
* ইফতার করার পূর্বে নিুোক্ত দু‘আ
পাঠ করবে। দু‘আ পাঠ করা মোস্তাহাব।
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻟﻚ ﺻﻤﺖ ﻭﻋﻠﻲ ﺭﺯﻗﻚ
ﺍﻓﻄﺮﺕ
* ইফতার করার পর নিম্নের দু‘আ পাঠ
করবে-
ﺫﻫﺐ ﺍﻟﻈﻤﺎﺀ ﻭﺍﺑﺘﻠﺖ ﺍﻟﻌﺮﻭﻕ
ﻭﺛﺒﺖ ﺍﻻﺟﺮ ﺍﻧﺸﺎﺀﺍﻟﻠﻪ
* ইফতার-এর সময় দুআ কবূল হয়, তাই
ইফতারের পূর্বে বা কিছু ইফতার
করে বা ইফতার থেকে সম্পূর্ণ ফারেগ
হয়ে দুআ করা মোস্তাহাব।
* পশ্চিম দিকে প্লেনে সফর শুরু করার
কারণে যদি দিন লম্বা হয়ে যায়
তাহলে সুব্হে সাদেক থেকে নিয়ে ২৪
ঘন্টার মধ্যে সূর্যাস্ত ঘটলে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত ইফতার বিলম্ব করতে হবে,
আর ২৪ ঘন্টার মধ্যেও সূর্যাস্ত
না ঘটলে ২৪ ঘন্টা পূর্ণ হওয়ার
সামান্য কিছু পূর্বে ইফতার করে নিবে ।
* পূর্ব দিকে প্লেনে সফর করলে যখনই
সূর্যাস্ত পাবে তখনই ইফতার করবে।
যে সব
কারণে রোযা ভাঙ্গে না এবং মাকরূহও
হয় না
১। মেসওয়াক করা। যে কোন সময়
হোক, কাঁচা হোক বা শুষ্ক।
২। শরীর বা মাথা বা দাড়ি গোঁপে তেল
লাগানো।
৩। চোখে সুরমা লাগানো বা কোন ঔষধ
দেয়া।
৪। খুশবু লাগানো বা তার ঘ্রাণ নেয়া।
৫। ভুলে কিছু পান করা বা আহার
করা বা স্ত্রী সম্ভোগ করা।
৬। গরম বা পিপাসার কারণে গোসল
করা বা বারবার কুলি করা।
৭। অনিচ্ছা বশতঃ গলার মধ্যে ধোঁয়া,
ধুলাবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করা।
৮।
কানে পানি দেয়া বা অনিচ্ছাবশতঃ চলে
যাওয়ার কারণে রোযা ভঙ্গ হয়
না,
তবে ইচ্ছাকৃতভাবে দিলে সতর্কতা হল
সে রোযা কাযা করে নেয়া।
৯। অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়া।
ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করলে মাকরূহ
হয়
না, তবে এরূপ করা ঠিক নয়।
১০। স্বপ্ন দোষ হওয়া।
১১। মুখে থুথু আসলে গিলে ফেলা।
১২। যে কোন ধরনের ইনজেকশন
বা টীকা লাগানো। তবে রোযার কষ্ট
যেন বোধ না হয়-এ উদ্দেশ্যে শক্তির
ইনজেকশন বা স্যালাইন
লাগানো মাকরূহ।
১৩। রোযা অবস্থায় দাঁত
উঠালে এবং রক্ত পেটে না গেলে।
১৪। পাইরিয়া রোগের
কারণে যে সামান্য রক্ত সব সময় বের
হতে থাকে এবং
গালার মধ্যে যায় তার কারণে।
১৫। সাপ ইত্যাদিতে দংশন করলে।
১৬। পান খাওয়ার পর
ভালভাবে কুলি করা সত্ত্বেও
যদি থুথুতে লালভাব থেকে
যায়।
১৭। শাহওয়াতের সাথে শুধু নজর
করার কারণেই যদি বীর্যপাত ঘটে যায়
তাহলে রোযা ফাসেদ হয় না।
১৮। রোযা অবস্থায় শরীর
থেকে ইনজেকশনের সাহায্যে রক্ত বের
করলে
রোযা ভাঙ্গে না এবং এতে রোযা রাখার
শক্তি চলে যাওয়ার মত দুর্বল
হয়ে পড়ার আশংকা না থাকলে মাকরূহও
হয় না।
যে সব
কারণে রোযা ভাঙ্গে না তবে মাকরূহ
হয়ে যায়
১। বিনা প্রয়োজনে কোন জিনিস
চিবানো।
২। তরকারী ইত্যাদির লবণ
চেখে ফেলা দেয়া। তবে কোন চাকরের
মুনিব বা কোন নারীর স্বামী বদ
মেজাজী হলে জিহবার অগ্রভাগ
দিয়ে লবণ চেখে তা ফেলে দিলে এতটুকুর
অবকাশ আছে।
৩। কোন ধরনের মাজন, কয়লা, গুল
বা টুথপেষ্ট ব্যবহার করা মাকরূহ। আর
এর কোন কিছু সামান্য পরিমাণও গলার
মধ্যে চলে গেলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
৪। গোসল ফরয-এ অবস্থায় সারা দিন
অতিবাহিত করা।
৫। কোন রোগীর জন্য নিজের রক্ত
দেয়া।
৬। গীবত করা, চোগলখুরী করা,
অনর্থক কথাবার্তা বলা, মিথ্যা বলা।
৭। ঝগড়া ফ্যাসাদ করা, গালি-গালাজ
করা।
৮। ক্ষুধা বা পিপাসার
কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা।
৯। মুখে অধিক পরিমাণ থুথু একত্র
করে গিলে ফেলা।
১০। দাঁতে ছোলা বুটের চেয়ে ছোট কোন
বস্তু আটকে থাকলে তা বের করে মুখের
ভিতর থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা।
১১। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ
থাকবে না-এরূপ মনে হওয়া সত্ত্বেও
স্ত্রীকে চুম্বন করা ও আলিঙ্গন
করা। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণের
আস্থা থাকলে ক্ষতি নেই,
তবে যুবকদের এহেন
অবস্থা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়। আর
রোযা অবস্থায় স্ত্রীর ঠোট
মুখে নেয়া সর্বাবস্থায় মাকরূহ।
১২। নিজের মুখ দিয়ে চিবিয়ে কোন
বস্তু শিশুর মুখে দেয়া।
তবে অনন্যোপায় অবস্থায় এরূপ
করলে অসুবিধা নেই।
১৩। পায়খানার
রাস্তা পানি দ্বারা এত বেশী ধৌত
করা যে, ভিতরে পানি পৌঁছে যাওয়ার
সন্দেহ হয়-এরূপ করা মাকরূহ। আর
প্রকৃত
পক্ষে পানি পৌঁছে গেলে রোযা ভঙ্গ
হয়ে যায়। তাই এ ক্ষেত্রে খুবই
সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। এ
জন্য রোযা অবস্থায় পানি দ্বারা ধৌত
করার পর কোন কাপড় দ্বারা বা হাত
দ্বারা পানি পরিষ্কার
করে ফেলা নিয়ম।
১৪। ঠোটে লিপিষ্টিক
লাগালে যদি মুখের ভিতর চলে যাওয়ার
আশংকা হয় তাহলে তা মাকরূহ।
যে সব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়
এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হয়
১। কানে বা নাকে ঔষধ দিলে।
২। ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ
ভরে বমি করলে বা অল্প বমি আসার
পর তা গিলে
ফেললে।
৩। কুলি করার সময়
অনিচ্ছাবশতঃ কণ্ঠনালীতে পানি চলে
গেলে।
৪। স্ত্রী বা কোন নারীকে শুধু স্পর্শ
প্রভৃতি করার কারণেই বীর্যপাত
হয়ে গেলে।
৫। এমন কোন জিনিস
খেলে যা সাধারণতঃ খাওয়া হয় না।
যেমন কাঠ, লোহা,
কাগজ, পাথর, মাটি, কয়লা ইত্যাদি।
৬। বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা সেবন
করলে।
৭। আগরবাতি প্রভৃতির
ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে
পৌঁছালে।
৮। ভুলে পানাহার করার পর
রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে আবার
ইচ্ছাকৃতভাবে
কোন কিছু পানাহার করলে।
৯। রাত আছে মনে করে সুব্হে সাদেকের
পরে সেহরী খেলে।
১০। ইফতারীর সময় হয়নি, দিন
রয়ে গেছে অথচ সময় হয়ে গেছে -এই
মনে
করে ইফতারী করলে।
১১। দুপুরের পরে রোযার নিয়ত
করলে।
১২। দাঁত দিয়ে রক্ত বের
হলে তা যদি থুথুর
চেয়ে পরিমাণে বেশী হয় এবং
কণ্ঠনালীর নীচে চলে যায়।
১৩। কেউ জোর পূর্বক রোযাদারের
মুখে কোন কিছু
দিলে এবং তা কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে।
১৪। দাঁতে কোন খাদ্য-
টুকরা আঁটকে ছিল এবং সুব্হে সাদেকের
পর তা যদি
পেটে চলে যায়
তবে সে টুকরা ছোলা বুটের চেয়ে ছোট
হলে রোযা ভেঙ্গে যায় না, তবে এরূপ
করা মাকরূহ। কিন্তু মুখ থেকে বের
করার পর গিলে ফেললে তা যতই ছোট
হোক না কেন রোযা কাযা করতে হবে।
১৫। হস্ত মৈথুন করলে যদি বীর্যপাত
হয়।
১৬। পেশাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর
যোনিতে কোন ঔষধ প্রবেশ করালে।
১৭। পানি বা তেল
দ্বারা ভিজা আঙ্গুল
যোনিতে বা পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ
করালে।
১৮। শুকনো আঙ্গুল প্রবেশ
করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের
করে আবার প্রবেশ
করালে। আর যদি শুকনো আঙ্গুল
একবার প্রবেশ করিয়ে একবারেই
পুরোটা বের করে নেয়-আবার প্রবেশ
না করায়, তাহলে রোযার অসুবিধা হয়
না।
১৯। মুখে পান
রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং এ অবস্থায়
সুব্হে সাদেক হয়ে গেলে।
২০। নস্যি গ্রহণ করলে বা কানে তেল
ঢাললে।
২১। কেউ রোযার নিয়তই
যদি না করে তাহলেও শুধু কাযা ওয়াজিব
হয়।
২২। স্ত্রীর বেহুঁশ থাকা অবস্থায়
কিংবা বে-খবর ঘুমন্ত অবস্থায় তার
সাথে
সহবাস করা হলে ঐ স্ত্রীর উপর শুধু
কাযা ওয়াজিব হবে।
২৩। রমযান ব্যতীত অন্য নফল
রোযা ভঙ্গ হলে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়।
২৪। এক দেশে রোযা শুরু করার পর
অন্য দেশে চলে গেলে সেখানে যদি
নিজের দেশের তুলনায় আগে ঈদ
হয়ে যায় তাহলে নিজের দেশের
হিসেবে যে কয়টা রোযা বাদ গিয়েছে তার
কাযা করতে হবে। আর
যদি সেখানে গিয়ে রোযা এক
দুটো বেড়ে যায় তাহলে তা রাখতে হবে।
যে সব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়
এবং কাযা, কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব
হয়
১। রোযার নিয়ত (রাতে) করার পর
ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে।
২। রোযার নিয়ত করার পর
ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে।
স্ত্রীর উপরও
কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
স্ত্রী যোনির মধ্যে পুরুষাঙ্গের
অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাযা ও
কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে, চাই
বীর্যপাত হোক বা না হোক।
৩। রোযার নিয়ত করার পর (পাপ
হওয়া সত্ত্বেও) যদি পুরুষ তার
পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায়
প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ
ভিতরে প্রবেশ করে (চাই বীর্যপাত
হোক বা না হোক) তাহলেও পুরুষ
স্ত্রী উভয়ের উপর
কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব
হবে।
৪। রোযা অবস্থায় কোন বৈধ কাজ
করল যেমন স্ত্রীকে চুম্বন দিল
কিংবা মাথায় তেল দিল তা সত্ত্বেও
সে মনে করল যে, রোযা নষ্ট
হয়ে গিয়েছে; আর তার
পরে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার
ইত্যাদি করল, তাহলেও
কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
যে সব কারণে রোযা না রাখার
অনুমতি আছে
১। যদি কেউ শরী‘আত সম্মত
সফরে থাকে তাহলে তার জন্য
রোযা না রাখার অনুমতি আছে;
পরে কাযা করে নিতে হবে। কিন্তু
সফরে যদি কষ্ট না হয়,
তাহলে রোযা রাখাই উত্তম। আর
যদি কোন ব্যক্তি রোযা রাখার নিয়ত
করার পর সফর শুরু
করে তাহলে সে দিনের
রোযা রাখা জরুরী।
২। কোন
রোগী ব্যক্তি রোযা রাখলে যদি তার
রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয়
অথবা অন্য কোন নতুন রোগ
দেখা দেয়ার আশংকা হয় অথবা রোগ
মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার আশংকা হয়,
তাহলে রোযা ছেড়ে দেয়ার
অনুমতি আছে। সুস্থ হওয়ার পর
কাযা করে নিতে হবে। তবে অসুস্থ
অবস্থায় রোযা ছাড়তে হলে কোন
দ্বীনদার পরহেযগার চিকিৎসকের
পরামর্শ থাকা শর্ত, কিংবা নিজের
অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের
ভিত্তিতে হতে হবে, শুধু নিজের
কাল্পনিক খেয়ালের বশীভূত
হয়ে আশংকাবোধ
করে রোযা ছাড়া দুরস্ত হবে না।
তাহলে কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব
হবে।
৩। রোগ মুক্তির পর
যে দুর্বলতা থাকে তখন
রোযা রাখলে যদি পুনরায় রোগাক্রান্ত
হওয়ার প্রবল আশংকা হয় তাহলে তখন
রোযা না রাখার অনুমতি আছে,
পরে কাযা করে নিতে হবে।
৪।
গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী স্ত্রী লোক
রোযা রাখলে যদি নিজের জীবনের
ব্যাপারে বা সন্তানের জীবনের
ব্যাপারে আশংকা বোধ
করে বা রোযা রাখলে দুধ
শুকিয়ে যাবে আর সন্তানের সমূহ কষ্ট
হবে-এরূপ নিশ্চিত হলে তার জন্য তখন
রোযা ছাড়া জায়েয,
পরে কাযা করে নিতে হবে।
৫। হায়েয নেফাস অবস্থায়
রোযা ছেড়ে দিতে হবে এবং পবিত্র
হওয়ার পর কাযা করে নিতে হবে।
যে সব কারণে রোযা শুরু করার পর
তা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি রয়েছে
১। যদি এমন
পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যাতে প্রাণের
আশংকা দেখা দেয়।
২। যদি এমন কোন রোগ
বা অবস্থা দেখা দেয় যে, ওষুধ-পত্র
গ্রহণ না করলে জীবনের আশা ত্যাগ
করতে হয়।
৩। গর্ভবতী স্ত্রীলোকের যদি এমন
অবস্থা হয় যে, নিজের বা সন্তানের
প্রাণ নাশের আশংকা হয়।
৪। বেহুঁশ বা পাগল হয়ে গেলে।
* উল্লেখ্য যে, এসব অবস্থায়
যে রোযা ছেড়ে দেয়া হবে তার
কাযা করে নিতে হবে।
* কেউ যদি অন্যকে দিয়ে কাজ
করাতে পারে বা জীবিকা অর্জনের
জন্য অন্য কোন কাজ
করতে পারে তা সত্ত্বেও সে টাকার
লোভে রোদে গিয়ে কাজ করল এবং এ
কারণে অনুরূপ পিপাসায় আক্রান্ত হল
কিংবা বিনা অপারগতায় আগুনের
কাছে যাওয়ার কারণে পিপাসায়
আক্রান্ত হল, তাহলে তার
জন্যে রোযা ছাড়ার অনুমতি নেই।
রমযান মাসের সম্মান রক্ষার মাসায়েল
* রমযান মাসে দিনের বেলায় লোকদের
পানাহারের উদ্দেশ্যে হোটেল
রেস্তোরা প্রভৃতি খাবার দোকান
খোলা রাখা রমযানের অবমাননা বিধায়
তা পাপ। অন্য ধর্মাবলম্বী বা মা’যূর
ব্যক্তিদের খাতিরে খোলা রাখার
অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
* কোন কারণ
বশতঃ রোযা ভেঙ্গে গেলেও
বাকী দিনটুকু পানাহার পরিত্যাগ
করে রোযাদারের ন্যায় থাকা ওয়াজিব।
(বেহেশতী জেওর)
* দুর্ভাগ্য বশতঃ কেউ
যদি রোযা না রাখে তবুও অন্যের
সামনে পানাহার করা বা প্রকাশ
করা যে, আমি রোযা রাখিনি-
এতে দ্বিগুণ পাপ হয়, প্রথম হল
রোযা না রাখার পাপ, দ্বিতীয় হল
গোনাহ প্রকাশ করার পাপ।
রোযার কাযার মাসায়েল
* রমযানের
রোযা কাযা হয়ে গেলে রমযানের পর
যথাশীঘ্র কাযা করে নিতে হবে।
বিনা কারণে কাযা রোযা রাখতে দেরী
করা গোনাহ।
* কাযা রোযার জন্যে সুব্হে সাদেকের
পূর্বেই নিয়ত করতে হবে, অন্যথায়
কাযা রোযা সহীহ হবে না।
সুব্হে সাদেকের পর নিয়ত
করলে সে রোযা নফল হয়ে যাবে।
* ঘটনাক্রমে একাধিক রমযানের
কাযা রোযা একত্রিত
হয়ে গেলে নির্দিষ্ট করে নিয়ত
করতে হবে যে, আজ অমুক বৎসরের
রমযানের রোযা আদায় করছি।
*
যে কয়টি রোযা কাযা হয়েছে তা একাধারে
রাখা মোস্তাহাব। বিভিন্ন সময়ে রাখাও
দুরস্ত আছে।
* কাযা শেষ করার পূর্বেই নতুন
রমযান এসে গেলে তখন ঐ রমযানের
রোযাই রাখতে হবে। কাযা পরে আদায়
করে নিতে হবে।
রোযার কাফ্ফারা-র মাসায়েল
* একটি রোযার
কাফ্ফারা ৬০টি রোযা (একটি কাযা
বাদেও)। এই
৬০টি রোযা একাধারে রাখতে হবে।
মাঝখানে ছুটে গেলে আবার পুনরায় পূর্ণ
৬০টি একাধারে রাখতে হবে। এই ৬০
দিনের মধ্যে নেফাস বা রমযানের মাস
এসে যাওয়ার কারণে বিরতি হলেও
কাফ্ফারা আদায় হবে না।
* কাফ্ফারার রোযা এমন দিন থেকে শুরু
করবে যেন মাঝখানে কোন নিষিদ্ধ দিন
এসে না যায়। উল্লেখ্য, যে পাঁচ দিন
রোযা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম তা হল দুই
ঈদের দিন এবং ঈদুল আযহার পরের
তিন দিন।
* কাফ্ফারার রোযা রাখার
মধ্যে হায়েযের দিন (নেফাসের নয়)
এসে গেলেও যে কয়দিন সে হায়েযের
কারণে বিরতি যাবে তাতে অসুবিধে নেই।
* কাযা রোযার ন্যায় কাফ্ফারার
রোযার নিয়তও সুব্হে সাদেকের
পুর্বে হওয়া জরুরী।
* একই রমযানের একাধিক
রোযা ছুটে গেলে কাফ্ফারা একটাই
ওয়াজিব হবে। দুই রমযানের
ছুটে গেলে দুই কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।
* কাফ্ফারা বাবত বিরতিহীনভাবে ৬০
দিন রোযা রাখার সামর্থ
না থাকলে পূর্ণ খোরাক খেতে পারে-
এমন ৬০ জন মিসকীনকে (অথবা এক
জনকে ৬০ দিন) দু’বেলা পরিতৃপ্তির
সাথে খাওয়াতে হবে অথবা সদকায়ে
ফিত্র-য়ে যে পরিমাণ গম বা তার মূল্য
দেয়া হয় প্রত্যেককে সে পরিমাণ
দিতে হবে। এই গম ইত্যাদি বা মূল্য
দেয়ার ক্ষেত্রে একজনকে ৬০
দিনেরটা এক দিনেই
দিয়ে দিলে কাফ্ফারা আদায় হবে না।
তাতে মাত্র এক দিনের
কাফ্ফারা ধরা হবে।
* ৬০ দিন খাওয়ানোর বা মূল্য দেয়ার
মাঝে ২/১ দিন
বিরতি পড়লে ক্ষতি নেই।
সুত্র-আহসানুল ফাতাওয়া,জাওয়াহিরুল
ফাতাওয়া,জাওয়াহিরুল
ফীকহ,ফাতাওয়া রহীমীয়া,ফাতাওয়া
মাহমুদিয়া ইত্যাদী


Post by Dawtul Haq.
Blog eidtior_Syed Rubel.

ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু ,বৌদ্ধ, নাস্তিক ও দেশের নারীবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে করা সকল অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গাঁ জবাব দেখুন এই পোস্ট টি থেকে

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :