বহু বিবাহে সতর্কতা ও বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমোদন

কোন মন্তব্য নেই
পবিত্র কোরআনের আলো
১২৯. ওয়া লানতাছতাত্বীঊ’ আন
তা’দিলূ বাইনান্ নিছায়ি ওয়া লাও
হারাসতুম ফালা তামীলূ কুল্লাল
মাইলি ফাতাযারূহা কালমুআ’ল্লাক্বাতি;
ওয়া ইন্ তুসলিহূ ওয়া তাত্তাক্বূ
ফাইন্নাল্লাহা কা-না গাফূরার্ রাহীমা।
১৩০.
ওয়া ইঁয়্যাতাফার্রাক্বা ইউগ্নিল্লা-হু
কুল্লাম্ মিন ছাআ’তিহী; ওয়া কা-
নাল্লা-হু ওয়া-ছিআ’ন হাকীমা।
১৩১. ওয়া লিল্লাহি মা ফিচ্ছা-মা-
ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি;
ওয়ালাক্বাদ ওয়াস্সাইনাল্লাযীনা ঊতুল
কিতা-বা মিন্ ক্বাবলিকুম ওয়া ইয়্যা-
কুম্ আনিত্তাক্বুল্লা-হা; ওয়া ইন
তাকফুরূ ফাইন্না লিল্লাহি মা ফিচ্ছামা-
ওয়া-তি ওয়ামা- ফিল আরদ্বি; ওয়াকা-
নাল্লা-হু গানিইয়্যান হামীদা।
১৩২. ওয়া লিল্লাহি মা ফিচ্ছামা-ওয়া-
তি ওয়ামা ফিল আরদ্বি;
ওয়াকাফা বিল্লা-হি ওয়াকীলা।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত :
১২৯-১৩২]
অনুবাদ
১২৯. তোমরা চাইলেও কখনোই
একাধিক স্ত্রীর মধ্যে পূর্ণ
ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।
সুতরাং তাদের একজনের
দিকে এমনভাবে ঝুঁকে পড়ো না,
যাতে অপরজন ঝুলন্ত অবস্থায়
পড়ে যায়। তোমরা যদি নিজেদের
সংশোধন করে নাও এবং দায়িত্বনিষ্ঠ
হও, তবে দেখবে আল্লাহ
তায়ালা অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
১৩০. যদি স্বামী-স্ত্রী আপসের
মাধ্যমে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন
হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তায়ালা নিজ
ভাণ্ডার থেকে দান করে তাদের
উভয়কেই পারস্পরিক
মুখাপেক্ষিতা থেকে রেহাই দেবেন।
আল্লাহ বিপুল প্রাচুর্যের অধিকারী ও
প্রজ্ঞাময়।
১৩১. আকাশমণ্ডল ও
পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই
আল্লাহর। তোমাদের আগেও যাদের
কাছে আমি কিতাব নাজিল করেছিলাম
তাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম যেন
তারা আল্লাহর প্রতি দায়িত্বনিষ্ঠ
হয়; তোমাদেরও আমি একই নির্দেশ
দিচ্ছি। যদি তোমরা অবাধ্য হও
তবে জেনে রেখো, আল্লাহর মালিকানায়
এ আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী, আল্লাহ
স্বয়ংসম্পূর্ণ ও প্রশংসার প্রভু।
১৩২. অবশ্যই আকাশমণ্ডল ও
পৃথিবীর সব কিছু আল্লাহর, যাবতীয়
কর্মসম্পাদনে তিনিই যথেষ্ট।
ব্যাখ্যা
এই আয়াতগুলোতে দাম্পত্য
জীবনে সুখী-সমৃদ্ধিশালী হওয়ার
পথনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেই
সঙ্গে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার
কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রাচীন আরব সমাজে বহু বিবাহের
প্রচলন ছিল অত্যন্ত বল্গাহীনভাবে।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পৃথিবীর প্রায়
সর্বত্রই বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল।
ইসলাম বল্গাহীন বহু বিবাহের
সমাজে বহু বিবাহকে সীমিত করেছে,
একেবারে বন্ধ করেনি।
সমাজবাস্তবতার দৃষ্টিকোণ
থেকে এটা তখন যথাযথই ছিল। পরিবার
ও সমাজের কল্যাণের জন্যই
কখনো সীমিত বহু বিবাহ প্রয়োজন
বলেও বিবেচিত হতো। বিশেষ
করে যুদ্ধ-বিগ্রহে যখন পুরুষ মানুষের
মৃত্যু হতো, তখন বহু বিবাহের
মাধ্যমে তাদের বিধবা স্ত্রীদের
সংসারজীবনে নিয়ে আসার
ব্যবস্থা হতো। কিন্তু সংসারজীবনের
একটা কঠিন বাস্তবতা হলো, একাধিক
স্ত্রী থাকলে স্বামীর পক্ষ থেকে সব
স্ত্রীর প্রতি সমান আচরণ
করা বা তাদের ন্যায্য অধিকার
সমানভাবে আদায় করে দেওয়া অনেক
সময়ই কঠিন। এটা যে কঠিন এ
কথা আল্লাহ তায়ালা তাঁর
বাণীতে ব্যক্ত করেছেন। এটা স্বীকার
করে নিয়েই বলা হচ্ছে, এটা যেন
কোনো অবস্থায়ই সীমা লঙ্ঘনের
পর্যায়ে না যায়, এ
ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ
করা হয়েছে। আয়াতে বলা হয়েছে,
কোনো এক স্ত্রীর
প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে অপর
স্ত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায়
ফেলে দেওয়ার কথা। ঝুলন্ত অবস্থায়
ফেলে দেওয়ার ব্যাপারটা এ রকম,
কোনো এক স্ত্রীকে তার ন্যায্য
অধিকারগুলোও না দেওয়া এবং বিবাহ
বিচ্ছেদও না ঘটানো। এই অবস্থার
সৃষ্টি যেন না করা হয়, এ
ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে ১২৯
নম্বর আয়াতে। ১৩০ নম্বর
আয়াতে ‘খোলা’ তালাকের
কথা বর্ণনা করা হয়েছে। ‘খোলা’
তালাকের মানে হলো,
স্ত্রী যদি মনে করে যে, এ ঘরে তার
সংসার করা হবে না, তবে স্বামীকে কিছু
অর্থবিত্ত ক্ষতিপূরণ
হিসেবে দিয়ে পারস্পরিক
সম্মতিক্রমে তালাক আদায়
করে নেওয়া। এ আয়াতে অনুরূপ
তালাকের অনুমোদন
দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ
তায়ালা নিজের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত
করেছেন যে স্ত্রী হয়তো এভাবে অন্য
কোনো ভালো ঘরের সন্ধান
করে নিয়ে সুখে জীবনযাপন
করতে পারবে।
১৩১ নম্বর আয়াতে আগের ইতিহাস
টেনে এনে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।
বলা হচ্ছে, আগের নাজিলকৃত
কিতাবে অনুরূপ আদেশ দেওয়া হয়েছিল
এবং এখনো সেই আদেশ দেওয়া হচ্ছে।
মানুষ যদি শান্তি চায়, সুসংহত সমাজ
ও সভ্যতা চায় তবে এসব আদেশ
মেনে চলা উচিত। মানুষ যদি আল্লাহর
নির্দেশিত পথে দায়িত্বনিষ্ঠ হয়, তবেই
সংসারে শান্তি আসবে,
সমাজে শান্তি আসবে। পথ দেখানোর
পরও মানুষ যদি অবাধ্য হয়,
তবে তাদের জানা উচিত, আল্লাহ
সর্বেসর্বা, তিনি কোনো কিছুর
মুখাপেক্ষী নন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :