ব্যক্তির পবিত্রতা প্রসঙ্গে (প্রথম কিস্তি)

কোন মন্তব্য নেই
মাওলানা সাদিকুল আমীন
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ।
প্রতিটি মুসলমানের
পবিত্রতা সম্পর্কীয় হুকুম-আহকাম
জানা থাকা আবশ্যক।
অসুস্থতা প্রতিটি জীবনের অবিচ্ছেদ্য
অংশ। তাই এ অবস্থার সাথে জড়িত
পবিত্রতা বিষয়ক হুকুমসমূহ
জানা প্রয়োজন। কারণ রোগের
কারণে পবিত্রতার সাধারণ আহকামের
ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। ক্ষেত্র
বিশেষে শরীয়ত বিভিন্ন ছাড়ও দেয়।
ইসলামী ফিকহের পরিভাষায় নাপাকী দুই
ধরনের। (১) স্থুল নাপাকী,
যাকে পভিাষায় হাকীকী নাপাক বলা হয়।
(২) অস্পৃশ্য নাপাকী,
যাকে হুকমী নাপাক বলে। প্রথম প্রকার
যেমন: পেশাব, পায়খানা, মদ, রক্ত
ইত্যাদি। এ ধরনের নাপাক
ধুয়ে বা মুছে শরীর বা কাপড় থেকে দূর
করতে পারলেই তা পবিত্র হয়ে যায়।
হ্যাঁ বিশেষ কিছু নাপাকের
ক্ষেত্রে তিনবার ধোয়া আবশ্যক।
দ্বিতীয় প্রকারের নাপাক যা ধরা-
ছোয়া যায় না। যেমন: উযু- গোসলবিহীন
অবস্থা। এ ধরনের নাপাক দূর করার
জন্য শরীয়তে উযু-গোসল ও
তায়াম্মুমের বিধান রাখা হয়েছে। রোগীর
জন্য উভয় প্রকার বিধানাবলীর
মাঝে কিছু ব্যতিক্রম ও ছাড় রয়েছে।
অসুস্থ ব্যক্তির উযু
একজন ব্যক্তি উজুর
মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করার পর
যতক্ষণ পর্যন্ত উজু ভঙ্গকারী কোন
কারণ না পাওয়া যাবে ততক্ষণই তার
উজু কার্যকর থাকবে। সাধারণ এই
নিয়মের বাইরে কিছুৃ কিছু ক্ষেত্রে উজু
ভঙ্গকারী কারণ ঘটা সত্ত্বেও
একটি নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত উজু ভঙ্গ
হয় না। যেমন মা’জুর ব্যক্তি। মাজুর
বলা হয় এমন ব্যক্তিকে যে উযু
ভাঙ্গার কারণসমূহ থেকে কোন
একটি কারণ
দ্বারা এমনভাবে রোগাক্রান্ত হয় যে,
কোন নামাযের পূর্ণ ওয়াক্তের
মাঝে এতটুকু সময়ের জন্যও সে উক্ত
কারণ থেকে সুস্থ হয় না যার
মাঝে সে উজু করে ফরজ নামাযটুকু
আদায় করতে পারে। এভাবে নামাযের
একটি পূর্ণ ওয়াক্ত অতিবাহিত হলে এই
ব্যক্তির জন্য উজু ভঙ্গ হওয়ার
ব্যাপারে ছাড় রয়েছে।
এইরূপ ব্যক্তির প্রতি ওয়াক্তের জন্য
একবার উযু করলেই চলবে যতক্ষণ ঐ
নামাযের ওয়াক্ত থাকবে ততক্ষণ তার
উযুর কার্যকারিতা বাকি থাকবে।
একটি নামাযের কিছু সময় অতিবাহিত
হওয়ার পর যদি কেউ কোন উযু
ভঙ্গকারী কারণে আক্রান্ত হয়,
তাহলে সে ঐ ওয়াক্তের শেষ পর্যন্ত
সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায়
নামাযকে বিলম্বিত করবে। শেষ সময়েও
যখন উক্ত কারণ বহাল থাকবে তখন
তা নিয়েই নামায পড়ে নিবে। অতঃপর
লক্ষ্য রাখতে হবে যদি উক্ত
কারণটি তার পরের নামাযের সম্পূর্ণ
ওয়াক্ত ব্যাপী হয়, তাহলে সে সুনিশ্চিত
মাজুর বলে গণ্য হবে এবং পূর্বে শেষ
সময়ে যে নামাযটি পড়েছে তা শুদ্ধ
হয়ে যাবে। আর যদি উক্ত
কারণটি পরের ওয়াক্তের সম্পূর্ণ
সময়ব্যাপী না হয় বরং এতটুকু সময়
পবিত্র থাকে যেটুকুতে উযু করে নামায
পড়তে পারে, তাহলে তার আগের
ওয়াক্তের নামাযটি শুদ্ধ গণ্য হবে না,
বরং কাযা করতে হবে।
সাধারণভাবে রোগাক্রান্ত হওয়া ছাড়াও
কারো যদি আঘাতের কারণে এমন ক্ষত
সৃষ্টি হয় যে, তা থেকে অনবরত রক্ত
ঝরতে থাকে তাহলে সেও উল্লেখিত
শর্ত মুতাবেক মাজুর হিসেবে গণ্য হবে।
মাসয়ালা : সাধারণত উযু শুদ্ধ হওয়ার
জন্য নিয়ত করা জরুরী নয়। কিন্তু
মাজুর ব্যক্তির উযু শুদ্ধ হওয়ার জন্য
নামায বৈধ হওয়ার নিয়ত করা জরুরী।
মাসয়ালা : মাজুর ব্যক্তির উচিত
সাধ্যানুযায়ী উক্ত রোগ দূর করার
জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করা। সামর্থ্য
সত্ত্বেও অবহেলা করলে সে গুনাহগার
হবে। অবশ্য তার উযু বহাল থাকবে।
মাসয়ালা : মাজুর
ব্যক্তি যে রোগে আক্রান্ত
সেটা ছাড়া যদি অন্য কোন উযু ভঙ্গের
কারণ প্রকাশ পায় তাহলে তার উযু
ভেঙ্গে যাবে। যেমন, সর্বদা পেশাব বের
হওয়ার রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির
যদি বায়ু বের হয় তাহলে তার উযু
ভেঙ্গে যাবে।
মাসয়ালা : মাজুর ব্যক্তি এক ওয়াক্ত
নামাযের জন্য যে উযু
করবে তা দ্বারা ঐ ওয়াক্তের ফরজ,
নফল, কাযাসহ সবধরনের ইবাদতই
আদায় করতে পারবে। তবে যখনই সেই
ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে তখনই সেই উযুর
কার্যকারিতাও শেষ হয়ে যাবে।
মাসয়ালা : মাজুর ব্যক্তির
কাপড়ে যদি নাপাক লাগে আর তার
প্রবল ধারণা হয় যে,
কাপড়টা ধুয়ে বা পরিবর্তন করে নামায
আদায়ের পূর্বেই তা আবার নাপাক
হয়ে যাবে, তাহলে সে ঐ নাপাক কাপড়
নিয়েই নামায পড়বে। অন্যথায় সেই
কাপড় ধুয়ে বা পরিবর্তন করে নামায
পড়া জরুরী।
ব্যান্ডেজের উপর উযু
উযুতে যে সকল অঙ্গ ধৌত করা ফরজ
তার কোনটি যদি আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায়
ব্যান্ডেজ বা প্লাষ্টার
বাঁধা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে উযু
করার পদ্ধতি নিম্নরূপ :
১. ব্যাণ্ডেজ বা প্লাষ্টার খোলার
দ্বারা যদি ক্ষতির
সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার উপর দিয়েই
ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করবে। এ
অবস্থায় যদি ব্যাণ্ডেজের ভেতরের
কিছু অংশ সুস্থও থাকে, তাতে কোন
অসুবিধা নেই। আর মাসেহ করলেও
যদি ক্ষতির আশংকা হয়,
তাহলে মাসেহও করতে হবে না।
অন্যান্য অঙ্গ ধৌত করে নামায
পড়ে নিবে।
২.ব্যাণ্ডেজ খোলাতে কোন
সমস্যা না থাকলেও যদি পুনরায়
ব্যান্ডেজ বাঁধার
ব্যাবস্থা না থাকে তাহলেও ব্যান্ডেজ
খুলতে হবে না। ব্যান্ডেজের উপর
মাসেহ করা যথেষ্ট।
৩. ব্যাণ্ডেজ খুললে যদি কোন
ক্ষতি না হয় এবং পুনরায় বাঁধার
ব্যবস্থাও থাকে,
তাহলে তা খুলে ক্ষতি না হলে
ক্ষতস্থানসহ সম্পূর্ণ অঙ্গ ধৌত
করবে। অন্যথায় আশ পাশের সুস্থ
স্থানটুকু ধৌত করে সম্ভব
হলে ক্ষতস্থানের উপর মাসেহ করবে।
তা সম্ভব না হলে পুনরায় ব্যান্ডেজ
বেঁধে তার উপর মাসেহ করে নিবে।
মাসয়ালা : ব্যান্ডেজের উপর
ব্যান্ডেজ বাঁধা হলে তার উপর মাসেহ
জায়েয।
মাসয়ালা : ব্যাণ্ডেজের উপর মাসেহ
জায়েয হওয়ার জন্য পবিত্র অবস্থায়
ব্যান্ডেজ বাঁধা শর্ত নয়
এবং ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ
কার্যকর থাকার জন্য কোন নির্দিষ্ট
সময়সীমা নেই।
মাসয়ালা : কোন কারণবশত ব্যান্ডেজ
খুলে গেলে মাসেহ নষ্ট হয় না। অনুরূপ
এক ব্যাণ্ডেজ পরিবর্তন
করে আরেকটি বাঁধলেও পূর্বের মাসেহ
কার্যকর থাকবে। শুধুমাত্র যখন
সুস্থ্যতার পর ব্যান্ডেজ
খোলা হবে কেবল তখনই মাসেহের
কার্যকারিতা শেষ হয়।
মাসয়ালা : সম্পূর্ণ ব্যাণ্ডেজের উপর
মাসেহ করা উত্তম। তবে ব্যান্ডেজের
বেশির ভাগ অংশের উপর মাসেহ
করা যথেষ্ঠ। উল্লেখ্য যে, মাসেহ
যে কোন অঙ্গই করা হোক তিনবার
করতে হবে না। একবারই যথেষ্ঠ।
উযুতে কৃত্রিম অঙ্গের হুকুম
উযুর অঙ্গগুলোর মাঝে কোথাও
যদি কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করা হয়্
আর সেটাকে সাধারণভাবে মূল অঙ্গ
থেকে পৃথক করা যায় না তাহলে উযুর
মাঝে তা ধৌত করতে হবে। আর
যদি কৃত্রিম
অঙ্গটি স্বাভাবিকভাবে খুলে পুনরায়
প্রতিস্থাপন করা যায়, তাহলে কৃত্রিম
অঙ্গ খুলে মূল অঙ্গ ধৌত করা জরুরী।
মাসয়ালা : যে ব্যক্তির কনুইসহ
উভয়হাত কাটা থাকে বা টাখনুসহ উভয়
পা কাটা থাকে এবং সেখানে কৃত্রিম হাত
পা লাগানো হয়, তাহলে সেগুলো উযুর
মাঝে ধৌত করা ফরজ নয়। বরং উযুর
বাকি অঙ্গ ধৌত করাই যথেষ্ট।
মাসয়ালা : প্লাষ্টিক সার্জারির পর
প্রতিস্থাপিত তক আসল তক
হিসেবে গণ্য হবে। সেটাকে উযু-
গোসলে ধৌত করা ফরজ।
মাসয়ালা : কৃত্রিম দাঁত
যদি স্বাভাবিকভাবে খুলে নিজে নিজেই
লাগানো যায়, তাহলে উযুর
মাঝে তা খুলে কুলি করা সুন্নত
এবং গোসলের মাঝে ফরজ। আর
যে কৃত্রিম দাঁত খোলা সম্ভব নয়,
বা দাতের ছিদ্রে প্লাষ্টার
করা হয়েছে সে ক্ষেত্রে তা সহই উযু-
গোসল করা যায়েয।
মাসয়ালা : যার হাত বা পায়ের আংশিক
কাটা থাকে এবং কনুইসহ হাতের কিছু
অংশ বা টাখনুসহ পায়ের কিছু অংশ
বাকি থাকে তাহলে অবশিষ্ট অংশটুকু
ধৌত করা জরুরী। অনুরূপভাবে যদি দুই
হাত বা পায়ের শুধু
একটা কাটা থাকে তাহলে অবশিষ্ট হাত
বা পা ধৌত করা ফরজ।
অসুস্থ ব্যক্তির উযু ভাঙ্গার আহকাম
উযু ভাঙ্গার বিভিন্ন কারণ আছে,
তন্মধ্যে একটি হলো শরীরের কোন
স্থান হতে রক্ত-পুঁজ বের হয়ে দেহের
এমন অংশে গড়িয়ে পড়া যা উযু
বা গোসলে ধৌত করা ফরজ। এই বিধান
অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
যারা চর্মরোগে আক্রান্ত,
শরীরে ঘা বা ফুসুরী হয়েছে। সেখান
থেকে রক্ত-পুঁজ
বা পাতলা পানি বেরিয়ে যদি গড়িয়ে পড়ে
তাহলে উযু ভেঙ্গে যাবে।
মাসয়ালা : চোখ থেকে আঘাতের
কারণে বা ব্যথা অনুভব করার পর
যদি পানি বের হয়, তাহলে উযু
ভেঙ্গে যাবে। মাসয়ালা : ঘায়ের স্থান
যদি বড় বা গভীর হয়, যেখানে রক্ত,
পুঁজ জমে থাকে, তাতে উযু নষ্ট হবে না।
হ্যাঁ, যখন উক্ত স্থান
থেকে গড়িয়ে বাইরে বের হয়ে যাবে তখন
উযু ভাঙ্গবে।
মাসয়ালা : যখন কোন ক্ষতস্থান
থেকে সামান্য রক্ত, পুজ বের হয়,
সেটা মুছে ফেলার পর আবার বের হয়,
এভাবে কয়েকবার মুছে ফেলার পর
যদি অনুমান করে দেখা যায় যে, উক্ত
রক্ত বা পুঁজ যদি মুছে না ফেলা হত
তাহলে তার সমষ্টি একত্রিত
হয়ে গড়িয়ে পড়ত। তাহলে উযু
ভেঙ্গে যাবে। অন্যথায় নয়।
মাসয়ালা : যখন ফোঁড়া বা ক্ষত
থেকে রক্ত বা পুঁজ বের
হতে থাকে কিন্তু তার উপর ব্যান্ডেজ
থাকার কারণে বাহিরে প্রকাশ পায় না,
তবে অনুমানে বুঝা যায় যে,
সেটা গড়িয়ে পড়ার পরিমাণ হবে,
তাহলে উযু ভেঙ্গে যাবে।

Post by Dawtul Haq.

Blog eidtor_Syed Rubel.
ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু ,বৌদ্ধ, নাস্তিক ও দেশের নারীবাদীদের ইসলামের বিরুদ্ধে করা সকল অপপ্রচারের দাঁত ভাঙ্গাঁ জবাব দেখুন এই পোস্ট টি থেকে

শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :