মাথাব্যথাঃ ৫১ পরামর্শ *পাতা ২ |

কোন মন্তব্য নেই
২৬. কী তথ্য ডাক্তারের জন্য
প্রয়োজন?
দেখা করার সময় নিচের তথ্যগুলো নোট
করে নিয়ে যান। আপনার রোগ
সন্ধানে সাহায্য করবে।
কী করে মাথাব্যথা শুরু হয়?
মাথার ঠিক কোন জায়গায় ব্যথা হয়?
এছাড়া আর কোনো ব্যথা আছে কি?
যেমন-ঘাড়ে
আপনি কতদিন থেকে ভুগছেন
ব্যথাটা কত ঘন ঘন হয়?
কতক্ষণ আপনার ব্যথা থাকে?
ব্যথাটি কি বিশেষ কোনো ছক অনুসরণ
করে (যেমন সময়, ক্লান্তি, কাজ)
অন্য কোনো উপসর্গ ওই একই
সময়ে থাকে কি বা তার
পূর্বে থাকে কি?
মাথাব্যথার কী চিকিৎসা করেছেন?
ব্যথাটি কী ধরনের হয়ে থাকে (চাকু
মারার মতো, ভোঁতা, দাপানো)
ব্যথাটি ওই একই জায়গায় থাকে?
না জায়গা পরিবর্তন করলে বাড়ে?
মাথায় চাপ পড়লে ব্যথা কি বাড়ে?
( যেমন কাশি, হাঁচি, শরীর
বাঁকা করলে বা যৌনসঙ্গম করলে)
উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর নোট
করে নিন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
আপনাকে তা জিজ্ঞেস করবেন।
২৭. মাথাব্যথা সম্বন্ধীয়
ডাইরি বা নোটবুক কীভাবে রাখতে হয়?
তারিখ
পূর্বাভাস
কখন শুরু হয়
কখন শেষ হয়
কী ধরনের ব্যথা
ব্যথার মাত্রা কেমন
কোন জায়গায় হয়
কী ওষুধ খেয়েছেন
তার ফলাফল কী
ঘুম হয় কত ঘণ্টা
কী কী আজ খেলাম
ব্যথার পূর্বে কী কী কাজ করেছি
মন্তব্য
২৮. কী কারণে আপনার
মাথাব্যথা হয়?
বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন
মাথাব্যথার কারণ সন্ধানে। আজতক
যে কারণে মাথাব্যথা হয় তার
হিসেবে মগজে জৈব রাসায়নিক
পরিবর্তন। কিন্তু সবাই একমত
যে কিছু কারণ ওই পরিবর্তন
ঘটাতে সাহায্য করে। ওই
কারণগুলো খুঁজে পেলে মাথাব্যথা হওয়ার
হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ
অনুসন্ধানের জন্য নিচে একটি লিস্ট
দেয়া হলো-
কারণ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
অনেক কাজের চাপ
আবেগজনিত কারণ ডিপ্রেশন, টেনশন,
হতাশা, এমনকি সুখকর অভিজ্ঞতা
শক্ত চোয়াল
খারাপভাবে বসে থাকা
খাদ্য
মদ/মদজাতীয় পানীয়
গন্ধ
হরমোনের কারণ (যেমন মাসিক হওয়া,
আবহাওয়ার পরিবর্তন)
ওই ছকে টিক দিন
এবং কারণগুলো জেনে নিন
এবং যথাসম্ভব ওই
কারণগুলো থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করুন।
২৯. কী কী খাদ্যে মাথাব্যথা হয়?
যে যে খাদ্যে মাথাব্যথা হয়- মদ
বা মদজাতীয় পানীয়, চকোলেট, চিজ,
ঝাল খাদ্য, বিভিন্ন নাটস, কলা, টক
ফল, চা, কপি এবং কোলা।
৩০. কী কী মানসিক সমস্যায়
মাথাব্যথা হয়?
স্নায়বিক অসুখ যেমন-টেনশন, অহেতুক
ভীতি, অবসেশন ইত্যাদি, মাদকাসক্তি,
ডিপ্রেশন, ম্যানিয়া, অর্গানিক ব্রেন
সিনড্রোম ইত্যাদি মানসিক সমস্যায়
মাথাব্যথা হতে পারে। এই সমস্ত
অসুখে যে মাথাব্যথা হয় তা মূল অসুখের
চিকিৎসায় আপনাআপনি কমে যায়।
অবশ্যই মনোচিকিৎসক দ্বারা এর
চিকিৎসা করাতে হবে।
৩১. রিবাউন্ড মাথাব্যথা কাকে বলে?
মাথাব্যথার জন্য কিছু প্রচলিত ওষুধ
আছে যা খেলে মাথাব্যথা কমে কিন্তু
ওই ওষুধ
বেশি পরিমাণে খেলে মাথাব্যথা কমার
পরিবর্তে বেড়ে যায়। একে রিবাউন্ড
মাথাব্যথা বলে। মাথাব্যথার
রোগীরা প্রতিদিন অ্যানালজেসিক
জাতীয় ওষুধ খান। এমনও হয়, অনেক
সময় দিনে ৪ বার ওষুধ সেবন করেন।
ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে ওষুধ তার
কার্যকারিতা হারায় বা কমতে থাকে।
ফলে মাথাব্যথা কমাতে তারা বেশি পরিমাণে ওষুধ
খান। কতকটা দুষ্টচক্রের মতো।
অনেক
ব্যক্তি সকালে মাথাব্যথা নিয়ে ঘুম
ভাঙে, রাতেও
তারা মাথাব্যথা নিয়ে ঘুমাতে যান।
রিবাউন্ড মাথাব্যথা-এ সাধারণত
মাথাব্যথা কমার ৩-৪
ঘণ্টা পরে ফেরত আসে। সারাটা দিন
থাকে। রিবাউন্ড হেডেকের
সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হচ্ছে স্বাভাবিক
মাথাব্যথার জন্য অতিরিক্ত
অ্যানালজেসিক ওষুধ না খাওয়া। যদিও
মাথাব্যথা তাতে একটু
বেড়ে যাবে কিন্তু ম্যাজিকের
মতো উন্নতি পাওয়া যাবে।
৩২. মাথাব্যথায় কি জেনেটিক
বা বংশানুক্রমিক রীতি কাজ করে?
হ্যাঁ, যাদের বারবার মাথাব্যথা হয়
তাদের ৮০% রোগীর
মধ্যে পরিবারে মাথাব্যথার ইতিহাস
আছে। যদিও অনেক মাথাব্যথার কারণ
সাইকোলজিক্যাল কিন্তু মাইগ্রেন
মাথাব্যথায়ও জৈব রাসায়নিক
পরিবর্তন সাধিত হয়।
বংশানুক্রমিকভাবে মাথাব্যথা থাকতে পারে।
৩৩. ঘুম কীভাবে মাথাব্যথার ওপর
ক্রিয়া করে?
অতিরিক্ত ঘুম কিংবা কম ঘুম-দুটোই
মাথাব্যথা বাড়ায়। সেরোটনিন নামক
জৈব রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তন
ঘুমের মধ্যে হয়।
যা কিনা মাথাব্যথা শুরু
করতে বা বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
যে সময়টা সাধারণভাবে লোকে জেগে থাকে যেমন
কাজের দিনে বিকেলে,
সাধারণভাবে কোনো চাকরিজীবী ঘুমান
না বা ঘুমানোর সময় পান না, তিনিই
যদি বন্ধের দিন বিকেলে ঘুমান
তাহলে কিন্তু তার মাথাব্যথা শুরু হবে।
কী আশ্চর্য। আবার
অনেকে আবিষ্কার করে ফেলেন সামান্য
একটু ঘুম তার
মাথাব্যথা তাড়াতে সাহায্য করে।
কিশোর বয়সে বিকেলে একটু ঘুম
মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
তেমনি যুবক বয়সে আবার বিকেলে ঘুম
মাথাব্যথা বাড়াতে সাহায্য করে।
আবার ঘন ঘন ন্যাপ বা অল্প ঘুম
রাতে ভালো ঘুম হতে বাধা দেয়
এবং ফলে সকালে মাথাব্যথা ওই জাতীয়
সমস্যা। দিনে না ঘুমিয়ে ঘুমকে রাতের
জন্য জমা রাখা ভালো।
সময়মতো ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম
থেকে ওঠা মাথাব্যথা কমাতে বা সারাতে ভালো কাজ
করে।
৩৪. ঘুমের পরীক্ষাগুলো কী কী?
ঘুমের পরীক্ষাগুলো ঘুমের সময়
নানা প্রকার শারীরিক ক্রিয়া-
প্রতিক্রিয়া ও মগজের
কাজকর্মগুলো রেকর্ড করে। যেমন
ইইজি, ইসিজি, পায়ের নড়াচড়া, চোখের
নড়াচড়া ইত্যাদি। এছাড়া শারীরিক
অনেক পরীক্ষা যেমন-ব্লাড
কেমিস্ট্রি, এক্স-রে অব চেস্ট
এবং স্টুল ইত্যাদি করা যেতে পারে।
৩৫. মাথাব্যথার জন্য
কী কী পরীক্ষা করা হয়?
সাধারণভাবে বেশির ভাগ
মাথাব্যথা সৃষ্টি হয় মন-মানসিক
কারণে। ১০০ জন লোকের ওপর
পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে,
শতকরা ৮০ ভাগ মাথাব্যথার কারণ
সাইকোলজিক্যাল। বাকি ২০ ভাগের
১০ ভাগ শারীরিক কারণে ও বাকি ১০
ভাগ শারীরিক ও মানসিক কারণে। তাই
বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিশেষ
একটা প্রয়োজন নেই। তবে অন্যান্য
কারণ নির্ণয় করার জন্য রক্তের
বিভিন্ন পরীক্ষা, সিটি স্ক্যান অব
ব্রেন, মাথার এক্স-রে ও অনেক সময়
এমআরআই জাতীয় পরীক্ষার প্রয়োজন
হয়।
৩৬. সিগারেট
খেলে মাথাব্যথা বাড়ে?
হ্যাঁ, বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত
সিগারেট খেলে মাথাব্যথা বাড়ে। কয়েক
রকম পদ্ধতিতে তা হতে পারে-
(১) ধূমপানে কার্বন
মনোঅক্সাইডের পরিমাণ
রক্তে বেড়ে যায়। ওই কার্বন
মনোঅক্সাইড মগজে মাথাব্যথার
সৃষ্টি করে।
(২) মগজে অক্সিজেন কমে যায়
এবং অনেক টিস্যুতে অক্সিজেন
কমে যায় বলে মাথাব্যথা হয়।
(৩) সিগারেটের প্রধান উপাদান
নিকোটিন। নিকোটিনের একটি বিষাক্ত
প্রতিক্রিয়া আছে। বিষাক্ত
প্রতিক্রিয়ার জন্য মাথাব্যথা হয়।
নিকোটিন আবার মাথাব্যথা কম
রাখাজনিত ওষুধের
কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
মাথাব্যথা কমাতে হলে প্রথমে সিগারেট
ছাড়ুন।
৩৭. যৌনতা বা যৌনসঙ্গমের
সাথে মাথাব্যথার কোনো সম্পর্ক
আছে কি?
অনেক ক্ষেত্রে, বলা যায় বেশির ভাগ
ক্ষেত্রে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
তবে যৌনসঙ্গমের পূর্বে ও কতক
ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গমের পরে অনেকের
মাথাব্যথা হয় বলে শুনেছি। অনেক যুবক
তাদের হস্তমৈথুনের পর মাথাব্যথার
অভিযোগ করেন। সাধারণত এই জাতীয়
মাথাব্যথা মহিলাদের মধ্যে বিশেষ
করে ২০-৩০ বছর বয়সের
মধ্যে বেশি পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক
রক্তচাপ বৃদ্ধি, দ্রুত হার্টবিট, দ্রুত
শ্বাসক্রিয়া এর কারণ হতে পারে। কিছু
কিছু মহিলা, যারা যৌনতার
ব্যাপারে শীতল বা অত্যন্ত রক্ষণশীল
জীবনযাপন করেন তাদের
ক্ষেত্রে যৌনসঙ্গমের পর মাথাব্যথার
উপসর্গ থাকতে পারে।
৩৮. বাচ্চাদের কত বয়সে মাইগ্রেন
মাথাব্যথা হয়?
অনেক ছোট বয়সে মাইগ্রেন
মাথাব্যথা বাচ্চাদের হতে পারে।
এমনকি ১-২ বছর বয়সে।
এমনকি তারও আগে।
পেটে ব্যথা অনেক বাচ্চার মাইগ্রেনের
প্রথম উপসর্গ আকারে আসে।
চলতে গেলে বমি বা অনেকের
গাড়িতে চড়লে বমি হয়।
একে বলে মোশন সিকনেস। এই জাতীয়
মোশন
সিকনেসে যে বাচ্চারা ভোগে তাদের
অনেকেই মাইগ্রেন মাথাব্যথায় ভোগে।
৩৯.
ছেলে বা মেয়ে এভাবে কি মাথাব্যথার
কম-বেশি হয়?
হ্যাঁ হয়। ৯-১২ বছর বয়স পর্যন্ত
ছেলে-মেয়ে সমান সমান মাথাব্যথা হয়।
১২ বছরের পরে ২১-২৪ বছর
পর্যন্ত মাথাব্যথার রোগীদের
মধ্যে ৮০% মেয়ে। ইস্ট্রোজেন নামক
হরমোন ওই বয়সে মেয়েদের
শরীরে বেশি মাথায় আসে। ওই
ইস্ট্রোজেন মাথাব্যথার প্রধান কারণ।
তাছাড়া ইস্ট্রোজেন রক্তনালি, মাসিক,
গর্ভাবস্থা ইত্যাদির উপরে প্রভাব
বিস্তার করে। জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়িও
মেয়েদের মেনোপজ মাথাব্যথার ওপর
বিরাট প্রভাব বিস্তার করে। সবগুলোই
আবার মাথাব্যথার উপরে প্রভাব
অর্থাৎ এগুলো মাথাব্যথা বাড়িয়ে দেয়।
৪০. মাঝে মাঝে যে কিশোর
বয়সে মাইগ্রেনে আক্রান্ত ছিল তার
কি বড় বেলায় মাইগ্রেন হতে পারে?
হ্যাঁ পারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন
যিনি একবার মাইগ্রেনে আক্রান্ত হন
তার
অসুখটি সারা জীবনব্যাপী চলতে পারে এবং যতই
সময় যায় ততই
খারাপভাবে আসতে পারে। মেয়েদের
বেলায় এটি বেশি প্রযোজ্য। সাধারণত
(ইস্ট্রোজেন) হরমোনের
কারণে এটা হতে পারে।
৪১. যেহেতু মাথাব্যথার সাথে ঘুমের
একটা সম্পর্ক আছে-আমাদের সুন্দর
স্বাস্থ্যসম্মত ঘুমের জন্য
কী কী প্রয়োজন, তা বলবেন কী?
ভালো ঘুমের জন্য এগারোটি গাইড
লাইনের কথা এখানে উল্লেখ করা হলো-
(১) ঘুম ততটুকুই হওয়া প্রয়োজন,
যতটুকু হলে পরদিন সকালে ফ্রেস লাগে,
ভালো লাগে, তার চেয়ে বেশি নয়।
বিছানায় অযথা সময় নষ্ট করা ঠিক
হবে না। অনেকক্ষণ বিছানায়
শুয়ে থাকলে হাল্কা হাল্কা ভাঙা ভাঙা ঘুম
হয়, এটা ভালো না।
(২) প্রতিদিন সকালে একটি বিশেষ
সময়ে ওঠার নিয়ম পালন করতে হবে।
তাতে শরীরের ‘ঘুম-জাগা-
চক্র’টি ভালো থাকে।
(৩) নিয়মিত একটা বিশেষ মাত্রায়
ব্যায়াম সুস্থ স্বাভাবিক শরীরের জন্য
উত্তম। ঘুমের জন্য তো বটেই।
(৪) হঠাৎ উচ্চ শব্দ ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটায়, অনেকে জেগে যান কিন্তু
মনে রাখতে পারেন না তা পরদিন।
ভালো ঘুমের জন্য সাউন্ড প্রোটেকটেড
রুম হলে ভালো হয়। বিশেষ
করে যেখানে ওই ধরনের আওয়াজ
পাওয়া যেতে পারে।
(৫) অতি গরম রুম ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটায়। তেমনি অতি ঠাণ্ডা রুমও ঘুমের
ব্যাঘাত ঘটায়। এ জন্য প্রয়োজন
দেশের
আবহাওয়া নির্বিশেষে ‘না ঠাণ্ডা না গরম’
রুম।
(৬) খালি পেটে ঘুমানো উচিত না,
কারণ খালি পেটে ঘুম ভালো হয় না।
সে রকমভাবে ভরা পেটেও ঘুম আসে না।
সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ঘুমানোর এক
ঘণ্টা আগে হালকা খাবার খেয়ে নেয়া।
(৭) দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যায়
যারা ভোগেন, স্লিপিং পিল তাদের জন্য
মাঝে মাঝে ভালো কাজ করে। কিন্তু
যারা প্রায় দিনই স্লিপিং পিল খান
তাদের জন্য ভালো কাজ করে না।
বিকেলে কফি পান একেবারে মানা।
কফি ঘুমের ডিস্টার্ব করে।
অনেকে বলেন, তাদের
ঘুমে কোনো ডিস্টার্ব হয় না, তাদের
ক্ষেত্রেও ঘুমে অসুবিধা হয়, কিন্তু
তারা বুঝতে পারেন না।
(৯) অ্যালকোহল বা মদজাতীয়
পানীয় ঘুম আনতে সাহায্য করে, কিন্তু
ঘুমের প্রহর যত পার
হতে থাকে অ্যালকোহল ঘুমের ততই
অসুবিধা সৃষ্টি করে। উপরন্তু
সকালে উঠে মাথাব্যথা তো আছেই।
(১০) যারা ঘুম
আসছে না বলে রেগে যান
বা হতাশা বোধ করেন, তারা ওই
সময়টা বিছানায় শুয়ে না থেকে পাশের
ঘরে গিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।
পরে ঘুমঘুম ভাব এলে ঘুমাতে যাবেন।
(১১) ধূমপান ত্যাগ করুন।
ধূমপানে ঘুমের অসুবিধা হয়।
৪২. বাচ্চাদের মাইগ্রেনের
কী ধরনের উপসর্গ থাকে-যা বড়দের
থাকে না?
বাচ্চাদের মাইগ্রেনে আর বড়দের
মাইগ্রেনে উপসর্গভিত্তিক কিছু তফাৎ
আছে। মাথাব্যথা ছাড়াও বাচ্চারা,
যারা মাইগ্রেনে ভোগে তাদের
মধ্যে মাথায় হালকাভাব, পেটে ব্যথা,
বেশি অল্প
আলোতে বিরক্তি বিরক্তিবোধ,
আবেগজনিত পরিবর্তন, জ্বর, নাক
বন্ধ ভাব, অস্থিরতা ইত্যাদি থাকতেই
পারে। জ্বর অনেক সময় ১০৪
ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
মাঝে মাঝে এই উপসর্গগুলো হয়, আবার
অনেক ক্ষেত্রে মাথাব্যথা পর্যন্ত
থাকে না। কিছু কিছু শিশু
শেষে স্বাভাবিক মাইগ্রেনের শিকার
হয়।
৪৩. ক্লান্তি ও মাইগ্রেনের
সাথে কোনো সম্পর্ক আছে কি?
ক্লান্তিবোধে অনেকে যারা ভোগেন
তাদের অনেকের মন্তব্য-এর
সাথে মাথাব্যথা করে। আসলে ক্লান্তির
সাথে ব্রেনের পেইন
সেন্টারগুলো উত্তেজিত হয়।
তাতে মাথাব্যথার সৃষ্টি হয়। ক্লান্তির
ব্যথা সারা শরীরে অনুভূত হয় এবং এর
সাথে টেনশন, ঘুমের সমস্যা, ডিপ্রেশন
ও মাথাব্যথা থাকে। মাইগ্রেন
মাথাব্যথায়ও নানা প্রকার উপসর্গ
এর সাথে থাকতে পারে। ক্লান্তিবোধের
জন্য কিছু টোটকা ওষুধ সেবন
করলে শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
৪৪. শরীরের ব্লাড সুগারের
সাথে মাথাব্যথার কী সম্পর্ক?
আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট
একটা মাত্রায় ব্লাড সুগার থাকার
কথা। যেমন ৮০-১২০ মিলিগ্রাম/
মিলিলিটার খালি পেটে আর
ভরা পেটে তা ১৮০ মিলিগ্রাম/
মিলিলিটার। যদি কোনো কারণে শরীরের
ব্লাড সুগারের মাত্রা কমে যায়
তাহলে মাথাব্যথা বিশেষত মাইগ্রেন
ধরনের মাথাব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।
যার আবার রক্তের মধ্যে সুগারের
মেটাবলিক ডিসঅর্ডার আছে তাদের
ক্ষেত্রে মাত্র ১ বেলার খাবার
না খেলেই মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।
সুতরাং নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট মাত্রায়
খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।
লম্বা একটা ঘুম দিলে শরীরে ব্লাড
সুগারের
মাত্রা কমে গেলে মাথাব্যথা হতে পারে।
সাধারণভাবে রাতে মাথাব্যথা হলে ব্লাড
সুগারের
মাত্রা কমে গেছে বলে ধারণা করা হয়।
অবশ্য এর অন্যান্য কারণও
থাকতে পারে।
৪৫. মাইগ্রেন মাথাব্যথার
কোনো বিশেষ পরীক্ষা আছে কি?
না বিশেষ কোনো পরীক্ষা নেই,
যাতে করে মাইগ্রেন রোগটি বোঝা যায়।
এই রোগ বুঝতে হয় উপসর্গ মারফত।
তবে বিশেষ অনেক
পরীক্ষা আছে যাতে করে অন্য অসুখ
আছে কি না পরীক্ষা করে নেয়া যায়।
এতে করে ব্রেনের রক্তচলাচল, স্নায়ুর
ও ব্রেনের অ্যানাটমি বোঝা যায়।
৪৬. আমার মাথাব্যথা সম্বন্ধীয় সব
পরীক্ষা
স্বাভাবিক। আমার মাথাব্যথার
কারণ কী?
মাথাব্যথার পরিমাপ করার জন্য যে সব
পরীক্ষা করা হয় বা মাথাব্যথার অন্য
কোনো কারণ খুঁজে বের করতে যে সব
পরীক্ষা করা হয় তার
মধ্যে সিটি স্ক্যান অব ব্রেইন,
এমআরআই এবং স্টাডিস অব ব্লাড
কেমিস্ট্রি অন্যতম। মাইগ্রেন
মাথাব্যথায় ওই সব টেস্টের ফলাফল
নরমাল পাওয়া যায়।
সাধারণভাবে মাইগ্রেনের জন্য বিশেষ
কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা আজও
আবিষকৃত হয়নি।
৪৭. ইস্ট্রোজেন জাতীয় হরমোন
কি মাথাব্যথা
বাড়ায়?
অবশ্যই বাড়ায়। ইস্ট্রোজেন হরমোন
মাথায় বিশেষ এক ধরনের রিসেপ্টরের
সাথে সংযুক্ত হয় এবং মাইগ্রেন
বা অন্য জাতীয় মাথাব্যথা বৃদ্ধি করে।
সুতরাং ইস্ট্রোজেন হরমোনের
কমবেশির জন্য মেয়েরা বেশি মাইগ্রেন
রোগে ভোগে।
৪৮. মাথাব্যথার জন্য ওষুধ
ছাড়া আর
কী কী চিকিৎসা আছে?
মাথাব্যথার জন্য ওষুধই একমাত্র
চিকিৎসা নয়। যারা টেনশনজনিত
মাথাব্যথা ও
মাঝে মাঝে মাইগ্রেনে ভোগেন তাদের
আচরণমূলক চিকিৎসা বা বিহেভিয়ার
পরিবর্তনমূলক চিকিৎসা ভালো কাজ
করে। অনেক ক্ষেত্রে বিহেভিয়ার
চিকিৎসার সাথে সাথে ওষুধের
দ্বারা চিকিৎসা মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ
দেয়। বিহেভিয়ার থেরাপিগুলো হলো-
বায়োফিডব্যাক, রিলাক্সেশন ট্রেনিং,
কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি যেমন-
ব্যায়াম, ঘুম নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য
নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ত্যাগ।
৪৯. কী জাতীয় খাদ্য
মাথাব্যথা বাড়া?
সাধারণত খাদ্যের জন্য মাথাব্যথা হয়
এটি ঠিক নয়, তবে কিছু কিছু খাদ্য
আছে যা মাথাব্যথার প্রকোপ
বাড়িয়ে দেয় যেমন-সুগার, ক্যান্ডি,
চকোলেট, কেক, চিজ, দুধ, আইসক্রিম,
বিয়ার, মদ, কলা, আনারস, কমলা,
অন্যান্য টকজাতীয় খাদ্য, পিঁয়াজ,
বাদাম, মটরশুঁটি, গরুর গোশত, সালাদ,
বিভিন্ন প্রকার ড্রিংকস, কফি,
চা ইত্যাদি।
৫০. মানসিক চাপ
কীভাবে মাথাব্যথা বাড়ায়?
সোজাসুজি মানসিক চাপ বা স্ট্রেস
মাথাব্যথা বাড়ায় না কিন্তু
তৈরি করতে সাহায্য করে। মাথাব্যথায়
যারা ভোগেন তারা সাধারণত
বেশি মানসিক চাপযুক্ত জীবনযাপন
করেন। স্ট্রেস আসবে।
এটি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, উচিতও
নয়। দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন এ
ভাবধারা দুশ্চিন্তার
মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়। মানসিক
চাপের যেমন নেগেটিভ দিক আছে,
তেমনি আছে ভালো দিকটা। ভালো দিক
হচ্ছে এই মানসিক চাপ আপনাকে কিছু
করতে বাধ্য করে এ রকমভাবে-
নিয়মিত ব্যায়াম, শিথিলায়ন, খাপ
খাওয়া ইত্যাদি মানসিক চাপের খারাপ
দিকগুলো সারিয়ে তোলে।
৫১. কীভাবে দুশ্চিন্তামুক্ত
থাকবেন?
নিজেকে জিজ্ঞেস করুন। সবচেয়ে খারাপ
ফলাফল আর কী হতে পারে?
কী কী পরিবর্তন এই
কাজটি না করলে হবে? আমি এই কাজের
চাপ কমানোর জন্য আর
কী করতে পারি? সমস্যাটা কী?
এই সমস্যার কারণ কী? সিদ্ধান্ত
নেয়ার মতো যথেষ্ট তথ্য আমার
কাছে আছে কি?
সাধারণভাবে কোনটি সলিউশন
হতে পারে? সর্বোত্তম সলিউশন কী?
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নিতে গেলে প্রথমে সমস্যাটা লিখুন,
কী কী সমাধান হতে পারে লিখুন।
ক্রমান্বয়ে নাম্বার দিন। ১, ২
ইত্যাদি। যে কোনো দুটি এক
সাথে তুলনা করুন।
সবচেয়ে ভালোটি টিক মার্ক দিন। যেমন
ধরা যাক ১ সবচেয়ে ভালো। এবারে ১
কে ৩-এর সাথে তুলনা করুন।
এভাবে সর্বোত্তম তুলনাসহ সমাধান
বের করুন। বারবার একই জিনিস
নিয়ে চিন্তা করবেন না।
কাজের চাপ কমানোর জন্য জরুরি,
অতি জরুরি এভাবে কাজ ভাগ করুন
এবং একটি কাজ একবারে করুন।
বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন
সাপেক্ষে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস দূর
করা বা কমানো যায়। অল্প
পরিসরে এখানে ৫১টি বিষয়ে বলা হলো।
সাধারণ
মাথাব্যথা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি উদ্যোগই
যথেষ্ট। তবে সবচেয়ে ভালো হয়
চিকিৎসকের পরামর্শমতো চললে।

বাংলাদেশের বিশিষ্ট মনোশিক্ষাবিদ,
মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসক
অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ
ফিরোজ
মানসিক রোগ শিক্ষা, গবেষণা,
চিকিৎসা ও জনসচেতনতায় পথিকৃৎ!

সূত্রঃ মনোজগত।শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।

কোন মন্তব্য নেই :