শবে বরাত ও প্রাসংগিক কিছু কথা / পাতা ৪

কোন মন্তব্য নেই
তৃতীয় প্রশ্নঃ শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে হাজারী নামায পড়ার কী হুকুম?
উত্তরঃ শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে একশত রাকাত নামাযের প্রতি রাকাতে দশবার সূরা কুল হুওয়াল্লাহ
(সূরা ইখলাস) দিয়ে নামাজ পড়ার যে নিয়ম প্রচলিতহয়েছে তা সম্পূর্ণরূপেবিদ‘আত।
এ নামাযের প্রথম প্রচলন
এ নামাযের প্রথম প্রচলনহয় হিজরী ৪৪৮ সনে। ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের ইবনে আবিল হামরা নামীয় একলোক বায়তুল মুকাদ্দাস আসেন। তার তিলাওয়াত ছিল সুমধুর। তিনি শা‘বানের মধ্যরাত্রিতে নামাযে দাঁড়ালে তার পিছনে এক লোক এসে দাঁড়ায়, তারপর তার সাথে তৃতীয় জন এসে যোগ দেয়, তারপর চতুর্থ জন। তিনি নামায শেষ করার আগেই বিরাট একদল লোক এসে তার সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে।
পরবর্তী বছর এলে, তার সাথে অনেকেই যোগ দেয় ও নামায আদায় করে। এতে করে মাসজিদুল আক্‌সাতে এ নামাযের প্রথা চালু হয়। কালক্রমে এ নামায এমনভাবে আদায় হতে লাগেযে অনেকেই তা সুন্নাত মনে করতে শুরু করে। (ত্বারতুসীঃ হাওয়াদেস ও বিদ‘আ পৃঃ১২১, ১২২, ইবনে কাসীরঃ বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১৪/২৪৭, ইবনুল কাইয়েমঃ আল-মানারুল মুনিফ পৃঃ৯৯)।
এ নামাযের পদ্ধতি
প্রথা অনুযায়ী এ নামাযের পদ্ধতি হলো, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস দশবার করে পড়ে মোট একশত রাকাত নামায পড়া।যাতে করে সূরা ইখলাস ১০০০ বার পড়া হয়। (এহইয়ায়ে উলুমুদ্দীন (১/২০৩)।
এ ধরণের নামায সম্পূর্ণবিদ‘আত। কারণ এ ধরণের নামাযের বর্ণনা কোন হাদীসের কিতাবে আসেনি। কোন কোন বইয়ে এ সম্পর্কে যে সকল হাদীস উল্লেখ করা হয় সেগুলো কোন হাদীসের কিতাবে আসেনি। আর তাই আল্লামা ইবনুল জাওযী (মাওদু‘আত ১/১২৭-১৩০), হাফেয ইরাকী(তাখরীজুল এহইয়া), ইমাম নববী (আল-মাজমু‘ ৪/৫৬), আল্লামা আবু শামাহ (আল-বা‘েয়স পৃঃ৩২-৩৬), শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা,(ইকতিদায়ে ছিরাতুল মুস্তাকীম ২/৬২৮), আল্লামা ইবনে ‘আররাক (তানযীহুশ শরীয়াহ ২/৯২), ইবনে হাজার আল-আসকালানী, আল্লামা সূয়ূতী (আল-আমর বিল ইত্তেবা পৃঃ৮১, আল-লাআলিল মাসনূ‘আ ২/৫৭), আল্লামা শাওকানী (ফাওয়ায়েদুল মাজমু‘আ পৃঃ৫১) সহ আরো অনেকেই এ গুলোকে “বানোয়াট হাদীস” বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন।
এ ধরণের নামাযের হুকুম
সঠিক জ্ঞানের অধিকারী আলেমগণের মতে এ ধরণের নামায বিদ‘আত; কেননা এ ধরনের নামায আল্লাহর রাসূলও পড়েননি। তার কোন খলীফাও পড়েননি। সাহাবাগণও পড়েননি। হেদায়াতের ইমাম তথা আবু হানিফা, মালেক, শাফেয়ী, আহমাদ, সাওরী, আওযায়ী, লাইস’সহ অন্যান্যগণ কেউই এ ধরণের নামায পড়েননি বাপড়তে বলেননি।
আর এ ধরণের নামাযের বর্ণনায় যে হাদীসসমূহ কেউ কেউ উল্লেখ করে থাকেন তা উম্মাতের আলেমদের ইজমা অনুযায়ী বানোয়াট।
(এর জন্য দেখুনঃ ইবনে তাইমিয়ার মাজমুল‘ ফাতাওয়া ২৩/১৩১,১৩৩,১৩৪, ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৮, আবু শামাহঃ আল-বা‘য়েছ পৃঃ ৩২-৩৬, রশীদ রিদাঃ ফাতাওয়া ১/২৮, আলী মাহফুজ, ইবদা‘ পৃঃ২৮৬,২৮৮, ইবনে বাযঃ আত্‌তাহযীর মিনাল বিদ‘আপৃঃ১১-১৬)।
চতুর্থ প্রশ্নঃ শা‘বানের মধ্যরাত্রির পরদিন কি রোযা রাখা যাবে?
উত্তরঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বহু সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, তিনি শা‘বান মাসে সবচেয়ে বেশী রোযারাখতেন। (এর জন্য দেখুনঃ বুখারী, হাদীস নং ১৯৬৯, ১৯৭০, মুসলিম, হাদীস নং ১১৫৬, ১১৬১, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৩১, সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ২০৭৭,সুনানে তিরমিঝি, হাদীস নং ৬৫৭)।
সে হিসাবে যদি কেউ শা‘বান মাসে রোযা রাখেন তবে তা হবে সুন্নাত। শাবান মাসের শেষ দিন ছাড়া বাকী যে কোন দিন রোযা রাখা জায়েয বা সওয়াবের কাজ। তবে রোজা রাখার সময় মনে করতে হবে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেহেতু শা‘বান মাসে রোজা রেখেছিলেন তাকে অনুসরন করে রোযা রাখা হচ্ছে।
অথবা যদি কারও আইয়ামে বিদের নফল রোযা তথা মাসের ১৩,১৪,১৫ এ তিনদিনরোযা রাখার নিয়ম থাকে তিনিও রোযা রাখতে পারেন। কিন্তু শুধুমাত্র শা‘বানের পনের তারিখ রোযা রাখা বিদ‘আত হবে। কারণ শরীয়তে এ রোযার কোন ভিত্তি নেই।
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রাসূলের পরিপূর্ণ পদাঙ্ক অনুসরন করে চলারতৌফিক দিন। আমীন।
টীকা: 7. যদি শা‘বানের মধ্যরাত্রিকে উদযাপন করা বা ঘটা করে পালন করাজায়েয হতো তাহলে অবশ্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে আমাদের জানাতেন। বা তিনি নিজেইতা করতেন। আর এমন কিছু তিনি করে থাকতেন তাহলে সাহাবাগণ অবশ্যই তা উম্মাতের কাছে বর্ণনা করতেন। তারা নবীদের পরেজগতের শ্রেষ্টতম মানুষ,সবচেয়ে বেশী নসীহতকারী, কোন কিছুই তারা গোপন করেননি’। (আত্‌তহযীর মিনাল বিদা‘১৫,১৬)।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট হলোযে, কুরআন, হাদীস ও গ্রহণযোগ্য আলেমদের বাণী থেকে আমরা জানতে পারলাম শা‘বানের মধ্য রাত্রিকে ঘটা করে উদযাপন করা— চাই তা নামাযের মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোন ইবাদতের মাধ্যেমে— অধিকাংশ আলেমদের মতে জগন্যতম বিদ‘আত। শরীয়তে যার কোন ভিত্তি নেই। বরং তা’সাহাবাদের যুগের পরে প্রথম শুরু হয়েছিল। যারা সত্যের অনুসরণ করতে চায় তাদের জন্য দ্বীনের মধ্যে আল্লাহ ওতাঁর রাসূল যা করতে বলেছেন তাই যথেষ্ট।


শেয়ার করে আপনিও হন ইসলামের প্রচারক ।
আমরা সবাই একাজটি করলে জানার পাশাপাশি সওয়াব হবে ।
যে ব্যাক্তি ইসলামের একটি কথা শিখবে তাকে আল্লাহ দশটি নেকী দেবেন ।
যে শিখাবে তাকেও দশটি নেকী দেওয়া হবে ।
তাই আসুন আমরা নিজেও জানি, অন্যদেরকেও জানাই ।

কোন মন্তব্য নেই :