আল্লাহর সতর্কবাণী →পাতা ২←

কোন মন্তব্য নেই

প্রথম পাতার পর ।

‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলে বিশ্বাস করে না, আমি সেসব কাফেরের জন্য জ্বলন্ত অগ্নি প্রস্ত্তত করে রেখেছি। নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান’ (ফাতাহ ১৩-১৪)।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতার পরিণাম ভাল নয়; তাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্টতায় নিপতিত বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের ক্ষমতা নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়’ (আহযাব ৩৬)।

পবিত্র কুরআন করীমের ব্যাখ্যাও মর্মানুযায়ী একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উম্মতের প্রত্যেকের উপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হক সব চাইতে বেশী। স্বয়ং মহান আল্লাহ তা‘আলা নিজ কালামে তাঁরআদেশ মান্য করার সাথে সাথে রাসূলের আদেশও মান্য করার হুকুম দিয়েছেন। অতঃপর যারা তাঁর ও রাসূলের আদেশ অমান্য করবে বা তাঁদেরকে অবিশ্বাস করবে, তাদের ভয়াবহ পরিণতির বিষয়টিও উপরের আয়াতে উল্লেখকরা হয়েছে। তবে কোন ঈমানদার পুরুষ বা ঈমানদার নারী আল্লাহও তাঁর রাসূলের আদেশ পালনে ভিন্নমত পোষণ করে না। একমাত্রঅবিশ্বাসীরাই ভ্রষ্টতায় পতিত হয়। এ বিষয়ে হাদীছে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তেবর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, তবে যারা অস্বীকার করেছে তারা ব্যতীত। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! কে অস্বীকার করে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের আনুগত্যকরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি আমাকে অমান্য করবে সেই অস্বীকার করে’ (বুখারী হা/৭২৮০)।

অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন বাক্য একটি, আর আমি বলেছি দ্বিতীয়টি। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সমকক্ষ আছে বিশ্বাস রেখে মৃত্যুবরণ করে সে আগুনে (জাহান্নামে) প্রবেশ করবে। আর আমি বলেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সমকক্ষ অস্বীকার করে মৃত্যুবরণ করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (বুখারী)।

পবিত্র কুরআন হচ্ছে সর্বশেষ আসমানী কিতাব, যা মহান আল্লাহরতরফ থেকে মহানবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। আর হাদীছ হ’ল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কার্যাবলীর বিবরণ ও তাঁর বক্তব্যের অথবা আল-কুরআনের বাস্তব রূপ। ছহীহ বুখারীর উপরোল্লিখিত হাদীছ দু’টি মহানবী (ছাঃ)-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সতর্কবাণীর প্রমাণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মহানবী (ছাঃ)-এর যাবতীয় হাদীছ সংরক্ষিত হয়েছে। সুতরাং পবিত্র কুরআন ও হাদীছ উভয় সতর্কবাণীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যএক ও অভিন্ন। এসব হাদীছের সমর্থনপুষ্ট আরও বহু আয়াত রয়েছে।

আখিরাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে সকল কর্ম বাতিল হয়ে যায়। এ ব্যাপারে আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে বলেন,
‘বস্ত্ততঃ যারা মিথ্যা জেনেছে আমার আয়াত সমূকে এবং আখেরাতের সাক্ষাৎকে, তাদের যাবতীয় কাজকর্ম ধ্বংস হয়ে গেছে। তেমন বদলাই সে পাবে যেমন আমল সে করত’ (আ‘রাফ ১৪৭)।

অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,
‘অতঃপর তার চেয়ে বড় যালেম কেআছে, যে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করেছে কিংবা তাঁর আয়াত সমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে? কস্মিনকালেও পাপীদের কোন কল্যাণ হয় না’ (ইউনুস ১৭)।

আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীব (ছাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেন,
‘আপনি আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন যে, আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু এবং এটাও জানিয়ে দিন যে, আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (হিজর ৪৯-৫০)।

এ সকল আয়াতে আল্লাহর সতর্কবাণী বিদ্যমান।

আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন থাকলে শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করতে চেষ্টা করে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন,
‘যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় (ভুলে থাকে), আমি তার জন্য এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সেই হয় তার সঙ্গী’ (যুখরুফ ৩৬)।

পবিত্র কুরআনের এই অভাবনীয় বাণী একদিকে মানবতাকে আল্লাহরস্মরণে ডুবে থাকার আহবান জানিয়েছে, অপরদিকে সতর্কতা অবলম্বনের ঐকান্তিক দীক্ষাও প্রদান করেছে। সুতরাং শ্রেষ্ঠধর্ম ইসলাম সুরক্ষায় আল্লাহরস্মরণ যেমন অপরিহার্য, অনুরূপভাবে আল্লাহর সতর্কবাণীর অনুসরণও একইভাবে প্রয়োজন। ইহকালীন জীবনের পরিসমাপ্তির পর পরকালীন জীবনেপ্রবেশ মুহূর্তেই আল্লাহর সতর্কবাণীর প্রভাব প্রতিফলিত হবে। আর বিশ্বস্ত বান্দাদের পক্ষেই এতদসংক্রান্ত বিষয়ে কিছুটা স্পষ্ট ধারণা অর্জন করা সম্ভব। অতঃপর এদেরকে কল্যাণের পথে ফিরানোর লক্ষ্যেই পবিত্র কুরআনে এই সতর্কবাণী সম্বলিত আয়াতগুলো সংযোজন করা হয়েছে।

বস্ত্তত সকল সতর্কবাণীর মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষকে সংশোধনের মাধ্যমে তাদের মুক্তির পথে পরিচালিত করা। মহান আল্লাহ বলেন,
‘আমার দায়িত্ব পথপ্রর্দশন করা। আর আমি মালিক ইহকালের ও পরকালের। অতএব আমি তোমাদেরকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। এতে নিতান্ত হতভাগ্য ব্যক্তিই প্রবেশ করবে, যে মিথ্যারোপ করেও মুখ ফিরিয়ে নেয়। এ থেকে দূরে রাখা হবে আল্লাহভীরু ব্যক্তিকে। যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধন-সম্পদ ব্যয় করে এবং তার উপর কারও কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না, তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতিত, সে সত্বরই সন্তুষ্টি লাভ করবে’ (আল-লায়ল ১২-২১)।

উপরের আয়াতগুলোতে অপরাধীদের লক্ষ্য করে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডের অর্থাৎ জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। অপরদিকে আল্লাহভীরু ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণকারীদের পুরোপুরি অভয় দেওয়া হয়েছে।


আরো পড়ুন......→আল্লাহর সতর্কবাণী→পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই :